পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র রমজান এলেই ঘরে ঘরে শুরু হয়ে যায় ঈদুল ফিতরের উৎসব উদযাপনের প্রস্তুতিও। চিরাচরিত রেওয়াজ অনুসারে ঈদে পোশাক-আশাক কেনার উদ্যোগটাই থাকে প্রধান। হাল আমলে তৈরি পোশাকের প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। তবে যারা ঈদের সজ্জায় একটু ভিন্নতা আনতে চান, তাঁরা নিজেদের পছন্দমতো নকশা ও ডিজাইনের পোশাক তেরি করিয়ে নেন। গতকাল রোববার ছিল রমজানের ১০ম রোজা। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে জমে উঠছে ঈদের বাজার। নিজের ও প্রিয়জনের জন্য পছন্দের পোশাক কিনতে রাজধানীর মার্কেট এবং শপিংমলগুলোতে বেড়েছে ক্রেতাদের ভিড়। বিক্রেতারা আশা করছেনÑরমজানের বাকি দিনগুলোতে তাদের বিক্রি ভালো হবে। যদিও যানজট ঝামেলা এড়াতে অনেকেই মার্কেটে না গিয়ে অনলাইনে শপিং করছেন।
রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, ধানমন্ডি হকার্স, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার মার্কেট, ধানমন্ডির রাপা প্লাজা, মেট্রো শপিংমল, সানরাইজ প্লাজা, পলওয়েল মার্কেটসহ অভিজাত বিপণিবিতানে ঘুরে দেখা যায়, জমে উঠেছে ঈদের পোশাকের মার্কেট। াভিজাত মার্কেট থেকে শুরু করে চোট ছোট মার্কেট ফুটপাতের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় ক্রমেই বাড়ছে। তবে এখনও পুরোদমে বিক্রি শুরু হয়নি বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে ভালো বেচাকেনা শুরু হয়েছে। অনেকে রমজানের শেষ সময়ে কেনাকাটার নানান ঝামেলা এড়াতে আগে ভাগেই ঈদ বাজার সেরে নিচ্ছেন। এছাড়া গ্রীষ্মের তপ্ত রোদে আরামদায়ক পোশাক হিসেবে সব সময়ই এ দেশে জনপ্রিয় ছিল বøক-বাটিকের নানান রঙের অলংকরণের সুতির পোশাক। ফ্যাশনের ধারা বদলে ঈদের বাজারে অনেক বিদেশি পোশাকের আবির্ভাব ঘটলেও দেশি নকশার পোশাকের চাহিদা এখনো কমেনি। মোম বাটিক, একরঙা, দুরঙা অথবা তিন রঙের মিশ্রণের নকশার চাহিদাই বেশি। অনেকেই তাঁদের ঈদের পোশাকে কারিগরদের দিয়ে পছন্দের নকশা করিয়ে নিচ্ছেন। পছন্দসই নকশা ও ডিজাইনের পোশাক তেরিতে ঝোক বাড়ায় গজ কাপড়ের ব্যবসায়ীদেরও বেচাকেনা বেড়েছে। সেই সঙ্গে ব্যস্ততার মধ্যে আছে বøক-বাটিক, এমব্রয়ডারি, কারচুপি, হ্যান্ড পেইন্ট কারিগরদের। তাঁদের দম ফেলার ফুরসত নেই। তবে ঈদ উপলক্ষে এবার পোশাকের দাম অনেক বেড়েছে বলে ক্রেতারা দাবি করেন। যদিও বিক্রেতারা সেটি মানতে নারাজ। তাদের মতে, দাম আগের মতই আছে।
গত কয়েক বছর ধরেই ঈদকে কেন্দ্র করে দেশের বিপণিবিতানগুলোতে ভারতীয় সিরিয়াল ও চলচ্চিত্রের বিভিন্ন চরিত্রের এমন নামে পোশাক দেখা যাচ্ছে। মূলত ক্রেতাদের আকর্ষণ করতেই এমন নামকরণ করা হয়। এই নামকরণ দোকান মালিকরা নিজেরাই করে থাকেন। এ ধরনের কৌশল অবলম্বন করে এর আগে সফল হওয়ায় এবার ঈদেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। রাজধানীর নিউমার্কেট, চাঁদনী চক মার্কেট ও গাউছিয়া মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেল। যদিও বড় মার্কেট বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্কসহ শপিংমলগুলোতে পোশাকের এমন নামকরণ করতে দেখা যায়নি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে এবারও ঈদ বাজারে নারী ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে গাউন। রাজধানীর শপিংমলগুলোতে হিড়িক লেগেছে এ ধরনের পোশাক কেনার। শাড়ি কিংবা সালোয়ার-কামিজের চেয়ে এ ধরনের পোশাকই বেশি বিক্রি হচ্ছে বলছেন বিক্রেতারা। দেশের আবহাওয়া উপযোগী না হলেও, হিন্দি সিরিয়াল, বলিউডের প্রভাব আর অন্যকে অনুকরণের হুজুগই তরুণীদের পছন্দের অন্যতম কারণ বলে মনে করেন বিক্রেতারা। বিক্রেতাদের মতে, বেশ কয়েক বছর ধরে তরুণীদের মধ্যে বেশ ঝোঁক দেখা যাচ্ছে ‘গাউন’ নামের এই পোশাকের প্রতি। পাশ্চাত্যের বিয়ের পোশাকের আদলে তৈরি লম্বা এবং ঘেরওয়ালা এ জামাগুলোতে প্রাচ্যের ডিজাইনের মিশেলে বিভিন্ন কাটের জমকালো পোশাকে ভরা রাজধানীর প্রায় সব শপিং মল। তরুণীদের মধ্যে এ পোশাক কেনার আগ্রহই বেশি।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে ভিড় ছিল বসুন্ধরা শপিংমলে। এ ভিড়ের ঝাপটা এসে লেগেছিল সড়কগুলোতে। পান্থপথ পার হতে সব রকমের যানবাহনকে প্রায় ঘণ্টাখানেক ধৈর্য ধরতে হয়। গজ কাপড়ের জন্য ক্রেতারা নিউমার্কেট, চাঁদনী চক ও এলাকার মার্কেটগুলোতে যাচ্ছে। মোহম্মদপুর টাউন হল মার্কেটে এখনও গজ কাপড় বিক্রির কাটতি রয়েছে, রূপমেলার দোকানি জানান, এবার সুতি কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। এছাড়া বেনারশি, জর্জেট, কাতান, সিল্ক, শার্টিন ও জুট কাতানের বিক্রিও ভালো। তরুণীদের জন্য এবারো সারারা, গাউন, লম্বা স্কার্ট, লম্বা কামিজ সব মার্কেটেই ভালো চলছে। সারারার সঙ্গে চলছে পালাজ্জো। গাউনের মধ্যে ফ্লোর টাচ বা পায়ের পাতা ছোঁয়া গাউনের চাহিদা বেশি। কেউ কেউ লম্বা গাউনের সঙ্গে বাহারি ওড়নাও পছন্দ করছে।
বসুন্ধরার স্মারটেক্সে বাবা-মায়ের সঙ্গে এসেছে ৬ বছরের সাজ। এ প্রতিবেদককে সে জানায়, গাউন কিনতে এসেছে, ভালোভাবে উচ্চারণ করতে না পারলেও বোঝা গেল সে ফ্লোর টাচ গাউনই কিনবে। স্মারটেক্সে গাউন রয়েছে হরেক দামের, ৩৫ হাজার, ২২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকার। এছাড়া সিল্কের সঙ্গে নেটের গাউন চলছে ভালো। কারচুপি ও অ্যামব্রয়ডারি করা গাউনও বিক্রি হচ্ছে। ধানমন্ডির বাসিন্দা ফেরদৌসি জানান, ঈদের পরই বোনের বিয়ে তাই দামি শাড়ি বেশি কেনা হবে। যাতে দুইটি উৎসবই চলে যায়। বসুন্ধরার দেশি দশের নগর দোলার বিক্রেতারাও উচ্ছ¡সিত। একই ছাদের নীচে কেনাকাটা সুন্দর স্থান বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে। পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে আসা সরকারি চাকরিজীবী আবদুর রহমান মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, পরিবার নিয়ে এসেছেন। এখানে সবকিছু পাওয়া যায় বলে। কাপড়ের বিভিন্ন নামকরণ সম্পর্কে জানতে চাইলাম বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের আরেক দোকানি তারেক মাহমুদের কাছে। তিনি বলেন, এসব হচ্ছে ব্যবসার পলিসি। বলতে পারেন এক ধরনের প্রতারণা। খুব সাধারণ মানের কাপড়ের এসব নাম দিয়ে চড়া দামে বিক্রি করছে। বসুন্ধরাতে এসব নামে কাপড় বিক্রি হয় না। এ ধরনের প্রতারণা এখানকার কাপড়ের দোকানদাররা করেন না। বেচাবিক্রি কেমন জানতে চাইলে বসুন্ধরা সিটির এক বিক্রেতা জানালেন, প্রথম কয়েকদিন খুবই হতাশ ছিলাম। এখন বাড়ছে। যা হচ্ছে তাতেই খুশি। ঈদের তো আরো অনেকদিন আছে, আশা করি বিক্রি বাড়বে।
রাজধানীর শপিং করার পছন্দের আরেক স্থান যমুনা ফিউচার পার্ক। এক ছাদের নিচে দেশের প্রথম সারির সব ব্র্যান্ডের সুবিশাল সব শো-রুম রয়েছে এখানে। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদ কেনাকাটায় যমুনা ফিউচার পার্ক অভিজাত শ্রেণির ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ। তবে মধ্যবিত্তদেরও কেনাকাটা করতে দেখা গেছে।
মা-বোনের সঙ্গে যমুনায় কেনাকাটা করতে এসেছেন শারমিন সুলতানা তৃষা। মা ও তিন বোনের জন্য মোট পাঁচটি শাড়ি কিনেছেন তিনি। কিনেছেন পরিবারের ছোটদের জন্য জামা-কাপড় ও জুতা। তিনি বলেন, এখানে সব ধরনের পণ্য পাওয়া যায়। ঘুরে ঘুরে পছন্দের সব জিনিস কিনেছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না জানান, আগে ঈদের কেনাকাটা করতে স্বপরিবারে দেশের বাইরে যেতেন। কিন্তু যমুনা ফিউচার পার্ক প্রতিষ্ঠার পর এখান থেকেই কেনাকাটা করেন। এখানে ভারতীয় নানান ধরনের শাড়ি পাওয়া যায়। এসবের দাম তিন হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।
বেইলি রোডের সব দোকানেই টাঙ্গাইল শাড়ির সম্ভার ভালো। এখানে উইংস অব বাটার ফ্লাইয়ে রয়েছে তসর, টাঙ্গাইল সিল্ক, হাফ সিল্ক ও জামদানি। ইকরাম নেওয়াজ ফরাজী ও সারা ইকরাম দম্পতি নগরজুড়েই বিভিন্ন মার্কেটে কেনাকাটা করছেন। সারা জানান, দুই পরিবারের সবার জন্যই উপহার কিনতে হচ্ছে তাই প্রতিদিনই বিভিন্ন মার্কেটে ঢুঁ মারছি। রোববার তিনি মিরপুর বেনারশি পল্লী থেকে একটি কাতান ও একটি জামদানি কিনেছেন। দুইটি শাড়ির দাম যথাক্রমে ৬ হাজার ও ৮ হাজার টাকা। এছাড়া বসুন্ধরার দেশাল থেকে সালোয়ার-কামিজের তিনটি সেট কিনেছেন, দাম পড়েছে গড়ে ৩ হাজার টাকা করে।
ঈদের এখনও অনেক বাকী হলেও কেনাকাটা, ক্রেতা উপস্থিতি আর বেচা-বিক্রিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারা। ঈদের আগের বাকি দিনগুলোতেও এভাবে বিক্রি হবে বলে আশা করছেন তারা। প্রতিদিনই ক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে বড় বড় সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর পোশাকের দাম কিছুটা বেশি বলে অভিযোগ করতে দেখা গেছে ক্রেতাদের। এ বিষয়ে চাকরিজীবি আবদুর রহমান বলেন, এবার জিনিসপত্রের দাম অনেক। প্রতিবছর দাম বাড়ছে। এমন চলতে থাকলে আমরা মধ্যবিত্তরা কেনাকাটা করতে পারব না।
বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, দেশি কাপড়ের চেয়ে বিদেশি কাপড়ের চাহিদা বেশি। তবে দেশি বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস থেকেও ক্রেতারা টুকটাক কেনাকাটা করছেন। সেখানেও দাম বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা। তারপরও ঈদের খুশিকে বাড়িয়ে তুলতে মানুষ একটু দাম বেশি দিয়ে হলেও নিজের জন্য, পরিবারের সদস্যদের জন্য কেনাকাটা করছেন।
মিরপুর বেনারসি পল্লী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ কাশেম বলেন, গত বছর নানা কারণে আমাদের ব্যবসা ভালো যায়নি। কাক্সিক্ষত বেচা-বিক্রি হয়নি। কিন্তু এবার আশা করছি শতাধিক দোকানে ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি হবে। ঈদে দেশি শাড়ির কালেকশন বাড়ানোর প্রতি সব ব্যবসায়ীই মনোযোগ দিয়েছেন। তাছাড়া ক্রেতাদের মধ্যেও দেশীয় শাড়ির প্রতি আগ্রহ বেড়েছে।
এবার অনলাইনেও কেনাকাটা চলছে গতবারের চেয়ে ভালো। কর্মজীবী নারী তাকিয়া সুলতানা পপি বলেন, চাকরি ও সংসার দুটো সবমিলিয়ে মার্কেটে যাওয়া খুবই কঠিন। তাছাড়া যে যানজট তাতে শপিংয়ের আনন্দই নষ্ট হয়ে যায়। তাই অনলাইন-ই স্বস্তিদায়ক। তিনি অনলাইন কিন্নরী থেকে একটি শাড়ি কিনেছেন। গোলাপি জমিনে গোল্ডেন কাজের এ শাড়িটির দাম ৩ হাজার টাকা। দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন ইনকিলাবকে বলেন, এ বছর বেচা-বিক্রি অন্যান্যবারের তুলনায় ভালো। ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে বিক্রি তত বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে অনলাইনে বিক্রি বেশি বেড়েছে। যা দোকানীদের জন্য কিছুটা হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া ঈদ কেন্দ্রিক এ বছরের ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা এখনও পর্যবেক্ষণ করছেন। আগামী সপ্তাহে বলতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন দোকান মালিক সমিতির চেয়ারম্যান।
ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ইক্যাব)-এর সাবেক সভাপতি রাজীব আহমেদ বলেন, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে এপ্রিলে অনলাইনে খুব ভালো কেনাকাটা হয়েছে। এবার ঈদেও আমরা রেকর্ড সংখ্যক ব্যবসার আশা করছি। তিনি বলেন, পহেলা রোজা থেকেই ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত যেটুকু কেনাকাটা হয়েছে তাদের ছোট বড় সব প্রতিষ্ঠানই অনেক খুশি। ঈদ শেষে ই-কমার্সে কেনাকাটা গতবছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। ###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।