পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : নগরে তীব্র যানজট, সড়ক-মহাসড়কে চরম বিশৃঙ্খলা, পানি-বিদ্যুৎ ও গ্যাস সঙ্কটের মধ্যে মাহে রমজানের প্রস্তুতি চলছে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে। রমজান মাসে এসব সঙ্কট আরও প্রকট হতে পারে। আর তাতে রোজাদারদের দুর্ভোগে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি আর খাদ্যে ভেজালের যন্ত্রণাও। এসব সঙ্কট সহনীয় পর্যায়ে আনতে এবারও নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। তাতে কতটুকু সুফল মিলবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যানজটে অচল বেশ কয়েকদিন থেকে। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামেও। চট্টগ্রাম বন্দরমুখি সড়কের পাশাপাশি নগরীর প্রতিটি সড়কে এখন তীব্র যানজট। গতকাল (বুধবার) যানজটে অচল ছিলো গোটা মহানগরী। প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলি-গলিতে বিস্তৃত হয় অসহনীয় যানজট। গত কয়েক বছরে নগরীতে একাধিক ফ্লাইওভার হলেও যানজট কমেনি। পোর্ট কানেকটিং রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়কে চলছে সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজ। পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। সবকিছু মিলিয়ে নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। এ অবস্থায় রমজানে পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থায় চরম বিশৃঙ্খলার বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাসুদ উল হাসান দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে কাজ করছে পুলিশ। রমজান মাসে বিশেষ করে ইফতারের আগমুহূর্তে যানজট সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একইসাথে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে কাজ করবে পুলিশ। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে ইতোমধ্যে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, রোজাদারদের দুর্ভোগ হয় এমন কোনকিছু কাউকে করতে দেয়া হবে না।
গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হলেও চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় এখনও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়নি। গ্যাসের অভাবে বন্ধ আছে রাউজান তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দু’টি ইউনিট। একই কারণে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ শিকলবাহা ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রও। পিডিবির কর্মকর্তাদের দাবি, চট্টগ্রামে কোন লোডশেডিং নেই তবে নগরীর বেশিরভাগ এলাকায় ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। সঞ্চালন ব্যবস্থার ত্রæটির কারণে বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার যন্ত্রণায় অতিষ্ট গ্রাহকেরা। কোথাও ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা সারিয়ে তুলতে কয়েক ঘণ্টা এমনকি কয়েক দিনও লেগে যাচ্ছে। রমজান মাসে এমন সঙ্কট আরও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করছেন গ্রাহকেরা। তবে পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রমজানে বিশেষ করে সেহেরী ইফতার ও তারাবিহর সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। এ লক্ষ্যে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। তিনি বলেন, রমজানে চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা ১১শ’ মেগাওয়াট ছাড়িয়ে যায়। এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে সরবরাহ মিলছে ৯শ’ মেগাওয়াটের বেশি। বাকি চাহিদা জাতীয় গ্রীড থেকে পূরণ করা হবে বলে জানান তিনি। রোজাদারদের দুর্ভোগ কমাতে রমজান মাসে সঞ্চালন লাইনের সংস্কার কাজ রাতের বেলা বন্ধ রাখা হবে বলেও জানান তিনি।
নগরীতে পানি সঙ্কট দীর্ঘদিনের। এখানে পানির দৈনিক চাহিদা ৫০ কোটি লিটার। সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসার বড় একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা ৩০ কোটি লিটারে উন্নীত হয়েছে। চাহিদার তুলনায় ঘাটতি ২০ কোটি লিটার। এ ঘাটতি পূরণে রেশনিং করে পানি সরবরাহ দেয়া হচ্ছে। মহানগরীর প্রায় ৩৫ ভাগ এলাকায় ওয়াসার পানি সরবরাহ নেই। নগরীর অধিবাসীদের বিরাট একটি অংশ এখনো ডিপ-টিউবওয়েলের উপর নির্ভরশীল। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় ডিপ-টিউবওয়েলেও পর্যাপ্ত পানি মিলছে না। রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পানির জন্য হাহাকারের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রোজার মাসে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেসব এলাকায় পানির সঙ্কট দেখা দেবে সেখানে বিনামূল্যে তাৎক্ষণিক পানি পৌঁছে দিতে ১০টি ভাউচার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আবাসিক এলাকা, মসজিদ এমনকি বস্তিতেও তাৎক্ষণিক পানি সরবরাহ দেয়া হবে। তিনটি টিম তিন শিফটে ২৪ ঘণ্টা এ কার্যক্রম তদারক করবে। নগরীর সব কয়টি পাম্প যাতে সচল রাখা যায় সেখানে বিদ্যুৎ বিভাগকে সরবরাহ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
রমজান মাসে গ্যাসের সঙ্কট বিশেষ করে আবাসিক খাতে সঙ্কট আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানীর কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিক খাতে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে গ্যাসের দৈনিক চাহিদা ৪শ’ মিলিয়ন ঘনফুটের উপরে। এখন সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে ২১০ থেকে ২১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। এর ফলে গ্যাসনির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে শুরু করে ভারী শিল্প সিএনজি ফিলিং স্টেশন এমনকি আবাসিক গ্রাহকরাও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছেন না। আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস সরবরাহও এখনো শুরু হয়নি।
এদিকে খাদ্যে ভেজাল, লাগামহীন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা বাজার তদারকি শুরু করেছেন। সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমান আদালত ভেজালবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি নগরীর ফুটপাতেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।