Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সামুদ্রিক মাছের আকাল

ভরা মৌসুমে জেলেরা হতাশ : রোজায় চাহিদা ব্যাপক তবে বাজারে মূল্য আকাশছোঁয়া

| প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

শফিউল আলম : বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারের এখন ভরা মৌসুম। সমুদ্রে লঘুচাপ-নি¤œচাপ না থাকার ফলে আপাতত সতর্কতা সঙ্কেত নেই। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের নিয়মিত টহল অভিযানের কারণে বিগত কয়েক বছরে যেভাবে সশস্ত্র নৌদস্যুদের উপদ্রব দেখা গেছে, এবার তা প্রায় শূণ্যের কোটায়। কিন্তু তা সত্তে¡ও সামুদ্রিক মাছের আকাল চলছে। মাছ শিকারের উপযুক্ত মৌসুমেও জেলেরা অনেকটা হতাশ হয়ে ফিরছে সাগরে ঘুরেফিরে। পবিত্র রমজান মাসে সুস্বাদু ও প্রোটিন সমৃদ্ধ সামুদ্রিক মাছের চাহিদা ব্যাপক। তবে বাজারে সব জাতের সামুদ্রিক মাছের জোগান এখন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম। মূল্যও আকাশছোঁয়া। সামুদ্রিক মৎস্য বিশেজ্ঞগণ অভিমত ব্যক্ত করেছেন, বঙ্গোপসাগরে তেলসহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর বর্জ্য দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এতে করে সাগরে মাছের স্বাভাবিক বিচরণ, প্রজনন লোপ পাচ্ছে। মাছের আহরণও কমে যাচ্ছে।
চিংড়ি-লবস্টার, ইলিশ, লাক্ষ্যা, কোরাল, পোয়া, রূপচাদা, কালাচাঁদা, সুরমা, ছুরি, সুন্দরী, কাইক্কা, লইট্টা, মাইট্টাসহ বিভিন্ন প্রজতির সুস্বাদু সামুদ্রিক মাছের চাহিদা রোজায় বেড়ে যায়। কিন্তু এসব মাছের আহরণ কমে যাওয়ার ফলে বাজারে মূল্য নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের ক্রয়ক্ষমতার বলতে গেলে বাইরে চলে গেছে। সামুদ্রিক মাছের স্বাদ ভুলতে বসেছে অনেকেই। বাজারে এখন বেশিরভাগই পুকুর-খামার ও জলাশয়ে চাষের মাছ। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের রেয়াজুদ্দিন বাজার, চকবাজার ও কর্ণফুলী মার্কেটে গিয়ে সামুদ্রিক মাছের আকালের চিত্রই দেখা গেছে।
বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের পানিসীমায় ৩৬ প্রজাতির চিংড়িসহ ৪৭৬ প্রজাতির মাছ বিচরণশীল। এরমধ্যে অনেকগুলোই হারিয়ে যাচ্ছে। জোয়ার-ভাটার কর্ণফুলী নদীর মাছের বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৫০টি প্রজাতি হারিয়ে গেছে অথবা বিলুপ্তির পথে।
এ অবস্থায় বিভিন্ন ধরনের রসনা তৃপ্তিকর সামুদ্রিক মাছের উৎপাদন, আহরণ এবং সরবরাহ কমে এসেছে। এতে করে বাজারে এসব মাছের যেন আকাল। জেলেরা সাগরে ৫ থেকে ৭ দিনের ট্রিপে গিয়ে মাছ শিকার করছে খুবই কম পরিমানে। এ কারণে আড়তদার, পাইকারসহ বিভিন্ন হাত ঘুরে সামুদ্রিক মাছের মূল্যও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলেরা জানান, সাগরে বিভিন্ন জাতের মাছ আজকাল পাওয়া যায় না। অল্পস্বল্প যাও পাওয়া যাচ্ছে এতে ট্রলার নৌযানের জ্বালানি তেলের খরচ, খাবার-দাবারের খরচও পোষায় না।
দেশীয় ট্রলার নৌযান মালিকরা জানান, বঙ্গোপসাগর স্বাভাবিক আছে ঠিকই। কিন্তু জেলেরা দলে দলে মাছ শিকারের জন্য ছুটে গিয়ে একেকটি ট্রিপে ৭/৮ দিন সাগরে হন্যে হয়ে ঘুরেও ২/৩ টনের বেশি মাছ শিকার করতে সক্ষম হচ্ছে না। আগে যেখানে ৫/৭ টন মাছ ধরা সহজ ছিল। সামুদ্রিক মাছের বিচরণ এলাকাগুলোতেও তেমন মাছ মিলছে না।
সামুদ্রিক অর্থনীতির গুরুত্বপর্ণ ধারক বঙ্গোপসাগরকে ‘সমৃদ্ধ খনি’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় ষাটের দশকে বিশ্ব খাদ্য ও কৃষিসংস্থার (এফএও) নিবিড় জরিপের মাধ্যমে। প্রাণিজ প্রোটিনের বিরাট অংশের জোগান আসে সামুদ্রিক মাছে। মৎস্য সম্পদে সাগরের সমৃদ্ধ মূল তিনটি মৎস্যচারণ এলাকা হচ্ছে- ‘সাউথ প্যাসেচ’, ‘মিডলিং’ বা ‘মিডল গ্রাউন্ড’ এবং ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’। বঙ্গোপসাগরে সবচেয়ে বেশি মাছের ঘনত্ব ও বিচরণ সেসব এলাকায়। তবে দীর্ঘদিন যাবত সাগরে বাংলাদেশ পানিসীমায় মাছের বিচরণশীলতা, ঘনত্ব এবং সম্ভাব্য মজুদ বা স্থিতি, সর্বোচ্চ আহরণসীমা (এমএসওয়াই) সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জরিপ পরিচালিত হয়নি। এ কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ কি হারে কমে যাচ্ছে তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেরিন সায়েন্সেস এন্ড ফিশারিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. হোসেন জামাল জানান, বঙ্গোপসাগরে তেল ও বর্জ্যরে দূষণ প্রক্রিয়া পরিকল্পিত উপায়ে রোধ করা প্রয়োজন। কেননা এ কারণে মাছের বিচরণ, প্রজনন ও খাদ্য শৃঙ্খল প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে সামুদ্রিক পরিবেশের উপর। সাগরে মাছের বংশ বৃদ্ধি ও বর্ধনের উর্বর ক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া বেপরোয়া মাছ শিকার (ওভার ফিশিং) নিয়ন্ত্রণ ও মাছের পোনা নিধন বন্ধ হওয়া জরুরি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোজা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ