পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : হঠাৎ করেই অসহনীয় দাবদাহ। খরতাপে পুড়ছে সারাদেশ। ভ্যাপসা গরম। তপ্ত ও গুমোট আবহাওয়া। জনজীবনে কাহিল অবস্থা। চারদিকে মানুষজন ছাড়াও প্রাণিকূলের মধ্যে তীব্র গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক জায়গায় বাতাসে যেন আগুনের হল্কা। রাস্তায় পিচ গলতে শুরু করেছে। তীর্যক সূর্যের দহনে দিনমান অতিবাহিত হচ্ছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাথে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদও উঁচুতে থাকায় গরমের তীব্রতা বেশিহারে অনুভূত হচ্ছে। কখনও কোথাও আকাশে বিক্ষিপ্ত মেঘের আনাগোনা থাকলেও প্রত্যাশিত বৃষ্টি ঝরছে না।
বর্ষার মৌসুমি বায়ুমালা বাংলাদেশে এগিয়ে আসতে এখনো অনেক দেরি। বর্তমানে দেশের অনেক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি আকারের তাপপ্রবাহ চলছে। গরমে ঘামে নাকাল অবস্থায় শিক্ষার্থী ও পথচারী লোকজন রাস্তাঘাটে ফেরি করা আইসক্রিম, শরবত ও হরেক রকম পানীয় নিয়ে গলা ভেজানোর চেষ্টা করছে। চপল কিশোররা দল বেঁধে পুকুর-দীঘি, নদী-খালে ঝাঁপ দিয়ে গা শীতল করছে। জলীয় বাষ্পের আধিক্য ও বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বর্তমানে বেশি থাকায় মানুষজন অতিরিক্ত ঘামাচ্ছে। এতে শরীর আরও কাহিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে দিনে এনে দিনে খাওয়া দিনমজুর ও নিম্নআয়ের শ্রমিক-কর্মজীবীরা। উটকো মৌসুমি রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকেই। চিকিসৎকরা এ সময়ে বেশি করে বিশুদ্ধ পানি পানের পরামর্শ দিয়ে কড়া সতর্ক করেছেন, রাস্তাঘাটের দূষিত পানীয় বা ফল-ফলারি খেয়ে হিতে বিপরীত হতে পারে। তাপপ্রবাহ ৪০ ডিগ্রি অতিক্রম করলে হিটস্ট্রোকে গুরুতর আক্রান্ত হতে পারে বিশেষত রোদে কর্মরত লোকজন, অসুস্থরা ও শিশু-বৃদ্ধরা।
আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস বলছে, চলমান তাপপ্রবাহ আরও তীব্রতর হতে পারে। তা চলবে আরও এক সপ্তাহ। অসহ্য খরতপ্ত হয়ে উঠতে পারে আগামী বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখের দিনটিও। শিগগিরই তাপমাত্রার পারদ ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ সময়ের মধ্যে দেশের কোথাও কোথাও দমকা বা ঝড়ো হাওয়া এবং কালবৈশাখী ঝড়ের সাথে এলাকাওয়ারি বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল (রোববার) সন্ধা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৩ ডিগ্রি সে.। এসময় ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬ ডিগ্রি সে. ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৭.১ ডিগ্রি সে.। এমনকি সাগর সৈকত শহর কক্সবাজারেও তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাচ্ছে। গুমোট ও ভ্যাপসা গরম অব্যাহত থাকলে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ঘনঘটা তৈরি হতে পারে এমনটি আশংকা আবহাওয়াবিদদের। চলতি এপ্রিল ও পরের মে মাসে সাগরে একাধিক নিম্নচাপ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস আগেই দেয়া হয়। গতকাল পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে কোন লঘুচাপ-নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়নি; তবে বিপরীতমুখী বায়ুচাপে উত্তর বঙ্গোপসাগর কিছুটা উত্তাল রয়েছে।
ঋতুর চরিত্র পাল্টিয়ে গত মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসে সারাদেশে গড়ে ৪৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। এর আগে ফেব্রুয়ারি মাসে অতিবৃষ্টি হয় ৩৮ ভাগ। যা এ সময়ে অর্থাৎ প্রাক-বর্ষায় গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বর্ষণ। চলতি এপ্রিলের প্রথম ৫ দিন পর্যন্ত ‘অসময়ে’র বৃষ্টি ও শীতল আবহাওয়ার পালা চলতে থাকে। এর কারণ ছিল পূবালী বায়ুর সাথে পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশের মিলিত হওয়া ও অকাল মেঘ-বাদলের ঘনঘটা। এরপর গত ৪/৫ দিনের আবহাওয়া পুরোদমে বদলে গিয়ে চৈত্রের শেষ দিকে এসেই হঠাৎ ফিরে আসে দাবদাহ। দিন দিন বেড়েই চলেছে তাপপ্রবাহ। দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানা গেছে, এ মাসে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১টি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তখন পারদ ৪০ ডিগ্রি সে. অতিক্রম করতে পারে। তাছাড়া দেশের অন্যত্র ১ থেকে ২টি মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ৩ থেকে ৪ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে তীব্র আকারের কালবৈশাখী ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৪-৫ দিন হালকা থেকে মাঝারি কালবৈশাখী ঝড় সংঘটিত হতে পারে।
তীর্যক সূর্যকিরণে চৈত্রের অসহ্য খরতাপে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সর্বত্র ব্যাহত হচ্ছে। গুমোট আবহাওয়ায় অবিরত ঘামঝরা ভ্যাপসা গরমে শ্রমজীবী দিনমজুর সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল-মাদরাসার শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী, বয়োবৃদ্ধদের কষ্ট অসহনীয়। গরমের সাথে সাথে বিশুদ্ধ পানির অভাবে সবখানেই চলছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, হাহাকার অবস্থা। পুকুর, নদ-নদী, খাল, দীঘি, জলাশয়, পাতকুয়ার পানি শুকিয়ে তলায় গিয়ে ঠেকেছে। অধিকাংশ নলকূপে পানি উঠছে না। বৃষ্টির আকুল প্রত্যাশায় আকাশের দিকে তাকিয়ে প্রহর গুণছে মানুষ। অনাবৃষ্টি ও খরায় রাতের বেলায়ও তাপদাহ অসহনীয়। থমথমে আবহাওয়ায় মরুময়তায় বাতাসে যেন আগুন ঝরছে। আবহাওয়াম-লে ইতিবাচক পরিবর্তনের কোন সুখবর আপাতত নেই। বঙ্গোপসাগরে বর্ষার মৌসুমী বায়ুমালা এগিয়ে আসেনি। তাই প্রত্যাশিত মেঘ-বাদলেরও আলামত নেই। এ অবস্থায় দেশের অধিকাংশ জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের তাপদহন চলছে। বেশিরভাগ এলাকায় গত দু’দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠে গেছে। কোথাও কোথাও আকাশে বিচ্ছিন্ন মেঘ জমলেও বৃষ্টি নামেনি। বরং মেঘ-ভাঙ্গা প্রখর রোদে মানুষের অস্বস্তি বেড়েই চলেছে।
এদিকে সর্বশেষ আবহাওয়া বিভাগ জানায়, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এ মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
দিনাজপুর, সৈয়দপুর ও নীলফামারী অঞ্চলসহ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টায় আবহাওয়ার বর্তমান অবস্থার সামান্য পরিবর্তন হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গায় ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় ঢাকায় সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যথাক্রমে ৩৬ ও ২৭.১ ডিগ্রি সে., টাঙ্গাইলে সর্বোচ্চ ৩৮, ময়মনসিংহে ৩৪.৬, চট্টগ্রামে ৩২.৪, টেকনাফে ৩৩.৮, সিলেটে ৩৪.২, রাজশাহীতে ৩৯.২, রংপুরে ৩৬.৩, খুলনায় ৩৭.৫, যশোরে ৩৯.৭, বরিশালে ৩৫.৭ ডিগ্রি সে.।
আজ (সোমবার) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘন্টার আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, পশ্চিমা লঘুচাপের বর্ধিতাংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের এ স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আজ ময়মনসিংহ অঞ্চলসহ সিলেট বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
কুষ্টিয়া অঞ্চলের উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং রংপুর, দিনাজপুর, ক্সসয়দপুর, ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ফরিদপুর অঞ্চলসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এটি অব্যাহত থাকতে পারে এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিস্তার লাভ করতে পারে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।