Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এবার অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার

অর্থের যোগানদাতা ও চোরাকারবারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

সাখাওয়াত হোসেন | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

অবৈধ অস্ত্রধারী, অর্থের যোগানদাতা ও চোরাকারবারীদের তথ্য সংগ্রহ করছে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানের পর শুরু হবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান। এ লক্ষে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সংশ্লিস্ট্র সূত্রে জানা গেছে। একই সাথে অবৈধ অস্ত্রধারীদের আশ্রয়দাতা ও দেশের সীমান্তের যেসব পয়েন্ট দিয়ে অবৈধ অস্ত্র আসে সে এসব এলাকা চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেয়ার জন্যও উচ্চ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে যে, সীমান্তে নিয়োজিত অন্যান্য সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় অসাধু সদস্যের সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন চোরাচালান পণ্যের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র দেশের অভ্যন্তরে নিয়ে আসছে। এসব মারণাস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, দলীয় ক্যাডার, চরমপন্থি ও নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের সদস্যদের হাতে। অন্যদিকে, বিভিন্ন সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেফতার হলে কিছু দিনের মধ্যেই জামিনে বের হয়ে পুনরায় আগের পেশায় ফিরে যাচ্ছে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ী। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় মামলার তদন্তকাজে থাকা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দুর্নীতিবাজ সদস্যদের সমঝোতায় বিশেষ ভূমিকা রাখছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে না গেলে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে এসব অবৈধ অস্ত্র ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। এতে করে দেশের সার্বিক আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। এজন্যই নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন প্রয়োজন।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বলেন, পৃথিবীর যে দেশেই মাদকের উত্থান রয়েছে, সেখানেই অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। পাশাপাশি ভিন্নকাজেও সন্ত্রাসীরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। আমাদের র‌্যাব-পুলিশ বিভিন্ন সময় এসব অস্ত্রধারীকে আইনের আওতায় আনছে। জঙ্গিবাদ দমনে আমরা সফল হয়েছি। তেমনি মাদক ও অবৈধ অস্ত্র বন্ধেও আমরা সফল হব।
এন্টি টেররিজম ইউনিট প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার পুলিশের নিয়মিত কাজ। আইন-শৃংখলা রক্ষা এবং সাধারন মানুষের সার্বিক নিরাপত্তায় সারাদেশেই পুলিশ অবৈধ অস্ত্রধারী, অপরাধী এবং মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে সক্রিয় রয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আইন-শৃংখলা রক্ষায় পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ছিনতাই, জমি দখল ও বালুমহাল নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। আধিপত্য বিস্তারে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্রাস্ত্র ব্যবহার বা প্রদর্শন করছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ২৫টি রুট দিয়ে আসছে পিস্তল-রিভলভার। মিয়ানমার হয়ে সে দেশের বর্ডার গার্ড বাহিনীর সহায়তায় আসছে ভারী অস্ত্র। এই অস্ত্র ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে। পাড়া-মহল্লায় র‌্যাব-পুলিশ অভিযান পরিচালনা করলেই মিলছে এসব অবৈধ অস্ত্র। আর এই অস্ত্র ব্যবহার করে বাড়ছে খুনোখুনি ও সামাজিক অস্থিরতা। পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশনস) সহেলী ফেরদৌস দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ অস্ত্রের বিরুদ্ধে অভিযান তো আমাদের একটি রুটিনওয়ার্ক। দেশেব্যাপী ঘোষনা দিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সময়ের প্রয়োজনে কখন কি পদক্ষেপ নিতে হবে সেটা সময়েই বলে দেবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, যারা মাদক ব্যবসায়ী বিশেষ করে ইয়াবা চোরাচালানে জড়িত, তাদের অনেকেই অবৈধ অস্ত্র ব্যবসায়ও জড়িত। নির্বিঘেœ মাদক ব্যবসা করতে অবৈধভাবে অস্ত্র দখলে রেখেছে তারা। পুলিশ সদর দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, একসময় আঞ্চলিক গডফাদার, রাজধানী শহরের একেকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছিল। তাদের সাঙ্গোপাঙ্গোরা অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার করত। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এখন রাজনৈতিক দলের কিছু নেতকর্মীই সন্ত্রাসের ভূমিকায়। আধিপত্য বিস্তার বা প্রতিপক্ষ দমনে তারা অস্ত্র ব্যবহার করছে। এসব ছোট অস্ত্রের কিছু উদ্ধার হলেও বেশিরভাগই চলে যাচ্ছে নানা উপায়ে অপরাধীদের হাতে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে দীর্ঘ সময় ধরে সাঁড়াশি অভিযান না থাকায় অস্ত্রের ঝনঝনানি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
র‌্যাবের মিডিয়া উইয়ং-এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান সারাবছর ধরেই চলছে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে অভিযান জোরদার করা হয়। মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে র‌্যাব সারাদেশেই সক্রিয় রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সাল পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ৫ হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারের বিপরীতে ২ হাজার ২০৮টি মামলা দায়ের হয়। তবে উদ্ধার বা আটকের অধিকাংশ মামলাই বিচারাধীন। সূত্র বলছে, আইনের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে মামলার বিচারে ধীরগতি এবং সাক্ষ্যপ্রমাণের অভাবে অবৈধ অস্ত্রধারীদের বিচার হচ্ছে না।
র‌্যাব সদর দফতরের মিডিয়া উইং সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৬ এপ্রিল থেকে চলতি বছরের ২৮ মে পর্যন্ত সারাদেশে অভিযান চালিয়ে র‌্যাব ১হাজার ২শ’ ৭৫টি অবৈধ অস্ত্র ও ১২হাজার ৫শ’ ৭৮ টি গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ৮৬৫জনকে। গ্রেনেড, বোমা ও ককটেল উদ্ধার করা হয় ৭হাজার ৯৯টি। এ সময় বিভিন্ন প্রকার বিস্ফোরক প্রায় ২৫ কেজি এবং ট্যাংক বিধ্বসী উচ্চ বিস্ফোরক ১০টি উদ্ধার করা হয়েছে।
আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের ১২৮টি সিন্ডিকেট রয়েছে। দেশে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে ৪ লাখের মতো। রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার ঘটনায় সেখানে কমান্ডো অভিযান শেষে অত্যাধুনিক ৫টি পিস্তল, ৩টি একে-২২ রাইফেল, বিস্ফোরিত শক্তিশালী গ্রেনেডের ৯টি সেইফটি পিন ও ৩০০ রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়। অত্যাধুনিক ভয়ঙ্কর এ অস্ত্রশস্ত্র দেশে এসেছে গোপন পথে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে। গত ২২ এপ্রিল রোববার বিকালে রাজধানীর বাড্ডা থানার বেরাইদ এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রæপের গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। ঢাকা-১১ আসনের সংসদ সদস্য ও বেরাইদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সমর্থকদের মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, দেশে এখন যেসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই বিদেশি। আগে দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার দেখা গেলেও এখন কমে গেছে। নতুন চকচকে এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই আসছে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। দেশের ১৮টি জেলার ৩০টি সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে এসব অবৈধ অস্ত্র আসছে। ইদানিং আবার অনলাইনেও অস্ত্র বেচাকেনা চলছে। ২ মাস আগে রাজধানীর সবুজবাগ থেকে ৩টি বিদেশি পিস্তলসহ চারজন গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা পুলিশকে জানায়, যশোর সীমান্ত থেকে অস্ত্র কিনে এনে তারা ঢাকায় বিক্রি করে। ৭ পয়েন্ট ৬৫ বোরের পিস্তলগুলো তারা ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায় বিক্রি করে। বেশির ভাগ ভারত ও পাকিস্তানের তৈরি। রাজধানীসহ সারা দেশে এখন ভয়ঙ্কর সব অবৈধ অস্ত্রের ছড়াছড়ি। হাত বাড়ালেই মিলছে আগ্নেয়াস্ত্র। সহজেই চলে যাচ্ছে সন্ত্রাসীদের হাতে।



 

Show all comments
  • রমিজ উদ্দিন ৩০ মে, ২০১৮, ২:৩০ এএম says : 0
    সকল অপরাধীদের বিরুদ্ধেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • আরীফ মাহমুদ ৩০ মে, ২০১৮, ২:৪১ এএম says : 0
    শুধু তথ্য সংগ্রহ করলে হবে না। কার্যকারী ব্যবস্থা নিতে হবে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ