কমল নামের একটি ছেলে
কমল নামের একটি ছেলের ডাগর দুটি চোখমায়ের আশা তার ছেলেটি অনেক বড় হোক।বাবার মনেও অনেক আশা ছেলে হবে বড়তাই তো তিনি বলেন কমল পড় অনেক
বাংলাদেশের ইতিহাসে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব ধূমকেতুর মতো। এও বলা যায়, তিনি এক হঠাৎ আলোর ঝলক। ধূমকেতুর মতো উদয় হয়ে বা আলোর ঝলক ছড়িয়ে তিনি বিদায় নিয়েছেন। তিনি এক ক্ষণজন্মা পুরুষ। ধূমকেতুর উদয় হয় আকাশে। জিয়ার ঠাঁই হয়েছে ইতিহাসে। তাঁর জীবনকালের ব্যাপ্তি তুলনামূলকভাবে স্বল্প, মাত্র ৪৫ বছর। জীবনের শেষ দশকে কয়েকটি বছর তিনি বাংলাদেশের জাতীয় জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে ওঠেন। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন বছর বাদ দিলে তার বাকি সময়টি দেশ ও জনগণের সাথে অঙ্গাঙ্গী সম্পৃক্ত ছিল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যরাত। অরণ্য-পাহাড়-সাগরবেষ্টিত চট্টগ্রাম। ঢাকায় যখন পাকিস্তানি বাহিনী নির্মম হত্যাকাÐ শুরু করেছিল, তখন চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছিল একই তাÐব। বাঙালির জাতীয় জীবনের সেই ক্রান্তিলগ্নে ‘উই রিভোল্ট’Ñএই দু’টি শব্দের বজ্রনির্ঘোষ উচ্চারণের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমান ইতিহাসকে স্পর্শ করেন। দেশ ও জাতির প্রয়োজনে নিয়তি সেদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘এক অখ্যাত’ বাঙালি মেজরকে ইতিহাসের পাদপ্রদীপের আলোয় টেনে এনেছিল। তারই পরিণতিতে দু’দিন পর ২৭ মার্চে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ইথারে ছড়িয়ে পড়ে দু’টি ব্যঞ্জনা। এক. মেজর জিয়াউর রহমান...। দুই. বাংলাদেশের স্বাধীনতার সেই ঐতিহাসিক ঘোষণা।
এ প্রসঙ্গে একটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন। কালুরঘাটের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সাথে তৎকালীন মেজর জিয়ার কোনো সম্পর্ক ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে চট্টগ্রামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের নায়ক হিসেবে নিজেকে স্থাপন করলেন জিয়া। খÐ লড়াইয়ের পথ পেরিয়ে একপর্যায়ে তার ব্যাটালিয়ন নিয়ে তিনি পটিয়ায় অবস্থান করছিলেন। এদিকে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্বাধীনতার মন্ত্রে উদ্বুব্ধ বেতার কর্মীর উদ্যোগে ততক্ষণে কালুরঘাটে বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র চালু হয়ে গেছে। সেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা একাধিকবার পাঠ করে ফেলেছেন। তবে কেউই তা শুনতে পায়নি। তাই জনমনে তার কোনো প্রভাব লক্ষিত হয়নি। জানা যায় যে, বেতার কেন্দ্রের নেতৃস্থানীয়জন বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম স›দ্বীপ চাইছিলেন কোনো বাঙালি সামরিক অফিসারকে দিয়ে কিছু বলাতে; যা সেই সময়ে ভীষণ ফলপ্রসূ হবে বলে তারা মনে করেছিলেন। তারা প্রথমে চট্টগ্রামে ইপিআরের অ্যাডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামকে বেতার কেন্দ্রে এনে কিছু বলাতে চেয়েছিলেন তাকে দিয়ে। কিন্তু তিনি আসতে না পারেননি। এরপর তারা জিয়ার কথা জানতে পারেন। জিয়াউর রহমানের সাথে তাদের যোগাযোগ হয়। বেলাল মোহাম্মদ পটিয়ায় গিয়ে তাঁকে নিয়ে আসেন। বেতার কেন্দ্রে গিয়ে জিয়া তাদের অনুরোধ কিছু বলতে রাজি হন। সেখানে তিনি একাধিক ঘোষণা দেন। এ নিয়ে সমস্যাও হয়। যা হোক, স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু বিষয়ে জিয়া সর্বশেষ যে ঘোষণাটি পাঠ করেন তা শেখ মুজিবের স্বাধীনতা ঘোষণার বক্তব্য নয়। কিন্তু কেন জিয়া আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের পাঠ করা শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণাটিই পাঠ করলেন না বা তাকে দিয়ে সেটা পাঠ করানো হল না, বরং জিয়া নতুন মুসাবিদা করা পৃথক বক্তব্য পাঠ করলেন বা করানো হলোÑ কিংবা স্বয়ং শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণা প্রচারের পরও জিয়া কেন তার ভাষ্যে মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন, এ বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা প্রদান বা আলোকপাত কেউ করেছেন কিনা তা আমার জানা নেই। যেটা এখন সত্য বলে প্রতিষ্ঠিত তা হলোÑ তিনি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, এ বিষয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। এ লেখায় সে বিষয়ের বিতর্ক স্পর্শ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং বক্তব্য হচ্ছে এই যে জিয়াউর রহমান যে ঘোষণাটি দিলেন বা পাঠ করলেন, তাও যে খুব বেশি সংখ্যক লোক শুনেছিলেন তা নয়। তবে যারা শুনেছিলেন, সৈনিক, সাধারণ মানুষ তারা তাৎক্ষণিকভাবে বিরাট স্বস্তি, সাহস, প্রেরণা লাভ করেছিলেন। তা এ কারণে যে শক্তিশালী বর্বর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি সৈন্যরা যুদ্ধে নেমেছে, অতএব বাঙালিরা আর তত হীনবল নয়। এ উপলব্ধিটুকু তখন ভীষণ মূল্যবান ছিল। এর ফলে বাঙলিদের মনোবল জোরদার হয়। অচিরেই এর সাথে যোগ হয় জয়দেবপুরে মেজর সফিউল্লাহর নেতৃত্বে বিদ্রোহ, যশোরে ক্যাপ্টেন হাফিজের নেতৃেত্ব লড়াই ও রংপুর সেনানিবাসে প্রতিরোধ যুদ্ধ যদিও কোনোটির সাথেই কোনোটির যোগসূত্র ছিল না।
৩০ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে পাকিস্তানি জঙ্গি বিমান হানার পর তা বন্ধ হয়ে যায়। সাময়িক বিরতির পর ভারত থেকে পুনরায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের নিয়মিত সম্প্রচার শুরু হয়। সেখানে জিয়ার উপস্থিতি ছিল না বা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে তার ভ‚মিকার কথা কেউ মনে করেনি। তাকে বা আর কোনো সামরিক অফিসারকেও কলকাতার স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ডাকা হয়নি। উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তানে থাকা বাঙালি সামরিক অফিসারদের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে সিনিয়র মেজর। শোনা যায়, জেনারেল ওসমানী জিয়ার ভ‚মিকা পছন্দ না করায় তাকে সেক্টর কমান্ডারের পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ও রণাঙ্গন থেকে প্রত্যাহার করে দায়িত্ববিহীন অবস্থায় কলকাতার নিকটবর্তী কল্যাণীতে প্রায় বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রাখা হয়। কিন্তু এ নিয়ে সৈন্য ও অফিসারদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয়। ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধকে আরো জোরদার করতে নিয়মিত সেনাবাহিনী গঠনের লক্ষ্যে তিনটি নিয়মিত সেনা ব্রিগেড গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এ প্রেক্ষিতে জন্ম নেয় জিয়া, সফিউল্লাহ ও খালেদ মোশাররফের নামের আদ্যাক্ষর দিয়ে গঠিত জেড ফোর্স, এস ফোর্স ও কে ফোর্স। জিয়াকে জেড ফোর্সের দায়িত্ব দেয়া হয়।
স্বাধীনতার পর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের দ্রæত পদোন্নতি দেয়া হয়। তবে জিয়া সবার সিনিয়র হলেও তৎকালীন সরকার তার জুনিয়র মেজর সফিউল্লাহকে পদোন্নতি দিয়ে চিফ অব স্টাফ বা সেনাপ্রধান নিয়োগ করে। জিয়াকে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ করা হয়। ১৯৭৫-এর ২৪ আগস্ট পর্যন্ত তিনি এ পদে থাকেন। তখন তার পদমর্যাদা ছিল মেজর জেনারেল। ২৫ আগস্ট নয়া সরকার তাকে সেনাপ্রধান নিয়োগ করে। এরপর আসে ৩ নভেম্বর। নয়া সামরিক অভ্যুত্থানে তাকে পদচ্যুত ও গৃহে অন্তরীণ করা হয়। ৭ নভেম্বরে পরিস্থিতির ফের পরিবর্তন ঘটে। জিয়াউর রহমান নতুন করে পাদপ্রদীপের আলোতে আসেন। সেনাবাহিনীতে তাঁর ভ‚মিকা মুখ্য হয়ে ওঠে। ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অধিষ্ঠিত হন তিনি। পরবর্তী দিনগুলোতে উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, তারপর দেশের প্রেসিডেন্ট হন।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর আগস্ট দেশের পরিস্থিতি ছিল এক রকম , আগস্ট থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ছিল অন্যরকম। ৭ নভেম্বরের পরবর্তী দিনগুলোতে দেশের পরিস্থিতি হয় আরেক রকম। সামরিক শাসনের ইতি টেনে দেশকে গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেন জিয়া। এর ফলে বিলুপ্ত সকল রাজনৈতিক দল পুনরুজ্জীবন লাভ করে। দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিকশিত হতে শুরু করে। জিয়া বহুবিধ কাজ করেন। তিনি সেনাপ্রধানের পদ ছাড়েন, রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রতিষ্ঠা করেন, সাধারণ নির্বাচন দিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশে উন্নয়নের নতুন যুগের সূচনা করেন। দেশে সবুজ বিপ্লবের লক্ষ্যে দেশব্যাপী খালখনন কর্মসূচি চালু করেন। নিজে কোদাল হাতে নিয়ে খালখনন কাজের উদ্বোধন করে দেশে সবুজ বিপ্লব সাধন তথা দেশের উন্নয়ন প্রয়াসের প্রতীকে পরিণত হন। তিনিই দেশের একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে একস্থান থেকে অন্যস্থানে গেছেন, দেশের আমলাসহ সকল শ্রেণির সরকারি কর্মচারীকে শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে জাতি গঠন ও জনসেবায় নিয়োজিত হতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আজ পর্যন্ত বাংলাদেশের আর কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান গণমানুষের এত কাছাকাছি পৌঁছতে পারেননি। দেশের শিশু-কিশোরদের প্রতিভা বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি করতে টিভিতে নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠান চালু ও শিশু একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। কলেজ-বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে নতুন চিন্তা-ভাবনার বিকাশ ঘটানোসহ তাদের অনুপ্রাণিত করতে প্রথমবারের মতো ছাত্র জাম্বুরি, কৃতী শিক্ষার্থীদের রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা প্রদান, জাতির ভবিষ্যত হিসেবে তাদেরকে রাষ্ট্রবিষয়ক ভাবনায় উজ্জীবিত করতে দেশের অচেনা সমুদ্রসীমার সাথে পরিচয় ঘটানোর মতো নজিরবিহীন উদ্যোগ নেন। আন্তর্জাতিক বিশে^ বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা ও পরিচিত করার নতুন পদক্ষেপ নেন জিয়া। ভারত-সোভিয়েত-মার্কিন প্রভাববলয় থেকে বের হওয়ার দুঃসাহসিক প্রয়াসে উদীয়মান বিশ^শক্তি চীনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের নতুন অধ্যায় রচনা করেন তিনি। পাশাপাশি মুসলিম বিশে^র সাথে সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মুসলিম ভ্রাতৃত্ববোধের অনির্বাণ চেতনায় উদ্বুদ্ধ বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশেষ মহলের আপত্তি-বাধা অগ্রাহ্য করে মুসলিম উম্মাহর সাথে যোগসূত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিয়ে চমক সৃষ্টি করেছিলেন। জিয়াউর রহমান ওআইসিকে সংহত ও শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ভ‚মিকা প্রদর্শন করেন। বিশেষ করে ইরাক-ইরান ভ্রাতৃঘাতী যুদ্ধ অবসানের লক্ষ্যে তিনি জোরালো উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যু বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে সম্ভাব্য সাফল্য অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে। তবে জিয়াউর রহমানের সবচেয়ে বড় অবদান তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ উপহার দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষকে বাঙালির গড় পরিচয়ের মধ্যে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন।
একজন রাষ্ট্রনায়কের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মকাÐের মধ্যে সৃজনশীলতার স্বতস্ফ‚র্ত প্রকাশ তাকে অনন্য সম্মান প্রদান করে। জিয়াউর রহমান ছিলেন সেই সৃজনশীল রাষ্ট্রনায়ক। একজন মেজর থেকে একজন প্রেসিডেন্ট। তাঁর নিয়তিই তাঁকে এ পর্যায়ে উন্নীত করেছিল। একজন সৎ, আর্থিক প্রলোভনের ঊর্র্ধ্বে থাকা, অক্লান্ত পরিশ্রমী একজন মানুষ হিসেবে জিয়াউর রহমান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর চিন্তা-চেতনা-পদক্ষেপ অনেকেরই মনঃপূঁত হয়নি। তাঁর বিরোধীরা তাঁর সকল কর্মেরই বিরোধী, জাতির ইতিহাস থেকে তাঁর নাম তারা মুছে ফেলতে চায়, ঢেকে দিতে চায় অসম্মানের কালো চাঁদরে। কিন্তু ইতিহাসের সত্য বোধ হয় এই যে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে সামরিক বাহিনীর চাকরি, পরিবার ও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তিনি যে সামরিক বিদ্রোহের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়ালেন, তার মধ্যে তাঁর ভবিষ্যত সম্ভাবনারই ইঙ্গিত আভাসিত হয়েছিল। তিনি যে কাজটি করেছিলেন তা তাঁর পরিকল্পিত ছিল না, পরিস্থিতি তাঁকে আলোকদীপ্ত হওয়ার পথে ঠেলে দিয়েছিল। একইভাবে ৭ নভেম্বরের ঘটনাপ্রবাহও তাঁর পরিকল্পিত ছিল না, ঘটনাপ্রবাহই তাঁকে পরিস্থিতির কুরসিতে সমাসীন করেছিল। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন মানুষ হিসেবে জিয়াউর রহমান দোষ-ত্রæটির ঊর্ধ্বে অবশ্যই নন। তাঁর বিরুদ্ধে যত বেশি সামরিক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে, যত সেনাসদস্য প্রাণ হারিয়েছেন, দÐিত হয়েছেন, চাকরিচ্যুত হয়েছেন, আর কারো সময় ততটা হয়নি।। তবে পরবর্তী সময়েও সেনা সদস্যদের মৃত্যু, চাকুরিচ্যুতি কিন্তু থেমে থাকেনি। জিয়ার মর্মান্তিক মৃত্যুও হয়েছে সেনাসদস্যদের হাতে। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তিনি দেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মর্যাদাবান, সর্বতোভাবে স্থিতিশীল ও উন্নয়নের পথে গতিময় রাখতে সদা সচেষ্ট, নিরলস, নিরাপস ছিলেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তাঁর সময়কালে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ যে তাঁর অনুরাগী ছিল, তাতেও কোনো বিতর্ক হতে পারে না। তাঁর অনুরাগীদের সংখ্যা এখনো বিপুল।
আজ জিয়াউর রহমান নেই, তাঁর নীতি, আদর্শ, শিক্ষা আছে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বিএনপি আছে। তাঁর কট্টর বিরোধী ও নিন্দুকরা বিদ্রƒপ করে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দলকে সেনা ছাউনিতে জন্ম নেয়া দল বলে তাচ্ছিল্য প্রকাশ ও বিদ্রƒপ করেন। কিন্তু তারা যা স্বীকার করেন না সেটা হলো বিএনপি সামরিক নেতার প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দল বটে, কিন্তু তা গণমানুষের দল। এ দলে সব ধরনের মানুষেরই উপস্থিতি আছে। গণমানুষের রায় নিয়েই দলটি তিনবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল। এ দলের প্রতি দেশের জনগণের এক বিরাট অংশের সমর্থনের নেপথ্যে ক্রিয়াশীল জিয়ার অমলিন ভাবমর্যাদা। বর্তমান নেতৃত্ব সে সমর্থন ধরে রাখতে কতটা সক্ষম সে অন্য বিষয়। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ’৭১-এর মধ্যরাতে দেখা দেয়া ধূমকেতু জিয়াউর রহমানের কথা বহু মানুষই মনে রেখেছে, রাখবে অনেকদিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।