Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মৌসুমী ফল নিয়ে ক্রেতাদের শঙ্কা

রমজানকে সামনে রেখে মজুদ বেড়েছে : পরীক্ষা ছাড়াই আসছে ভারতীয় ফল

| প্রকাশের সময় : ১২ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা : বৈশাখ যাচ্ছে। আসছে মধুমাস জৈষ্ঠ্য। এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে মৌসুমী ফল। আম, লিচু, কাঁঠাল, তরমুজসহ বিভিন্ন ফল বাজারে এসেছে। রমজানকে সামনে রেখে ফরমালিনযুক্ত ফল মজুদ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, পরীক্ষা ছাড়াই আসছে ভারতীয় ফল। ফরমালিন মেশানো ভারতীয় ফলে বাজার সয়লাব হয়ে আছে। এতে করে প্রতি বছরের মতো এবারও মৌসুমী ফলে ফরমালিনের উপস্থিতি নিয়ে ক্রেতাদের মনে শঙ্কা আছে। গত বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বাদামতলীতে র‌্যাবের অভিযানে ৬০ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ পচা খেজুর জব্দ করা হয়। র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলম জানান, মদিনা হিমাগারে পচা, ইঁদুরে খাওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর সংরক্ষণ করা ছিল। হিমাগারের পরিবেশও ছিল অত্যন্ত নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর। এ অপরাধে মদিনা হিমাগারকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করাসহ ৬০ মণ মেয়াদোত্তীর্ণ পচা খেজুর জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। এছাড়াও প্রশাসনের ধার্যকৃত নির্ধারিত সময়ের আগে অপরিপক্ক আম ইথোফেন দিয়ে পাকানোর দায়ে ২১ মণ আম জব্দ করে ধ্বংস করা হয়। বিএসটিআই’র একজন কর্মকর্তা জানান, ফরমালিনযুক্ত ফল বাজারে যাতে কোনোভাবে কেউ বিক্রি করতে না পারে সেজন্য মোবাইল কোর্টের প্রস্তুতি চলছে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে এসব মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হবে। রমজানের আগে থেকেই প্রতিদিনই পরিচালিত হবে ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্টের অভিযান। র‌্যাবের মোবাইল কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলম ইনকিলাবকে বলেন, বাজারে মৌসুমী ফল আসার সাথে সাথে আমাদের মনিটরিংও শুরু হয়। এখন অভিযান চলছে। তিনি বলেন, বাজারের মৌসুমে ফলে ফরমালিন আর আগের মতোই নেই। মানুষের মনে এ নিয়ে আগের মতো ভীতি না থাকলেও আস্থার সঙ্কট এখনও আছে। আমরা মূলত সেই আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্যই কাজ করছি।
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে আসতে শুরু করেছে মৌসুমি ফল। তরমুজ এসেছে বহু আগেই। কয়েকদিন ধরে বাজারে উঠেছে লিচু, কাঁঠাল ও দেশি আম। আপেল, বাঙ্গি, পেয়ারা, আমলকি, ডালিম, আঙ্গুর আছে আগে থেকেই। ফল বিক্রেতারা জানান, বৈশাখের শুরু থেকেই ঝড় বৃষ্টি হওয়ায় এবার তরমুজের বাজার খুব একটা জমেনি। যে কদিন গরম ছিল সে ক’দিন তরমুজের কদর অনুযায়ী দামও বেড়েছিল। ফল বিক্রেতারা জানান, মৌসুমী ফল বাজারে এলে প্রথম দিকে দামটা একটু বেশি থাকে। তবে মানুষ বেশি দাম দিয়েই সেগুলো কিনে। সামনে রমজান। এজন্য মৌসুমী ফলের কদর বাড়তেই থাকবে। সাতে দামও বাড়বে। ক্রেতাদের মধ্যে ফরমালিনের ভীতি আছে কি না জানতে চাইলে পল্টনের ব্যবসায়ী সাইদুর বলেন, আগের মতো ভীতি না থাকলেও সন্দেহ যায় নি। অনেকেই কেনার আগে সন্দেহ নিয়ে বলেন, ভাই ফরমালিন নেই তো? পল্টনের আরেক ব্যবসায়ী লিটন বলেন, আঙ্গুর, মাল্টা, কমলা, ডালিমের ক্ষেত্রে আমরাও সন্দিহান। এগুলোর বেশিরভাগ আসে ভারত থেকে। এক মাস আগে থেকে পাকা আমও আসছে। এগুলোতে ফরমালিন থাকতে পারে। এর কারন হিসাবে বাদামতলীর একজন পাইকারী ব্যবসায়ী বলেন, ভারত থেকে আসার সময় ফলগুলো সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে প্রতিদিনই ভারতীয় ফল নিয়ে শত শত ট্রাক দেশে আসছে। এরই মধ্যে আপেল, আঙুর, মাল্টা ও আমই থাকছে বেশি। বন্দরে ফরমালিন পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় শিবগঞ্জ পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শকের সনদ নিয়েই ফল ছাড় করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, কোনো রকমের ফরমালিন পরীক্ষা ছাড়াই টাকার বিনিময়ে মিলছে এ সনদ। আবার শিবগঞ্জ পৌরসভার স্বাস্থ্য পরিদর্শকের স্বাক্ষর জাল কলে সনদ তৈরি করে অনেকেই ফল ছাড় করে নিয়ে যাচ্ছেন। এরপর তা সরাসরি চলে যাচ্ছে পাইকারি বাজার হয়ে খুচরা বাজারে। একইভাবে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েও যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ভারতীয় ফল বাংলাদেশে আসছে। বন্দর থেকেই সরাসরি তা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাজারে ছড়িয়ে পড়ছে। এসব ফলের মধ্যে অন্যতম, কমলা, আনার ও মাল্টা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পচনমুক্ত রাখার জন্য এসব ফলে ফরমালিন জাতীয় কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। খালাস পর্যায়ে যথাযথ কেমিক্যাল পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় অবাধে তা বিক্রি হচ্ছে। এসব ফল খেয়ে মানুষ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
অপরদিকে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাদামতলীতে ফলের আড়তে আগে যারা ফরমালিন মিশিয়ে একচেটিয়া ব্যবসা করতো তাদের মধ্যে অনেকেই এখন নিস্ক্রিয়। তবে যাত্রাবাড়ী এলাকার কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ী এখনও ফরমালিনের কারবার করেন।
এদিকে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আম উৎপাদনকারী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারও আমের বাগানে যাতে কেউ ফরমালিন বা অন্য কোনো কেমিক্যাল মেশাতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। বাজারে এখন যেসব আম পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই ভারত থেকে আমদানী করা। আর দেশি আম যেগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর বেশিরভাগই অপরিপক্ক এবং ইথোফেন দিয়ে পাকানো। ভুক্তভোগি ক্রেতাদের মতে, ফরমালিনমুক্ত মৌসুমী ফল নিয়ে মানুষের মধ্যে যে সন্দেহ তা দূর করার জন্য ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্টের অভিযান আরও বাড়ানো দরকার। র‌্যাবের ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সারওয়ার আলম বলেন, ক্রেতাদের শঙ্কামুক্ত রাখতে র‌্যাবের ভেজালবিরোধী মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত থাকবে।



 

Show all comments
  • গনতন্ত্র ১২ মে, ২০১৮, ৪:০৩ এএম says : 0
    জনগন বলছেন, “ নিরাপদ- ২০১৮ “ রমজানে আল্লাহতালা শয়তান বন্ধি করেন মানুষ একনিষ্ঠ ভাবে আল্লাহর বন্দেগী যেন করে, দেশে নিরাপত্তা আজ কারাবন্ধি মানুষের অনিষ্ট করার তরে ৷ রক্ষক এখন ভক্ষকের ভূমিকায় ছত্রাকের মত গেছে ছেয়ে, নারী / শিশুর নেই নিরাপদ ধর্ষন বেড়েছে মাদক খেয়ে খেয়ে ৷ রাস্তা এখন নয় নিরাপদ যখন- তখন গাড়ী চাপায় পড়বে, হেলপার এখন চালকের সিটে র্দুঘটনায় কখন জানি মরবে ? ঔষধে ভেজাল, খাদ্যে ভেজাল পানিও এখন নয় নিরাপদ, মলম পার্টি, অপহরন চক্র ঘরে /বাহিরে বিপদ আর বিপদ ৷ বিদুৎতের তারে হয়তঃ ঝুলবে নয়তো আঘাত হানবে বজ্রপাত, ভূয়া চিকিৎসকের কবলে পড়লে যেতে হবে সাড়ে তিন হাত ৷ বাবার কাছেও নিরাপদ নয় মেয়ে ভাগ্নিও নয় মামার কাছে , চাচা / ফুফা / খালু সবই এক বিবেক কি আর আছে ? ব্যাংকে টাকা নয় নিরাপদ শেয়ার বাজার গোল্লায় গেছে, ছেলের হাতে মা খুন কিয়ামত কি কাছে ? স্বামীর কাছে স্ত্রী নয় নিরাপদ স্ত্রীর কাছেও নয় স্বামী, বিপদের সমদ্রে সাতার কাটছি কখন প্রান যায় জানি ??
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৌসুমী ফল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ