Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশের ইতিহাস বিতর্ক নিয়ে গার্ডিয়ান পত্রিকার অভিমত

প্রকাশের সময় : ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ৯ এপ্রিল, ২০১৬

ইনকিলাব ডেস্ক : পরিণত দেশগুলোর নিজেদের ইতিহাস নিয়ে গবেষণায় প্রস্তুুত হওয়া উচিত এবং কিভাবে তারা স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন রকম ব্যাখ্যা গ্রহণ করারও প্রস্তুুতি রাখা উচিত। বিশেষ করে একটি দেশ ভেঙ্গে যখন আরেকটি দেশের জন্ম হয় সেসব ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি জরুরি।
সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতির প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে যুদ্ধের সময়কার প্রোপাগান্ডা ও বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার পরিহার করে শত্রুতা ভুলে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। ইতিহাস বদলানো যায় না, কিন্তু পুর্নমূল্যায়ন করা যায়। প্রায় ৪৫ বছর আগে পাকিস্তানের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভকারী বাংলাদেশ নিজেদের ইতিহাস নিয়ে এখনো দ্বিধা-বিভক্ত। এই বিভক্তি আরো উস্কে দেয়ার জন্য ‘মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার অপরাধ বিল’ নামের একটি খসড়া আইন চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যা দেশটিকে আরো বেশি হতোদ্যম করে ফেলতে পারে। এই আইনটি যদি পাস হয় তাহলে যুদ্ধে কী ঘটেছে- তার সাথে ‘অসংগতিপূর্ণ’ কথা বলা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। বিশেষ করে এই আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে যেকোনো বিরোধিতা প্রতিহত করা।
সরকারি হিসেব মতে, মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর হাতে ৩০ লাখ লোক নিহত হয়েছে। অনেকেই মনে করেন, এই সংখ্যা প্রকৃত মৃতের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। যদিও এ ব্যাপারে সবপক্ষই একমত যে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক অনেক মুক্তিযোদ্ধা নিহত হয়েছে এবং তারা ব্যাপক যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত করেছে। তাই মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের সংখ্যা কমিয়ে বলা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি বড় ধরণের নির্বুদ্ধিতা।
কিন্তু প্রকৃত সত্য হল এই বিতর্ক মোটেও তাত্ত্বিক নয়, বরং রাজনৈতিক। ১৯৭১ এর যুদ্ধের পরে বাংলাদেশে দু’টি প্রধান মতাদর্শ গড়ে উঠেছে। একপক্ষ মনে করে এই যুদ্ধ শোষকের বিপক্ষে শাসিতের বিদ্রোহ এবং অন্যপক্ষ মনে করে, এটি বেদনাদায়ক ও অনুশোচনামূলক বিভক্তি। একপক্ষ জাতিগত বাঙালি পরিচয়কে গুরুত্ব প্রদান করে আর অন্যপক্ষ ইসলামকে প্রাধান্য দেয়। এই বিভক্তি অনেক আগের পূর্ববঙ্গ ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। রাজনীতিবিদরা যুক্ত না থাকায় পূর্ববঙ্গের ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছিল কিন্তু বাংলাদেশে কোনো কিছু থেকেই রাজনীতিবিদদের দূরে রাখার উপায় নেই।
এই দু’পক্ষের একদিকে রয়েছে, স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লিগ। যারা মুক্তিযুদ্ধের সাফল্যের একক কৃতিত্ব দাবি করে এবং অন্যদলগুলোর বিশেষ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর বৈধতা অস্বীকার করে। এমনকি বিএনপি-জামায়াতকে পাকিস্তানের অনুসারী বলে অভিহিত করারও চেষ্টা চালায় তারা।
আর অপর পক্ষে রয়েছে, ইসলামকে রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে বহাল রাখায় যেসব দল খুশি হয়েছে তারা। সাম্প্রতিক সময়ে, বিতর্কিত ‘যুদ্ধাপরাধী বিচার প্রক্রিয়া’ এই দুই পক্ষের বিভক্তি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। ইত্যবসরে, উগ্র চরমপন্থীরা নাস্তিক বগারস ও সংখ্যালঘু হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের কয়েকজনকে হত্যা করেছে। যদিও পাকিস্তানের তুলনায় এই সহিংসতা খুবই সামান্য ঘটনা। তবুও এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে, প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর একটিও এ ধরনের বর্বরোচিত হত্যাকা-ের বিপক্ষে সরব নয়। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের প্রতি সহনশীল মনোভাব পোষণ করা উচিত বলে গার্ডিয়ান মনে করে। এছাড়া, রাজনৈতিক রূপদানের চেষ্টার পরিবর্তে বাংলাদেশের উচিত নিজেদের প্রকৃত সত্য ইতিহাস উন্মোচনে মনোযোগী হওয়া। সূত্র: ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানে শনিবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়

 



 

Show all comments
  • Fazlul Haque ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৩৭ এএম says : 0
    i agree with them
    Total Reply(0) Reply
  • সফিক ১০ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:৩৮ এএম says : 0
    এখন যদি এই বিতর্কের সমাধান না হয়, তাহলে ভবিষ্যত প্রজন্ম তো আরো সমস্যায় পড়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশের ইতিহাস বিতর্ক নিয়ে গার্ডিয়ান পত্রিকার অভিমত
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ