Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা এবং দলবাজ ডাক্তার

| প্রকাশের সময় : ১৩ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 স্টালিন সরকার : বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চলছে বিতর্কের ঝড়। ফেসবুক, বøগ, টুইটার, পত্রিকার পাঠক মতামত সর্বত্রই আলোচনা-সমালোচনা, তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে বেগম জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় বিতর্কে জড়ানো বেশির ভাগ মানুষের অভিমত তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অসুস্থ বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা জরুরী। সর্বাগ্রে তাঁর রোগ নিরাময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি যেখানে এবং যে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা সেবা নিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন সেখানেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত। গত ৮ এপ্রিল চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। চিকিৎসা নিয়ে কারাগারে ফিরে তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। এখন তিনি সেখানে চিকিৎসা নিতে ভরসা পাচ্ছেন না। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেছেন বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে তাঁর ওপর রাজনৈতিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে। সেই নির্যাতনের দীর্ঘায়িত করতেই চিকিৎসা সেবার দেয়ার নামে বিএসএমএমইউতে দলবাজ চিকিৎসকদের কাছে নেয়ার চেষ্টা চলছে। 

৯ জুন কারবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তাঁর ব্যাক্তিগত চিকিৎসক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. এফএম সিদ্দিকী, নিউরো বিশেষজ্ঞ সার্জন ডা. ওয়াহিদুর রহমান, চক্ষুবিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আবদুল কুদ্দুস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ মামুন। তারা জানান, নানা রোগে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়া ৫ জুন মাইল্ড স্ট্রোক করে। এটা মেজর স্ট্রোকের লক্ষণ। সুচিকিৎসা না পেলে যে কোনো সময় তিনি মেজর স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। অধ্যাপক ওয়াহিদুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি দুর্বল, প্র¯্রাবে সংক্রমনসহ বেশ কিছু শারীরিক সমস্যা আছে। ওনার কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা দরকার। তিনি যেহেতু ইউনাইটেড হাসপাতালে অনেক আগে থেকেই চিকিৎসা করতেন। সেজন্য সেখানকার চিকিৎসকরা খালেদা জিয়ার পরিচিত। পেশেন্টের (রোগীর) চয়েস তো সারা পৃথিবীতে আছে। ঢাকা শহরে ১০০টা হার্টের ডাক্তার আছে। আমি তো সব ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করছি না। আমার হার্টের অসুবিধা হলে আমি সবসময় যার কাছে যাই, তার কাছেই যাব। কারাকর্তৃপক্ষও সংবাদ সম্মেলন করে স্বীকার করেছে বেগম জিয়া অসুস্থ। এখন বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা প্রয়োজন। সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রী ও কারাকর্তৃপক্ষ জানায় বেগম জিয়ার চিকিৎসা বিএসএমএমইউতে দেয়া হবে। কিন্তু বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয় ওই হাসপাতালে আওয়ামী লীগপন্থী দলবাজ ডাক্তারদের চিকিৎসায় বেগম জিয়া ভরসা পাচ্ছেন না। তিনি চাচ্ছেন ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে। ইতোমধ্যেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী একাধিকবার সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, বেগম জিয়াকে কারাগারে রাজনৈতিক ভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। কারগারে বিনা চিকিৎসায় বেগম জিয়াকে ক্রমান্বয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তারা অভিযোগ করেছেন বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসায় বেগম জিয়ার ভরসা নেই। কারণ ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে বিপুল সংখ্যক ডাক্তারকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা এতোই দলবাজ যে রোগীর চিকিৎসায় ওরা ‘রাজনীতি’ করতে অভ্যস্ত। যার কারণে সেখানে বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা হবে না। এ ছাড়াও এর আগেও ৮ এপ্রিল বেগম জিয়াকে বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সুচিকিৎসা দেয়া হয়নি। বরং সেখানে চিকিৎসা নেয়ার পর তিনি আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিয়ে বেগম জিয়া আরো অসুস্থ হয়ে পড়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল বিতর্ক হয়; এবং বেগম জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য কারামুক্তির দাবি জানানো হয়। শুধু বিএনপির নেতারা কেন সাধারণ মানুষও মনে করে বিএসএমএমইউ-এর বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের চিকিৎসার ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা কম। সেখানে রাজনৈতিক বিবেচনায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নিয়োগ দেয়ায় ডাক্তাররাও চিকিৎসার নামে রাজনীতি করে থাকেন। দেশের শত শত বুদ্ধিজীবী বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। তারা আরো বলেছেন, বেগম জিয়ার খোঁজখবর নিচ্ছেন জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশ এবং দাতা সংস্থাগুলো। কাজেই চিকিৎসায় হেলাফেলা উচিত নয়।
সরকারের দায়িত্বশীল মন্ত্রীরা ১১ জুন ঘোষণা দেন ১২ জুন বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে নেয়া হবে। আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, বেগম জিয়া রাজী না হওয়ায় বিএসএমএমইউতে নেয়া হয়নি। এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তির অনুমতি চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম ইস্কানদার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। আবেদন পত্রটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তর গ্রহণ করেছে। ওই আবেদনে ৫ জুন বেগম জিয়ার মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রান্তের কথা উল্লেখ রয়েছে। বিএনপির নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। তারা চিকিৎসার যাবতীয় ব্যয় বহন করার প্রস্তাবও দেন। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদুজ্জামান খান কামাল মঙ্গলবার বলেছেন, খালেদা জিয়া যদি সিএমএইচ-এ চিকিৎসার জন্য যেতে চান, আমরা সেখান থেকে তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে দিতে পারি। আমরা তার চিকিৎসার জন্য সরকারিভাবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নিয়েছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় সরকারের প্রতি প্রশ্ন করা হয়েছে বেগম জিয়াকে চিকিৎসার জন্য কেন বিএসএএমইউতে নিতেই হবে? ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে বাধা কোথায়? কেউ কেউ লিখেছেন, রোগী যে ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা নেবেন তাকে তার কাছে চিকিৎসা দেয়া উচিত।
বেগম খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রæয়ারী সুস্থ অবস্থায় আদালতে যান। সেখান থেকে তাকে কারাগারে নেয়া হয়। সূর্যের আলো ছাড়া স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রাখায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৮ মার্চ তাকে আদালতে হাজির না করায় কারণ হিসেবে জানানো হয় তিনি অসুস্থ। বিএনপির মহাসচিবসহ পরিবারের সদস্য ও ব্যাক্তিগত ডাক্তাররা এরপর বেশ কয়েকবার কারাগারে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। সকলেই জানিয়েছেন বেগম জিয়া খুবই অসুস্থ। এ অবস্থায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, যেসব মন্ত্রী বিএসএমএমইউতে খালেদাকে নেয়ার কথা বলছেন তারা কি সেখানে চিকিৎসা নেন? ওয়ান ইলেভেনের সময় আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কারাগার থেকে স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছিল; আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলকে ল্যাব এইডে নেয়া হয়। অনেক নেতাকে বারডেম হাসপাতালে নেয়া হয়। তাহলে এখন বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে বাধা কোথায়?



 

Show all comments
  • দুলাল উদ্দিন ১৩ জুন, ২০১৮, ১:৪৯ এএম says : 2
    সরকার খালেদা জিয়া কে মেরে ফেলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তাই তার চিকিৎসার দেওয়া হচ্চেনা ।
    Total Reply(0) Reply
  • ফয়সাল ১৩ জুন, ২০১৮, ১:৫৫ এএম says : 1
    আমারও বুঝে আসে না যে, বেগম জিয়াকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিতে বাধা কোথায় ?
    Total Reply(0) Reply
  • ওয়াহিদ ১৩ জুন, ২০১৮, ১:৫৭ এএম says : 1
    বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশারফ হোসেন বলেন, যেসব মন্ত্রী বিএসএমএমইউতে খালেদাকে নেয়ার কথা বলছেন তারা কি সেখানে চিকিৎসা নেন? ............ দয়া করে মন্ত্রী সাহেব এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ ১৩ জুন, ২০১৮, ২:৩৯ এএম says : 1
    আল্লাহর কাছে দোয়া করছি যেন খালেদা জিয়া সুস্থ থাকেন
    Total Reply(0) Reply
  • সাখাওয়াত ১৩ জুন, ২০১৮, ৫:১৩ এএম says : 1
    স্বররাষ্ট মন্ত্রী মহোদয় নিজে ল্যাব এ্যইডে চেকআপ করাতে দেখেছেি কোন মন্ত্রী কি বলতে পারবেন তিনি বিএসএমএমইউতে ট্রিটমেন্ট করান
    Total Reply(0) Reply
  • ছায়ীদ ১৩ জুন, ২০১৮, ৭:২৮ এএম says : 1
    আল্লাহ পাক উনাকে অনেক হায়াত দান করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • Robiul Islam Robi ১৩ জুন, ২০১৮, ১:৪২ পিএম says : 1
    উনাকে উনার মতো করেই সুচিকিৎসা দেওয়া উচিত ।
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Kader ১৩ জুন, ২০১৮, ১:৪৩ পিএম says : 1
    আসলে ওরা মেডামকে তিলে তিলে মারার ব্যবস্তা করতেছে
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Shah Alam Khan ১৩ জুন, ২০১৮, ৭:০৩ পিএম says : 0
    স্টালিন সরকার এখানে সুনিপুন ভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে টেনে খালেদা জিয়ার প্রতি সরকার অন্যায় করছে এটা তুলে ধরেছেন তাই না?? ওনার এই দল প্রীতি লিখা কি প্রমান করে এটা একটা প্রশ্ন নয় কি?? ..............
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ