পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অসাধারণ নৈপুণ্য তার। তিনি দুর্জয়, দুর্নিবার, অপ্রতিরোধ্য। আফ্রিকার সেরা থেকে এখন বিশ^ সেরাদের কাতারে নিজেকে তুলে এনেছেন তিনি। ফুটবলের রাজপুত্র দিদিয়ের দ্রগবা, জর্জ উইয়াহ, রজার মিলা, ইয়াহিয়া তোরে। এসব কিংবদন্তি তারকাদের পাশে নিজেকে উন্œীত করেছেন এ মিসরীয় ফুটবল তারকা মোহাম্মদ সালাহ।
তার সাফল্য বিশ^ ফুটবলের সাথে মুসলমানদের নতুন করে বন্ধন ও প্রীতি তৈরি করেছে। ভেঙ্গে দিয়েছে সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল।
মোহাম্মদ সালাহর রুটিন এখন সুপরিচিত। লিভারপুল ফুটবল স্টেডিয়াম আনন্দ মুখর হয়ে উঠেছে আরেকটি মিসরীয় গোলে। তিনি দু’বাহু ছড়িয়ে ছুটে গিয়েছেন তার একেবারে কাছে থাকা ভক্তদের দিকে। নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে ¯œাত হয়েছেন তাদের প্রশংসা ও স্তুতিতে। এক সময় তার টিমমেটরা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন, তিনি ধীরে হেঁটে ফিরে গেছেন কেন্দ্রীয় বৃত্তে। লিভারপুল ভক্তদের একটি পডকাস্ট দি অ্যানফিল্ড র্যাপ-এর আয়োজক ন্ইেল অ্যাটকিনসন বলেন, তারপর এই বিরতি। সালাহ আকাশের দিকে তার হাত দু’টি তুললেন , তারপর হাঁটু গেড়ে বসলেন মাঠে, ইসলামী রীতি মত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের লক্ষ্যে সিজদায় অবনত হলেন। অ্যাটকিনসন বলেন, জনতা খানিকটা শান্ত হয়ে তার ভক্তি প্রকাশের এ সুযোগ দেয়। তারপর তিনি উঠে দাঁড়াতেই জনসমুদ্রে ্আবার গর্জনের উচ্ছ¡াস শুরু হয়, প্রত্যেকেই আবার তাকে অভিনন্দিত করে।
মোহাম্মদ সালাহ ইউরোপীয় ফুটবলে মওসুমের ঝলসে ওঠা তারকা। তিনি লিভারপুলে তার প্রথম মওসুমে ৪৯টি খেলায় ৪৩টি গোল করেছেন। তিনি এ টিমকে এক দশকের মধ্যে প্রথম চ্যাম্পিয়ন লীগ ফাইন্যালে নিয়ে গেছেন। তার সহযোগী খেলোয়াড় ও ফুটবল লেখক সমিতির ভোটে ইংল্যান্ডের প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হয়েছেন।
তার ধর্ম বিশ^াস ও প্রকাশ্যে তার প্রদর্শন তাকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। ব্রিটেন যখন ক্রমবর্ধমান ইসলামোফোবিয়ার সাথে লড়াই করছে, যখন সরকারী নীতি অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বৈরিতা মূলক নীতির জন্ম দিচ্ছে, সে সময় তিনি ্একজন উত্তর আফ্র্রিকান ও একজন মুসলমান হিসেবে ব্রিটেনে শুধু গৃহিতই নন, বরিতও বটে।
ব্রিটেনের মুসলিম কাউন্সিলের সহকারী মহাসচিব মিকদাদ ভারসি বলেন, তিনি এমন এক ব্যক্তি যিনি ইসলামী ূ মূল্যবোধের ধারক। তার পছন্দনীয়তা আছে। তিনি দলের হিরো। লিভারপুল নির্দিষ্টভাবে ইতিবাচক পন্থায় তার চারপাশে জড়ো হয়েছে। তিনি ইসলাম ভীতির সমাধান নন, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করতে পারেন।
২৫ বছর বয়সী সালাহ প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেন। কায়রোতে গত বছরের অক্টোবরে জাতীয় রতœ হিসেবে তার মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে। তার শেষ মিনিটের পেনাল্টি কিক দেশের জাতীয় দলকে এই গ্রীষ্মের বিশ^কাপে স্থান লাভ নিশ্চিত করে। ১৯৯০ সালের পর বিশ^কাপে এই প্রথম মিসরের উপস্থিতি। মিসরের আেেলকজান্দ্রিয়ার স্টেডিয়ামে ফুটবলপ্রেমীরা তাকে কাঁধে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিল।
মিসরের অসংখ্য দেয়ালে তার ছবি শোভা পাচ্ছে। কায়রো শহরে একটি ক্যাফের বাইরে তার ম্যুরাল পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। নগরীর প্রতিটি বিপণিকেন্দ্রে বিছানার চাদর থেকে লন্ঠন পর্যন্ত সব কিছু কেনায় তার ছবি উপহার দেয়া হয়। মার্চে খবর বেরিয়েছিল যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি না দাঁড়ালেও তার প্রতি মানুষের উল্লেখযোগ্য সমর্থন সমর্থন ছিল।
মিসরে প্রিমিয়ার লীগ ও ইউরোপীয় ফুটবল সব সময়ই জনপ্রিয়। কিন্তু এখন লিভারপুলের খেলা দেখার জন্য হাজার হাজার লোক কায়রোর কফি শপ ও সিসা বারগুলোতে জড়ো হয়।
মিসরীয় ফুটবল বিশ্লেষক আহমেদ আত্তা বলেন, সালাহ যা করেছে তা কোনো মিসরীয় করেনি। সে কারণে তার উত্থান জনগণের কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেকেই এখন প্রিমিয়ার লীগ দেখছে। সামাজিক মাধ্যমে তার ছবির জোয়ার দেখা যাচ্ছে।
মাঠে সাফল্যের কারণেই শুধু সালাহর জনপ্রিয়তা নয়। তিনি দানের জন্যও খ্যাত। নীল বদ্বীপে নাগরিগ শহরে ছোটবেলায় এ প্রতিভাকে আবিষ্কার করেছিলেন যিনি , সেই কোচ সাইদ এলশাইশিনি বলেন, সালাহ দাতব্য সংস্থাগুলোকে ও তার নিজ শহরে অব্যাহত ভাবে অর্থ দান করেন।
তিনি নাগরিগের একটি হাসপাতালে একটি ডায়ালিসিস মেশিন, একটি বর্জ্য নিকাশি কারখানা নির্মাণের জন্য জমি ক্রয় এবং একটি সরকারী ক্রীড়া কেন্দ্র , একটি স্কুল ও একটি মসজিদ সংস্কারের জন্য অর্থ দান করেছেন। তিনি মিসরের রুগ্ন অর্থনীতিকে গতিশীল করতে তহবিল গঠনে অর্থ দিয়েছেন এবং এপ্রিলে মাদক আসক্তির বিরুদ্ধে সরকারী প্রচারণার সমর্থনে একটি ভিডিওতে অংশ নেন। মিসরের সামাজিক সংহতি মন্ত্রণালয় জানায়, সেই ভিডিওটি প্রচারের তিনদিনের মধ্যে মাদক চিকিৎসা গ্রহণেচ্ছু লোকের সংখ্যা ৪ গুণ বৃদ্ধি পায়।
সালাহ যে মুসলিম, তা ঢেকে রাখার কোনো চেষ্টা করেন না। এটা তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে। আত্তা বলেন, ইসলামোফোবিয়ার সময় সালাহ একটি অমুসলিম দেশে সবার সামনে নামাজের জন্য হাঁটু গেড়ে বসতে যে ভয় করেন না মানুষ সে বিষয়টি ভালোবাসে। এটা তাদের জন্য্র বিজয়ের মত। লিভারপুলসহ মার্সিসাইড অঞ্চলের প্রধানত সিরীয়, ইয়েমেনি ও বাংলাদেশি সম্প্রদায় নিয়ে গড়ে ওঠা মুসলিম কম্যুনিটিও একই মনোভাব পোষণ করে। লিভারপুলের একটি ইনার সিটি ডিস্ট্রিক্ট টক্সটেথ-এর আল মানরা মসজিদের ইমাম আবু উসামা আত্থাবাবি বলেন, ব্রিটেনে মুসলমানরা চাপের মধ্যে আছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পুলিশি হিসাবে দেখা যায়, ২০১৫ সালে প্যারিসের মধ্যে ও বাইরে, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে লন্ডনে , ২০১৭ সালে ম্যাঞ্চেস্টারে সন্ত্রাসী হামলা হওয়ার পর থেকে ধর্মীয় উদ্দেশ্য প্রণোদিত ঘৃণা অপরাধসহ দেশে মুসলমানদের প্রতি ঘৃণা অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
টেল মামা নামে এক দাতব্য সংস্থার গত বছরের রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৬ সালে ইসলাম ভীতিমূলক হামলা ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ভারসি বলেন, এ হামলা যে শুধু বাড়ছে তাই নয়, বরং তা স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হচ্ছে। মূলধারার বলয়ে ইসলামোফোবিক মনোভাব প্রকাশের জন্য এ হামলা গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছে।
লিভারপুল শহরটি ব্রিটেনের যে কোনো স্থানের চেয়ে স্বাগত জ্ঞাপক ছিল। অ্যাটকিনসন বলেন, এটিকে বহিরাগতদের, একটি প্রতিষ্ঠান বিরোধী শহর বলে বিবেচনা করা হয়। দেশের অন্যান্য স্থান থেকে এ শহর আলাদা।
সিরিয়া থেকে আসা ডা. রাদওয়ান আলবারবান্দি ২০১১ সাল থেকে এখানে আছেন। তিনি বলেন, অধিকাংশ মুসলমান এখানে নিরাপদ ও স্বস্তি বোধ করে। এটি ইংল্যান্ডের পুরনো মুসলিম সম্প্রদায়ের স্থান এবং ইংল্য্রান্ডের প্রথম মসজিদের শহর।
তা সত্তে¡ও ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর লিভারপুলের মসজিদগুলোতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। ২০০৫ সালে লন্ডন হামলার পর লিভারপলে মারসি নদীর অপর পারে বার্কেনহেডে একটি মসজিদে হামলা করা হয়। মারসি পুলিশ ২০১২ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঘৃণা অপরাধ ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি রেকর্ড করেছে।
আত্থাবাবি বলেন, সালাহ মুসলমানদের উপর এ চাপ হ্রাসে সাহায্য করেছেন। লিভারপুলের অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামের বাইরে তার সম্মানে গান বাজে। ভক্তরা তার ছবি সম্বলিত পতাকা বহন করে। তিনি যেখানে যান জনতা তাকে ঘিরে ধরে। ফিলিং স্টেশন ও ফিশ অ্যান্ড চিপ শপে তার সাথে সেলফি তোলার জন্য ভিড় জমে।
দু’টি ফুটবল টিম ও বিটলদের নিজ শহর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যমন্ডিত লিভারপুলে এটাই স্বাভাবিক চিত্র। লিভারপুল ফ্যানস গ্রæপ স্পিরিট অব শ্যাংকলির জেমস ম্যাককেনা বলেন, তিনি যে কোনো ভক্তের স্বপ্ন নায়ক, একজন সুপারহিরো।
কিন্তু এটাও সত্য যে একজন মুসলমান হওয়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। লিভারপুলের আল রাহমা মসজিদের বাইরে মুদি দোকানদার আলি আদেন বলেন, প্রতিটি মুসলিমই সালাহর জন্য গর্বিত। কোনো কোনো সময় আমরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের আচরণ পাই। কারো কারো জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে এ শহরে আসা গর্বের বিষয়।
ডা. আলবারবান্দি বলেন, সালাহ তরুণ মুসলিমদের অধিকতর আস্থা দিয়েছেন।
আবদুল আজিজ নামে এক মুসল্লি আল রাহমা মসজিদে যাওয়ার সময় বলেন, সালাহর সাফল্য অন্যদের সাথে মুসলিম সম্প্রদায়ের সৃষ্ট ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ভেঙ্গে দিয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।