Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

জিডিপি’র ৭ শতাংশ ছাড়াবে উন্নয়ন ব্যয়, এডিপি ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৭ জুন, ২০১৮, ৯:০৩ পিএম

প্রচলিত ধারা ভেঙ্গে আগামী অর্থবছর প্রত্যাশিত জিডিপির ৭ দশমিক ১০ শতাংশ অর্থ উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কয়েক বছর ধরে উন্নয়ন খাতে ব্যয় মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ ছিল। গতকাল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা বাজেটে উন্নয়ন খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। প্রত্যাশিত জিডিপির তুলনায় এডিপির আকার দাড়াচ্ছে ৬ দশমিক ৮০ শতাংশে। পরিবহণ খাতে প্রাধান্য ও স্থানীয় সরকার বিভাগে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়ে সম্প্রতি ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা ও বিদেশি উৎস থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে এ অর্থ এডিপি হিসাবে দেখানো হচ্ছে। এর বাইরে বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল ও এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সির (ইসিএ) ঋনের ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা এডিপি বরাদ্দে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ অর্থ যোগ করে পরিকল্পনা কমিশনের হিসাবে এডিপির আকার দাড়াচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকায়।
চলতি অর্থবছর ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এডিপি নেয়া হলেও তা ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এ হিসাবে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ হাজার ৭৮৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। আর সংশোধিত এডিপির তুলনায় নতুন এডিপির আকার বেড়েছে ২৩ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে ৯৬ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপিতে এ খাতে বরাদ্দ বেড়েছে ১৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩০ ভাগ। বিদেশি সহায়তার বরাদ্দ ৫২ হাজার ৫০ কোটি টাকা থেকে ৭ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে আগামী অর্থবছর বিদেশি সহায়তা সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ছে ১৫ দশমিক ২৭ শতাংশ।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী অর্থবছরের এডিপিতে গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় সরকার বিভাগের অনুকুলে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের গুরুত্বপূর্ণ এ বিভাগটি বরাদ্দ পেয়েছে ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগের অনুকুলে দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকুলে দেয়া হয়েছে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৮১৭ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
এর বাইরে শীর্ষ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রনালয় ও বিভাগের মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ৭২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১১ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ, সেতু বিভাগ ৯ হাজার ১১২ কোটি ১৫ লাখ, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ৯ হাজার ৪০ কোটি ৬৩ লাখ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৩১২ কোটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ ৬ হাজার ৬ কোটি ৪৬ লাখ এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ৫ হাজার ৬০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে।
সরকারের শেষ সময়ে পদ্মা সেতু, পদ্মা রেল সংযোগ, মেট্রোরেল, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেল লাইন, কর্নফূলী নদীর টানেলসহ বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প দৃশ্যমান করতে নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ প্রাধান্য পেয়েছে পরিবহন খাত। এ খাতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৪৪৯ কোটি ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। মোট এডিপি বরাদ্দের ২৬ দশমিক ২৭ শতাংশ ব্যয় হবে পরিবহণ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়নে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২২ হাজার ৯৩০ কোটি ২০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে বিদ্যুত খাতে। তৃতীয় সর্বোচ্চ ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে দেয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৮৮৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
এ ছাড়া পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৬ হাজার ৬৯০ কোটি ৩০ লাখ টাকা, শিক্ষা ও ধর্ম খাতে ১৬ হাজার ৬২০ কোটি ৩৩ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ১৪ হাজার ২১০ কোটি ৭৩ লাখ, স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ খাতে ১১ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা, কৃষি খাতে ৭ হাজার ৭৬ কোটি ২২ লাখ টাকা, পানি সম্পদ খাতে ৪ হাজার ৫৯২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন খাতে ৩ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপনের সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, এডিপিতে বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক সমতা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং গুণগত ব্যয়ের বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপখাত মিলে মানবসম্পদে সর্বোচ্চ ২৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বরাদ্দ আছে। কৃষি, পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য উপখাত নিয়ে সার্বিক কৃষি খাতে দেয়া হয়েছে ২১ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ। বিদ্যুত ও জ্বালানি খাতে ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ২৬ দশমিক ৩০ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১০ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
আগামী অর্থবছরের এডিপিতে ১ হাজার ৪৫২টি প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে বরাদ্দসহ অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ১ হাজার ৩৪৬। এসব প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে ১ হাজার ২৩৪টিআর একেবারেই নতুৃন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ১১২টি। তবে এগুলোর বাইরে স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য প্রকল্প থাকছে ১০৫টি।
এর বাইরে বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত আরও ১ হাজার ৩৩৮ প্রকল্প জুড়ে দেয়া হয়েছে। বিদেশি সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে অনুমোদন ও বরাদ্দহীন ভাবে রয়েছে ৩২৬ প্রকল্প। সরকারি বেসরকারি অংশীধারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়নের জন্য রেকর্ড ৭৮টি প্রকল্প রয়েছে নতুন এডিপিতে। নতুন অর্থবছরে ৪৪৬ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ খাতে ৪৩০ ও কারিগরি সহায়তা খাতে ১৬ প্রকল্প রয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরের শুরুতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকার এডিপি প্রনয়ন করা হয়েছিল। বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে ৬ হাজার ৪৯১ টাকা কেটে নিয়ে আরএডিপির নির্ধারণ করা হয় ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকায়। জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অর্থবছরের ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৮২ হাজার ৬০৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রথম ১০ মাসে এডিপি বাস্তবায়নের হার দাড়িয়েছে ৫২ দশমিক ৪২ শতাংশে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোটি টাকা

২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ