পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব রিপোর্ট : রাজধানীর বাসায় বাসায় চলছে পানি, গ্যাসের তীব্র সঙ্কট। গ্রামগঞ্জে চলছে বিদ্যুতের লোডশোডিং। মহানগরের প্রতিটি রাস্তায় ভয়াবহ যানজট। জেলা উপজেলা পর্যায়ে সড়কের বেহাল অবস্থা সব মিলিয়ে রমযানে নানামুখী সংকটে নাকাল দেশবাসী। গত শনিবার দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ১০ হাজার ৬৯৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। এর আগে গত বছর ২২ মে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছিল। আর এবছর ১৯ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক অতিক্রম করে। ওদিন ১০ হাজার ৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় বলে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ওয়োবসাইটে দেয়া রয়েছে। বর্তমান সরকারের প্রায় দশ বছরে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবারহ করতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে রমযান শুরুর আগে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তা ব্যক্তিরা বারবার এসব সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও তা কার্যকর হয়নি। বরং তা আরো কয়েকগুণে বেড়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। এতে করে রমযানে দেশবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। দিন যতই যাচ্ছে সমস্যা ততই প্রকট হচ্ছে। সমাধানে নেই কার্যকরী উদ্যোগ।
বিদ্যুৎ ও পানি সংকটের দ্রæত সমাধান না হলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসতে পারে আশংকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ও পানির পাম্প রক্ষায় রাজধানীতে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। বিদ্যুতের ঘন-ঘন লোডশোডিং বিদ্যুৎ চালিত সরঞ্জামাদি অচল করে ফেলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ উপদেষ্টা ড.তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছিলেন রমযানে কোনো এলাকায় একসঙ্গে আধঘণ্টার বেশি লোডশেডিং হবে না। কিন্তু তার এ ঘোষণায় কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং রোজা শুরু হওয়ার সাথে সাথে এ সংকট দিন দিন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে উপদেষ্টার এ আশ্বাস মিথ্যায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারাদেশে কোথাও সেহরির সময় আবার কোথাও ইফতার বা তারাবীহ নামাজের সময় লোডশেডিং হচ্ছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ইনকিলাবকে বলেন, দেশে আগের মতো লোডশেডিং নাই। অনেক জেলায় ঝড়-বাতাসের কারণে বিদ্যুৎসংযোগ বন্ধ থাকে। তারপরও ঠিক হলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। আমরা এখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য কাজ করছি। আশা করি আগামীতে আর সমস্যা হবে না।
জানা গেছে, গত শনিবার রাত ৯ টায় দেশে এযাবৎকালের সর্বোচ্চ রেকর্ড পরিমাণ ১০ হাজার ৬৯৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। এর আগে ২২ মে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছিল। উল্লেখ্য, এ বছর ১৯ মার্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১০ হাজার মেগাওয়াটের মাইলফলক অতিক্রম করে বলে দাবি করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ওদিন ১০ হাজার ৮৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। পরবর্তীতে ২৪ এপ্রিল ১০ হাজার ১৩৭ মেগাওয়াট ও ২২ মে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন : রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ কম থাকায় রংপুরসহ এই বিভাগের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা এবং গ্রাম পর্যায়ে ব্যাপক হারে লোডশেডিং চলছে। দিনে-রাতে দফায় দফায় চলছে লোডশেডিং। পবিত্র রমজান মাসে ইফতার ও সেহরীর সময়ও মানছে না। বিশেষ করে তারাবীর সময় প্রায়ই বিদ্যুৎ না থাকার কারনে মানুষ মসজিদে তারাবীর নামাজ ঠিকমত আদায় করতে পারছে না। তবে স¤প্রতি রংপুর মহানগরীতে খুব বেশি একটা লোডশেডিং না হলেও উপজেলা এবং গ্রাম পর্যায়ে তা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিনে-রাতে প্রায় ১৪/১৬ ঘন্টাই বিদ্যুত থাকছে না। রমজান মাসের কারনে মহানগরীকে শান্ত রাখতে কর্তৃপক্ষ নগরীর বাইরে লোডশেডিং বাড়িয়ে দিয়ে মহানগরীতে লোডশেডিং কিছুটা কমিয়ে দিয়েছেন।রংপুর বিভাগের পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধা মিলে এই আট জেলায় বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২৬ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ আর পিডিবির গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৬ লাখের কাছাকাছি।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, জাতীয় গ্রীড হতে চাহিদামত বিদ্যুত সরবরাহ মিলছে তারপরও রাজশাহীর মানুষ বিদ্যুত পাচ্ছেনা। সকাল দুপুর সন্ধ্যা সেহেরী ইফতার কোন সময় থাকছেনা নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুত সরবরাহ। একদিকে রমজান অন্যদিকে প্রকৃতিতে তাপের তীব্রতায় এক অসহনীয় অবস্থা। এরমধ্যে দফায় দফায় বিদ্যুত বিভ্রাট মানুষকে আরো বিপাকে ফেলেছে। গরমে মানুষ হাঁসফাঁস করছে। ফ্যান থাকলেও বিদ্যুতের অভাবে তা চালানো যাচ্ছেনা। বিদ্যুতের অভাবে ওয়াসার পানির পাম্পগুলো এক সাথে না চলার কারনে পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটছে। এখন ঈদের বাজার। সেখানও বিদ্যুত বিভ্রাট বিপাকে ফেলেছে ক্রেতা বিক্রেতাদের। বেকায়দায় পড়েছে দরজি বাড়িগুলো। কলাবাগান ও আশেপাশে এরাকায় ইফতারির সময় বিদ্যুত চলে যায়। কোন কোন এলাকায় সেহেরীর সময় ঘটে বিদ্যুত বিভ্রাট। বিদ্যুতের এমন যাওয়া আসা কোথাও বার বার আবার কোথাও দীর্ঘক্ষন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম, চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে জানায়, বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে রমজানেও থেমে নেই বিদ্যুতের যন্ত্রণা। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র চলছে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া খেলা। এতে করে সেহেরি, ইফতারি ও তারাবির সময়ও বিদ্যুৎ মিলছে না অনেক এলাকায়। দিনেও চলছে বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি। অচল বৈদ্যুতিক পাখার নীচে প্রচন্ড গরমে ঘামতে হচ্ছে রোজাদারদের। জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে মানুষের জীবন অতিষ্ট। তবে পিডিবি বলছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোন লোডশেডিং নেই। সঞ্চালন ব্যবস্থায় ক্রটির কারণে কোন কোন এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। ইফতার, তারাবি ও সেহেরির সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রোজার আগেই ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কথা ছিল রোজাদারদের দুর্ভোগ কমাতে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। তবে বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় রাতে-দিনে দফায় দফায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। কোথাও একবার সঞ্চালন লাইনে ক্রটি দেখা দিলে তা সারাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন মানুষ। অনেক এলাকায় ইফতারি ও তারাবির সময়ও বিদ্যুৎ মিলছে না। এখন নতুন যন্ত্রণা যোগ হয়েছে প্রি-পেইড। যান্ত্রিক ক্রটির কারণে কার্ড রিচার্জ করা যাচ্ছে না। রোজার মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও রিচার্জ করতে পারছে না গ্রাহকেরা। কার্ডের ব্যালেন্স শেষ হয়ে যাওয়ায় বাসায় বিদ্যুৎ নেই। লাইনে দাঁড়িয়েও করা যাচ্ছে না রিচার্জ।
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে জানায়, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-বিউবো’র আওতায় কুমিল্লায় সোয়া লাখের বেশি গ্রাহক রয়েছে। কুমিল্লায় এসব গ্রাহক ঘিরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারি কয়েক লাখ মানুষ প্রতিদিন কমবেশি লোডশেডিংয়ে ভোগান্তিতে পড়ছে। প্রচন্ড গরমে রোজাদারসহ সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ছন্দপতন ঘটছে। শিল্প, কলকারখানা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দেখা দেয় স্থবিরতা। কুমিল্লা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী বলছেন- লোডশেডিং নয়, মাঝেমধ্যে কারিগরী ক্রুটির কারণে কোথাও কোথাও বিদ্যুৎ সরবরাহ সাময়িক বন্ধ থাকে। কুমিল্লা শহর ও শহরতলী নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগ কাজ করে থাকে। তারমধ্যে ১ নম্বর বিভাগে আওতায় রয়েছে কুমিল্লা শহরের পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চল। শহরের পূর্ব ও উত্তরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা বিক্রয় ও বিতরণের ২ নম্বর বিভাগের আওতায় রয়েছে। বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ৩ নম্বরের আওতায় রয়েছে শহরের দক্ষিণাঞ্চলের টমসমব্রীজ থেকে জাঙ্গালিয়া, পদুয়ারবাজার, চৌয়ারা বাজার, সোয়াগাজী বাজার ও কোটবাড়ি এলাকা। বিউবো কুমিল্লার ওই তিনটি বিভাগে গ্রাহকের সংখ্যা সোয়া লাখ ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও লাকসাম, বুড়িচং, চৌদ্দগ্রামেও রয়েছে বিউবোর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কার্যক্রম। বিউবোর আওতায় কুমিল্লার বিক্রয় ও বিতরণের তিনটি বিভাগের প্রায় সোয়া লাখ গ্রাহক ঘিরে কয়েকলাখ মানুষ প্রতিদিন কমবেশি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফাঁদে পড়ছে। গত কয়েকদিনে জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড গরমে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে রোজাদারসহ সাধারণ মানুষ হাঁপিয়ে উঠেছেন। এদিকে কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলার গ্রামীণ জনপদে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পবিস) কাজ করছে। গ্রামের যেসব এলাকা পল্লী বিদ্যুতের আওতায় সেখানে ‘মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ আসে’ বলে প্রবাদ রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে অত্যধিক লোডশেডিংয়ের কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকদের। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার প্রধান প্রকৌশলী মৃণাল কান্তি সেন বলেন- ‘কুমিল্লায় কোনরকম লোডশেডিং নেই। তবে বিভিন্ন এলাকায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার বিষয়টি সিরিয়াস কিছু না। এটি স্থানীয়ভাবে কোন সিষ্টেমের ক্রুটি হতে পারে। আর এখন ঝড়, বৃষ্টিপাতের সময়। কখনো বিদ্যুৎ লাইন বিছিন্ন হচ্ছে, লাইনের উপর গাছের ডালপালা পড়ছে। এগুলো সমাধান করতে সময় লাগছে। ততোক্ষণ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় থাকছে। বিদ্যুতের লোকজন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্বাভাবিক ও নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে সচেষ্ট রয়েছে
বগুড়া ব্যুরো জানায়, চরম বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বগুড়ায় রীতিমত নভিশ^াস উঠেছে জনজীবনে। বাড়িঘর , অফিস আদালত , কলকারখানা , মসজিদ , বড় ছোট সব ধরণের বিপনী বিতানে বাধ্য হয়ে মানুষ বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে জেনারেটর , আইপিএস এবং সোলার প্যাণেল ব্যবহার করছে । বগুড়া বিদ্যুৎ বিতরণ কেন্দ্র ১, ২ ও ৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী গন জানান , সরবরাহ সংকটের কারণে শহরে দিনে ২ ঘণ্টা লোডশেডিং চলছে। সকালে এবং সন্ধ্যায় ১ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। শহর এলাকায় ২ ঘণ্টা লোডশেডিং এর কথা অফিসিয়ালী বলা হলেও বাস্তবে ভুক্তভোগীরা বলছেন সারাদিনে ও রাতে কয়বার যে বিদ্যুৎ যাওয়া আসা করা করে তা’ গুনে রাখাও সম্ভব হয়না । বগুড়ায় ৩ বিতরণ কেন্দ্রের আওতাধীন লক্ষাধিক আবাসিক / অনাবাসিক / বানিজ্যিক মিলিয়ে লক্ষাধিক গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে প্রায় ৭০ মেগাওয়াট। আর অফিসিয়ালী প্রায় ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে বলা হলেও বাস্তবে লোডশেডিং এবং ঘনঘন আসা যাওয়ার খেলা দেখে মনে হয় আসলে চাহিদার অর্ধেক বিদ্যুতের সরবরাহ হয় কিনা তা’ নিয়ে গ্রাহক পর্যায়ে সন্দেহ রয়েছে । অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতের চাহিদার ১৩৯ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের পরিমান ১২৬ মেগাওয়াট বলা হলেও গ্রাহকদের প্রশ্ন তাহলে সারাদিন ও রাতের বেশির বাগ সময়ই বিদ্যুত পাওয়া যায়না।
বরিশাল থেকে নাছিম-উল আলম জানান, উৎপাদন ও সরবারহ ব্যবস্থায় কোন ঘাটতি না থাকলেও বিতরন ব্যবস্থার ত্র“টির কারনে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ নিয়ে চরম দূর্ভোগে আমজনতা। গত দুবছরে ঢালাওভাবে নতুন সংযোগ প্রদানের পাশাপাশি বিদ্যমান গ্রাহকগন অধিক ক্ষমতার বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করায় চাহিদা প্রায় দ্বিগুন বেড়ে গেছে বলে বর্তমান সংকট ঘনিভুত হয়েছে। এবক্তব্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল মহলের। আর এ নগরীতে বেশীরভাগ গ্রাহকই কোন ধরনের অনুমোদন ব্যতিরকেই এয়ারকুলার সহ বিভিন্ন ধরনের অধিক ক্ষমতার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করলেও তা নিয়ে কোন ধরনের নিয়ন্ত্রন নেই ওজোপাডিকো’র। ফলে চলতি রমজান মাসের ইফতার থেকে তারবীর নামাজ হয়ে সেহেরী পর্যন্ত দফায় দফায় লোডসেডিং হচ্ছে খোদ বরিশাল মহানগরীতেও। কিন্তু বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই। ভোলা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও বরগুনারও প্রায় একই চিত্র। প্রায় এক যুগ আগে নির্বিঘœ বিদ্যুৎ সরবারহের কথা বলে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুরের ৫টি সহ দক্ষিন ও দক্ষিন-পশ্চিমের ২১টি জেলা নিয়ে ‘পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’ গঠন করা হলেও এ দীর্ঘ সময়েও তারা সরবারহ ও বিতরন ব্যবস্থার কোন উন্নতি করতে পারেনি।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানায়, ফরিদপুরে কয়েকদিন ধরে ঘর ঘর বিদ্যুতের লোড শেডিং-এ অতিষ্ট হয়ে পড়েছে রোজদাররা। গত সোমবার ও মঙ্গলবার রাতে ৪/৫ বার লোড শেডিং হয়েছে। অনেক রোজাদাররা ঘুমাতে পারে নাই। ফরিদপুর শহর ব্যতিত প্রতিটি উপজেলায় গড়ে ৪/৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকে। বাকী সময়গুলো বিদ্যুৎ পায় না বলে জানান গ্রাম গঞ্জের সাধারণ জনগণ। এর মধ্যে অন্যতম বোয়ামারী উপজেলার নুরুল ইসলাম, আলফাডাঙ্গার উপজেলার বাশার, চরভদ্রাসন উপজেলার লাবলু, সদর উপজেলায় মোশাররফ হোসেন। তারা আরো জানান, বেশীরভাগ উপজেলার গ্রামগুলোতে পল্লী বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ না করায় অতিষ্ট হয়ে পড়েছে রোজাদার ও সাধারণ কৃষকরা। পল্লী বিদ্যুৎ তাদের ইচ্ছামত বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।
যশোর ব্যুরো জানায়, সবার মধ্যেই এখন ধ্বনিত হচ্ছে ‘মেঘ দে পানি দে’। বাতাসে আগুনের হল্কা। ভ্যাপসা গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ। গ্রীষ্মের অস্বাভাবিক শুষ্কতা ও প্রখর খরতাপে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমখি হচ্ছে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমের কৃষি, শিল্প, মৎস্য, বনজ ও পরিবেশ। মানুষ রীতিমতো হাপাচ্ছে। প্রচন্ড দাবদাহে ছটফট করছে প্রাণীকুল। আবহাওয়াবিদদের বক্তব্য, নদ-নদী, খাল-বিল প্রায় পানিশূন্য এবং গাছপালা কমে যাওয়ায় ভূপৃষ্ট থেকে তাপমাত্রা উপরে উঠার সময় বাষ্প বা পানিকণা নিতে পারছে না। আকাশে মেঘ ও বৃষ্টির জন্য যে বায়ু দরকার তা পাচ্ছে না। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ৩৭ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ওঠে যশোর। যশোরে ২৭ মে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৬দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৮ মে কিছুটা কমে তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া দপ্তর জানায়, এখন থেকে তাপমাত্রা ক্রমাগত কমার সম্ভাবনা রয়েছে। পিডিবি বলছে, যশোর শহরে লোডশেডিং মাত্রা কম। গ্রামাঞ্চলে ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না বলে একাধিক সুত্রে জানা গেছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দাবী বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা বেশী, তবুও সাধ্যমতো বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভোলা জেলা সংবাদদাতা এম এ বারী জানান, তীব্র তাপদাহে পুড়ছে ভোলা। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বুধবার জেলায় মৌসূমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রবাহিত হচ্ছে। দিনের তাপমাত্রা ছিলো ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থান বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আপাতত বৃষ্টির কোন পূর্ভাবান নেই বলেও জানিয়েছেন তারা। এতে প্রচন্ড নাকাল অবস্থা মানুষের। গরম অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে মানুষ। রমজানে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছেনা মানুষ। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে গ্রাহকরা। গত সপ্তাহে জেলায় টানার বৃষ্টি হলেও গত ৩/৪ দিন ধরে বৃষ্টির দেখা নেই। এতে গরমের কারেন দিনের বেশীর সময় মানুষের নাকাল অবস্থা। গরমের হাত রেহাই না পাচ্ছেন না দিন মজুরেরা। তীব্র গরম অব্যাহত থাকলে ফসলের ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এখন মাঠে কৃষকের আউশ, গ্রীস্মকালীন সবজি, শশা, বাদাম রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।