Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাংহাই শীর্ষ সম্মেলন হাতলবিহীন স্যুটকেস

| প্রকাশের সময় : ১০ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : আঞ্চলিক ও আনেক আন্তর্জাতিক নানা উপাদানের সম্পৃক্ততার কারণে চলতি সপ্তাহে কিংদাওয়ে অনুষ্ঠেয় সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) ১৮তম শীর্ষ সম্মেলনটি বিশেষ আগ্রহের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তÍান সদস্য হিসেবে সম্মেলনে যোগ দেওয়ায় শীর্ষ সম্মেলনটি নতুন মাত্রা লাভ করেছে। আপাত দৃষ্টিতে বিপরীত মনে হলেও বাস্তবতা হলো এই যে এসসিওকে কুঁড়িতে নষ্ট করে দিতে চাইলেও যুক্তরাষ্ট্রই অনিচ্ছাকৃতভাবে কিংদাওয়েতে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে।
ঐতিহাসিকভাবে এসসিওর পূর্ণ সম্ভাবনা কাজে না লাগাতে পারার প্রধান কারণ হলো, রাশিয়া ও চীন ভিন্ন দিকে একে টানছিল। ফলে এর বিকাশ দমিত হচ্ছিল। শীর্ষস্থানীয় এক রুশ থিঙ্ক ট্যাঙ্কার আন্দ্রেই করতুনভ স¤প্রতি লিখেছেন: এসসিও অবশ্যই যৌবনে পদার্পণ করেছে। কিন্তু এখনো এটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পূর্ণ পরিণত হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারেনি। অধিকন্তু নানা সমস্যা, ইচ্ছাশক্তি, উদ্দেশ্যহীনতার কারণে এটি ‘চিরকালীন কিশোরে’ পরিণত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যেই রয়েছে।
এই কঠোর মন্তব্য ভিত্তিহীন নয়। করতুনভ স্বীকার করেছেন, রাশিয়া ও চীনের ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয় রয়েছে। চীন যেখানে মধ্য এশিয়া অঞ্চলের দিকে নজর দিয়েছে, রাশিয়া আশা করছে, আঞ্চলিক নিরাপত্তায় মস্কো যেসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন সেদিকে মনোযোগী হবে এসসিও। আয়োজকেরা যখন চেচনিয়ার মতো বিতর্কিত ইস্যু ও জর্জিয়ার সাথে রাশিয়ার সঙ্ঘাতের প্রতি উদাসিনতা প্রদর্শন করে, তখন রাশিয়া অসন্তুষ্ট হয়। তারপর ২০১৪ সালে রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে এসসিও স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হলে অসন্তোষ পরিণত হয় ক্ষোভে।
অন্যদিকে চীন ও রাশিয়া উভয়ই আফগানিস্তান প্রশ্নটি এড়িয়ে গেছে। কারণ উভয় দেশেরই এখানে বিশেষ স্বার্থ আছে এবং উভয়েই নিজেদের মতো করে পরিস্থিতি কাজে লাগাতে চায়। এসসিও স্থবির হয়ে থাকার কারণ এতেই নিহিত রয়েছে। এখানেই শেষ নয়। চীন যেখানে এসসিও সহযোগিতার অর্থনৈতিক মাত্রার ওপর জোর দিতে চায়, রাশিয়া তাতে নারাজ। বেইজিং চায় এসসিওকে অবাধ বাণিজ্যিক জোনে পরিণত করতে। কিন্তু মস্কো মনে করে, এমনটি করা হলে ইউরেশিয়া অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক স¤প্রসারণ ঘটতে পারে। চীন এটিকে কৌশলে তার বেল্ট ও রোড ইনিশিয়েটিভের দিকে ধাবিত করতে পারে বলেও সন্দেহ রয়েছে। রাশিয়া বিআরআইয়ের বিরোধিতা না করলেও এর প্রতি প্রবল উৎসাহী নয়। কানেকটিভিটি নিয়ে তার নিজেরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে এসসিও যখন স্থবির হয়ে আসছিল, তখন রাশিয়ার ওপর চাপ সৃষ্টি করে মস্কোকে এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্দীপ্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
রাশিয়ার ওপর পাশ্চাত্য অবরোধ ছাড়াও ন্যাটোর ছত্রছায়ায় সাবের-স্ট্রাইক ২০১৮ নামে রাশিয়ার দ্বারপ্রান্তে পোল্যান্ড, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া ও এস্টোনিয়াকে নিয়ে ১৮ হাজার সৈন্যের মার্কিন-নেতৃত্বাধীন সামরিক মহড়ার সময়টিতেই হতে যাচ্ছে এসসিও শীর্ষ সম্মেলন। এখানেই শেষ নয়, চলতি বছর রুশ সীমান্তের কাছাকাছি এলাকায় মার্কিন-নেতৃত্বে আরো দুটি ন্যাটো সামরিক মহড়া হবে। এতে বিপুলসংখ্যক সামরিক সদস্য ও সরঞ্জামের উপস্থিতি থাকবে।
এছাড়া মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সি৫+১ নামে নতুন একটি জোট গঠন করতে যাচ্ছে। সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতের মুঠোয় থাকা উজবেকিস্তান এখন প্রেসিডেন্ট শাভকাত মিরজিয়োয়েভের নেতৃত্বে এ ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। ট্রাম্প স¤প্রতি হোয়াইট হাউজে উজবেক প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলেছেন। ফলে এসসিও সম্মেলনে তার অবস্থান নিয়ে বিশেষ কৌতুহল থাকবে।
এদিকে ভারত ও পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তির ফলে এসসিওর কৌশলগত ও রাজনৈতিক ভারসাম্যে আমূল পরিবর্তন আসবে। এখন পর্যন্ত তারা অবশ্য বাড়তি কোনো চাপ সৃষ্টি করেনি সংগঠনটির মধ্যে। আগস্টে তারা এসসিও’র দ্বিবার্ষিক সন্ত্রাসবিরোধী মহড়ায় অংশ নেবে। এছাড়া গত এপ্রিলে বেইজিংয়ে এসসিও’র প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের সম্মেলনেও যোগ দিয়েছে।
আবার নয়া দিলি­ চাচ্ছে, এসসিও ফোরামকে কাজে লাগিয়ে বেইজিংয়ের সাথে যোগাযোগ বাড়াতে। অন্যদিকে যৌক্তিকভাবেই এই ফোরামের মাধ্যমে ভারত-পাকিস্তান মতবিনিময়ও বাড়তে পারে। চীন-ভারত কৌশলগত যোগাযোগ গতি লাভ করলে রাশিয়ার পিছুটান সত্তে¡ও এসসিও গুরুত্বপূর্ণ ফোরামে পরিণত হতে পারে।
রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি কি যথাযথ হবে যে ভারত ও পাকিস্তানের সদস্যপদের ফলে এসসিও হাতলবিহীন স্যুটকেসে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ এই বোঝাটি বহন করাও যাচ্ছে না আবার মূল্যবান হওয়ায় ফেলেও দেওয়া যাচ্ছে না? এমন দৃষ্টিভঙ্গি একদিকে যেমন কঠোর, অন্যদিকে অযৌক্তিক সমালোচনা। ভারত ও পাকিস্তানকে তাদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার জন্য এসসিওর সদস্যপদই সম্ভবত এযাবৎকালের মধ্যে তাদের জন্য সর্বোত্তম সুযোগ।
এসসিও দক্ষিণ এশিয়া বা মধ্য এশিয়ায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিযোগিতার মুখে পড়ছে না। রাশিয়া হয়তো গর্ব করে বলতে পারে, ‘কালেকটিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গ্যানাইজেশ’ ইউরেশিয়ায় সেরা এবং এসসিওর বিকল্প। কিন্তু বাস্তবে রাশিয়াকে বাদ দিলে সিএসটিও একটি বড় শূন্যের মধ্যে ডুবে যায়; এটি এমন এক শিশুর মতো, যার সার্বক্ষণিক তদারকির প্রয়োজন। অন্যদিকে এসসিও অত্যন্ত কাম্য কিশোর। ইতোমধ্যেই প্রায় ৩০টি দেশ এর সাথে সম্পৃক্ত হয়েছে। এসসিওর প্রধান অক্ষমতা হলো রাশিয়ার বৈপরীত্যপূর্ণ অবস্থান। মস্কো তার ভবিষ্যতের রাজনীতিতে কাজে লাগানোর বদলে একে চাঙ্গা করতে সহায়তা করতে পারে। সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্যুটকেস
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ