পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এ টি এম রফিক/আবু হেনা মুক্তি/আশরাফুল ইসলাম নূর : আরো একটি ট্রাজিডির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে খুলনার শিল্পাঞ্চলে। প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক গত এক বছর যাবত দফায় দফায় আন্দোলন সংগ্রাম করলেও তাদের দাবির প্রতি কর্ণপাত করেনি সরকার। যদিও অর্থমন্ত্রীর আপত্তি সত্ত্বেও গতকাল মন্ত্রী পরিষদের সাপ্তাহিক বৈঠকে পহেলা বৈশাখের আগেই আন্দোলনরত খুলনা পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের অর্ধেক পরিশোধ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলছেন, টাকা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
জানা গেছে বকেয়া মজুরি পরিশোধ, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ ৫ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দফায় সকাল-সন্ধ্যা রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে শ্রমিকরা। একই সাথে চলছে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। একই সাথে এই আন্দোলনে কোন শ্রমিক কর্মচারী নিহত হলে তার পরিবারকে ৫লাখ টাকা সহায়তা প্রদান করা হবে বলে ঘোষণা করেছে শ্রমিক সংগঠন। ধর্মঘট-অবরোধ চলাকালে গতকাল (সোমবার) খুলনা-যশোর মহাসড়কেই দুপুরের খাবার খেলেন খুলনাঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত জুটমিল শ্রমিকরা।
খুলনা মহানগরীর খালিশপুর নতুন রাস্তা মোড়ের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম তিনটি স্পটে প্লাটিনাম, ক্রিসেন্ট ও স্টার জুট মিলের শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে নোঙরখানা খোলে। এখানে রান্না শেষে থানা, বাসন, গামলা ও কলার পাতার ওপর শ্রমিকদের খাবার পরিবেশন করা হয়। আন্দোলনরত হাজার হাজার শ্রমিক সেখানে বসেই তাদের দুপুরের খাবার সেরে নিলেন।
এদিকে, শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধের সিদ্ধান্ত হলেও শ্রমিকরা অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো: সোহরাব হোসেন জানান, শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রীকে এক হাজার কোটি টাকা প্রদানের জন্য বলেছেন। তবে আমরা অর্থ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের দাবি বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে অর্থ প্রদানের কথা বলেছেন। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে শ্রমিকদের অর্থ পরিশোধের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে অর্থ স্ব-স্ব মিলের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ না করা পর্যন্ত এবং দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে চুক্তি স্বাক্ষর না হওয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে।
সরেজমিন দেখা গেছে, খুলনার খালিশপুরস্থ নতুন রাস্তা মোড়, আটরা গিলাতলা ও যশোরের অভয়নগরের রাজঘাট শিল্প এলাকার সাতটি জুট মিলের ৩৫ সহ¯্রাধিক শ্রমিক তীব্র্র তাপদাহে এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। শ্রমিকদের আন্দোলন কর্মসূচিতে মিলগুলো অচল হয়ে পড়েছে। অবরোধের কারণে খুলনার সাথে সারাদেশের রেল ও সড়কপথে যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এতে সাধারণ যাত্রী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও অফিসগামী মানুষকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। চলমান আন্দোলন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে খুলনার খালিশপুরের প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট জুট মিল, দিঘলিয়ার স্টার জুট মিল, আটরা শিল্প এলাকার ইস্টার্ন ও আলিম জুট মিল এবং যশোর নওয়াপাড়া রাজঘাট এলাকার যশোর জুট মিল লিমিটেড (জেজে আই) ও কার্পেটিং জুট মিল। পাঁচ দফার মধ্যে রয়েছে পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি প্রদান, মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন, মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান, আলীম জুট মিল ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর প্রক্রিয়া বাতিল।
অবরোধস্থলেই নোঙরখানা : বকেয়া মজুরি পরিশোধ, পাট খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দসহ পাঁচ দফা দাবিতে লাগাতার সকাল-সন্ধ্যা রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করে শ্রমিকরা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের ডাকা ধর্মঘটের গতকাল (সোমবার) ছিল সপ্তম দিন। আর দ্বিতীয় দফায় ডাকা লাগাতার রাজপথ ও রেলপথ অবরোধের প্রথম দিনে সোমবার সকাল থেকে শ্রমিকরা মিছিল সহকারে খুলনা-যশোর মহাসড়কের তিনটি স্পটে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি পালন করছে।
সরেজমিন দেখা যায়, স্থানীয় বিত্তবানদের সহায়তায় শ্রমিকরা নতুন রাস্তার মোড়ে খুলনা-যশোর মহাসড়কের ওপর নোঙরখানা খুলেছে। এখানে শ্রমিকদের জন্য দুপুরের খাবার রান্না করা হচ্ছে। স্পটে আন্দোলনরত তৃষ্ণার্থ শ্রমিকদের জন্য লেবুর শরবত এবং বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তীব্র তাপদাহে শ্রমিকদের বসার জন্য মোড়ের গোলচত্বরে মঞ্চ, উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশে সামিয়ানা দেয়া হয়েছে। এখানে শ্রমিকরা অবস্থান করছে। অবরোধ স্পটের চতুর্দিকে লাল পতাকা এবং কাঠের গুঁড়ি ফেলে যানচলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্টার জুট মিলের স্পিনিং বিভাগের শ্রমিক আবুল কালাম আজিম বলেন, ৮ সপ্তাহ ধরে মজুরি পাই না। টাকা-পয়সা কাছে নেই। গত রোববার বাড়ির আঙিনায় থাকা একটি গাছ কেটে তার লাকড়ি বিক্রি করে কোনোরকম ছেলে-মেয়েদের খাবার জুগিয়েছি। এ অবস্থায় চলা যায় না। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ছে। আর সেখানে শ্রমিকরা না খেয়ে মরছে। শ্রমিকদের বাদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব কি না জানি না। আমাদের বাল-বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা পরিশোধের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত জুট মিল সিবিএ-ননসিবিএ ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব এস এম জাকির হোসেন জানান, ৪ এপ্রিল থেকে লাগাতার ধর্মঘট পালন করে আসছি। সেই সাথে গতকাল (সোমবার) থেকে লাগাতার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ চলছে। এদিকে, মঞ্চে শ্রমিকদের আন্দোলনের সাথে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তৃতা করেন।
এদিকে গতকাল সকালে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ হারুনুর রশীদ শ্রমিকদের দাবী দাওয়ার বিষয়ে একাধিকবার পাট মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছেন।
১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
এদিকে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতনের পরিমান প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে পহেলা বৈশাখের আগে ৩০০ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া এই মৌসুমে পাট কেনার জন্য ২০০ কোটি টাকা এবং পাট খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আরো ৫০০ কোটি টাকাসহ মোট ১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. নাজমুল আহসান বলেন, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনাসহ বিজেএমসিকে এক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে শ্রমিক নেতাদের জানানো হয়েছে।
বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীকে দায়িত্ব প্রদান
একটি সূত্র জানায়, পাটজাত দ্রব্য ব্যবহার ও পাটের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং পাটকলগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য গতকাল বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু পাট নিয়ে রাজনীতি করেছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধ হয়েছে পাট নিয়ে। দেশ ভাগ হয়েছে পাট নিয়ে। কাজেই পাটকে বাঁচাতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।