পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : আমাকে নিবে কে নিবেন স্যার? যেকোনো কাজ করতে পারব। গতকালও (রবিবার) কোন কাজ পাই নাই, আজও বেলা হয়ে গেল এখনও কাজের সন্ধান মিলছে না। ছেলে-মেয়ের মাদ্রাসার বেতন দিতে হবে। বাসা ভাড়া, দোকানে বাকি না দিতে পারলে সদাই দিবো না। সকালে না খেয়েই কাজের সন্ধানে এসেছি। একটা কাজ পাইলে কিছু বাজার করে বাসায় যাবো। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ঠাঁকুরগাও থেকে কাজের সন্ধানে আসা জোসনা বেগম ও তার স্বামী আব্দুস ছাত্তার।
এই দম্পতি জানান, তারা সাভার পৌর এলাকার ইমান্দিপুর মহল্লায় ভাড়া থেকে দিনমজুরের কাজ করেন। তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা রোজ পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে কাজ না থাকলে বসে থাকতে হয়। এক মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে আর ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করবেন। মাদ্রাসায় মাসে ১২০০ টাকা করে বেতন দিতে হয়। গত মাসে স্বামী-স্ত্রী রোজগার করে ২৩০০ টাকা বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন কিন্তু এ মাসে কাজ না থাকায় নিজেরাই চলতে পারছেন না।
জোসনা বেগম ও আ: ছাত্তারের মতো অসংখ্য দিনমজুর নারী-পুরুষ প্রতিদিন কাজের আশায় কাকডাকা ভোর থেকেই সাভার উপজেলার বিভিন্ন স্থানে জড়ো হয়। সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলেও অধিকাংশেরই কাজের সন্ধান মেলে না।
সাভারের নিউমার্কেট, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, আশুলিয়ার নবীনগর, শ্রীপুর, জিরানী, জামগড়া, জিরাবো, নরসিংহপুর, নয়ারহাট বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকেই ক্ষুন্তি-কোদাল, ঝাকা আর বিড়া নিয়ে বসে আছে অসংখ্য দিনমজুর নারী-পুরুষ। প্রতিটি শ্রমবাজারে গড়ে প্রায় দেড় শতাধিক শ্রমিক জড়ো হয়। মূলত চুক্তি এবং দৈনিক মজুরিতে কাজ করে এই মানুষগুলো।
বছরখানেক আগে দৈনিক ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হারে কাজ করলেও এখনকার বাজার খুবই মন্দা। ফলে দৈনিক ২০০ থেকে আড়াইশ’ টাকা হারে কাজে যেতে হয় তাদের। কিন্তু কাজ না থাকায় অধিকাংশ দিনমজুরকেই থাকতে হয় বেকার। কারো কারো মাস পেরিয়ে গেলেও কাজের দেখা মেলে না। কেউ কেউ কাজের আশায় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অপেক্ষায় বসে থাকে।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর থানার চর কল্যাণপুর গ্রামের জুয়েল জানায়, আগে ঢাকায় ভ্যান চালাতেন। পরিবারের সাথে সাভারে চলে আসেন। কিন্তু এখানে পরিচিত লোক না থাকায় ভ্যান কেউ দিতে রাজি হয় না। তাই বাধ্য হয়ে দিনমজুরের কাজ করতে হচ্ছে।
পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার বেলমা গ্রামের রহিমন বলেন, চাকরির জন্য দিনের পর দিন গার্মেন্টসের সামনে দাঁড়িয়ে থেকেও পড়ালেখা না জানায় চাকরি পাওয়া যায় না। কিছু কিছু কারখানায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি দিলেও কাজ জানা না থাকায় চাকরি হচ্ছে না।
আবার পরিচিত লোক না থাকলে কাজেও নেয় না। বর্তমান বাজারে আয়ের চেয়ে ব্যয় হওয়ায়, গ্রাম থেকে শহরে এসে দিনমজুরের কাজ করতে হচ্ছে।
রংপুর জেলার হারাগঞ্জ থানার ফরিদাবাদ গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস পরিবার নিয়ে থাকেন সবুজবাগ মহল্লায়। মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। ছেলে ইন্টার পাস করে চাকরির জন্য ঘুরলেও চাকরি জুটছে না। প্রতি মাসে বাসা ভাড়া দিতে হয় তিন হাজার টাকা আর খাওয়া-দাওয়া খরচ হয় আরো আট হাজার টাকা। কিন্তু সারা মাস কাজ করে পাওয়া যায় আট হাজার টাকা, ঘাটতি থাকে তিন হাজার টাকা। বর্তমানে কাজের চেয়ে লোক বেশি হওয়ার কারণে কাজ পাওয়া যাচ্ছে না বলেন তিনি।
নওগাঁ জেলার পোরশা থানার ছিলাম গ্রামের মো: হাসান থাকেন ছায়াবীথি মহল্লায়। অনেক বেলা হওয়ার পরও কাজ না পাওয়ায় নিজের ভাগ্যকেই দুষলেন। বললেন, ভ্যাগ্যে হয়নি তাই কাজ জোটেনি। তা ছাড়া আগের চেয়ে এখন লোকজন বেশি হয়ে গেছে।
গ্রামে কাজ না থাকায় শহরে এসেছেন নওগাঁর সাপাহার থানা এলাকার মো: রানা। তিনি বলেন, এখানেও কাজের অভাব। টাকার অভাবে চিকিৎসা ও ওষুধ কেনা সম্ভব হয় না। তবে হাজিরা ভিত্তিতে কাজের চেয়ে চুক্তিতে কাজ করলে আয় বেশি হয়।
দিনমজুর আবদুল কাদের জানায়, কাজ নেই। ফলে আয়ও নেই। তাই এক মুঠো চাল কেনার উপায় নেই। অনাহারেই দিন কাটে পরিবারের। এভাবে চলতে থাকলে বাঁচার তাগিদে এক সময় অবৈধ পথে যেমন চুরি-ছিনতাই এসব কাজ করে জীবিকা নির্বাহের পথ বেছে নিতে হবে।
কাজের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা নারী শ্রমিক সখিনা বলেন, কাজ না পেয়ে ভিক্ষাবৃত্তিরও উপায় নেই। কারণ মানুষ বলে সুস্থ মানুষ হয়ে তুমি ভিক্ষা করো কেন?
এদিকে দিনমজুর সরবরাহকারী কন্ট্রাক্ট সাহারুল ইসলাম জানান, মজুরদের আগের মতো কাজে নেয়ার সুযোগ পাই না। কম টাকা মজুরিতেও কাজ নেই। ফলে অনেক কষ্টে কাটছে দিনমজুরের জীবনযাপন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।