Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দীর্ঘদিন পর ঘোষিত হচ্ছে বিভক্ত ঢাকা মহানগর আ’লীগের কমিটি

প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

তারেক সালমান : দুই ভাগে বিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি আজ রোববার ঘোষণা করা হবে। ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (উত্তর)’ ও ‘ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ (দক্ষিণ) ’ এই দুটি নামে এখন থেকে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ পরিচালিত হবে। দলীয় অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, ঢাকাকে দুই সিটি করপোরেশনে ভাগ এবং দলীয় কর্মকা-কে গতিশীল করতে আওয়ামী লীগ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দলটির নীতি নির্ধারকেরা বলেছেন।
২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়া সম্মেলনের মেয়াদ শেষ হওয়ার ৩ বছর ৩ মাস পর ঘোষণা হতে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি। দীর্ঘ ৯ বছর পর ২০১২ সালে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও আজ রোববার সেই কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা ইনকিলাবকে জানিয়েছেন।
প্রায় সাড়ে নয় বছর পর ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এর পরে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ছাড়াই পার হয়েছে এক মেয়াদেরও বেশি সময়।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, আগামী ১৩ এপ্রিল ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে যোগ দিতে তুরস্কে যাবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রী চান সম্মেলনের যাওয়ার আগেই নগর কমিটির ঘোষণা দিয়ে যেতে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ঢাকাকে দুটি সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়েছে, সবকিছু এখন দুইভাগে পালিত হচ্ছে। এ কারণে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের দুটি কমিটি হবে। রোববার বেলা ১১টায় ধানমন্ডি কার্যালয়ে এ কমিটি ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, গত বছর এপ্রিলে ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খানকে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের জন্য পৃথক দুই কমিটি করার দায়িত্ব দেন শেখ হাসিনা। দায়িত্ব নিয়ে তারা দুইভাগে নগরের উত্তর ও দক্ষিণের কমিটি এবং নগরের থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটির খসড়া তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছেন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। ফারুক খান উত্তরে ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহ ও মো. সাদেক খানকে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে খসড়া কমিটি প্রস্তাব করেন। দক্ষিণের জন্য আবদুর রাজ্জাক সভাপতি হিসেবে এমএ আজিজ ও শাহে আলম মুরাদকে সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাব করে কমিটি চূড়ান্ত করে সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেন। তবে গত ২৩ জানুয়ারি এমএ আজিজ মারা যাওয়ায় তার স্থলে লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাতকে সভাপতি হিসেবে চূড়ান্ত করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই সংগঠনকে গতিশীল করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুইভাগে বিভক্ত করার উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পরে উত্তরে কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং দক্ষিণে ড. আব্দুর রাজ্জাককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল নগরের কমিটি সমন্বয় করতে। দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এই দুই সম্পাদকম-লীর সদস্য ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দল সমর্থিত দুই প্রাথীর নির্বাচনী সমন্বয়কারী হিসেবেও কাজ করেছেন।
কমিটির বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটি সমন্বয়ের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, রোববার ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা হতে পারে।
কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের তিনজন নেতা বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগের পরিধি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। গত ৫ জানুয়ারিতেও মহানগর উত্তর এবং দক্ষিণ আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করেছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনও দুটি। একটি কমিটিতে সবাইকে জায়গা দেয়া সম্ভব হবে না। সুতরাং একটি কমিটি দেয়া হলে বিশৃঙ্খলা ও গ্রুপিং হবে। এ ছাড়া ঢাকা মহানগরে আন্দোলনে গতি আনতে দুটি কমিটি গঠন করতে নির্দেশ দিয়েছেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তারা জানান, মহানগর কমিটির উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার পরই সব থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হবে।
দলটির সম্পাদকম-লীর একজন সদস্য ইনকিলাবকে জানান, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি পদে একজন অরিজিনাল ঢাকাইয়াকে দায়িত্ব দিতে চাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে এমএ আজিজের জায়গায় দক্ষিণের সভাপতি হচ্ছেন লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আবুল হাসনাত।
তিনি আরও জানান, গত মার্চ মাসের ১১ তারিখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবুল হাসনাতকে গণভবনে ডেকে আনেন। সেখানে প্রায় ৭ মিনিট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কথা হয়।
বিষয়টি জানতে আবুল হাসনাতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আপা আমাকে ডেকেছিলেন। সেখানে তিনি আমাকে বলেন, খুব শিগগিরই ঢাকা মহানগরের কমিটি ঘোষণা করবেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, প্রায় সাড়ে নয় বছর পর ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। সম্মেলনের পর মহানগরের অন্তর্গত ১০৩টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন ও ৪৯টি থানা কমিটি গঠন ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখার কমিটি গঠিত হয় ২০০৩ সালের ১৮ জুন। ওই বছর জুনে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলেও পরের বছর ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল মোহাম্মদ হানিফকে সভাপতি ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের নভেম্বরে মারা যান মোহাম্মদ হানিফ। তার মৃত্যুর পর এক নম্বর সহ-সভাপতি ওমর আলী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। এরপর ওয়ান-ইলেভেনের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দায়িত্ব পান ৬ নম্বর সহসভাপতি এমএ আজিজ।
এ দিকে দুই মহানগরের নতুন নেতৃত্বে বিশেষ করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এ চারজন ছাড়াও আরও বেশ কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছিল। এদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণে মুকুল চৌধুরী, হাজী সেলিম। ঢাকা উত্তরে কামাল আহমেদ মজুমদার, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আসলামুল হক আসলাম প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দীর্ঘদিন পর ঘোষিত হচ্ছে বিভক্ত ঢাকা মহানগর আ’লীগের কমিটি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ