Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্ষোভে উত্তাল বাঁশখালী

৩ দিন পর এমপি দুষলেন বিএনপিকে

প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বাঁশখালীর গন্ডামারায় প্রতিবাদী গ্রামবাসীর ক্ষোভ, বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা, মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে গতকালও সেখানে মিছিল সমাবেশ হয়েছে। সমাবেশ থেকে জীবন দিয়ে হলেও কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিরোধ করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে বসত-ভিটা রক্ষা কমিটির নেতারা। তারা বিদ্যুৎ কেন্দ্র অন্যকোন এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান। বক্তারা বলেন, পুলিশ পাখির মতো গুলি করে ৪ গ্রামবাসীকে হত্যা করেছে। তাদের গুলিতে আহত হয়েছে আরও ত্রিশ জন। হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছে আহত এমন ব্যক্তিদের হাতে হাতকড়া পরিয়েছে পুলিশ। তারা এটিকে মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন উল্লেখ করে অবিলম্বে গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি করেন। সোমবার বসত-ভিটা রক্ষা কমিটির সমাবেশে গুলি করে পুলিশ। গুলিতে চারজন নিহত এবং পুলিশসহ আরও ৩০ জন আহত হয়। এই ঘটনার পর পুলিশ ৬ হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা করে। ঘটনার পর থেকে পুরো গন্ডামারা ইউনিয়নে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।
এদিকে প্রতিবাদী জনতার উপর নির্বিচারে পুলিশের গুলিতে ৪ জন নিহত হওয়ার ৩ দিন পর মুখ খুললেন সরকার দলীয় সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। গতকাল সকালে চট্টগ্রাম নগরীর নাসিরাবাদে নিজবাসায় সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ওই সহিংস ঘটনার জন্য বিএনপিকে দায়ী করলেন। চারজন নিহত হওয়ার নেপথ্যে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ঘটনার বিষয়ে তিনি বলেন, বিএনপি নেতা লেয়াকত আলী চাঁদা না পেয়ে এলাকার সরল মানুষকে উস্কানি দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। জানাজায় গিয়ে জাফরুল ইসলাম চৌধুরী (বাঁশখালীর সাবেক এমপি) ও আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (নগর বিএনপি সভাপতি) বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে বলে এসেছে। তাদের খালেদা জিয়া পাঠিয়েছে। এ ঘটনায় বিএনপি জড়িত দাবি করে তিনি বলেন, বিএনপির লোকজনই পুলিশের উপর গুলি করেছে।
প্রকল্পের ভবিষ্যত বিষয়ে তিনি বলেন, যদি পরিবেশ দূষণ না করে তাহলে সন্ত্রাসী কাজের জন্য কি প্রকল্প বন্ধ থাকবে? এ বিষয়ে এস আলম গ্রুপ ও সরকার সিদ্ধান্ত নেবে। ঘটনার তিনদিন পরও নিজের সংসদীয় এলাকায় না গিয়ে নগরীতে এই সংবাদ সম্মেলন করলেন মোস্তাফিজুর। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন (সোমবার) ঢাকায় ছিলাম। পরদিন বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেলে আহতদের দেখতে গিয়েছি। ততক্ষণে নিহতদের দাফন হয়ে গেছে। আগামীকাল এলাকায় যাব। কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণকারী এস আলম গ্রুপের সাথে তার ঘনিষ্ঠতা ও আর্থিক সুবিধা নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ক্ষুব্দ হয়ে মোস্তাফিজুর বলেন, আমি কি ফকিন্নির পোলা? গত সপ্তাহে এস আলমের মাসুদ সাহেবের (এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ) সাথে কথা হয়েছে। এরআগে পরিচয়ও ছিল না। সোমবার গন্ডামারায় ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে কিছুই জানতেন না মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, প্রশাসন আমাকে বলেনি যে ১৪৪ ধারা দেয়া হয়েছে। প্রশাসন আমাকে জিজ্ঞেসও করেনি। ১৪৪ ধারা দেয়া হয়েছে শান্তির জন্য।
গন্ডামারায় ‘ভিটামাটি রক্ষাকারী এলাকাবাসী’র আহ্বায়ক বিএনপি নেতা লেয়াকত আলীর সাথে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীতা বিষয়ে কিছুদিন আগে বিয়ের অনুষ্ঠানে আলাপ হয়ে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, লেয়াকত এস আলমের কাছ থেকে এক কোটি ৩০ লাখ টাকা নিয়ে জমি দেয়নি বলে তাদের অভিযোগ। ওই টাকায় লেয়াকত অস্ত্র কিনেছে। সেই এক নম্বর দায়ী। তাকে টেলিফোনে বলেছি- যদি কেন্দ্রের কারণে পরিবেশের ক্ষতি হয়, তাহলে আসো আলোচনা করি, সে আসেনি। ঘটনার দিন থেকে গন্ডামারার বাসিন্দাদের দাবি এস আলম গ্রুপের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা শুরুতে গুলিবর্ষণ করে। পরে কেন্দ্র বিরোধীরা ধাওয়া দিলে পুলিশ টিয়ার সেল ও গুলি ছোড়ে। নিহতরা ভিটামাটি রক্ষা কমিটির ডাকে সমাবেশে যোগ দিতে মিছিল নিয়ে গিয়েছিল।
তবে এ বিষয়ে এমপির দাবি ভিন্ন। মোস্তাফিজুর বলেন, লিয়াকত স্থানীয়দের বারবার উস্কানি দিয়ে পুলিশকে এমনভাবে ঘিরে ফেলেছিল, পুলিশ গুলি করতে বাধ্য হয়েছে। এতে সেখানো প্রাণহানি ঘটেছে। যারা মারা গেছে তাদের স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। লিয়াকতের পক্ষের লোকদের গুলিতেই মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মোস্তাফিজুর বলেন, প্রকল্প এলাকা থেকে চার কিলোমিটার দূরে আন্দোলন হয়েছে। সেটা লেয়াকতের এলাকা। যারা জমি বিক্রি করেছে তাদের কোনো ক্ষোভ নেই। তারা এস আলমের পক্ষে।
সংবাদ সম্মেলনে ডেকে সেখানে উপস্থিত থাকলেও সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর। সংঘর্ষে নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাঁশখালী পৌর মেয়র সেলিমুল হক চৌধুরী, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেহানা আক্তার, উপজেলা আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্ষোভে উত্তাল বাঁশখালী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ