পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন যে নতুন বিধিমালা তৈরি করেছে তা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রতিবন্ধক। নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন।
বর্তমান বিধিমালা অনুযায়ী, তফসিল প্রকাশের পর মন্ত্রী এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও রাজনীতিবীদরা। এদিকে বর্তমান কমিশন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে একটার পর একটা বিতর্কের সৃষ্টি করছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির ব্যারিস্টর মওদুদ আহমেদ বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সংসদ সদস্যদের প্রচারণার সুযোগ দিয়ে আচরণবিধির সংশোধনের নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে দুরভিসন্ধিমূলক ষড়যন্ত্র। গতকাল শুক্রবার এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন একটা তল্পিবাহক নির্বাচন কমিশন, সরকার যা চাইছে তাই করছে। এখন তারা নির্বাচনী আচরণবিধি পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। যেটা করছে এটা দুরভিসন্ধিমূলক। এটা একটা ষড়যন্ত্রের অংশ এই আচরণবিধি পরিবর্তন করা। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ বর্তমান ইসির কর্মকান্ডে আস্থা রাখতে পারছে না। সে কারণে আমরা এ কমিশনের পরিবর্তন চাইছি।
তত্তাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সিইসি এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নতুন বিধিমালা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। এমন কিছু করা উচিৎ বেন না যেন আস্থা ক্ষুণ্ন হয়। কিছুটা আস্থা তৈরি হয়েছে এটাকে ধারণ করতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন,আমরা দায়িত্বে থাকাকালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমপিরা প্রচরনা করতে পারবে না। তারা শুধু ভোটের দিন ভোট দিয়ে চলে আসবে। নির্বাচন কমিশন নতুন বিধিমালায় সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা বাড়বে। যা খুলনার নিবাচনের চেয়ে আরো বেশি হবে। এক পক্ষে সুযোগ বেশিপারে আর এক পক্ষে পাবে না।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, নির্বাচন কমিশন কেন এই সময়ে এধরনের একটি বিধি তৈরি করলো, তা তিনি বুঝতে পারছেন না। সংসদ সদস্যরা স্থানীয় ভাবে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি অনেক বেশি। এই রকম ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা যদি স্থানীয় নির্বাচনে কোন বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে প্রচারাভিযান চালায়, তাহলে সব প্রার্থীর জন্য সুযোগ সমান থাকে না। এই নতুন বিধিমালা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। সুজনের সম্পাদক বলেন, খুলনার মেয়র নির্বাচনসহ নির্বাচন কমিশন সমপ্রতি যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তার সবই সুষ্ঠু নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
স্থানীয় সরকার বিষেশজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, যেখানে খুলনা সিটি নির্বাচনের বদনাম এখনো ঘুচতে পারেনি ইসি।তারপরও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ করে দিয়ে নির্বাচন কমিশন বিতর্কের সৃষ্টি করলো। এ নতুন বিধিমালা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হবে না।
নির্বাচন কমিশনের সভা শেষে সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, সংসদ সদস্যরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারে অংশ নিতে পারবেন। কিন্তু তারা সার্কিট হাউজ এবং সরকারি গাড়ী ব্যবহার করতে পারবে না। কমিশনের অনুমোদনের পর এই খসড়া বিধিমালা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
জানাগেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রস্তাব মেনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ করে দিলো নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বৃহস্পতিবার কমিশনের সভায় এ প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। এর আগে কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে কমিশন সিটি নির্বাচনে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ প্রদানের উদ্যোগ নিলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তারা সরে এসেছিল। এবার নুরুল হুদার কমিশন তা বাস্তবায়ন করলো। কমিশনের আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি সব সংসদ সদস্য নাকি সংশ্লিষ্ট এলাকার এমপিরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারবেন এ বিষয়ে দ্বিমত রেখেই বৃহস্পতিবার কমিশনের সভায় তাদের সুপারিশ পেশ করে। কমিটির সদস্যদের এক পক্ষের যুক্তি-সব এমপিকে এ সুযোগ দেওয়া হলে পরিস্থিতি ১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনের মতো হতে পারে। ব্যাপক বিতর্কিত ওই নির্বাচনের প্রচারে সংসদ সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি সে সময় নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সব এমপিকে প্রচারণা চালানোর সুযোগ দিলে একই পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। অন্য পক্ষের যুক্তি সংসদ সদস্যরা অফিস অব প্রফিট বা প্রজাতন্ত্রের লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত নন। অন্যান্য নাগরিকের মতো তাদেরও নির্বাচনী প্রচার চালানোর অধিকার রয়েছে। গত ১৩ই এপ্রিল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে বৈঠক করে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল এ বিষয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি সংশোধনের দাবি জানায়। এরপর গত ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে বৈঠক করে কমিশন। বৈঠকে একজন নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বলেন, সংসদ সদস্যদের নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ দিলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে। অপর একজন কমিশনার সব এমপিকে এ সুযোগ দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তার পরও সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের ওই দাবি পূরণের পক্ষেই কমিশনের সিদ্ধান্ত হয় এবং কমিশনের আইন ও বিধি সংস্কার কমিটির প্রধান নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমকে এ বিষয়ে সুপারিশ প্রস্তুত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে ২০১৫ সালে দলভিত্তিক স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারের সুযোগ দেয়া না দেয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তৎকালীন কাজী রকিবউদ্দীন কমিশন। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রী-এমপিদের নাম উল্লেখ না করে সরকারি সুবিধাভোগীদের প্রচারের (সরকারি যানবাহন, প্রচারযন্ত্র বাদ দিয়ে) সুযোগ করে দিয়ে খসড়া তৈরি করে। এ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে সরকারি সুবিধাভোগীদের সফর ও প্রচারণায় অংশ নেয়ায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি চূড়ান্ত করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও মন্ত্রী-এমপিদের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আচরণবিধি করা হয়। এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গাজীপুর ও খুলনার সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে এমপিদের প্রচারণার সুযোগ চেয়ে ইসিতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে ক্ষমতাসীনরা। আওয়ামী লীগের দাবির মুখে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি সংশোধনে ফের উদ্যোগী হয় নির্বাচন কমিশন। ইসির আইন সংস্কার কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে কমিশন সভায় গতকাল আচরণবিধি সংশোধনের অনুমোদন দেয়া হয়। ইসি কর্মকর্তারা জানান, এই আচরণবিধি আইন না হওয়ায় সংসদে উত্থাপনের প্রয়োজন হবে না। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং শেষেই তা চূড়ান্ত করে গেজেট করতে পারবে ইসি। উল্লেখ্য, সিটি করপোরেশন (নির্বাচনী আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এর ২(১৩) ধারায় সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞা দেয়া আছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাঁদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বোঝাবে। আর এ বিধিমালার ২২ ধারায় বলা হয়েছে- ১. সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগহণ করতে পারবেন না। তবে শর্ত থাকে যে, এ ধরনের ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকার ভোটার হলে তিনি কেবল ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে যেতে পারবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।