পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন সামাদ খুনের কারন ও ঘাতকদের সম্পর্কে পুলিশ পুরোপুরি অন্ধকারে। তবে এটি পরিকিল্পত হত্যাকা-। ঘাতকরা পেশাদার এবং প্রশিক্ষিত। নিহতের লাশ ও ঘটনাস্থল দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা এ মন্তব্য করেন। নিহতের স্বজনরা গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত লন্ডন থেকে দেশে না পৌছায় মামলাও হয়নি। এদিকে নাজিমের নৃশংস খুনের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা সড়ক অবরোধ করে নাজিমের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের ২৪ ঘন্টার সড়ক অবরোধ করে আল্টিমেটাম দিয়েছে। শনিবার রাত ১২টার মধ্যে হত্যাকারীদের গ্রেফতার না করলে রোববার থেকে লাগাতার ছাত্রধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। নিহতের লাশ রাখা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল মর্গের ফ্রিজে।
গত বুধবার রাত ৯টার দিকে রাজধানীর সূত্রাপুরের একরামপুর মোড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নাজিমকে হত্যা করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। পরে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে নাজিমের ঘাতকরা পালিয়ে যায়। নিহতের গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিয়ানীবাজারে। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। লক্ষ্মীবাজারের কাছের একটি মেসে বসবাস করতেন। ফেসবুক পাতায় তিনি নিজেকে সিলেট জেলা বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি দেশ ও সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সব সময়ই সরব ছিলেন তিনি। ফেসবুকে আওয়ামী লীগ ও সরকারের সমালোচনা করে বেশ কিছু পোস্ট দিতেও দেখা যায় । এর মধ্যে গত ২ এপ্রিল নাজিম লেখেন, আওয়ামী ওলামা লীগ আর বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ দুই বিপরীত মেরুর দুই বাসিন্দা। ওলামা লীগ কখনোই বাহাত্তরের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান চায়নি এবং চাইবে না। সর্বশেষ গত ৫ এপ্রিল, মঙ্গলবার সকাল ৯টা ১০ মিনিটে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস পোস্ট করেন নাজিম। সেখানে তিনি লেখেন, সরকার, এবার একটু নড়েচড়ে বসো বাবা। দেশের যা অবস্থা, আইনশৃঙ্খলার যা অবনতি, তাতে গদিতে বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে না। জনরোষ বলে একটা কথাআছে। এটার চূড়ান্ত পরিণতি দেখতে না চাইলে এক্ষুনি কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে। নতুবা দিন ফুরিয়ে আসবে খুব দ্রুত।
এছাড়া ধর্মীয় উগ্রপন্থার বিরুদ্ধে অনলাইনে লেখালেখি করতেন। গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার জানিয়েছেন, নাজিম সিলেটে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মকান্ডেও যুক্ত ছিলেন। গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষে ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার থাকায় বেশ কয়েকবার হামলার আশঙ্কা করেছিলেন নাজিম উদ্দিন। তবে শিক্ষক, বন্ধু ও প্রিয়জনদের কাছে আশঙ্কা কথা জানালেও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি নাজিম।
নাজিমরা পাঁচ ভাই। বাবা ও বড় ভাই মারা গেছেন। বাকি তিন ভাই যুক্তরাজ্য প্রবাসী। সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন কুমার সাহা জানান, ঢাকায় লাশ গ্রহনের মতো নাজিমের আপন কেউ নেই। ঘটনা শুনে তার ভাইয়েরা লন্ডন থেকে দেশের পথে রওয়ানা হয়েছেন। ময়না তদন্ত শেষ হলেও লাশ গ্রহনের কেউ না থাকায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত লাশটি পড়ে ছিলো মিটফোর্ড হাসপাতাল মর্গে। কিন্তু সেখানের ফ্রিজ নষ্ট থাকায় লাশটি গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ওসি আরো বলেন, বুধবার রাত ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা একরামপুর মোড়ে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। পরে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে পালিয়ে যায়। নাজিম খুনের কারন লেখালেখি, প্রেম ঘটিত নাকি ব্যক্তি শত্রুতা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে ঘটনা তদন্তে ইতিমধ্যে পুলিশের পাশাপাশি, র্যাব, সিআইডি এবং ডিবি যৌথভাবে কাজ করছে। সিআইডি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছে। ঘটনার সময় নাজিমের সঙ্গে ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সাউথ ইস্টের শিক্ষার্থী নাজিব। মাত্র মাস দু’য়েক আগে কলেজে তার সাথে পরিচয়। কাজেই তিনিও নাজিম হত্যার কারন সম্পর্কে কিছুই জানাতে পারেননি। ওসি বলেন, নিহতের পরিবারের লোকজন এলে মামলা হবে। তাদের কাছ থেকে এ হত্যার ক্লু পাওয়া যেতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, মাথায় যেভাবে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে তাতে বলাই যায় যে খুনিরা প্রশিক্ষিত ও পেশাদার। খুবই কম সময়ের মধ্যে স্থানীয়রা বুঝে উঠার আগেই খুন করে তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ বলছে, নিহতের শরীরে গুলির চিহৃ পাওয়া যায়নি। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেওয়ার মাথার ডান পাশের খুলি আলাদা হয়ে যায়। ।
হত্যার প্রতিবাদে জগন্নাথ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ : এদিকে নাজিম হত্যার প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে জগন্নাখ বিশ্বদ্যিালয়ের শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে খুনিদের গ্রেফতারের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে তারা।
গতকাল সকাল ৯টা থেকে নাজিম উদ্দিন হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা মিছিল বের করে। পরে সকাল সাড়ে দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক ভবনের সামনে সকল শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। প্রায় এক ঘন্টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান নেয়। বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে সকল শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে প্রশাসনিক ভবন থেকে মিছিল নিয়ে কলাভবন ঘুরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে সামনে অবস্থান করে। এসময় তারা প্রধান ফটকের সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সদরঘাট-গুলিস্থান যাওয়ার রাস্তা অবরোধ করে রাখে। সেখানে তারা প্রায় সোয়া দুই ঘন্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। এসময় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে আশপাশের বিভিন্ন দোকান পাট এবং কয়েকটি লেগুনা ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আশ্বাসে অবস্থান কর্মসূচি তুলে নেয় তারা। আন্দোলনকারীরা নাজিমুদ্দিন হত্যার প্রকৃত খুনিদের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে খুঁজে বের করে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। আগামী শনিবার মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কোন সমাধান দিতে না পারলে পরের দিন রবিবারে প্রত্যেক বিভাগে তালা ঝুলিয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ করে ধর্মঘট পালনের ঘোষনা দেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজিমকে হত্যা করায় আমরা খুব ব্যথিত হয়েছি। এই বিষয়ে আমরা পুরান ঢাকার ওয়ারী জোনের ডিসিকে অবহিত করেছি। এছাড়া গোয়েন্দা বিভাগের লোকজন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। প্রশাসনিকভাবে আমরা দ্রুত একটা সমাধান ও প্রকৃত খুনিদের বিচারের আওতায় আনার চেষ্টা করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।