পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হালকা বৃষ্টির মাঝেও গতকাল পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমার নামাজ আদায় করেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। রাজধানীর প্রতিটি মসজিদে ছিল মুসল্লিদের উপচেপড়া ভিড়। মসজিদগুলোতে ছিল নানা বয়সী মুসল্লিদের ব্যাপক উপস্থিতি। অধিকাংশ মসজিদে জায়গা ভরে রাস্তার অনেক দূর পর্যন্ত মুসল্লিদের নামাজের কাতার লক্ষ্য করা গেছে। হালকা বৃষ্টি থাকায় অনেকে ভিজে ভিজে জুমার নামাজ আদায় করেছেন।
জুমাবারের ফজিলত ও গুরুত্ব অধিক। রোজা জুমাবারের গুরুত্ব বুঝা গেছে মসজিদে মসজিদে বিশেষ করে মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজম, বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, হাইকোর্ট জামে মসজিদ, লালবাগ শাহী মসজিদ, চকবাজার শাহী মসজিদসহ রাজধানীর গুরুত্বপূণ মসজিদগুলোতে ব্যাপক সমাগমের মাধ্যমে। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের অভ্যন্তরে মুসল্লিদের ঠাঁই হয়নি। এমতাবস্থায় বৃষ্টিভেজা এসব মসজিদ চত্বরে বিছানো অতিরিক্ত ছালার চটের জায়নামাজে অবস্থান নিয়ে নামাজ আদায় করতে হয়েছে মুসল্লিদের। মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের মহিলা মসজিদের মুসল্লিদের ঠাঁই ছিল না। মসজিদে বাইরেও উন্মুক্তস্থানে মহিলা মুসল্লিগণ অবস্থান নিয়ে জুমার নামাজ আদায় করে স্বস্তি পেয়েছেন। বাইতুল মোকাররমের মসজিদে মুসল্লিদের ঠাঁই না হওয়ায় মুসল্লিরা যে যার মতো করে কাগজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করেছে মসজিদ চত্বরে। রাজধানীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মসজিদগুলোতেও ছিল একই অবস্থা।
মসজিদে মসজিদে হয়েছে বিশেষ খুতবা আলোচনা। নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেম বিশেষ দোয়া মোনাজাত করা হয়। মুসল্লিদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে ও আশপাশের এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মাহে রমজানের প্রথম জুমায় গতকাল নগরীর মসজিদে মসজিদে মুসল্লির ঢল নামে। মসজিদ ছাড়িয়ে ছাদ, বারান্দা এমনকি সড়কেও বিস্তৃত হয় মুসল্লিদের কাতার। এসময় কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। জুমার আজানের আগেই মসজিদমুখী হন মুসল্লিরা। শিশু-কিশোর আর যুবকদের উপস্থিতি ছিল বেশি। খতিব ও ইমাম সাহেবরা মাহে রমজানের ফজিলত বর্ণনা করেন তাদের খুতবায়। আলোচনায় প্রাধান্য পায় রমজানের বিভিন্ন মাসলা-মাসায়েল। সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানে বেশি বেশি ইবাদতের পাশাপাশি সাধ্যমতো দান-খয়রাতের তাগিদ দেওয়া হয়।
নগরীর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ, জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ, লালদীঘি জামে মসজিদ, বায়তুশ শরফ জামে মসজিদ, এনায়েত বাজার শাহী জামে মসজিদ, চকবাজার অলি খাঁ জামে মসজিদ, চন্দনপুরা জামে মসজিদ, সিআরবি জামে মসজিদ, আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনী জামে মসজিদ, জাম্বুরি ময়দান জামে মসজিদ, মুরাদপুর মসজিদে বেলাল, বহদ্দারহাট জামে মসজিদ, মেহেদীবাগ সিডিএ আবাসিক এলাকা জামে মসজিদ, হযরত আমানত শাহ দরগা মসজিদ, দক্ষিণ হালিশহর আলী শাহ জামে মসজিদ, বন্দরটিলা দারুস সালাম জামে মসজিদ, পাঠানটুলি চট্টেশ্বরাই গায়েবি মসজিদ, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ কেন্দ্রিয় জামে মসজিদ, মক্কি মসজিদসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি মসজিদে ছিল মুসল্লিদের ঢল। মসজিদের ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পাশের রাস্তাতেও নামাজ আদায় করেন অনেকে। নগরী সিমেন্ট ক্রসিং থেকে বন্দরটিলা পর্যন্ত এলাকায় তিনটি মসজিদে মুসল্লিদের ঢল সামাল দিতে ওই এলাকায় বিমানবন্দর সড়কের একপাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়। মাহে রমজানের প্রথম জুমা শেষে খতিব ও ইমামগণ দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করেন। নামাজ শেষে মুসল্লিরা পিতা-মতাসহ মুরব্বিদের
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন ও প্রথম জুম্মায় রাজশাহীতে মসজিদে মসজিদে ছিল অন্যরকম আবহ। জুম্মার আযানের পর থেকে মসজিদে যাওয়া শুরু হয় সব বয়েসী মুসল্লিদের। খুতবা শুরুর অনেক আগেই ভরে যায় মসজিদের ভেতর। বাইরে অতিরিক্ত বিছানা বিছিয়ে দিতে হয়। অনেক স্থানে তাতেও সংকট দেখা যায়। পলিথিন আর পত্রিকা বিছিয়ে রাস্তায় জামাতে শরীক হন অনেকে। হযরত শাহমখদুম (রূ) এর দরগা সংলগ্ন মসজিদ সাহেব বাজার বড় মসজিদ, সোনাদিঘী মসজিদ, উপশহর মসজিদসহ সব মসজিদে ছিল মুসল্লিদের উপচেপড়া ভীড়। ইমাম সাহেব খোতবায় রমজানের ফজিলত নিয়ে বয়ান করেন। সবাইকে মাহে রমজানের পবিত্রতা বজায় রাখার আহবান জানান। নামাজ শেষে কবরস্থান গুলোয় জমে ভীড়। স্বজনদের কবরের পাশে দাড়িয়ে দোয়া দরুদ পাঠ ও কবরবাসীরদের জান্নাতুল ফেরদৌস নসীবের জন্য আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে মোনাজাত করা হয়।
খুলনা ব্যুরো জানায়, বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে গতকাল শুক্রবার খুলনা মহানগরীতে অধিকাংশ মসজিদে মুসল্লিদের ঢল দেখা যায়। রমজানের প্রথম দিনে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে খুলনাঞ্চলের সকল মসজিদে কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে যায়। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায়। সূত্রমতে, বেশিরভাগ মসজিদের স্থান সংকুলান না হওয়ায় রাস্তায় চলে আসে নামাজের সারি। গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় শহরের খুলনা আলিয়া মসজিদ, খুলনা টাউন মসজিদ, নিউমার্কেট বায়তুন নুর জামে মসজিদসহ প্রায় প্রতিটি মসজিদে মুসল্লিদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসব মসজিদে নামাজের আগেই মুসল্লিদের সারি চলে আসে রাস্তায়। নামাজের আগে প্রতিটি মসজিদেই বিশেষ বয়ান দেওয়া হয়। এতে ধর্মীয়, সামাজিক ও রমজানের তাৎপর্যসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মসজিদের ইমাম ও খতিবরা। প্রতিটি মসজিদের নামাজের পর মুসলিম উম্মাহের জন্য এবং বিশ্ব শান্তির জন্য বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এতে সবার গুনাহ মাফ, দেশের শান্তি সমৃদ্ধি ও বিশ্বের মুসলিম স¤প্রদায়ের জন্যও দোয়া করা হয়।
যশোর ব্যুরো জানায় গতকাল পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম জুমার নামাজ আদায়ে যশোরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মসজিদে মসজিদে মুসল্লীদের উপচেপড়া ভিড় হয়। জুমার নামাজে মসজিদে এমনিতেই ভিড় হয়। কিন্তু গতকালকের ভিড় ছিল লক্ষণীয়। প্রথম রমজানে আল্লাহর রহমতে ঠান্ডা আবহাওয়া ছিল। মাঝেমধ্যে হয় বৃষ্টি। মসজিদের বাইরেও পাটি পেতে বৃষ্টির মধ্যে মুসল্লীরা নামাজ আদায় করেছেন। যশোর কালেক্টরেট মসজিদ, জজ কোর্ট মসজিদ, হাসপাতাল মসজিদ, ঝিনাইদহ জামে মসজিদ, চরমুরারীদহ মসজিদ, যশোর উপশহর মার্কাস মসজিদসহ বিভিন্ন মসজিদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ধর্মপ্রাণ মুসল্লী রোজাদারসহ সর্বস্তরের মানুষের রীতিমতো ঢল নামে মসজিদগুলোতে। একইভাবে মসজিদে মসজিদে তারাবির নামাজ আদায়ে ছিল মুসলমানদের ব্যাপক উপস্থিতি। যশোর আমিনিয়া আলিয়া মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম জানান, আমি উপশহর মসজিদে নামাজ আদায় করি , কাতার বাড়িয়েও মসজিদে ঠাই হয়নি , বারান্দা ও মসজি; প্রাঙ্গনে বৃষ্টির মধ্যেও মানুষ নামাজ আদায় করেন।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিনটি জুম্মাবার হওয়ায় বগুড়ার মসজিদ গুলোতে মুসল্লীদের উপচে পড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। বগুড়ার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও বায়তুর রহমান সেন্ট্রাল জামে মসজিদে এবং মহাস্থাণে অবস্থিত হযরত শাহ সুলতান বলখী (রহঃ) মসজিদ কমপ্লেক্সে পৃথক পৃথক ৩টি বৃহত্তম জুম্মাহর জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বগুড়া শহর ও শহরতলীর প্রায় মসজিদের ভিতরে জায়গার সংকুলান না হওয়ায় মসজিদের বাইরে রাস্তায় জামাত করে নামাজ আদায় করতে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক মুসল্লীদের।
কুমিল্লা থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, গতকাল শুক্রবার প্রথম রোজার প্রথম জুমায় কুমিল্লার মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের ভিড় ছিল উপচেপড়া। আজানের আগেই নগরীর বড় মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের ব্যাপক উপস্থিতি শুরু হয়। নামাজের আগে কানায় কানায় ভরে যায় সব মসজিদ। অনেক মসজিদের ভেতর জায়গা না পেয়ে ছাদ, খোলা জায়গা, রাস্তায় নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লীরা। মসজিদগুলোতে জুমার বয়ানে মাহে রমজানের ফজিলত, তাৎপর্য ও রোজার জরুরি মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে বিশেষ বয়ান করেন খতিবরা। কুমিল্লার শাহ আবদুল্লাহ গাজীপুরী রা. (দারোগাবাড়ী) জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব হাফেজ মাওলানা ইয়াসিন নূরি কুরআন হাদীসের উদ্ধৃতি তুলে ধরে রমজান মাসে ধৈর্য্য ও সহানুভূতির শিক্ষা গ্রহণ করতে মুসল্লীদের আহŸান জানান। কুমিল্লার প্রতিটি মসজিদেই নামাজ শেষে মুনাজাতে দেশ, জাতি ও বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়।
বাগেরহাট জেলা সংবাদদাতা জানান, পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন গতকাল শুক্রবার হওয়ায় বাগেরহাটের অধিকাংশ মসজিদে মুসল্লিদের ঢল দেখা গেছে। রমজানের প্রথম দিনে মুসল্লিদের উপস্থিতিতে বাগেরহাটের সকল মসজিদে কাণায় কাণায় পূর্ণ হয়ে যায়। মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিদের রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ পড়তে দেখা যায়।
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল সকালে থেকে সাতক্ষীরা বৃষ্টি থাকলেও বেলা ১২টা নাগাদ বৃষ্টি কিছুটা কমে যায়। এরপরই সাতক্ষীরা জেলার অধিকাংশ মসজিদে মুসল্লিরা নামাজের জন্য প্রবেশ করেন। দুপুর ১টা নাগাদ মসজিদের ভেতরে তিল ধারনের জায়গা না থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা উত্তর গেটের বাইরের সিঁড়ি ও রাস্তায় নামাজ আদায় করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।