পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যয় সোয়া চার হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে এ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পটির ১ম সংশোধনী অনুমোদন দিয়েছে একনেক। গত ফেব্রæয়ারি পর্যন্ত ১০ শতাংশ শেষ হওয়া প্রকল্পটির মেয়াদও দুই বছর বেড়েছে। সেতুর কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) এই সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। একনেক বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, একনেকে পাস হওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পরে মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প। এটির সংশোধিত ব্যয় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এর মধ্যে জিওবি ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা চায়না সরকারের জি টু জি ঋণ। এটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে বাস্তবায়ন করবে।
তবে, প্রকল্পের মূল মেয়াদ ছিল জানুয়ারি ২০১৬ থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত। মূল ব্যয় ধরা ছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, এর মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে চীন সরকার ২৪ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা এবং বাকী ১০ হাজার ২৩৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা জিওবি। কিন্তু সংশোধনীতে প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়িয়ে জুন-২০২৪ সাল এবং ব্যয়ও প্রায় ১২ দশমিক শতাংশ বা ৪ হাজার ২৫৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে চীন সরকারের ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৭১২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা কমেছে। এ কারণে সরকারি অংশ প্রায় ৭৭ দশমিক ৯০ শতাংশ বা ৭ হাজার ৯৭০ কোটি ৩০ লাখ টাকা বেড়েছে। প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটির ঋণ চুক্তি সম্পন্ন করতে বেশ দেরি হয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণ ব্যয় অনেক বেড়েছে। বাড়তি অর্থ দিতে চীন রাজি নয়। এজন্য সরকারি অংশের ব্যয়সহ প্রকল্পের মূল ব্যয় বেড়েছে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে ঢাকার সাথে নতুন এলাকা মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর, মাদরীপুর ও নড়াইল জেলার মধ্য দিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন হবে। একই সঙ্গে ঢাকা-যশোর করিডোরে অপারেশনাল সুবিধাসমূহের উন্নয়ন এবং ২১২.০৫ কি.মি. সংক্ষিপ্ত রুটে বিকল্প রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে। বাংলাদেশের মধ্যে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি উপ-রুট তৈরি হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে বরিশাল ও পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দরকে এই রুটের যুক্ত হবে।
এদিকে রাজধানীর ১৩টি স্থানের পানিবদ্ধতা কমাতে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। একনেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এজন্য ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, শংকর, ঝিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকা এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শের-ই বাংলা নগর, দারুস সালাম, মিরপুর, পল্লবী, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকার পানিবদ্ধতা দূর করা হবে।
পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া তথ্য মতে, ঢাকা মহানগরীতে ৪৩টি খাল রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ওয়াসার আওতায় রয়েছে ২৬টি খাল। এসব খালের অধিকাংশেরই স্থায়ী অবকাঠামোর মাধ্যমে উন্নয়ন করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টির সময় পানি দ্রæত নামতে পারে না। নগরীতে পানিবদ্ধতা তৈরি হয়। বর্ষা আসন্ন। তাই ভরা বর্ষার শুরুর আগে এসব এলাকার পানিবদ্ধতা কমাতে ‘ঢাকা মহানগরীর ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক স¤প্রসারণ ও খাল উন্নয়ন’ শীর্ষক শিরোনামের প্রকল্পটি গতকাল একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প এলাকায় অবস্থিত বিদ্যমান খালগুলো খনন ও প্রশস্ত করে তীর উন্নয়ন এবং ওয়াকওয়ে নির্মাণের মাধ্যমে খালের দুই তীরের পরিবেশ উন্নত করা হবে। আগামী ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা।
প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গতকালের একনেক সভায় এই খাতে সবচেয়ে বড় প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) শিরোনামের প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এরমধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে যোগান দেওয়া হবে ২৫ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। বাকি ১৮ হাজার ৫ কোটি টাকা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে পাওয়ার আশা করছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন স্কুলের ভবন নির্মাণ করা হবে। ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সামনে বসানো হবে গভীর নলক‚প ও ওয়াশ বøক। শিক্ষকদের ইংরেজি শিক্ষায় দক্ষ করে তুলতে নেওয়া হবে ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহযোগিতা। অনুমোদন পাওয়া প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচিটি ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।
একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুনগত মান বাড়ানো হবে। সেসঙ্গে সার্বজনীনভাবে বিস্তৃত একটি সুষ্ঠু শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে, যাতে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সামর্থ্য হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এখন থেকে ক্লাসরুমে বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করতে হবে। দুটি ভাষা অবশ্যই শেখাতে হবে। এর বাইরে আরও একটি ভাষা শিখলে ভাল হয়। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, একনেক সভায় মোট ১৬টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সবগুলো প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৬ হাজার ২৩৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৫২ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা, বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৪৩ হাজার ২২১ কোটি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো থেকে ৩২৮ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
গতকাল একনেকে অনুমোদিত অন্যান্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আট হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনার রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ নির্মাণ, দুই হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে কন্সট্রাকশন অব নিউ ১৩২/৩৩ কেভি এন্ড ৩৩/১১ কেভি সাবস্টেশন আন্ডার ডিপিডিসি প্রকল্প, ৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪টি চিনি কলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন, দুই হাজার ১০৩ কোটি টাকা ব্যয়ে এস্টাবলিশমেন্ট অব ৫০০ বেডেড হসপিটাল ইন যশোর, কক্সবাজার, পাবনা, ও আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড জননেতা নুরুল হক আধুনিক হাসপাতাল, ৮০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস এর উন্নয়ন, ৭৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তথ্য কমিশন ভবন নির্মাণ, ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার তেজগাঁওয়ে সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ, এক হাজার ২৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার নদী বন্দর স্থাপন, ৮৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতল্যা ও বালু নদীর তীর ভ‚মিতে, পিলার স্থাপন, তীর রক্ষা, ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, সরকারি চিনি কল বন্ধের পক্ষে নন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বরং এই ১৪টি চিনি কল বাঁচাতে পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী জানান, ‘১৪টি চিনি কলে বর্জ্য পরিশোধনাগার (ইটিপি) স্থাপন’ প্রকল্পটি অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চিনিকলগুলো বর্তমানে বছরের ৩ মাস চিনি উৎপাদন করে। বাকি সময় সব কাজ বন্ধ থাকে। কিন্তু বছরের অন্য সময়গুলো কাজে লাগাতে অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে সেগুলো রিফাইন্ড করতে হবে। তাহলে চিনি কলগুলো উৎপাদনের পাশাপাশি রিফাইনারি হিসেবে কাজ করবে এবং লাভজনক হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।