পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনায় সিপিডি :
০ নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে
০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নৈরাজ্য বন্ধ না করে সুবিধা দেওয়া ঠিক হয়নি
০ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার সন্তুষ্ট করতে পারেনি
০ ব্যক্তি খাতের করের সীমা তিন লাখ করার দাবি
বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এমনকি আগামী ২০২১ সালে নতুন এক বাংলাদেশের আগমন হবে। এজন্য সরকার নিরলস কাজও করছে। কিন্তু নবীণ সেই দেশের জন্য গতানুগতিক প্রবীণ বাজেট প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তিনি আয়-ব্যয়ের যে লক্ষ্য ঠিক করেছেন, তাতে উচ্চবিত্ত সুবিধা পেলেও নিম্ন ও মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বাড়বে বলে মনে করছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর গুলশান লেকসোর হোটেলে বাজেট পরবর্তী পর্যালোচনায় সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানানো হয়।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি এই গবেষণা সংস্থার ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. মোস্তাফিজুর রহমান, গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং গবেষক তৌফিকুল ইসলাম খানসহ প্রতিষ্ঠানটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাজেট পর্যালোচনায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এবারের বাজেট পর্যালোচনা করে বলা যায়, সামগ্রিক বিবেচনায় মনে হয়েছে, নবীন বাংলাদেশের জন্য একটি প্রবীণ বাজেট তৈরি করেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার যে বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তাতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। ফলে আয় ও ব্যয়ের হিসাবে সামগ্রিক ঘাটতি থাকছে এক লাখ ২৫ হাজার ২৯৩ কোটি টাকা, যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৯ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ঋণের মাধ্যমে এই ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করেছেন মুহিত।
অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্স বিদ্যমান ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রস্তাব করেছেন। আর অনিবন্ধিত ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্স বিদ্যমান ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছেন। এর বিরোধিতা করে সিপিডির এই ফেলো বলেন, ব্যাংক খাতে যে ধরনের নৈরাজ্য চলছে, সেটা সমাধান না করে এ ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে মালিকপক্ষ এককভাবে লাভবান হবে। ঋণগ্রহীতা এবং আমানতকারী কোনো সুবিধা পাবে না। আগে যেভাবে পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, সেটাকে ধরে রাখা হয়েছে। এর ফলে তারল্য বাড়বে না বলেই আমাদের সন্দেহ। নৈরাজ্য বন্ধ না করে ব্যাংক ব্যবসায়ীদের চাপে কর্পোরেট করহার কমানোর সিদ্ধান্ত অনিয়ম উসকে দেবে।
বাজেট পর্যালোচনায় সিপিডি বলেছে, বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ধরে রাখা কঠিন। গেল পাঁচ বছরে ভালো প্রবৃদ্ধি বাড়লেও আয়ের বৈষম্য বেড়েছে। গরিব মানুষের সঞ্চয় করার ক্ষমতা কমেছে। সংবাদ সম্মেলনে সিপিডি বলেছে, আগে এক হাজার ১০০ বর্গফুটের ছোট ফ্ল্যাটের দামের ওপর দেড় ভাগ হারে কর দিতে হতো। আর এক হাজার ৬০০ বর্গফুটের জন্য যা ছিল আড়াই শতাংশ। এখন দুটোকে গড়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। যাতে মধ্যবিত্ত এবং বিকাশমান মধ্যবিত্তের ওপর করের চাপ বাড়বে। সংস্থাটি জানায়, ব্যক্তি খাতের করের সীমা তিন লাখ টাকা করার সিপিডির প্রস্তাব আমলে না নেওয়ার সমালোচনা করে বলা হয় এতে মধ্যবিত্তর ওপর চাপ কমত। কিন্তু তা করা হয়নি।
সিপিডি বলেছে, একদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট দেশের উন্নত এলাকা, অন্যদিকে খুলনা, বরিশাল এবং রাজশাহী অনুন্নত এলাকা। এই বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ বাজেটে গ্রহণ করা হয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বার বার বলেছি যে, বিড়াল বড় হতে পারে, বিড়াল ছোট হতে পারে কিন্তু তাকে ইঁদুর ধরতে হবে। অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হার উচুঁ হতে পারে, প্রবৃদ্ধির হার নিচু হতে পারে, কিন্তু প্রবৃদ্ধিতে গরীব মানুষের দারিদ্র্য বিমোচন হতে হবে, তাদের বেশি পেতে হবে।
বিনিয়োগ সমস্যার কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় বলেন, আমাদের ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ এখনো স্থবির। যেটা স্বল্পমেয়াদি থেকে মধ্যমেয়াদি সমস্যায় পরিণত হয়েছে। একই সঙ্গে কর্মসংস্থার প্রবৃদ্ধির ও আয় বৃদ্ধির হার দুর্বল। মানবসম্পদের গুণগত মানও বেশ দুর্বল। সম্প্রতি দারিদ্র্য বিমোচনের হার ক্রমান্বয়ে কমছে। এর বড় কারণ হলো বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৈষম্য ভোগের, আয়ের ও সম্পদের। উন্নয়নের সুযোগ-সুবিধা গরিব ও নিম্নমধ্যবিত্ত পাচ্ছে না, যার ফলে বৈষম্য বাড়ছে।
বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, এখন দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে সরকার ৬০ শতাংশ ঋণ নিয়েছে। এতে সরকারের টেকসই ঋণগ্রহণের সক্ষমতা বিনষ্ট হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়। বাজেটে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেওয়া ঋণের জন্য ১৩ হাজার কোটি টাকা সুদ দিতে হবে। সঞ্চয়পত্রের ঋণের জন্যও সরকারকে ১৩ হাজার কোটি টাকা সুদ দিতে হবে। সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ না নিতে, অন্যদিকে ব্যাংকঋণ গ্রহণ করতে গেলেও তারল্য সংকট দেখা দেবে। বিষয়টি সরকারের জন্য অনেকটা শাখের করাতের মতোই বলে মনে করছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। এ জন্য ১১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, যা গত বছরের তুলনায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বেশি। এই অর্থ বিনিয়োগকে বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশের মধ্যে রাখা হয়েছে। বাজেটের এই লক্ষ্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে দেবপ্রিয় বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির যে পরিস্থিতি এবং দেশের ভেতরে যে প্রবণতা সেটা এটাই বলছে। প্রবৃদ্ধির অংকের বদলে সেই প্রবৃদ্ধি মানুষের জীবন মানে কতটা পরিবর্তন আনতে পারছে- সে দিকে নজর বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ডলার প্রতি ৮২ টাকা দেখানো হয়েছে। কিন্তু এখনই ডলারের দাম ৮৪ টাকা। বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ের হার ঠিক রাখা হয়নি। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ খাত এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের জন্য ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আর বাকি ৫৫ শতাংশ অন্য ২২ মন্ত্রণালয় এবং বিভাগের জন্য। এতে বলা হয়েছে, বাজেটে ২২ হাজার কোটি টাকা পুঁজি হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এই পুঁজি কোথায় বিনিয়োগ করা হবে তা পরিষ্কার করা হয়নি। সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে বিপুল পরিমাণ এই অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করা হবে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের ক্ষমতার সমালোচনা করে সিপিডি বলছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৫৩ শতাংশ প্রকল্পকেই চলমান প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর এক-চতুর্থাংশ প্রকল্প শেষ হয়েছে বলে দেখানো হচ্ছে। বাকিটা প্রকল্প গ্রহণ বর্জনের মধ্যে রয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ১৪ প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি নেই।
এডিপির ৬৪ প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, এখানে মাত্র এক লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়ে প্রকল্পগুলো আটকে রাখা হয়েছে। এ ধরনের আরও ৯০টি প্রকল্প আছে, যার বরাদ্দের পরিমাণ এক কোটি টাকার মধ্যে। প্রকল্পগুলোর বয়স ৪.৬ বছর। কিন্তু এসব প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল এক থেকে দুই বছরের মধ্যে। বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারের পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলা হয়, এ মুহূর্তে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতুর সময় বাড়ানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় এ বছর প্রকল্পটি শেষ হবে জানালেও আদৌ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সিপিডি বলছেন, প্রকল্পটিতে ৩ শতাংশ হারে সময় বেড়েছে। আর ব্যয় বেড়েছে ১.৮৩ শতাংশ হারে। ব্যয় আরও বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে। এডিপি বাস্তবায়নে কোনো নতুন পদক্ষেপ নেই উল্লেখ করে বলা হয়, আগে যেভাবে এডিপি চলছিল এখনও সেভাবেই চলছে।
শিক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয়ের সমালোচনা করে বলা হয়, সপ্তম-পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাতেই ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বিনিয়োগের কথা বলা হয়েছে। এই পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করে উন্নত প্রতিযোগিতামূলক বাংলাদেশ গড়ে তোলা দূরূহ হবে। স্বাস্থ্য খাতে বিনিয়োগের হার মাত্র ১ শতাংশ, যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আাবুল মাল আবদুল মুহিত। চলতি অর্থ বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ আকার বেড়েছে প্রস্তাবিত বাজেটের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।