Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সন্দেহভাজন কর্মকর্তা ছাইদুর রহমান

প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : তদন্ত সংস্থা সিআইডির আপত্তি সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সন্দেহভাজন এক কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাচ্ছেন বলে জানা গেছে। কর্মশালায় অংশ নেয়ার নামে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে তার যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র মতে, রিজার্ভ চুরি ঘটনা চাউর হওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু কর্মকর্তাকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞাসহ তাদেরকে সর্বদা চোখে চোখে রাখছে। তাদের মধ্যে অন্যতম বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার কাজ করা এফআরটিএমডি এবং অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের ব্যাক অফিস সুইফট বার্তা প্রস্তুত ও পাঠানোর সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। আর এফআরটিএমডি-এর মহাব্যবস্থাপক (জিএম) হিসেবে রয়েছেন কাজী ছাইদুর রহমান। তাই ঘটনার শুরু থেকেই এ দুই বিভাগের কার্যক্রম নজরদারিতে রেখে তাদের বিদেশ সফরের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এদিকে তদন্ত সংস্থা সিআইডি কাজী ছাইদুর রহমানের সফরের বিষয়ে আপত্তি তুললেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ সিআইডির দু’টি টিম বর্তমানে ফিলিপাইন ও শ্রীলঙ্কায় অবস্থান করছে। টিমের প্রতিনিধিরা দেশে ফেরার আগেই ওই কর্মকর্তা দেশ ত্যাগ করছেন। এ বিষয়ে সিআইডির দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আমরা জেনেছি তিনি বিদেশ যাচ্ছেন। যদিও নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাকে ইমিগ্রেশন থেকে ফেরত পাঠানোর নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তাকে ফেরত পাঠানো হবে কি না জানা নেই।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, এফআরটিএমডির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কাজী ছাইদুর রহমানকে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। গত ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের এক অফিস আদেশে বলা হয়, ‘এক্সিকিউটিভ ফোরাম ফর পলিসি মেকারস হাই অফিসিয়াল’ সংক্রান্ত একটি কর্মশালায় যোগ দিতে তিনি আগামী ১৮ ও ১৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করবেন।
তদন্ত সংস্থা সিআইডির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, তারা ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশ কিছু কর্মকর্তার পাসপোর্টে বিশেষ মার্ক করে রেখেছেন। তার মধ্যে এফআরটিএমডি শাখার জিএমসহ আরো অনেক কর্মকর্তা আছেন। এরপরও তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তার ধারণা, সন্দেহভাজন কর্মকর্তা কাজী ছাইদুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর তার ফিরে আসা অনিশ্চিত। তাছাড়া তিনি কর্মশালা শেষে আত্মগোপনও করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, রিজার্ভ চুরির বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর ঘটনা। আর কারো ব্যাপারে সিআইডির আপত্তি থাকার অর্থ হলো তিনি সন্দেহভাজন। এ ধরনের কর্মকর্তাকে বিদেশে প্রশিক্ষণে পাঠানো উচিত নয়। তিনি বলেন, যেকোনো সময় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু কোনো কারণে ওই কর্মকর্তা যদি দেশে ফিরে না আসেন তবে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হবে। এতে পুরো কার্যক্রম প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তিনি বলেন, আমি মনে করি স্বচ্ছতার স্বার্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত এ ধরনের অনুমতি প্রত্যাহার করা।
ছাইদুর রহমান সম্পর্কে জানা গেছে, তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। সহকর্মীদের কাছে অত্যন্ত চতুর বলে পরিচিত তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভিস রুল অনুসারে কোনো বিভাগে একজন কর্মকর্তা তিন বছর কর্মরত থাকতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বিশেষায়িত কর্মকর্তা হলে অনধিক ৫ বছর পর্যন্ত একই বিভাগে কর্মরত থাকতে পারেন। কিন্তু ছাইদুর রহমানের ক্ষেত্রে সার্ভিস রুল মানা হচ্ছে না। তিনি একটানা ১৭ বছর ধরে একই বিভাগে কর্মরত। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ইতিপূর্বে এক সময়ে সোনালী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার ছিলেন। পরে সহকারী পরিচালক (এডি) হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেন। তিনি বর্তমানে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ পলিসি অনুযায়ী ৭ শতাংশ নগদ রাখা যেত। ছাইদুর রহমানের প্রস্তাবে সেটা ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তিনি তার বিভাগের অপর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পাত্তা না দিয়ে সরাসরি ডিজি (ডেপুটি গভর্নর) ও গভর্নরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ থাকলেও প্রভাবশালী এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না।
তদন্ত সংস্থা সিআইডি বা অন্য কোনো সংস্থা থেকে কাজী ছাইদুর রহমানের বিদেশ সফর নিয়ে নিষেধাজ্ঞা আছে কি না জানতে চাইলে তিনি ইনকিলাবকে বলেন, আমার জানা নেই। তাহলে তো আমি নোটিশ পেতাম। তিনি বলেন, যেহেতু আন্ডার ইনভেস্টিগেশনে আছে তাই এ সম্পর্কে আমার বলার অধিকার নেই। যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বাংলাদেশ ব্যাংক বলতে পারবে। ব্যাংক চাইলে আমি যাবো, নইলে না।
উল্লেখ্য, গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়। এর মধ্যে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার গেছে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনে। মোট ৫টি সুইফট বার্তার মাধ্যমে এসব অর্থ চুরি হয়েছে উল্লেখ করে ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলা করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট অ্যান্ড বাজেটিং ডিপার্টমেন্টের ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুমের যুগ্ম-পরিচালক যোবায়ের বিন হুদা। মানিলন্ডারিং আইনে করা মামলাটির তদন্ত করছে সিআইডি। তারা কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরের তথ্যও খতিয়ে দেখছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ