পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর জনগণের খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যত দ্রুত সম্ভব ফুড ব্যাংক গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমরা সার্ক ফুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছি, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। দক্ষিণ এশিয়ার একজন মানুষকেও যাতে খাদ্যের অভাবে প্রাণ হারাতে না হয়, সে লক্ষ্যে সার্ক ফুড ব্যাংক হবে আমাদের বিপদের বন্ধু। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে তৃতীয় সার্ক কৃষিমন্ত্রী পর্যায়ের সভার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে তিন দিনব্যাপী এ বৈঠকের আয়োজন করেছে।
দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের দেশগুলোর দারিদ্র্য ও ক্ষুধা দূরীকরণে একযোগে কাজ করার ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, একটি মানুষও যেন অনাহারে না থাকে, অপুষ্টিতে না ভোগে। আমরা প্রতিটি মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে চাই। কিন্তু কোনো একক দেশের পক্ষে তা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন যৌথ উদ্যোগ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে আমাদের বেশ কয়েকটি বিষয়ে নজর দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে স্বল্প দামে উন্নত বীজ সরবরাহ নিশ্চিত করা; কৃষিকাজে সুষ্ঠু পানি ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে ভূ-উপরিস্থ পানির ব্যবহার বৃদ্ধি; রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে জৈব-পদ্ধতির কৃষির প্রবর্তন; কীটনাশকের ব্যবহার হ্রাস এবং সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার সম্প্রসারণ; কৃষি উৎপাদন খরচ হ্রাস; কৃষক পর্যায়ে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ; কৃষি বিপণনব্যবস্থা জোরদার; প্রান্তিক চাষিদের স্বার্থ সুরক্ষা; গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি এবং মাছের রোগ প্রতিরোধসহ উন্নত চাষপদ্ধতি চালু করা এবং এসব কর্ম সম্পাদনের জন্য উন্নততর গবেষণা পরিচালনা করা।
তিনি বলেন, সার্কভুক্ত বেশির ভাগ দেশেরই অর্থনীতি এখনো প্রধানত কৃষিনির্ভর। যদিও কোনো কোনো দেশের জিডিপিতে কৃষির অবদান ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। তিনি বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্য ও পুষ্টির জোগান এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের ক্ষেত্রে কৃষি এখনো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্যের অবস্থান শীর্ষে। সভ্যতা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য সত্ত্বেও আজও বিশ্বের সব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সক্ষম বেশ কিছু ফসলের জাত এবং কৌশল উদ্ভাবন করেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের পাটের জন্ম-রহস্য উন্মোচন কৃষি গবেষণা এবং উন্নয়নে একটি যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশেও একই ধরনের সাফল্য রয়েছে। আমরা সবার কল্যাণের জন্য এগুলো বিনিময় করতে পারি। এ অঞ্চলে টেকসই কৃষির উন্নয়ন এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ এবং নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি। আমরা এ অগ্রগতির ধারাকে এগিয়ে নিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোর সারিতে আমাদের আসন নিশ্চিত করতে চাই।
কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অধিবেশনে বিশেষ অতিথি হিসেবে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের মধ্যে ভারতের কৃষি এবং কৃষককল্যাণবিষয়ক মন্ত্রী রাধা মোহন এবং সার্ক মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা বক্তৃতা করেন। ভূটানের কৃষিমন্ত্রী যেশি দরজি, নেপালের কৃষিমন্ত্রী হরিবল প্রসাদ গাজুরেল ও পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তামন্ত্রী সিকান্দার হায়াৎ খান বোসান এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশ সব সময়ই আঞ্চলিক সহযোগিতার উপর ‘বিশেষ গুরুত্ব’ দিয়ে থাকে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলি; আমরা সবাই মিলে যদি কাজ করি- কারণ আমাদের সমস্যাগুলিতো একই রকম। আর দারিদ্র হচ্ছে সবচেয়ে বড় শত্রু।কাজেই সেই দারিদ্র্যকে মোকাবিলা করতে হলে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করা একান্তভাবে প্রয়োজন।
দক্ষিণ এশিয়ার জনগণের জীবন-জীবিকার উন্নয়নে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়টি ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু প্রথম কলকাতায় তুলে ধরেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। তখন থেকেই বাংলাদেশ তার বৈদেশিক নীতিতে আঞ্চলিক সহযোগিতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের জিডিপিতে কৃষির ১৬ শতাংশ অবদানের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের কৃষির ব্যাপক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। এক দশকে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩ গুণ এবং শাকসবজির উৎপাদন বেড়েছে ৫ গুণ।বছরে ৩৪ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদন করে আমরা চাল উৎপাদনে স্বয়ম্ভরতা অর্জন করেছি।বর্তমানে নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ থেকে চাল রপ্তানির কথাও তুলে ধরেন তিনি। আমি মনে করি সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশেও একই ধরনের সাফল্য রয়েছে। আমরা সবার কল্যাণের জন্য এগুলো বিনিময় করতে পারি। এ অঞ্চলে টেকসই কৃষির উন্নয়ন এবং স্থানীয় ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ ও নাজুক পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের মধ্যে আরও গভীর সহযোগিতার প্রয়োজন।
তিনি আরও বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাদ্যের অবস্থান শীর্ষে। সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্য সত্ত্বেও আজও বিশ্বের সকল মানুষের জন্য পর্যাপ্ত খাবার এবং পুষ্টি নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি।তিনি বলেন, বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার হিসেব অনুযায়ী বিশ্বের ৭ দশমিক ৩ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে এখনও প্রায় ৮০৫ মিলিয়ন মানুষ অপুষ্টিতে ভোগে। অর্থাৎ প্রতি ৯ জনে একজন অপুষ্টিতে ভুগছেন। আবার এরমধ্যে ৭৯১ মিলিয়ন মানুষের বসবাস উন্নয়নশীল দেশে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় ২৭৬ দশমিক ৪ মিলিয়ন মানুষ এই অপুষ্টিতে ভোগার দলভুক্ত।
খাদ্য নিরাপত্তার সংগে কৃষি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একইসঙ্গে এটি একটি বহুমাত্রিক এবং জটিল বিষয়। আমি আশা করব, এই বৈঠকে অংশ গ্রহণকারী মন্ত্রী এবং বিশেষজ্ঞ মহল আলোচনার মাধ্যমে এমন কিছু সুপারিশ দেবেন, যা এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিকে একটি টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে। দক্ষিণ এশীয় জনগণের জন্য খাদ্য এবং পুষ্টির নিরাপত্তা বিধানই হোক আমাদের এই সম্মেলনের অঙ্গীকার।
তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশে খাদ্য নিরাপত্তা তৈরির ক্ষেত্রে যথোপযুক্ত আইনী কাঠামো প্রণয়ন ও প্রয়োগে আমার সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ অঞ্চল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বর্তমান কৃষি ব্যবস্থা নানা কারণে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো উচ্চমাত্রার দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। বিশেষ করে সমুদ্র-বেষ্টিত এবং সমুদ্র-উপকূলীয় দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখী হতে পারে।
তিনি বলেন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিধস এবং ভূমিকম্পের মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ যে কোন সময় আমাদের অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিতে পারে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমরা প্রতিরোধ করতে পারব না, কিন্তু এসব দুর্যোগের কারণ হ্রাস এবং দুর্যোগ-পরবর্তী ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের মাধ্যমে জান-মালের ক্ষয়ক্ষতি এবং মানুষের দুর্ভোগ কমানো সম্ভব।
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করলেন সার্ক কৃষিমন্ত্রীরা ঃ
সফররত সার্ক দেশগুলোর কৃষিমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল ও স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে অসামান্য সাফল্য অর্জনের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্যান প্যাসেফিক সোনারগাঁও হোটেলে সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের তৃতীয় বৈঠকের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কৃষিমন্ত্রীদের সাক্ষাৎকালে তারা এ অভিমত ব্যক্ত করেন।বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের একথা জানান।
তিনি বলেন, সার্ক কৃষিমন্ত্রীরা কৃষি খাতের পাশাপাশি চলতি বছর ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মাথাপিছু আয় বেড়ে ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হওয়ায় বাংলাদেশের সাফল্যের প্রশংসা করেন।
প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলে ‘অভিন্ন শত্রু’ হিসাবে উল্লেখ করেন এবং দারিদ্র্য নিরসনে দক্ষিণ এশিয়ার সবগুলো দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।তিনি বলেন, ‘আমরা অবশ্যই এ অঞ্চল থেকে দারিদ্র্য নিরসনে একত্রে কাজ করবো। কৃষিখাতে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতি প্রসঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী কৃষির উন্নয়নের জন্য তার সরকারের গৃহীত বিভিন্ন প্রায়োগিক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন।তিনি বলেন, কৃষি খাতে গবেষণাসহ আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত হয়েছে।এ প্রসঙ্গে তিনি সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সর্বোচ্চ ১২৩ শতাংশ বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখার কথা উলেখ করেন।তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ব্যাপক বৃদ্ধি সত্ত্বেও আমরা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখেছি।বৈঠকে শুরুতে প্রধানমন্ত্রী সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের বাংলাদেশে স্বাগত জানান এবং সার্ক কৃষিমন্ত্রীদের এই বৈঠককে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেন। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ভারতের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রাধা মোহন সিং, নেপালের কৃষি উন্নয়ন মন্ত্রী হরিবল প্রসাদ গাজুরেল, ভুটানের কৃষি ও বন মন্ত্রী ইয়াসি দর্জি, পাকিস্তানের জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা ও গবেষণা মন্ত্রী সিকান্দার হায়াত খান বোসান এবং সার্কের মহাসচিব অর্জুন বাহাদুর থাপা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।