Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুমল হট্টগোলের মধ্যে শুনানি শেষ, জামিন আদেশ ১৫ মে

আদালতের বিভিন্ন প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পারেনি রাষ্ট্রপক্ষ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ৯:৫৪ এএম | আপডেট : ৬:৩২ পিএম, ৯ মে, ২০১৮

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আপিল শুনানিকালে আদালতে কয়েকদফা হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। বিচারপতি প্রধান সৈয়দ মাহমুদ হোসেন নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতি বেঞ্চে খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে দুদক রাষ্ট্রপক্ষ ও আইনজীবীদের মধ্যে হট্টগোল হয় সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এজলাস ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হন। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে শুনানি শেষে আগামী ১৫ মে আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন আপিল বিভাগ। এদিকে শুনানিতে আদালতের বিভিন্ন প্রশ্নে সঠিক জবাব দিতে পারেনি দুদকের আইনজীবী।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চে এই শুনানি চলে। দ্বিতীয় দিনের শুরুতে সকাল ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন। আদালতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও মওদুদ আহমদ খালেদা জিয়ার জামিনের সপক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। তাঁদের যুক্তিতর্ক শেষ হলে দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান ও অ্যাটর্নি জেনারেল জামিনের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন।
শুনানির শুরুতে মশিউর রহমান ও স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের জামিনের উদাহরণ টেনে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতকে বলেন, শুধু এ দুটি মামলায় নয় শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ মামলায় আমাদের বিচার ব্যবস্থায় হাইকোর্ট জামিন দিলে আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেনি। হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ২৫ বছর পলাতক ছিল। পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। পরের দিন হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। সেই নজিরও তো রয়েছে। এ মামলাটি এখন চেম্বারে এসেছে।
জবাবে মোহাম্মদ আলী বলেন, ব্যতিক্রম সিদ্ধান্ত আইন হতে পারে না। এই মামলাকে অন্য সকল মামলার থেকে আলাদা করে এনে দ্রæত বিচার করার চেষ্টা করছে রাষ্ট্র। আমরা মানি বা না মানি গোটা রাষ্ট্রকে এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। এটা এক ধরণের স্বেচ্ছাচারিতা। বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের শামিল। আমি সারা দেশ ঘুরেছি। সারাদেশেই আইনজীবীদের মধ্যে এমন একটা ধারণা কোন মামলায় জামিন হবে কী হবে না, সেটা নির্ভর করছে বিশেষ ক্লিয়ারেন্স আছে কীনা, সেটার ওপর।
প্রধান বিচারপতি বলেন, এটা বলে লাভ নেই। অ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্যের আপত্তি জানানিয়ে বলেন, এটা সত্য নয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি তো বলছি। আপনি কেন কথা বলছেন?
এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, খালেদা জিয়াকে নির্জন পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। তখন সেটা কারাগার ছিল, কিন্তু সেটাকে এখনও কারাগার ঘোষণা করা হয়নি। আমার বলার পর হয়তো সরকার একটা ফাইল তৈরি করে ফেলবে। এভাবেই এরকম স্বেচ্ছাচারিতা করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার সাজা বৃদ্ধিতে রিভিশন আবেদন করা হয়েছে। অদৃশ্য দ্রæততার সঙ্গে এ মামলা নিষ্পত্তি করতে চাচ্ছে। ভিন্ন উদ্দেশ্যে এই মামলাটা আনা হচ্ছে। এটা অপ্রত্যাশিত। এ অবস্থায় হাইকোর্ট তার বয়স, স্বাস্থ্যগত অবস্থা, কম সাজা সব বিবেচনায় যথাযথভাবেই জামিন দিয়েছে। ন্যায় বিচারের স্বার্থে এবং স্বাভাবিক ধারা অব্যাহত রাখতে এই জামিন বহাল রাখা হোক। হাইকোর্টের আদেশে হস্তক্ষেপ করা ঠিক হবে না।এ েেজ মোহাম্মদ আলি বলেন, নি¤œ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে এটা অর্থনৈতিক অপরাধ। এজণ্য শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু অর্থনৈতিক অপরাধ হলে তার বিচারের জন্য দেশে অন্য আইন রয়েছে। দন্ডবিধির ৪০৯ ধারায় এই অপরাধের বিচারের সুযোগ নেই। এই মামলায় অর্থনৈতিক অপরাধ উল্লেখ করার মধ্য দিয়ে নি¤œ আদালত প্রমাণ করেছে উদ্দেশ্য প্রণে াদিতভাবে সাজা দিয়েছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের ভারতীয় সাবেক দুই মূখ্যমন্ত্রী জয় ললিতা ও লালু প্রসাদ যাদবের জামিনের ক্ষেত্রে দেওয়া উদাহরণ টেনে বলেন, জয় ললিতার চার বছর সাজা হয়েছিল। সাত দিনের মধ্যে সুপ্রিমকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে। আর লালু প্রসাদ যাদবের ৫ বছররের সাজায় দুই ,আসের মাথায় ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট জামিন দিয়েছে। সুতারা খালেদা ঝিযার জামিন বহাল রাখা হোক। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, তারা একটি মামলাও দেখাতে পারবে না যে, হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ হস্তক্ষেপ করেছে। কার্য ত সরকার মাইনাস ওয়ান থিওরি নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে খালেদা জিয়াকে মাইনাস করতে চান। আদালতের ওপরে দোষ চাপিয়ে। এটা একটা অশুভ লক্ষণ। তিনি বলেন, সারা দেশে ৩৩ লাখের ওপরে মামরা। এর মধ্যে হাইকোর্টে চার লাখ ৭৬ হাজারের বেশি মামলা এছাড়াও আপিল বিভাগে আছে ১৬ হাজারের ওপরে। লাখ লাখ মামলা তাকা সত্তে¡ও খালেদা জিয়ার মামলা দ্রæততার সঙ্গে শুনানি করতে চান কেন অ্যাটর্নি জেনারেল?
জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল কোন কর্তৃত্ব বলে বক্তব্য দিয়েছেন। আইন তা অনুমোদন করে না। প্রধান বিচারপতি বলেন, তাহলে আপনারা কেন রাষ্ট্রকে পক্ষ করলেন। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, করতে হয় তাই করেছি। এ সময় আদালত বলেন, খালেদা জিয়া তোর রাষ্ট্রের তত্ত¡বধানে রয়েছে। জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশেষ আইনের মামলা বিশেষ ভাবেই দেখতে হবে। সরকার ভিন্ন একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এই আপিল করেছে। আদালত বলেন, ভুল হোক আর শুদ্ধ হোক আমরা সরকারকে আপিল করার অনুমতি দিয়েছি। জবাবে জয়নুল আবেদীন বলেন, তা হলে ভুল হোক আর মুদ্ধ হোক হাইকোর্ট তাকে জামিন দিয়েছে, তা বহাল রাখা হোক। আপনারা তাতে হস্তক্ষেপ করবেন না। তিনি এ সময় বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলা হাইকোর্ট বাতিল করেছে তার বিরুদ্ধে দুদক এবং রাষ্ট্র আসেনি। শুধু একটা নয়, শেখ হাসিনাসহ সরকারদলীয় অনেক নেতার বিরুদ্ধেই মামলায় হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্র আপিল করেনি। কিন্তু এই একটা মামরায় সরকার এবং দুদক বেছে নিয়েছে। সরকার এটা করে আদালতের ঘাড়ে বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। দুদক এবং সরকার যখন এক হয়ে আপিল করেছে, তখন আমাদের মাঝে আতঙ্ক এেেসছে ন্যায় বিচার নিয়ে। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে টাকা আসার পর তা যদি ব্যবহার করা না হয়, তাহলে তো গোটা সরকারের বিরুদ্ধে অনেক মামলা হতে পারে।
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে জয়নুল আবেদীন বলেন, তাকে জামিন দেয়া হলে আজ তার শারীরিক অবস্থার এতো অবনতি হত না। আদালতের জন্য মানুষ না, মানুষের জন্য আদালত। সুতারাং, সব কিছুই আদালতকে দেখতে হবে। বইপত্র ছাড়াও আপনাদের আরেকটি চোখ আছে, বিবেক আছে, মন আছে-এসব কিছু দিয়ে আপানোদের বিচার করতে হয়। এই আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। আমাদেরও দায়িত্ব আছে আপনাদের সহায়তা করার।
এ অবস্থায় সরকারের স্বেচ্ছাচারি কর্মকান্ডকে সমর্থন করা ঠিক হবে না। তখন আদালত বলেন, সরকারে গেলে আপনারাও তাই করবেন।
তিনি আবারও খালেদার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বলেন, সরতকার নিজেই স্বীকার করেছে খালেদা জিয়া অসুস্থ। এ কারণে তাকে পাঁচবার নি¤œ আদালতে হাজির করেনি। কারাগার থেকে প্রতিবেদন দিয়ে বলা হয়েছে, তাকে আদালতে হাজির করার উপযুক্ত নয়। এ কারণে আপনাদের সামনে সুযোগ এসেছে, এরকম একটি অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে করা আপিলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেওয়ার।
এক দেশে দুই রকম আইন হয় না। দুই রকম একশনও হয় না। সরকার দলের ক্ষেত্রে একরকম আর বিরোধীদের ক্ষেত্রে আরেক রকম আচরণ করা হচ্ছে। এভাবে পিক এন্ড চুজ করা হচ্ছে। এটাও কাম্য নয়। শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, হাইকোর্টে পেপারবুকতো তৈরি হয়েছে। তখন জয়নুল আবেদীন বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের কথামতো পেপারবুক রেডি হয়েছে। এখানে অনেক বিষয় জড়িত। তাহলে জামিন বহাল থাক। আপিলের শুনানি করবো। জামিন আটকে রেখে, এভাবে ভোগান্তি করা হবে তা ঠিক নয়। নাসিম ও মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মামলার উদাহরণ টেনে বলেন, তাদেরকে স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনা করে জামিন দিয়েছে। ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিলও করেনি দুদক ও রাষ্ট্র। এক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার বয়স ও অসুস্থার বিষয় বিবেচনা করে জামিন বহাল রাখা হোক।
মওদুদ আহমেদ বলেন, নি¤œ আদালতের দেওয়া রায়ে কে মূল অভিযুক্ত আর কে সহযোগি অপরাধী তা উল্লেখ করা হয়নি। আপনারা সংবাদপত্র পড়েন। দেশে কী হচ্ছে না হচ্ছে, সেটা আপনারা দেখতে পান। রাজনীতির কারণে এটা কোর্টে এসেছে। খালৈদা জিয়া বিএনপির চেয়ারপার্সন না হলে, মামলাটা এ পর্যায়ে আস
তা না। বিরোধী দলতেক বাদ দেওয়ার জন্যই এই মামলা। এই টাকা সরকারি টাকা না। এ টাকা বেসরকারি ট্রাস্টের টাকা। এছাড়াও এর সঙ্গে খালেদা জিয়া নিজে যুক্ত নন। রায়েও বলা হয়নি, কে মূল আসামি আর কে সহযোগি। সাজা দিতে হবে, সেজন্যই সাজা দিয়েছে। দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে,অথচ এটা তো ২ কোটি টাকার ব্যাপার। অথচ সরকারের কাছে এটা বড় হয়ে যাচ্ছে। মওদুদ আরও বলেন, দেশে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে আমরা ভিকটিম। আমাদের দেশে আমরা তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক। আমরা অপরাধ না করলেও মামলা হয়, আর তারা অপরাধ করলেও মামলা হয় না। দু:খের সঙ্গে বলছি, আমাদের প্রথম শ্রেনীয়র নাগরিক হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা কোন ব্যতিক্রম দেখতে চায় না। মহিউদ্দিন খান আলমগীরের মামরায় আপনারাই রায় দিয়েছে, এখানেও সেরকমই প্রত্যাশা করি। আমাদের একজন আইনজীবী এম ইউ আহমেদ। তাকে আপনারা জামিন দেননি। এরপর সে হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে। আজ যদি খালেদা জিয়াকে জামিন না দেন, উনার যদি কিছু হয়, তার দায় সরকার আপনাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। সরকার তো বলবেই সে সুস্থ।
দুদকের আইনজীবী খালেদা জিয়ার আইনজীবীদের বক্তব্যের জবাবে বলেন, মশিউর রহমানের মামলায় হাইকোর্ট আলাদাভাবে কোন যুক্তি না দেখানোয় আপিল বিভাগও কোন যুক্তি দেখাননি। তখন আদালত বলেন, আমরাতো জামিন বহাল রেখেছি। জবাবে খুরশীদ বলেন, আপনারা সেখানে তো কোন কারণ দেখাননি। আমরা দুদদক কোন পক্ষপাতিত্ব করছে না। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদির ক্ষেত্রেও আপিল করেছে। নাজমুল হুদার মামলায় ৯০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় তাকে জামিন দিয়েছে। খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা যেসব মামলার উদাহরণ দিয়েছে, প্রত্যেকটির ক্ষেত্রেই দেড় থেকে দু’বছরকারাভোগ করেছেন। একারণেই আদালত জামিন দিয়েছেন। তখন আদালত বলেন, আপনার বন্ধু চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন যে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন আর আপিল বিভাগ তাতে হস্তক্ষেপ করেছে-এমন নজির দেখান। তখন দুদকের আইনজীবী কোন নজির দেখাতে না পারায় পেছন থেকে আইনজীবীদের মধ্য থেকে গুঞ্জন শুরু হয়। হৈ চৈ পরিস্থিতির সৃস্টি হওয়ায় এভাবে চললে আদালত চালাতে পারবো না। এ সময় আদালত বলেন, মশিউর রহমানের মামলায় যদি কোন যুক্তি না দেখানো হয়, তাহলে আপনারা কেনো রিভিউ করেননি। জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, যুক্তি নাই বলে রিভিউ করিনি। তখন আদালত বলেন, এমনও অনেক মামলা আছে, যেখানে কোন যুক্তি নেই, তারপরও রিভিউ নিয়ে আসেন। কিন্তু এখানে কেন আনেনি? তখনখুরশীদ আলম খান বলেন, মশিউর রহমানের মামলা আর কালেদা জিয়ার মামলা এক নয়। দুটির বিষবস্তু ভিন্ন। আদালত বলেন, আপনি বলতে চাচ্ছেন কী? এ রায় কোন রায় নয়? জবাবে খুরশীদ আলম বলেন, তা বলছি, না অবশ্যই এটা রায়। কিন্তু নজির না হলে আমরা সেটা রেফার করি না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, তাই যুদি হয়, এ মামলায় নি¤œ আদালতের বিরুদ্ধে কেন রিভিশন আবেদন করেছেন। খুরশীদ বলেন, সাজা বাড়াতে। আদালত বলেন, আপনি বার বার মুখে বলছেন, এখন পর্যন্ত কোন নজির দেখাতে পারেননি। আপনারা একটা বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন। সেখানে মূল আপিলের নিষ্পত্তি হোক। তা না হলে মামলার নথি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরাতো প্রশ্ন তুলিনি। জবাব দেওয়ার দরকার নেই। আপনি যুক্তি খন্ডন করেন। এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মশিউর রহমানের মামলা এবং খালেদার মামলার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রের টাকা চুরি করা হয়েছে। তখন সমস্বরে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদ জানান। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রের টাকা নিয়ে গিয়েছে-এটা বলতে পারবো না। এটা আমাকে বলতে হজবে। এ সময় আরও তীব্র চেচামেচী শুরু হয়। হৈ চৈ করে আমাকে কথা বলতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, আপনি উত্তেজিত হবেন না। জবাব দিন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মেরিটে যাবো না। হৈ চৈ চলতে থাকায় অ্যাটর্নি বলেন, আমার পক্ষে এ অবস্থায় শুনানি করা সম্বভ নয়। কাল শুনানি হোক। এরপর আরও চিৎকার বেড়ে গেলে আদালতে উপস্থিত রা
ষ্ট্রের আইন কর্মকর্তারাও পাল্টা চিৎকার করতে থআকেন। এ পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির দৃাষ্ট আকর্ষণ করে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল তার আইন কর্মকর্তাদের উত্তেজিত হওয়ার জন্য ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাদেরকে উঠতে ইশারা দিয়েছেন। খোকনের এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান কয়েকজন কর্মকর্তা। এ সময় তুমুল হৈ চৈ শুরু হয়। প্রধান বিচারপতি এজলাস থেকে নামতে উদ্যত হন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, দলবল নিয়ে এসেছে আদালতকে চাপ সৃষ্টির জন্য। প্রধান বিচারপতি বলেন, উভয়পক্ষের আইনজীবীরা এমন করলে কোর্ট চালানো সম্ভব নয়। পরে সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
প্রধান বিচারপতি অনুমতি দ্রেয়ায় এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মামলার কিছু তথ্য তুলে ধরেন। শেষ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তিনটি মামলায় জামিন হয়েছে, সেখানে সুনির্দিষ্ট কারণ দেখানো হয়েছে। কিন্তু খালেদা জিয়ারটাই কারণ দেখানো হয়নি। বাস্তবতা হলো এটা প্রধানমন্ত্রীর এতিম ফান্ড। এটা বেসরকারি বা ব্যক্তিগত ট্রাস্ট নয়। তাই মামলা তরে দুদক যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। খালেদার অসুস্থতার কথা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এই রোগ নিয়েই তিনি রাজনীতি করে আসছেন। প্রধান মন্ত্রীত্ব করেছেন। এটা তার সহনীয়। এ যুক্তিতে জামিন হতে পারে না। আপিল বিচারাধীন থাকাবসব্থায় এভাবে জামিন হতে থাকলে দেখা যাবে জামিন নিয়ে চলে যাবে। সাজা ভোগ করতে হবে না। এভাবেই ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা পরিত্যক্ত হয়ে যাবে। এরপর আদালত বলেন আগামী মঙ্গলবার রায়।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৯ মে, ২০১৮, ১০:০৬ পিএম says : 0
    বিচারের নামে প্রহসন করিবেন না। উনি বাংলাদেশের অত্যন্ত সম্মানিতা ব্যাক্তিত্ব। তাঁহাকে সম্মানের সাথে মুক্তি দিয়ে দেশের জনগনকে সম্মানিত করেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ