Inqilab Logo

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

কারাগারে ইবাদত বন্দেগীতেই সময় কাটছে খালেদা জিয়ার

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ফারুক হোসাইন : বেগম খালেদা জিয়া। জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের বিশ্বাসী রাজনীতিক। তিনি ব্যাপক জনপ্রিয় এবং দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের অন্যতম দল বিএনপির চেয়ারপারসন। তাঁর নেতৃত্বে দেশের রাজনীতির বাঁকে বাঁকে হয়েছে ‘রাজনীতির মেরুকরণ’।
স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে পেয়েছেন ‘আপোষহীন নেত্রীর’ খেতাব। শুধু দলের নেতাকর্মীই নয় দেশ জুড়ে রয়েছে তার লাখো-কোটি অনুসারী, অনুরাগী, ভক্ত। এমনকি জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহলেও রয়েছে তাকে নিয়ে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। তিনি হাসলে লাখ লাখ মানুষ উৎফুল্ল হন; তিনি কাঁদলে লাখো মানুষ কাঁন্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং দুই বারের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম জিয়ার ব্যাপক জনপ্রিয়তার কারণে তাঁর চলন-বলন, যাপিত জীবন, পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি সব বিষয় জানার আগ্রহ সাধারণ মানুষ ও ভক্ত অনুসারীদের। দীর্ঘ চার মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। মিডিয়ায় খবর বেরিয়েছে তিনি অসুস্থ। কেমন আছেন তিনি? নিত্যদিন যিনি প্রচÐ ব্যস্ততায় কাটিয়েছেন; দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটেছেন। মানুষের মাঝে খাদ্যবস্ত্র বিলিয়েছেন; অথচ কারাগারে তিনি ইফতার সেহেরীর জন্য কারা কর্তৃপক্ষের ওপর নির্ভরশীল। কেমন ভাবে কাঁটছে তার কারাজীবন? অসুস্থ অবস্থায় পবিত্র রমজানে কারাগারে কিভাবে সময় পার করছেন তিনি? রমজানের প্রথম দিকে দেখা গেছে শত শত নারী নেত্রীকে কারাগারের ফটকের সামনে ইফতারী নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। বিধি-নিষেধের কারণে সেগুলো তাঁর কাছে পৌঁছেনি। প্রশ্ন হলো কিভাবে রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের রমজান পার করছেন বেগম জিয়া?
মাঝ রাতে ঘুম থেকে ওঠে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন। রোজা রাখার জন্য সেহরি খেয়ে কুরআন পাঠ, এরপর ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যান। ঘুম থেকে ওঠে পত্রিকা পাঠ কিংবা তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করছেন। দুপুরে যোহরের নামাজ পড়েই আবারও কুরআন পাঠ, আসরের নামাজ পরবর্তী সময়ে ইফতারের জন্য প্রস্তুতি। মাগরিবের নামাজ পড়ে বিশ্রাম নিয়ে প্রস্তুত হতে থাকেন এশা ও তারাবিহ’র নামাজের জন্য। এভাবেই রমজান মাসে নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করে সময় কাটছে কারাগারে বন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। শারীরিক অসুস্থ; আদালতে যাওয়ার মতো শারীরিক অবস্থা নেই; তারপরও তিনি রোজা রাখছেন নিয়মিত। আগের মতোই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পাশাপাশি আদায় করছেন তারাবিহ ও তাহাজ্জুদের নামাজ, সত্তরোর্ধ ও অসুস্থ এ শত ব্যস্ত নেত্রী কারাগারের প্রকোষ্টে শুধু ইবাদত ও দোয়া মুনাজাতের মধ্যে কাটাচ্ছেন আর কোরআন পড়ছেন বলে জানিয়েছেন তার স্বজনরা। গত ২৯ মে কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যান তার পরিবারের সদস্যরা। ওইদিন বিকেল ৪টায় কারাগারে প্রবেশ করেন খালেদা জিয়ার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার, তার স্ত্রী কানিজ আলমাস, ভাগ্নে অভিক ইসলাম, ডা. মামুন। ইফতারের আগেই তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে তারা জানান, অসুস্থতা, দুর্বলতা ও জ্বর নিয়েও খালেদা জিয়া রোজা রাখছেন। কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া ইফতারই তিনি করছেন। নিয়মিত নামাজ আদায় ও কোরআন তেলাওয়াত করছেন। তবে কারাগারে ভালো নেই খালেদা জিয়া। অসুস্থ অবস্থায় তিনি কারাগারে আছেন। গত ৮ জুন আবারও তার স্বজনরা কারাগারে দেখা করেছেন খালেদা জিয়ার সাথে।
স্বজনরা জানান, রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে ইবাদত-বন্দেগীতে সময় কাটছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তিনি শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠেই ওজু করে প্রথমে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েন এবং দোয়া দরূদ পড়ার পর সামান্য সেহরি খেয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেন। নির্জন এ কারাগারে দিনের বেলায় মাঝেমধ্যে শুয়ে-বসেও তার সময় কাটছে। খালেদা জিয়ার স্বজনদের সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়া আগে থেকেই একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। তিনি নিয়মিত নামাজ আদায় করেন। কখনো রোজা ছেড়ে দেন না। এবারও তিনি কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখছেন। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করছেন। পাশাপাশি তারাবিহ ও তাহাজ্জুদ নামাজও পড়ছেন। খালেদা জিয়ার রমজান মাসের একটি দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে একজন স্বজন বলেন, মাঝরাতেই ঘুম থেকে ওঠে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। নামাজ শেষ করে সেহরি খান, এরপরপরই কোরআন পাঠ শুরু করেন। ফজরের আজান দেয়ার পর নামাজ আদায় করেন এবং ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে আবার ঘুম থেকে ওঠে হয় পত্রিকা পাঠ করেন কিংবা তাসবিহ-তাহলিলের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করেন। এছাড়া কখনো কখনো শুয়ে বিশ্রাম নেন, কারারক্ষী ও ব্যক্তিগত পরিচারিকা ফাতেমার সাথেও মাঝে মাঝে আলাপ করেন। দুপুরে যোহরের নামাজ আদায় করে ফের কোরআন নিয়ে বসে পড়েন। কোরআন পাঠ শেষ হলে হাদীস, ইতিহাস, রাজনীতি, সাহিত্য কিংবা অন্যান্য বইয়েও মনোনিবেশ করেন বিএনপি চেয়ারপারসন। আসরের নামাজ পড়ে কিছুটা হাটাহাটি করার চেষ্টা করেন। তবে হাটুর ব্যাথা ও শারীরিক অসুস্থতা থাকায় সেটি নিয়মিত করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে বসে থাকেন তসবিহ নিয়ে। ইফতার করার পর মাগরিবের নামাজ আদায় করে কিছু সময় বিশ্রাম নেন। এরপর এশার নামাজ ও তারাবিহ’র নামাজ আদায় করে ঘুমিয়ে পড়েন। খালেদা জিয়ার স্বজনরা আরও জানান, কারান্তরীণ অবস্থায় ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রোজা ছাড়তে চান না।
কারাকর্তৃপক্ষ সূত্রেও জানা গেছে কারাগারে নিয়মিত রোজা রাখছেন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কারা কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা সেহরি ও ইফতারিও খাচ্ছেন তিনি। কারা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়াকে কারা ভবনের ডে-কেয়ার সেন্টারের দ্বিতীয়তলায় রাখা হয়েছে। তিনি কারা কর্তৃপক্ষের দেয়া খাবার নিয়ে কোন অভিযোগ করছেন না। তার সেহরিতে খাবারের তালিকায় রয়েছে চিকন চালের ভাত, মাছ, মাংস ও ডিম। ইফতারের পরেও তিনি এসব খাবারই খাচ্ছেন। ইফতারের সময় ছোলা-মুড়ির পাশাপাশি পেপের জুস, ডাবের পানিসহ চাহিদা অনুযায়ী তাকে ইফতারি দেওয়া হচ্ছে। খালেদা জিয়ার চাহিদা অনুযায়ী কারা কর্তৃপক্ষ খাবার সরবরাহ করছেন। তবে বাইরে থেকে কারও দেওয়া খাবার তাকে দেওয়া হচ্ছে না।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরাণীগঞ্জের সহকারী সার্জন ডা. মো. মাহমুদুল হাসান শুভ এখন কারাগারে প্রায় প্রতিদিন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্যগত দিক দেখাশুনা করছেন। তিনি তার খাবারও দেখে দেন বলে জানা গেছে।
ডা. শুভ জানান, খালেদা জিয়ার অবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে। তিনি সব রোজা রাখছেন এবং বাকী সব রোজাও রাখতে চান। রোজা ছাড়ার ইচ্ছা তার নেই। কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়াকে সেহরির জন্য যে খাবার দেয়া হয় সেখান থেকে তিনি অল্প খাবার খেয়ে রোজা রাখছেন। তাকে দেয়া সব খাবার তিনি খাননা। তবে এতে তার রোজা রাখতে কোন অসুবিধা হচ্ছে না। ইফতারিতে কি থাকছে এ বিষয়ে ডা. শুভ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ইফতারের তালিকায় রয়েছে ছোলা, মুড়ি, খেজুর ও ফল।
পরিবারের স্বজনদের মতো কারাসূত্রও জানায়, রাত ৩টায় খালেদা জিয়াকে সেহেরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জাগানো হয়। এরপর তিনি হাত-মুখ ধোয়ে খাওয়ার জন্য তৈরি হন। পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে তার কক্ষে দেখাশুনার দায়িত্বে রয়েছেন সিনিয়র কারারক্ষী মাহফুজা। তার সঙ্গে রয়েছেন আরো কয়েজন নারী ও পুরুষ কারারক্ষী। তারা সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে খাবার এনে দেন। এরপর তিনি সেহেরি খেয়ে রোজা রাখেন।
গত ৮ ফেব্রæয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ে ৫ বছরের কারাদÐের আদেশের পর থেকে ওই কারাগারে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

 



 

Show all comments
  • রেজবুল হক ১০ জুন, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
    আল্লাহ তাকে সুস্থতা দান করুক।
    Total Reply(0) Reply
  • সেলিম উদ্দিন ১০ জুন, ২০১৮, ১:১৬ এএম says : 0
    অনতিবিলম্বে তার মুক্তি কামনা করছি
    Total Reply(0) Reply
  • আজিজুর রহমান ১০ জুন, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    আমাদেরও উচিত বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদাত করা
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুল ১০ জুন, ২০১৮, ১:১৮ এএম says : 0
    একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই পারে আমাদেরকে এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে
    Total Reply(0) Reply
  • Javid ১০ জুন, ২০১৮, ১১:১১ এএম says : 0
    After this Part she must became prime minister of Bangladesh insha allah ,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়ার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ