পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগকে বলেছেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা গুরুতর। জেলখানায় চিকিৎসা হচ্ছে না। আমরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছি। তাঁর হাত ফুলে উঠেছে। ঘাড় নাড়াতে পারছেন না। কথাও বলতে পারছেন না। অথচ অ্যাটর্নি জেনারেল বলছেন, খালেদা জিয়া বিশ্রামে আছেন। মানুষের জন্য আদালত, আদালত সবকিছুই দেখবেন। তিনি বলেন, আদালতের চোখ আছে, মন আছে, বিবেক আছে। পাবলিক পারসেপশন আছে। আদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালত। সুতারাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবে। আপনাদের (আদালতের) আরেকটি চোখ আছে, বিবেক আছে, মন আছে-এসব কিছু দিয়ে আপানোদের বিচার করতে হয়। এই আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। এ পর্যায়ে খালেদার অপর আইনজীবীরা বলেন, শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি। আশা করব ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখতে এই জামিন বহাল রাখা হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদে আদালতকে বলেন, আজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, উনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। সরকার তো বলবেই সে সুস্থ।
প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনের খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিল শুনানিতে দুদক রাষ্ট্রপক্ষ ও আইনজীবীদের মধ্যে কয়েকদফা হট্টগোলের ঘটনাও ঘটে। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এজলাস ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুনানি শেষে করে ১৫ মে আদেশের জন্য দিন ঠিক করে দেন আপিল বিভাগ। এদিন শুনানিতে আদালতের বিভিন্ন প্রশ্নে উপযুক্ত জবাব দিতে পারেনি দুদকের আইনজীবী।
গতকাল বুধবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি চলে। শুরুতে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা জামিনের পক্ষে বিভিন্ন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।
এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি উপলক্ষে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। সবকটি ফটকে সবাইকে তল্লাশি করে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। আদালতের চারপাশে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়। শুনানি শুরু হওয়ার আগেই আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ, সাধারণ আইনজীবী, সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে।
খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদে, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামালহ বিএনপি সমর্থিত শতাাধিত আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ সহকারী ও ডেপুটি অ্যাটর্নিরা, আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আদালতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সকাল ৯টা ২৩ মিনিটের দিকে শুনানি শুরু করেন। ৩০মিনিটি বিরতী দিয়ে বেলা সাড়ে ফের শুনানি শুরু করেন আইনজীবীরা। এরপর ১টা ১৫ মিনিটির দিকে আদালত আদেশের জন্য ১৫ মে ধার্য করেন।
চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে মধ্য জামিন শুনানি:
শুনানির শুরুতে মশিউর রহমান ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জামিনের উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, শুধু এ দুটি মামলায় নয় শতকরা ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি। এসময় আদালত বলেন, ২৫ বছর পলাতক ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরের দিন হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। সেই নজিরও তো রয়েছে। এ মামলাটি এখন চেম্বারে এসেছে। এ জে মো. আলী বলেন, ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত আইন হতে পারে না। এই মামলাকে অন্য সকল মামলার থেকে আলাদা করে এনে দ্রæত বিচার করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্র। আমরা মানি বা না মানি গোটা রাষ্ট্রকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। এটা এক ধরণের স্বেচ্ছাচারিতা। বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল। অ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্যের আপত্তি জানানিয়ে বলেন, এটা সত্য নয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি তো বলছি। আপনি কেন কথা বলছেন?
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্জন পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। এভাবেই এরকম স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে রিভিশন আবেদন করা হয়েছে। ভিন্ন উদ্দেশ্যে এই মামলাটা আনা হচ্ছে। এটা অপ্রত্যাশিত। এ অবস্থায় হাইকোর্ট তার বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কম সাজা সব বিবেচনায় যথাযথভাবেই জামিন দিয়েছে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন শুনানিতে বলেন, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা একটি মামলাও দেখাতে পারবে না যে, হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছে। কার্যত সরকার মাইনাস ওয়ান থিওরি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চান। আদালতের ওপরে দোষ চাপিয়ে। এটা একটা অশুভ লক্ষণ।
জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কোন কর্তৃত্ব বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আইন তা অনুমোদন করে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, তাহলে আপনারা কেন রাষ্ট্রকে পক্ষ করলেন। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, করতে হয় তাই করেছি। তিনি বলেন, সরকারদলীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধেই মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্র আপিল করেনি। কিন্তু এই একটা মামরায় সরকার এবং দুদক বেছে নিয়েছে। সরকার এটা করে আদালতের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। দুদক এবং সরকার যখন এক হয়ে আপিল করেছে, তখন আমাদের মাঝে আতঙ্ক এেেসছে ন্যায় বিচার নিয়ে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে টাকা আসার পর তা যদি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে তো গোটা সরকারের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হতে পারে। জয়নুল আবেদীন বলেন, তাকে জামিন দেয়া হলে আজ তার শারীরিক অবস্থার এতো অবনতি হত না। আদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালত। সুতারাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবে। আমাদেরও দায়িত্ব আছে আপনাদের সহায়তা করার।এক দেশে দুই রকম আইন হয় না। দুই রকম একশনও হয় না। সরকার দলের ক্ষেত্রে একরকম আর বিরোধীদের ক্ষেত্রে আরেক রকম আচরণ করা হচ্ছে। এভাবে পিক এন্ড চুজ করা হচ্ছে। এটাও কাম্য নয়। নাসিম ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মামলার স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে জামিন দিয়েছে। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থার বিষয় বিবেচনা করে জামিন বহাল রাখা হোক।
মওদুদ আহমেদ বলেন, আপনারা সংবাদপত্র পড়েন। দেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা আপনারা দেখতে পান। রাজনীতির কারণে এটা কোর্টে এসেছে। খালেদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন না হলে, মামলাটা এ পর্যায়ে আসতা না। বিরোধী দলতেক বাদ দেয়ার জন্যই এই মামলা। আমাদের একজন আইনজীবী এম ইউ আহমেদ। তাকে আপনারা জামিন দেননি। এরপর সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। আজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, উনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। সরকার তো বলবেই সে সুস্থ।
আইনজীবীদের মধ্যে হট্রগোল:
দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান জামিন বিরোধী করে যুক্ততর্ক উপস্থপনা করেন।এসময় আদালত বলেন, আপনার বন্ধু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন আর আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেছে-এমন নজির দেখান। তখন দুদকের আইনজীবী কোন নজির দেখাতে না পারায় পেছন থেকে আইনজীবীদের মধ্য থেকে গুঞ্জন শুরু হয়। হৈ চৈ পরিস্থিতির সৃস্টি হওয়ায় এভাবে চললে আদালত চালাতে পারবো না। পরে পরিবেশ শান্ত হলে ফের শুনানি শুরু হয়। এ সময় আদালত বলেন, মশিউর রহমানের মামলায় যদি কোন যুক্তি না দেখানো হয়, তাহলে আপনারা কেনো রিভিউ করেননি। সঠিক কোন জবাব দিতে পারেনি দুদক আইনজীবী।
এ পযার্য়ে অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রের টাকা চুরি করা হয়েছে। তখন সমস্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গিয়েছে-এটা বলতে পারবো না। এটা আমাকে বলতে হবে। এ সময় আরও তীব্র হৈ চৈ শুরু হয়। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি উত্তেজিত হবেন না। জবাব দিন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মেরিটে যাবো না। হৈ চৈ চলতে থাকায় অ্যাটর্নি বলেন, আমার পক্ষে এ অবস্থায় শুনানি করা সম্বভ নয়। কাল শুনানি হোক। এরপর আরও চিৎকার বেড়ে গেলে আদালতে উপস্থিত রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারাও পাল্টা চিৎকার করতে থআকেন। এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল তার আইন কর্মকর্তাদের উত্তেজিত হওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদেরকে উঠতে ইশারা দিয়েছেন। আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাহবুব উদ্দিন খোকনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কয়েকজন কর্মকর্তা। এ সময় তুমুল হৈ চৈ শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি এজলাস থেকে নামতে উদ্যত হন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দলবল নিয়ে এসেছে আদালতকে চাপ সৃষ্টির জন্য। প্রধান বিচারপতি বলেন, আইনজীবীরা এমন করলে কোর্ট চালানো সম্ভব নয়। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে খালেদার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই রোগ নিয়েই তিনি রাজনীতি করে আসছেন। প্রধান মন্ত্রীত্ব করেছেন। এটা তার সহনীয়। এ যুক্তিতে জামিন হতে পারে না। আপিল বিচারাধীন থাকাবস্থায় এভাবে জামিন হতে থাকলে দেখা যাবে জামিন নিয়ে চলে যাবে। সাজা ভোগ করতে হবে না। এভাবেই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। এরপর আদালত বলেন আগামী মঙ্গলবার রায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।