Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অর্থনীতি ভেঙে পড়ার শঙ্কা

২০২০ সালেই সক্ষমতা হারাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

| প্রকাশের সময় : ১৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট স্থায়ী রুপ নিচ্ছে। পাঁচ বছরেও শেষ হয়নি মহাসড়কে ফেনীর ফতেহপুর এলাকার ওভারপাস নির্মাণকাজ। অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ বা বিকল্প রাস্তার ব্যবস্থা না করেই চলছে এর নির্মাণকাজ। চার লেনের গাড়িগুলোকে এ এলাকায় এসে পার হতে হচ্ছে এক লেনে। এতে ফেনীর এ অংশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যদিকে, মেঘনা ও গোমতী সেতুর টোলপ্লাজার অব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এ ছাড়া, মহাসড়ক দখল করে অবৈধ স্থাপনা, সড়কের উপরে বাজার, নিষিদ্ধ যান চলাচলের কারনেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এর সাথে পুলিশের চাঁদাবাজিতো আছেই। সব মিলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট দিন দিন স্থায়ী রুপ নিচ্ছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের সমীক্ষানুযায়ী ২০২০ সালের মধ্যেই ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়কটি যান চলাচলের সক্ষমতা হারাবে। সে হিসাবে চার লেন মহাসড়কের পুরোপুরি সুফল ভোগ করার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সক্ষমতা হারানোর আগে বিকল্প ব্যবস্থা না করলে দেশের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনীর ফতেহপুর রেলক্রসিং এলাকায় ওভারপাস নির্মাণের কারণে আগেও যানজট হতো। তবে তা কখনও ১০ কিলোমিটার ছাড়ায়নি। গত কয়েক দিনে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। গতকালও এর ব্যতিক্রম ছিল না। সকাল থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে মেঘনা সেতু হয়ে কুমিল্লার চান্দিা পর্যন্ত যানজটে একেবারে অচল ছিল অর্থনীতির লাইফ লাইন নামক মহাসড়কটি। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজটের তীব্রতাও বাড়তে থাকে। এতে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয় ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী সব যাত্রীকে। এমনকি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বাদ যান নি। বেলা ১২টার দিকে ঢাকা থেকে সোনারগাঁও যাওয়ার সময় তিনিও দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় যানজটে আটকা পড়েন।
ভুক্তভোগিরা জানান, ফতেহপুরে রেললাইনের ওপর নির্মাণাধীন যে ওভারপাসের কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ দায় এড়াতে পারে না। ২০১২ সালে ওবারপাসটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও ৫ বছরেও সেটি শেষ হয়নি। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পের অংশ হলেও এই ওভারপাস নির্মাণ না করেই সওজ চার লেনের মহাসড়ক উদ্বোধন করে সস্তা বাহাবা নেয়। এ ছাড়া ফতেহপুর দিয়ে ঢাকা থেকে যাওয়া যানবাহনগুলো বাইপাস করে ফেনী শহরের দিকে চলে যেতে পারতো। গত বর্ষায় সেই সড়কটি ভেঙ্গে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হলে কোনোমতে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। এবার আবার বৃষ্টির কারণে সড়কটি যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে করে রেলওয়ে ওভারপাসের নিচ দিয়ে সব ধরণের যানবাহন চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। তাতেই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। সায়েদাবাদ বাস মালিক সমিতির একজন নেতা জানান, মহাসড়কের ফেনী অংশে পুলিশের চাঁদাবাজির কারনেও যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পুলিশ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান দাঁড় করিয়ে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি করে। গাড়িপ্রতি দুশ’ টাকা করে দিতে হয়। এটাও ওই অংশে যানজটের অন্যতম কারন। বিষয়টি সবারই জানা বলে ওই নেতা উল্লেখ করেন।
সওজ সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর সড়কপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে সময় লাগত ৪ ঘণ্টা। যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকায় এ পথে যাতায়াতে সময়ও ক্রমে বাড়তে থাকে। ২০০৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬ ঘণ্টায়। ক্রমে যানবাহনের চাপ আরো বাড়বে বিধায় সে সময় বিদ্যমান মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এজন্য ২০০৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের এক সমীক্ষায় বলা হয়, দৈনিক সর্বোচ্চ ৬০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়কে। প্রকল্পের নকশাও করা হয় সে অনুযায়ী। এক্ষেত্রে মহাসড়কটির সক্ষমতা ধরা হয়েছে ২০৩০ সাল পর্যন্ত। তবে মহাসড়কটিতে চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা যে হারে বাড়ছে, তাতে ২০২০ সালেই সক্ষমতা হারাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক। সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৫ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দৈনিক চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার ছিল ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রেইলার। এছাড়া বাস ছিল ৪ হাজার এবং ব্যক্তিগত ও অন্যান্য যানবাহন ৬ হাজার। ২০২০ সালে পণ্যবাহী যানবাহন বেড়ে দাঁড়াবে ৪৮ হাজারে। এ সময় নাগাদ মহাসড়কটিতে বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করবে যথাক্রমে ৫ হাজার ও ৭ হাজার। সওজের সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০৩০ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দৈনিক চলাচলকারী যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় এক লাখ। এর মধ্যে পণ্যবাহী যানবাহনের সংখ্যাই হবে প্রায় ৭০ হাজার। আর ২০৩৫ সালে এ মহাসড়কে চলবে দৈনিক গড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ও ২০৪০ সালে ১ লাখ ২৯ হাজার যানবাহন। এত সংখ্যক যানবাহন চলাচলের জন্য এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ ছাড়া বিকল্প নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ