Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

হজযাত্রী কমল ১২ হাজার

প্রকাশের সময় : ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : সৌদি সরকারের বেঁধে দেয়া কোটা অনুযায়ী বাংলাদেশের হজযাত্রীদের সংখ্যা ১২ হাজার ১১০ জন কমিয়ে সংশোধিত হজনীতি ও প্যাকেজ অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
সচিবালয়ে গতকাল (সোমবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে চলতি বছরের জাতীয় হজ ও ওমরাহ নীতি এবং হজ প্যাকেজের সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের একথা জানান। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে হজনীতি ও প্যাকেজের সংশোধন করা হচ্ছে। এর ফলে চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাঠানো হজযাত্রীর সংখ্যা ১২ হাজার ১১০ জন হ্রাস পাবে। এর ফলে এ বছর মোট ১ লাখ ১ হাজার ৭৫৮ জন হজ পালন করবেন। আগে এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৮ জন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, সংশোধিত নীতি ও প্যাকেজ অনুযায়ী, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চলতি বছর হজ পালনকারীর সংখ্যা ১৭ হাজার ১১০ জন হ্রাস করা হবে।
সচিব বলেন, সংশোধিত (হজ) নীতি ও প্যাকেজের ভিত্তিতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজারের স্থলে ১০ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৮ হাজার ৮৬৮ জনের স্থলে ৯১ হাজার ৭৫৮ জন হজব্রত পালন করতে যাবেন।
গত ১১ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা জাতীয় হজনীতি ও হজ প্যাকেজ অনুমোদন দেয়। ওই দিন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৮ হাজার ৮৬৮ জনকে বাংলাদেশ থেকে হজে যাওয়ার অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী নীতিমালা সংশোধন করে হজযাত্রীর সংখ্যা পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হজনীতিতে এই সংশোধন আনা হয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, আমাদের কিছু করার নেই। সব দেশের জন্যই সৌদি আরব এই পলিসি নিয়েছে। মন্ত্রিসভা ১ লাখ ১৩ হাজার ৮৬৮ জনকে হজে যাওয়ার অনুমোদন দিয়ে হজনীতি ও প্যাকেজ অনুমোদন করে। কিন্তু গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৫ হাজারের পরিবর্তে ১০ হাজার এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ৮ হাজার ৮৬৮ জনের পরিবর্তে ৯১ হাজার ৭৫৮ জনকে হজে পাঠানোর জন্য হজ চুক্তি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশী হজযাত্রীদের কোটা আগেই কমানো হলেও এর প্রায় দুই মাস পর সেই সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেল। জাতীয় হজনীতির পাশাপাশি হজ প্যাকেজেও কয়েকটি সংশোধনী আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আগে একেকটি হজ এজেন্সি সর্বনিম্ন ৫০ জন হজযাত্রী থাকলে তাদের হজে পাঠাতে পারত। এখন দেড় শ’ হজযাত্রী না থাকলে কোনো এজেন্সি হজযাত্রী পাঠাতে পারবে না। আগে ব্যক্তিগতভাবে বা ব্যাংকে অর্থ জমা দিয়ে হজযাত্রীদের কোরবানির সুযোগ ছিল। এখন বাধ্যতামূলকভাবে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে কোরবানি করতে হবে। শফিউল আলম জানান, অনলাইনের মাধ্যমে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে সেখান থেকে কুপন নিয়ে কোরবানি করতে হবে। ব্যক্তিগতভাবে আর কোরবানি করা যাবে না।
তিনি জানান, আরাফাতের ময়দানে ওয়াটারকুলার বসাতে প্রত্যেক হজযাত্রীর জন্য অতিরিক্ত দেড় শ’ সৌদি রিয়াল ব্যয় হবে। এই অর্থ হজযাত্রীদের অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ থেকে বহন করা হবে। এ জন্য অতিরিক্তি অর্থ নেয়া হবে না।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত বছর আরাফাতের ময়দানে অতিরিক্ত গরমে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন, কেউ কেউ মারা যান। এ জন্য সৌদি সরকার জানিয়েছে, গরমের কষ্ট কমাতে ওয়াটারকুলারের ব্যবস্থা করবেন তারা।
আবাসন, বাড়িভাড়া ও ক্যাটারিং খরচ বাবদ সব অর্থ অনলাইনে পরিশোধ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, অন্য কোনোভাবে লেনদেন করা যাবে না।
পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন দিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পহেলা বৈশাখের মধ্যে পরিশোধের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে ৩০০ কোটি টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল (সোমবার) মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে বলেন, পাট শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য ৩০০ কোটি টাকা দিয়ে দিন। আপনারা পহেলা বৈশাখ পালন করবেন, পাটকল শ্রমিকরা রাস্তায় থাকবেনÑ এটা হয় না। দ্রুত এ টাকা দিয়ে দিন। পহেলা বৈশাখের আগেই যেন তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হয়। এই ৩০০ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ১ হাজার কোটি টাকা পাট মন্ত্রণালয়কে দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠক শেষে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পাটকল শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। তিনি বলেন, পাটকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের গ্র্যাচুইটি বাবদ ৩০০ কোটি টাকা, ভবিষ্যৎ তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ৩০০ কোটি এবং পাট কেনার জন্য ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া শ্রমিকদের সপ্তাহের মজুরি বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা বকেয়া পড়েছে। কয়েকজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী আজমের এ বক্তব্য সমর্থন করেন। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী পাটকল শ্রমিকদের এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশকে মন্ত্রিসভার সদস্যরা করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানান বলে জানা গেছে। তবে এ সময় অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত বাজেটের আগে এত টাকা সংগ্রহ করা কঠিন বলে মত প্রকাশ করা হয়। তারপরও প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন।
জানুয়ারি-মার্চে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ৬২ শতাংশ
চলতি বছর জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৬২ দশমিক ০৩ শতাংশ, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ বেশি। গত বছর ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এই হার ছিল ৫০ শতাংশ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৬ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের একই সময়ের চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৬-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে মন্ত্রিসভার পারফরম্যান্স অনেক ভালো।
তিনি বলেন, গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ১৩টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৭৯টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছে ৪৯টি। বাস্তবায়নের হার ৬২ দশমিক ০৩ শতাংশ। আরো ৩০টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। অপরদিকে গত বছরের একই সময়েও ১৩টি মন্ত্রিসভা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ৬৬টি। এর মধ্যে ৩৩টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়েছিল। বাস্তবায়নের এই হার ছিল ৫৫ শতাংশ।
শফিউল আলম আরো বলেন, গত তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) মন্ত্রিসভা বৈঠকে নীতি বা কর্মকৌশল ছিল ৩টি, ৫টি চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) অনুমোদিত হয়েছে। আর সংসদে আইন পাস হয়েছে ৯টি।
মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল জাতীয পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা দিবস পালনের প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হজযাত্রী কমল ১২ হাজার

১২ এপ্রিল, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ