Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্বনবীর সর্বোত্তম সুন্নাহ্ : দাওয়াহ

এ. জেড. এম শামসুল আলম | প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মানব সৃষ্টির প্রথম পর্যায়ে আল্লাহ্তায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি ছিলেন হযরত আদম (আ:) ও হযরত হাওয়া। তাঁদের সন্তানদের মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট মানব কারা? অবশ্যই নবী-রাসূলগণ। তাঁরা তাঁদের নিজ নিজ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বোৎকৃষ্ট মানব। কোনো যুগের সেরা আদম সন্তানের উপরই আল্লাহ্তায়ালা নবুওয়েত এবং রেসালতের সম্মান ও দায়িত্ব অর্পণ করেন। নবী-রাসূলগণ যেহেতু মানবজাতির সেরা, তাঁদের আমলও ছিল সর্বোত্তম।
এই পৃথিবীতে নবী-রাসূলদের ভূমিকা কি ছিল? অন্য সব মানুষের মতো তাঁদের ক্ষুধা-তুষ্ণা ছিল। জীবনসঙ্গী, পোশাক-পরিচ্ছদ, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের প্রয়োজন ছিল। এসব প্রয়োজন পরিপূর্ণ করতে তাদের কিছু সময় ব্যয় হতো। তদুপরি যে মহান স্রষ্টা আল্লাহতা’য়ালা তাদের সৃষ্টি করেছেন, সেই স্রষ্টার যিকির করতে হতো।
কৃতজ্ঞতায় আল্লাহতায়ালার নিকট নবী-রসূলগণকে মাথা নত করতে হতো। এবাদত করতে হতো। এ ধরনের আমল ছাড়া নবী-রাসূলদের প্রধান কাজই ছিল তাবলীগ এবং দাওয়াহ, অর্থাৎ দ্বীন প্রচার এবং দ্বীনের দিকে আহ্বান। ঐ আমলগুলো ছিল মানবজাতির সকল কার্যের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বোত্তম।
আমাদের অনেকের পক্ষে সর্বোত্তম মানব হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যে কোনো ব্যক্তির পক্ষেই সর্বোত্তম কাজে অন্তর শরীক হওয়া সম্ভব এবং অতি সহজ। আর এ কাজ হলো দ্বীন ইসলামের তাবলীগ (প্রচার) এবং দ্বীন ইসলামের দিকে দাওয়াহ (আহ্বান)।
নুবুওয়াতী জিন্দেগীর দায়িত্ব : হযরত মুহাম্মদ (সা:) ছিলেন সর্বশেষ নবী। তাঁর পরে আর কোনো নবীর আবির্ভাব হবে না। তাঁর মাধ্যমে আল্লাহর বাণী আল্লাহর বান্দার নিকট প্রেরিত হতো। তাঁর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গে নুবুওয়াতের ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু আল্লাহর বান্দার সঠিক পথের দিশার জন্য আল্লাহর বাণীর প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়নি। মানুষের ময়দানে তাবলীগ এবং দাওয়াহ্’র প্রয়োজন আছে।
পরিবার, বংশধর, অনুসারীদের জন্য রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সা:) কোন অর্থ-বিত্ত সম্পদ-সম্পত্তি রেখে যাননি। নবীদের বিত্ত-সম্পত্তি তাঁদের কোনো উত্তরাধিকারী পায় না। নবীগণ যে সম্পদ রেখে যান, তা’হলো তাদের প্রচারিত আদর্শ। রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর অনুসারীদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য হলো- তাঁর প্রচলিত আদর্শ সংরক্ষণ করা, অনুসরণ করা, সম্প্রচার করা এবং রাসূলের সুন্নাহর দিকে মানুষের আহ্বান করা, দাওয়াত দেওয়া।
আজকাল দাওয়াহ শব্দের আসল অর্থই আমরা বিকৃত করে ফেলেছি। এখন আমার দাওয়াহ বা দাওয়াত বলতে বুঝে থাকি- খাওয়ার জন্য দাওয়াত, ভূরি ভোজন ও পেট পূজার আহ্বান। নুবুওয়াত এবং রেসালত-এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি মুবারক পকিত্র শব্দ এবং বরকতময় আমলের কী করুণ অপব্যাখ্যা!
রাসূলুল্লাহ্ (সা:)-এর মৃত্যুর পর তাঁর রেখে যাওয়া খেজুর বাগান ফেদাক এবং সম্পত্তি প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রাঃ) রাষ্ট্রীয় বায়তুল মালে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। খাতুনে জান্নাত ফাতেমা (রা:) পিতার ফেদাক বাগানটি উত্তরাধিকারী হিসেবে দাবি করেছিলেন। যেহেতু নবীদের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী কেউ হয় না, তাই হযরত আবু বকর (রা:) নবীকন্যা ফাতেমাকে তা উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রদান করেননি। বরং তাঁর প্রয়োজন মিটাবার জন্য অর্থের ব্যবস্থা বায়তুল মাল থেকে করেছিলেন।
নবুওয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গেছে। এর অর্থ কি এই যে, সব মানুষই ইসলাম কবুল করে সঠিক জীবন ব্যবস্থার সন্ধ্যান পেয়ে গেছেন? সকলেরই আমল ভাল হয়ে গেছে? নবীগণ যে কাজ করতেন সে কাজের আর কি কোন প্রয়োজন নেই?
নবুওতের দ্বার বন্ধ হয়ে যাবার পর নবী (সা:) যে ধরনের কাজ করতেন, ঐ ধরনের নবীওয়ালা কাজের প্রয়োজন রয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, বরং বেড়ে গেছে। নবীদের অনুসৃত তাবলীগ এবং দাওয়াহ’র কাজ চালিয়ে যেতে হবে। এ কাজের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো উলামা-উল-মুকাররামুনের অর্থাৎ সম্মানিত আলিমদের উপর। তাঁদের জন্য এটা ফরজ। কারণ, তাঁরাই হলেন নবীদের ওয়ারিস বা উত্তরাধিকারী।
পরলোকগত পিতার দায়িত্ব কে পালন করে? : পরিবারের প্রধান হলেন পিতা। মৃত্যুর পর তিনি আর ফিরে আসেন না। ভ্রাতাদের মধ্যে কেউ পিতা হয়ে যান না। সন্তানেরা সারা জীবনের জন্য পিতৃহারা হন। কিন্তু পিতা যে দায়িত্ব পালন অথবা জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা অথবা যোগ্যতাম ভ্রাতা বা ভগ্নি পরিবারটি সঠিকভাবে পরিচালনার দুর্বলগণ তাদের নিজেদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে না পারা পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ অথবা যোগ্যতরগণ কনিষ্ঠদের দেখাশোনা করেন।
যদি কোনো ভাই বা ভগ্নির পক্ষে সংসারের দেখাশোনা এবং দায়িত্ব সকলের সন্তোষজনকভাবে বহন করা সম্ভব না নয় এবং অন্যেরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের যোগ্যতা অর্জন করে- তখন দায়িত্ব সন্তানদের মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। সংসার ভাগ হয়ে। সম্পত্তি ভাগ হয়। পিতা সংসার যে দায়িত্ব পালন করতেন, সে সংসার ততটুকু সন্তোষজনক না হলেও প্রতিপালিত হয়। কাজ বন্ধ হয়ে যায় না, তবে দায়িত্ব পালনকারী পরিবর্তিত হয় বা তাঁদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
ধরুন কোনো ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় বেশ কিছু সম্পত্তির মালিক হয়েছিল। একটি বৃহৎ বাড়ি নির্মাণ করেছিল। হঠাৎ তিনি এক কন্যা এবং দু’পুত্র রেখে মারা গেলেন। পুত্র-কন্যারা সাবালক। মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ও ঘরবাড়ি দেখাশোনা করা কার দায়িত্ব? এটা কি তার সন্তানদের দায়িত্ব নয়? এ সম্পত্তি নিলাম বিক্রয় হয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীরা কি প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদেরকে অকর্মণ্য, অপদার্থ বা কুলাঙ্গার বলে ধিক্কার দেবেন না? একজন কষ্ট করে বিরাট সম্পত্তি অর্জন করলেন, অথচ অকর্মণ্য সন্তানেরা তা সংরক্ষণ ও ভোগ করতেও পারলো না।
আল্লাহর রাসূল (সা:) সর্বোৎকৃষ্ট ধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। এর মান সংরক্ষণ এবং সম্প্রসারণ কি তাঁর অনুসারীদের দায়িত্ব নয়?
নবীদের প্রতি অনুসারীদের দায়িত্ব : পুত্রদের প্রতি রয়েছে পিতার দায়িত্ব। স্বামীর রয়েছে স্ত্রীর প্রতি, চিকিৎসকের দায়িত্ব রয়েছে রোগীদের প্রতি। ক্লায়েন্ট এবং গ্রাহকদের স্বার্থের দিকে লক্ষ্য রাখেন ব্যবসায়ী এবং দোকানদার। কারণ গ্রাহকদের প্রতি ব্যবসায়ীর দায়িত্ব আছে। ছাত্রদের স্বার্থ শিক্ষক উপেক্ষা করতে পারেন না। ছাত্রদের পরীক্ষায় সফলকাম হওয়ার জন্য শিক্ষকের কর্তব্য রয়েছে। প্রশাসক সাধারণ মানুষের স্বার্থের প্রতি সচেতন। মজলুমের প্রতি রয়েছে বিচারকের দায়িত্ব। মুসলিম জনগণের কোনো দায়িত্ব কি নেই তাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর প্রচারিত আদর্শের প্রতি?
জনগণের সম্পর্ক রয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। এ সম্পর্কের ভিত্তি হলো বংশধারা, আত্মীয়তা, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি। একই সমাজে বাস করলে নাগরিকদের পরস্পরের প্রতি সামাজিক দায়িত্ব এবং সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। একের উপর অন্যের অধিকার জন্মে।
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর কোনো হক অথবা অধিকার কি তাঁর অনুসারীদেরক উপর নেই? তাঁর প্রতি আমাদের কি কোন কর্তব্য নেই? তাঁর থেকে আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার কি কিছুই নেই? আল্লাহর দ্বীন পাওয়ার পর নবী (সা:)-এর প্রতি আমাদের নির্ভরতা এবং প্রয়োজনীয়তা কি শেষ হয়ে গেছে? আমার কি আমাদের প্রিয় নবীর কিছুই চাই না।
যদি রাসূলের কাছে আমাদের চাওয়া এবং পাওয়ার কিছু থাকে, তবে তাঁর প্রতি আমাদেরক দায়িত্ব এবং কর্তব্যও থাকা স্বাভাবিক। আমাদের মূল্যবান সময়ের অল্প কিছু অংশকে আমরা কি এমন কাজে ব্যয় করতে পারি না- যে কাজের জন্য মহানবী (সা:) ধরার ধুলায় আবির্ভূত হয়েছিলেন। তিনি কি মূলত: আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য প্রেরিত হননি?
প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর নিকট যে কাজ সবচেয়ে প্রিয় ছিল, ঐ কাজ করার সময় আমাদের হয় না। আমাদের অফিস আছে, ব্যবসা আছে, শিল্প-বাণিজ্য আছে, ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজন আছে।
মা বৃদ্ধা, অসুস্থ। মৃত্যুপথযাত্রী মায়ের সন্তানেরা কি চাকরিজীবী হলে অফিসে যায় না? কোনো ব্যবসায়ী কি বলেন যে, তিনি তার দোকানে বা কর্মস্থলে যেতে পারবেন না। কারণ সবগুলো সন্তানই অপ্রাপ্ত বয়স্ক।
শিশু-সন্তান, প্রিয় ভার্যা, বৃদ্ধ পিতা-মাতা থাকা সত্তেও অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, সমাজসেবা সব কিছুই চলে। ব্যস্ততা সত্তেও বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য সময় করে নেয়া সম্ভব হয়। কিন্তু, আমরা আমাদের ব্যস্ত তার কারণে প্রিয় নবীর সর্বোত্তম কাজের জন্য সময় বের করতে পারি না!
প্রাথমিক কাজ : তাবলীগ (প্রচার) এবং দাওয়াহ (আহ্বান) হলো একজন মুসলিমের প্রাথমিক এবং বুনিয়াদি কাজ। মিরাজের রজনীতে সালাতের (নামাজের) আদেশ হয়। মিরাজ সংঘটিত হয়েছিল হিজরতের আঠারো মাস পূর্বে। নবুয়তের প্রথম সাড়ে এগার বছর পর্যন্ত আল্লাহর জিকির, তাসবীহ, তাহলীল ইত্যাদি ছিল। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতির সালাত বা নামাজ ছিল না। আমরা যেভাবে নামাজ পড়ি নুবুওয়াতের প্রাথমিক যুগে মিরাজের রাজনীর পূর্বে তা ছিল না। কিন্তু নবুওয়াতের শুরু হতেই ছিল তাবলীগ এবং দাওয়াহ’র মৌলিক আমল।
আল্লাহর রাসূলের একটি মৌলিক সুন্নাহ বা কর্মপদ্ধতি ছিল অগ্রাধিকারভিত্তিক ফরজ কাজের সময় তিনি নফল কাজ করতেন না। নফল মুস্তাহাব পালন তিনি করতেন, তবে নিয়মিত ফরজ ও ওয়াজিবের পর। তাবলীগ এবং দাওয়াহ ছিল ইসলাম কবুলের করেই সাহাবীদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকারমূলক কাজ। ইসলাম কবুলের পর একজন মুসলিমের প্রাথমিক কাজ হলো- যা তিনি জেনেছেন এবং গ্রহণ করেছেন সে পথের শাহাদত (ঘোষণা) দেয়া এবং অন্যকে সে পথে আহ্বান (দাওয়াহ) করা। দাওয়াহ ঈমানকে মজবুত করে।
তাবলীগ (প্রচার) এবং দাওয়াহ (আহহ্বান) ছাড়া মুসলিম সমাজ হতো না। তাবলীগ এবং দাওয়াহ’র মাধ্যমেই মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি শুরু হয়। আজকাল অবশ্য জন্মগত কারণে মুসলিমদের সংখ্যা বৃদ্ধি হচ্ছে। মাহনবী (সা:) যখন ইসলাম বৃদ্ধিকরণে। এককভাবে দ্বীনের অনুসরণ কষ্টসাধ্য। প্রাথমিক মুসলিমদের প্রতি অমানুষিক অত্যাচার সত্তে¡ও দ্বীনের বাণী প্রচারে এবং মুসলিমের সংখ্যা বৃদ্ধিতে আল্লাহর রাসূল (সা:) নিরুৎসাহী ছিলেন না।
দাওয়াহ একটি নবীওয়ালা তরীকা : বর্তমান মুসলিম সমাজের বহু সমস্যা আছে। একটি হলো, আমরা প্রায় সকলেই পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুসারী ও হাস্যাম্পদ মোসাহেব এবং ‘চামাচায়’ পরিণত হয়েছি। সকলেই যদি মোসাহেব বা ক্লাউন হই, স্বাভাবিক আচরণ কষ্টকর।
তাবলীগ এবং দাওয়াহ-এর ফলে ইসলামের অনুসারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। বিশ্বাসী মুসলিমদের একটি সমাজ তৈরি হয়। অমুসলিমদের মধ্যে ইসলামী আখলাক ও আদর্শের প্রচার এবং আমলকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হলো অগ্রাধিকারমূলক প্রাথমিক কাজ।
ওয়াজ মাহফিল, সভা, সম্মেলন, সেমিনার অনুষ্ঠান করা তাবলীগ এবং দাওয়াহ’র উত্তম পদ্ধতি। ইসলামের প্রাথমিক যুগে ওয়াজ মাহফিল, সেমিনার, সম্মেলন, তাবলীগের ফলপ্রসূ প্রক্রিয়া ছিল না। সেমিনার, ওয়ার্কশপে এবং সম্মেলনেও উৎসাহ সহকারে যোগদানের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক মুসলিম মক্কী সমাজে ছিল না।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কাবা ঘরে বা মদিনার সমজিদে এ আশায় বসে থাকতেন না যে, লোকজন দলে দলে আগমন করে তাঁর কাছে ইসলামে বায়য়াত নেবে। রাসূলুল্লাহ (সা:) এবং প্রাথমিক সাহাবীগণ ইসলামের দাওয়াত নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতেন।
ইসলামের বাণী বহন করে বাড়িতে বাড়িতে গাস্ত্ বা ঝাউলাতে গমনই ছিল ইসলাম প্রচারের প্রাথমিক পদ্ধতি। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) অবশ্যই বলেছেন, “এক সকাল অথবা এক বিকাল আল্লাহর রাস্তায় চলা দুনিয়া এবং আসমান- এই দুয়ের মাঝখানে যা আছে সব কিছুর চেয়ে উত্তম।” তদুপরি রাসূলুল্লাহ (সা:) কি বলেননি- “আমার একটি বাক্যও যদি তোমাদের জানা থাকে, তা মানুষের কাছে পৌঁছিয়ে দাও”? হযরত আবু বকর (রা:) ইসলাম কবুল করার পর আল্লাহর রাসূলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন- (ইসলাম কবুলের পর) এখন আমার কী কাজ? রাসূলুল্লাহ (সা:) জওয়াবে বলেছিলেন, “আমার যে কাজ তোমরও সেই কাজ।”
রাসূলুল্লাহর জন্য আমাদের জীবনের কিছু সময় ও স্থান : যাত্রীভরা একটি রেলগাড়ি স্টেশনে এসে থামল। মানুষের উপর মানুষ। তিঁল ধারণের স্থান নেই কোনো কক্ষে। প্রত্যেকটি কক্ষই বহু যাত্রীতে ঠাসা। আর একজনেরও বসায় জায়গা নেই। কোনো যাত্রী দরজা ঠেলে প্রবেশ করতে চাইলেই বহু কণ্ঠ একসঙ্গে বলে ওঠে-জায়গা নেই, জায়গা নেই। ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই।
দরজার পাশের আসনটিতে বসে আছেন একজন যাত্রী। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলেন তার চাচাতো ভাই লাফ দিয়ে ট্রেনের হ্যান্ডেল ধরেছে এবং ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করছে। তাকে দেখে তিনি দরজা ঠেলে একটু ফাঁক করলেন। ভাইকে ভিতরে ঢোকার একটু সুযোগ করে দিতে চাইলেন। কয়েকজন বাধা দিলেন। দরজার কাছেই ঐ যাত্রী বললেন, “এ ব্যক্তি আমার ভাই। দরজার হ্যান্ডেল ধরে আছে। পড়ে যেতে পারে। একটু জায়গা অবশ্যই দিতে হবে।” সহানুভূতিশীল যাত্রীরা বলে উঠল, “মানলাম, তিনি আপনার ভাই। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তাকে জায়গা দেবেন কোথায়, কক্ষে তো তিল ধারণের ঠাঁই নেই।”
ভিতরের চাচাতো ভাই যাত্রী বলেন, “আমি আপনাদের কারো অসুবিধা করবো না। আমার বসার আসনটি তাকে ছেড়ে দেব। তার সামনে গা ঘেঁষে আমি দাঁড়িয়ে থাকবো।” অগ্যতা দরজায় ঝুলন্ত যাত্রী রেলগাড়ীর কক্ষে স্থান পেলেন।
আমাদের জীবনের গাড়ি দখল করে নিয়েছেন আমাদের ভাই-বোন, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন, দারা-পুত্র-কন্যা। আরো আছে বন্ধু-বান্ধব, পরিচিতজন। সব কিছুই উপরে আছে চাকরি, কৃষি ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা। প্রত্যেক কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সময় আমাদের প্রত্যেকের হয়ে যায়।
মৃত্যুর দিকে প্রতিনিয়ত অগ্রসরমান আমাদের জীবনের রেলগাড়িতে রসূলূল্লাহ্ (সা:) এবং তাঁর জীবনব্যাপী প্রিয় সাধনার জন্য কিছু স্থান এবং কিছু সময় কি আমার করে নিতে পারি না?
আল্লাহর রাসূল (সা:) প্রতিদিন তাবলীগ এবং দাওয়াহ’র (অমুসলিমদেরকে দ্বীনের দিকে আহ্বান) যে কাজ করেছেন, সে কাজের জন্য কিছু সময় কি আমাদের হবে না? আসুন, আমরা চেষ্টা করি প্রতিদিনই আল্লাহর দেয় চব্বিশ ঘন্টা সময় থেকে অন্তত আড়াই ঘণ্টা আল্লাহর প্রিয় নবী রাসূলুল্লাহ (সা:) যে ধরনের কাজ করতেন সে কাজের জন্য আলাদা করে রাখি। যে কাজের জন্য আল্লাহ্ তাঁর নবীদেরকে এবং নবীর অনুসারীদের সৃষ্টি করেছেন- ঐ কাজে আমরাও আমাদের জীবনের কিছু অংশ ব্যয় করি।
লেখক : সাবেক সচিব



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্বনবী


আরও
আরও পড়ুন