পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
আড়ং, দেশি দশ বা দেশীয় যেকোনো ব্র্যান্ডের কাপড় কিনতে এখন থেকে বাড়তি টাকা গুনতে হবে। কারণ, দেশীয় ব্র্যান্ডের পোশাকে ভ্যাটের হার এক শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের নতুন বাজেটে এ প্রস্তাবনা দেওয়া হলেও এরই মধ্যে তাৎক্ষণিক নির্দেশনায় ভ্যাট কাটার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বাজেট পাস হওয়ার আগেই এই ভ্যাট কার্যকরের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্রেতারা। উদ্যোক্তারাও বলছেন, এর প্রভাব পড়বে তাদের ব্যবসায়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নিজস্ব ব্র্যান্ডের তৈরি পোশাক বিপণন ও নিজস্ব ব্র্যান্ড ব্যতীত তৈরি পোশাক বিপণনে ভ্যাট চার শতাংশ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ শতাংশ করা হয়েছে। সাধারণত নতুন অর্থবছরের শুরু থেকে ভ্যাট কার্যকরের নিয়ম থাকলেও এসআরও বা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে এটি কার্যকরের নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। ঈদকে সামনে রেখে এরই মধ্যে কেনাকাটা শুরু করে দিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। চাকরিজীবীরাও বোনাস হাতে পেয়েছে স্বজনদের নিয়ে ছুটছেন কেনাকাটায়। আর গত কয়েকবছর ধরেই পোশাকের ক্ষেত্রে তাদের আস্থায় জায়গা করে নিয়েছে দেশি ব্র্যান্ডগুলো। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে ক্রেতাদের অনেকেই লক্ষ করছেন না, তাদের কাছ থেকে এসব দোকানে কতটুকু ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে। যারা খেয়াল করছেন, তারা বেশ ক্ষুব্ধ।
রাজধানীর বেইলী রোডের ইয়োলো শোরুমে দেখা গেল এমন একজন ক্রেতাকে। বাজেট পাসের আগেই কেন এক শতাংশ বেশি ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে, তা জানতে চান বিক্রয়কর্মীর কাছে। ইয়োলোর বিপণন বিভাগের কর্মচারীরা ক্রেতাকে সরকারি নির্দেশনা দেখিয়ে জানান, এই টাকা এখনই নেওয়ার নির্দেশনা সরকার থেকে দেওয়া হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কিছু করতে পারবেন না। ইয়োলোর বিপণন বিভাগের জোন হেড শাহরিয়ার বলেন, আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছে, এই সিদ্ধান্ত ৭ জুন থেকেই কার্যকর করা হবে। আমরা যদি ভ্যাট না নেই, তবে আমাদের জরিমানা দিতে হবে। তাই আমরা বাড়তি ভ্যাট যুক্ত করে দিয়েছি।
শাহরিয়ার আরো বলেন, আমরা যে ক্যাশ মেমো বানাই তা সরাসরি ভ্যাট চালানের সঙ্গে যুক্ত থাকে। ফলে আমরা যে টাকা নেই, তা সরকারের কোষাগারেই জমা হয়। এখানে বেশি টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অতিরিক্ত ভ্যাট আদায় নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে বাকবিতন্ডা হয় আর্টিজানের একটি আউটলেটেও। বিক্রেতারা বলছেন, এটা সরকারি নির্দেশনা; আর ক্রেতারা বলছেন, অঞ্জনস-দেশাল-আড়ংয়ের মতো শপগুলো এখনও চার শতাংশ হারেই ভ্যাট নিচ্ছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাট প্রশাসন সদস্য (মূসক বাস্তবায়ন ও আইটি) সুলতান মো. ইকবালের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড পোশাক বিপণনে ভ্যাট বাড়ানোর নির্দেশনা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর করতে বলা হয়েছে। হয়তো অনেক ব্র্যান্ড এখনও তথ্য পায়নি। তাদের যত দ্রæতসম্ভব জানানো হবে।
এদিকে, ঈদের মধ্যে এভাবে ভ্যাট বেড়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। বনানী কে-ক্রাফটে কেনাকাটা করতে আসা নওশীন ইকবাল জানান, দেশি ব্র্যান্ডের পোশাকের এমনিতেই অনেক দাম। তাও নিজেদের দেশের পোশাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য এগুলো কিনি। এভাবে যদি এই খাতে ভ্যাট বাড়তেই থাকে তাহলে পোশাকের দামও বাড়বে। পরে এ পোশাক হয়তো আর কেনার সামর্থ্য থাকবে না। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মিথুন বলেন, বাইরে খেতে গেলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। এখন পরতে গেলেও পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে। দুই ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচও বাড়তির দিকে। তাই, এই ভ্যাট বাড়ানোয় সারামাসের খরচ নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। ব্যাংক কর্মকর্তা জাহিদ আড়ংয়ে এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে। তিনি বলেন, ভ্যাট না বাড়িয়ে বরং কমানো উচিত। ভ্যাটের টাকায় সরকার উন্নয়ন কাজ করুক, তাই চাই। কিন্ত চারদিকে রাস্তাঘাটের দুরবস্থা থেকে শুরু করে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতির কারণে ভ্যাট দিতে অনীহা আসে। সরকারিভাবে নাগরিক সুবিধা বাড়ালে খুশিমনেই ভ্যাট দিতেন বলে জানান তিনি।
পোশাকের বিপণনে দাম বাড়ায় দেশি পোশাক শিল্পে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিবিয়ানার স্বত্বাধিকারী লিপি খন্দকার। তিনি বলেন, আমদানি করা ভারতীয় পোশাকের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতায় কোনোমতে টিকে আছে দেশীয় পোশাক শিল্প। ভারতীয় পোশাকের উৎপাদন অনেক বেশি, ফলে উৎপাদন খরচ কম। লিপি খন্দকার আরো বলেন, এছাড়াও একটি ডিজাইনের এত ধরনের অবিকল প্রতিরূপ তৈরি হয় যে দাম অনেক কমে যায়। সাধারণ ক্রেতা দামের বিষয়টি যত সহজে বিবেচনা করতে পারে, মানের বিষয়টি সেভাবে ধরতে পারে না। ফলে কম দাম দেখে সবাই ভারতীয় পোশাকের দিকেই ছুটে, জানান তিনি।
লিপি খন্দকার বলেন, আমাদের পোশাকের চাহিদা কম হওয়ায় এমনিতেই উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়। এখন বিপণনেও যদি খরচ বেড়ে যায় তবে দাম বেড়ে যাবে অনেকটাই। এই বাড়তি দাম ক্রেতাদের দেশীয় পোশাক থেকে বিমুখ করবে, এমনই আশঙ্কা এ দেশীয় পোশাক উদ্যোক্তার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।