পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
যথাযোগ্য মর্যাদায় সরাদেশে গতকাল শুক্রবার জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয়েছে। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘জাতীয় জাগরণে কবি নজরুল।’ দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়েও ছিল নানা ধরনের কর্মসূচি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা, সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনের মধ্যদিয়ে দিনটি পালন করে।
সাম্য এবং জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সকালে অগণিত মানুষ তার সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। কবির মাজারে পুষ্পস্থবক অর্পণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাকে স্মরণের আয়োজন। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে ছুটে আসেন তার পরিবারের সদস্য, ভক্ত, অনুরাগী ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা।
জাতীয় কবির সমাধিতে প্রথমে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের নেতৃত্বে এ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় নানক বলেন, কাজী নজরুল ইসলাম সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সবসময় জয়গান গেয়েছেন। তাকে এদেশে এনে নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পরে জাতীয় কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে জাতীয় কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান দলীয় নেতাকর্মীরা। এসময় মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নজরুল প্রাসঙ্গিক। জাতীয় কবি আমাদের শিখিয়েছেন বিদ্রোহ, শিখিয়েছেন সাম্য। বর্তমান সরকার আজ দেশকে কারাগার বানিয়েছে।
জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে কবির সমাধিতে পুষ্পস্থবক অর্পণ করেন। পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীনের সভাপতিত্বে এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্মরণ সভায় বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. বেগম আকতার কামাল, বিশিষ্ট কবি ও সমাজকল্যাণ গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ সামাদ, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বক্তব্য রাখেন।
অফিসার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ আলী আকবর শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন এবং নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: এনামউজ্জামান। বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ভীষ্মদেব চৌধুরী অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। অনুষ্ঠানে সংগীত বিভাগের চেয়ারপার্সন ড. মহসিনা আক্তার খানম (লীনা তাপসী)-এর নেতৃত্বে সংগীত পরিবেশন করেন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দীন সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে মানবতার কবি, অসাম্প্রদায়িক ও সম্প্রীতির কবি হিসেবে আখ্যায়িত করে সকলকে নজরুলের জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানান।
জাগরণ ও সাম্যবাদের কবি
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) নুরুল আলম নিজামী বলেছেন, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু আমাদের প্রেরণা, মুক্তি সংগ্রাম ও মানুষের কবি নন। তিনি স্বাধীনতা, অর্থনীতি, জাগরণ ও সাম্যবাদের কবি। গতকাল (শুক্রবার) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কর্তৃক শিল্পকলা একাডেমির অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকীর আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। কবির জন্মবার্ষিকীর এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল ‘জাতীয় জাগরণে কবি নজরুল’।
মুখ্য আলোচক চবি বাংলা বিভাগের প্রফেসর গোলাম মুস্তাফা বলেন, কবি নজরুল তাঁর লেখায় জাগরণ, সংগ্রাম ও বিদ্রোহের কথাই বলেছেন। বাঙালি জাতির মধ্যে এ রকম প্রতিভাবান কবি আর নেই। তিনি সকল ধর্মকে সমান প্রাধান্য দিয়ে ইসলামী গজল, বৈষ্ণবী, বিপ্লবী ও চেতনার গান লিখেছেন। শত বাধা-বিপত্তি সত্তে¡ও কবিকে পরাস্ত করতে পারেন নি। তিনি সারাজীবন সাম্যের গান গেয়েছেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে ও আবৃত্তিকার ফারুক তাহেরের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে কবি নজরুল স্মরণে কবিতা আবৃত্তি করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোঃ মাশহুদুল কবির। শেষে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত কবিতা, রচনা, চিত্রাঙ্কন ও নজরুল সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কারসহ সনদপত্র তুলে দেন প্রধান অতিথি ও অন্যান্য অতিথিবৃন্দ।
বরিশালে জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী পালিত
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশালে সাম্যবাদ, প্রেম ও দ্রোহের কবি, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল (শুক্রবার) বিকালে নগরীর খেয়ালী গ্রুপ থিয়েটার মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বরিশাল নজরুল সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সংগঠনের সহ-সভাপতি পাপিয়া জেসমিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অংশ নেন বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি এসএম ইকবাল, সাধারণ সম্পাদক মিন্টু কুমার কর, খেয়ালী গ্রæপ থিয়েটারের সভাপতি অ্যাড. নজরুল ইসলাম চুন্নু, মুকুল দাস, শুভংকর চক্রবর্তী, বাসুদেব ঘোষ, সুশান্ত ঘোষ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, নজরুল সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক গোপাল কৃষ্ণ গুহ রিপন। অনুষ্ঠানে কবির জীবন ও কর্মের ওপর বিশ্লেষণ ধর্মী আলোচনা করা হয়। এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন ।
তবে জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা প্রশাসন বা সরকারী কোন কর্মসূচী ছিল না বরিশালে।
বগুড়ায় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
বগুড়া ব্যুরো জানায়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার বেলা ১১ সংগঠনের অস্থায়ী কার্যালয়ে বগুড়া নজরুল গবেষণা কে›দ্রের এক আলোচনা প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডাঃ আর এ এম তারেকের সভাপতিত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট আইনজীবী ও বগুড়া বারের সাবেক সেক্রটারী অ্যাড, আল মাহমুদ, দৈনিক ইনকিলাবের বিশেস সংবাদদাতা মহসিন রাজু, প্রবীণ সাংবাদিক মুরশিদ আলম, প্রতীক ওমর, এ্যাড, শেখ রেজাউর রহমান মিন্টু অ্যাড আলমগীর হোসেন, ব্যাংকার মোঃ ওসমান গনী, ভুমি কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ, সংগীত প্রশিক্ষক আব্দুল আউয়ালসহ রকন বিশ্বাস, শামমিা আকতার মায়া, কাজী আরেফ বিল্লাহ বিলু প্রমুখ। সভায় জাতীয় কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তার লেখা গান, কবিতা, উপন্যাস, ছড়ার ব্যপক চর্চ্চার গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সভা শেষে রুহের মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করেন আলহাজ মাওঃ আমিনুল ইসলাম। সভাটির সার্বিক সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক সাইফুল ইসলাম লেবু।
সিলেটে ফুলেল শ্রদ্ধায় নজরুলের জন্মবার্ষিকী পালন
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটে ফুলেল শ্রদ্ধায় পালিত হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৯তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে গতকাল শুক্রবার সকালে নগরীর রিকাবিবাজারে নজরুল চত্বরে স্থাপিত কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ভিড় করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। এসময় সিলেট নজরুল পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত নাট্য পরিষদ, শিশু একাডেমি, দ্বৈতস্বর, সারেগামাসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কবির প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।