পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বি এম হান্নান, চাঁদপুর থেকে : ক’দিন পরই বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখে মেতে উঠবে পুরো দেশ। সেই উৎসবের চিরাচরিত রীতি ‘পান্তা ইলিশ’ ভোজন। সেই রীতিই এখন হারাতে বসেছে। দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে থাকায় এখন পয়লা বৈশাখে ইলিশ যেন সোনার হরিণ। চাইলেও পাওয়া দুষ্কর।
এদিকে গত ১ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে ইলিশ সংরক্ষণে ‘অভয়াশ্রম কর্মসূচি’। আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। এ দু’মাস পদ্মা-মেঘনার অভয়াশ্রম এলাকায় কোনো প্রকার জাল ফেলা যাবে না। ইলিশের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনার ১শ’ কিলোমিটার এলাকাসহ দেশের ৫টি অঞ্চলে চলছে ইলিশের ‘অভয়াশ্রম কর্মসূচি’। নির্দিষ্ট সময়ে কেউ মাছ শিকার করলে তার বিরুদ্ধে জেল জরিমানার বিধান করলেও বন্ধ হয়নি মাছ শিকার। এক শ্রেণির অসাধু জেলে বসে নেই। তারা অবাধে চালাচ্ছে ইলিশের পোনা জাটকা নিধন। তাদের কথা, ‘কি করমু বলেন, সরকার খাদ্য সহায়তা হিসেবে যা দেয় তা দিয়ে তো আর আমাদের চলে না। তাই বাধ্য হয়েই সুযোগ বুঝে নদীতে নেমে পড়ছি।’ ৮০ থেকে ১০০ টাকা দরে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা গোপনে বিক্রি করছে ঐ সব জাটকা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারনে চাঁদপুর শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটসহ বিভিন্ন মাছের আড়ৎ ও বাজারগুলোতে ইলিশের দেখা যায় না। তবে একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে তারা জানায়, মাছ ধরা বন্ধ থাকায় আমদানি কম। যাই আসে গোপনে তা পাচার হয়ে যাচ্ছে। তারা বলেন, বর্তমানে পদ্মার ৬/৭শ’ গ্রামের মাছ ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর ৯শ’ থেকে ১ কেজির ইলিশ ৩ হাজার টাকা। এছাড়াও ফ্রিজিং মাছ অর্থাৎ দক্ষিণাঞ্চল ও বার্মার ইলিশের দাম একটু কম। ৬/৭শ’ গ্রামের ঐসব ইলিশ বর্তমানে ১৩/১৪শ’ টাকা কেজি ও ৯শ’ থেকে ১ কেজির সাইজ ১৭/১৮শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারা বলেন, পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে এসব মাছের দাম আরো বাড়বে।
চাঁদপুর মাৎস্য গবেষনা ইনষ্টিটিউটের ইলিশ গবেষক ড. আনিছুর রহমান জানিয়েছেন, ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে হলে মা ইলিশ ও জাটকা সংরক্ষণের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, দেশে মাছের চাহিদার শতকরা ১১ ভাগ জোগান দেয় ইলিশ। গত বছর সারা দেশে ৩ দশমিক ৮৭ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ উৎপাদিত হয়। যার বাজার মূল্য ১৫ হাজার কোটি টাকার উপরে। এরমধ্যে চাঁদপুরে উৎপাদিত হয় ২০ হাজার ৪১৮ মেট্রিক টন। তবে এ বছর ২১ হাজার মেট্রিক টন আহরণে আমরা কাজ করছি।
তিনি বলেন, চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা হলো ইলিশ বিচরণের প্রধান ক্ষেত্র। এ বৃহৎ অঞ্চলে ইলিশ অবাধে বিচরণ করার সুযোগ পেলে তাড়াতাড়ি বড় আকার ধারণ করতে পারে। তাই সরকার প্রতি বছর নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন। কিন্তু এরপরও অসাধু জেলে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করছে। এটি রোধ করতে না পারলে ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাবে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. সফিকুর রহমান বলেন, জাটকা সংরক্ষণে জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, নৌ-পুলিশসহ ৭টি সংস্থা অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে আমরা ১৯৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দিয়েছি। এছাড়া ২২৭ জেলের কাছ থেকে ৮ লাখ ৬২ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা আদায়, ২৮ লাখ মিটার কারেন্ট জাল আটক ও ১৯ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন ইলিশের পোনা জাটকা জব্দ করে গরীব ও দুস্থদের মাঝে বিতরণ করেছি। তিনি বলেন, গত বছর ফলপ্রসূ অভিযানের কারনে পর্যাপ্ত পরিমান ইলিশ উৎপাদিত হয়েছিল। আশা করছি এ বছর তা আরো বৃদ্ধি পাবে।
কিন্তু জেলা ট্রাস্কফোর্সের অভিযানের পরও অবাধে জাটকা নিধন হচ্ছে। শহরের বড় স্টেশন মাছঘাটসহ নদী তীরবর্তী মাছের আড়ৎগুলোতে গোপনে মাছ কেনা-বেচা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আড়ৎদাররা ব্যক্তি বিশেষের কাছে খুব গোপনে মাছ বিক্রি করছেন। তবে তা শহরের খুচরা বাজারগুলোতে না নিয়ে চলে যাচ্ছে অন্যত্র।
জেলা মৎস্য অফিস সুত্রে জানা গেছে, জেলেদের জাটকা নিধনে নিরুসাহিত করতে সরকার মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সকল জেলেদের খাদ্য সহায়তার পাশাপাশি বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে বিভিন্ন উপকরণ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সরকারি তালিকাভুক্ত চাঁদপুরেরর ৪১ হাজার ৪২ জন জেলেকে খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রথম মাসে জনপ্রতি ৪০ কেজি করে চাল দিয়েছেন। পর্যায়ক্রমে তা জুন পর্যন্ত চলবে। এছাড়াও বিকল্প কর্মসংস্থানের অংশ হিসেবে সেলাই মেশিন, হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল ইত্যাদি উপকরণ বিতরণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে হরিণা ফেরিঘাট এলাকার জেলে রফিক, হাসান, ক্ষুদিরাম, মমিন জানায়, ‘সরকারের নির্দেশ আমরাও মানতে চাই। কিন্তু ৪০ কেজি চাল দিয়ে তো আর সংসার চালানো যায় না। তাইতো জীবনের মায়া না করে, ছেলে-মেয়েদের দু’বেলা দু’মুঠো ভাত জোগাতে নদীতে নেমে পড়ি।’
এ ব্যাপারে চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান কালু ভূঁইয়া বলেন, অভয়াশ্রম মৌসুমে মাছঘাটে সব ধরনের মাছ বেচা-কেনা বন্ধ করা হয়েছে। গোপনে বিক্রি করারও সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এ বছর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে নদীতে ছোট সাইজের ইলিশ ধরা পড়া শুরু হয়। ছোট ইলিশই অভয়াশ্রম শেষে বড় আকার ধারন করবে। তাই অভয়াশ্রম মৌসুমে অসাধু জেলেদের চিহ্নিত করে জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় তার শতভাগ সহযোগিতা রয়েছে বলে তিনি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।