Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

খালেদা জিয়ার বাইরে হাঁটার দরকার কি? উনি তো কারাগারে রেস্টে আছেন

জামিন শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৯ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নে আপিলের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মাই লর্ড, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাই তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তাহলে উনার বাইরে হাঁটার দরকার কী? উনার রেস্ট প্রয়োজন। উনি কারাগারে তো রেস্টেই আছেন! বরং আমরা আপিল শুনানি শেষ করি। অ্যাটর্নি জেনারেলের এমন বক্তব্যে পুরো আদালত কক্ষে হাসির রোল পড়ে যায়। এক পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলীর মধ্যে উতপ্ত বাক্য বিনিময় ঘটে। এছাড়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন অ্যাটর্নির কিছু বক্তব্যের আপত্তি জানালে উভয় পক্ষের আইনজীবীরা উচ্চস্বরে হৈচৈ শুরু করলে আদালতের পরিবেশ কিছুসময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে প্রধান বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবীদের হস্থক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়। এরপর আসামী পক্ষের শুনানি শুরু হয়।
গতকাল মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বেধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলে। দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তির্তক শেষ হলে আসামী পক্ষের শুনানি শুরু করে। এরপর বুধবার পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। আজ ফের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে খালেদা জিযার জামিন শুনানি উপলক্ষে সকাল থেকে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। আদালত প্রাঙ্গণের সবকটি প্রবেশপথ আইনজীবী বিচারপ্রার্থী ও সাংবাদিকদের তল্লাশি করে ঢোকতে দেয়া হয়। খালেদা জিযার মামলা শুনানি শুরু হওয়ার আগেই আদালতের কক্ষ আসামী পক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ ও সাধারণ আইনজীবীরা ও সাংবাদিক, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, এজে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, গিয়াস উদ্দিন আহমদে, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামালহ বিএনপি সমর্থিত শতাাধিত আইনজীবীরা। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ সহকারী ও ডেপুটি অ্যাটর্নিরা। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান। এছাড়াও আওয়ামী লীগ ও সাধারণ আইনজীবীরা। আদালতের চারপাশে বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতিও লক্ষ করা যায়।
সকাল ৯টায় আদালতের নিয়মিত কার্যক্রম শুরু হয়। কার্যতালিকায় ৯ নম্বরে খালেদা জিয়ার মামলাটি ছিল। ৯টা ৩৫ মিনিটে দুদকের আইনজীবী শুনানি শুরু করেন। প্রথমে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান যুক্তিতর্ক শুরু করে। ৩০মিনিটি বিরতী দিয়ে বেলা ১২টার দিকে দুদক আইনজীবীর বক্তব্য শেষ হয়। এরপর প্রায় ১ ঘন্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপনা করেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা। এরপর আসামী পক্ষের আইনজীবী শুরু হলে ১টা ১৫ মিনিটির দিকে আদালত বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতুবি করে আদেশ দেন।
জামিন শুনানি যা হল:
শুরুতে দুদকের আইনজীবী বলেন, খালেদা জিয়ার ৫ বছরের কারাদÐ হয়েছে। তিনি ৪ মাস ২২দিন কারাগারে রয়েছেন। আপিল বিভাগের ১৯৯১ সালের মামলার নজির রয়েছে যে ২ বছরের সাজায় হাইকোর্টের দেয়া জামিন বাতিল করা হয়েছে। হাইকোর্ট কম সাজা বিবেচনায় জামিন দিয়েছিল। এক্ষেত্রে (খালেদা জিয়া) ৫ বছরের সাজা। এটা কি কম সাজা? ২ বছরের সাজায় আপিল বিভাগ জামিন বাতিল করলে খালেদা জিয়ার জামিনও বাতিলযোগ্য। তিনি বলেন, সাজা কম বলতে কতবছর বা কত মাস ধরা হবে তা এখনও নির্ধারণ হয়নি। তিনি বলেন, যদি দেখা যায় মূল আপিলের শুনানি শুরু করতে অনেক বছর সময় লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে হাইকোর্ট জামিন দিতে পারে। তাও এত অল্প সময়ে নয়। এমন যদি হতো খালেদা জিয়া ২ বা আড়াই বছর কারাগারে রয়েছে সেক্ষেত্রে জামিন বিবেচনা করলে আপত্তি থাকতো না। দুদকের আইনজীবী বলেন, বয়স, সামাজিক বিবেচনায় নি¤œ আদালত খালেদা জিয়াকে সাজা কম দিয়েছে। এটা ঠিক হয়নি। একই বিবেচনায় হাইকোর্টের জামিন মঞ্জুর করাও ঠিক হয়নি। এরপর আদালত বিরতীতে যান।
১২টার দিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার শুনানিতে বলেন, এই মামলার বিচারে বিলম্ব ঘটাতে সব ধরণের চেষ্টা করেছেন খালেদা জিয়া। নি¤œ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে অসংখ্যবার হাইকোর্টে এসেছে। নি¤œ আদালতে এই মামলার বিচার শেষ হতে ৯ বছর লেগেছে। এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল বিলম্বের সকল চেষ্টার একটি সংক্ষিপ্ত বর্ননা তুলে ধরেন। এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী দাঁড়িয়ে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কি বলছেন? আমরাতো বুঝতে পারছিনা। এটাতো জামিন আবেদনের শুনানি। এসময় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা সমস্বরে জয়নুল আবেদীনের বক্তব্য সমর্থন করেন। এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী এজে মোহাম্মদ আলী সকলকে শান্ত হওয়ার আহŸান জানালে সকলেই চুপ করেন।
জয়নুল আবেদীনের বক্তব্যের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি রেকর্ড থেকে বলছি। খালেদা জিয়ার অসুখের বর্ননা তুলে ধরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তার আইনজীবীরা বলছেন যে তিনি অসুস্থ। তার হাটুতে অপারেশন হয়েছে। এটাই যদি সত্য হয়ে থাকে তাহলে খালেদা জিয়ার হাটার দরকার কি? তার বিশ্রামে থাকা প্রয়োজন। তিনি কারাগারে বিশ্রামে রয়েছেন। অ্যাটর্নি জেনারেলের এই বক্তব্যে পুরো আদালত কক্ষে হাসির রোল পড়ে যায়।
এর মধ্যেই অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, খালেদা জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নেওয়ার পর হুইল চেয়ার আনা হয়েছিল। কিন্তু তা ব্যবহার করতে তিনি অস্বীকার করেন। এমনকি কারাগারে তার ব্যক্তিগত একজন চিকিৎসক সাক্ষাত করেছিলেন। তিনি বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিয়েছেন। একইসঙ্গে শুধুমাত্র নাপা ট্যাবলেট সেবন করতে পরামর্শ দিয়েছেন। এ থেকে বোঝা যায় তিনি অসুস্থ নন। তারপরও যদি তাকে ইউনাইটেড বা অ্যাপোলো হাসপাতালে নিতে হয় তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে সেটা নিতে হবে সরকারের তত্বাবধানে। এজন্য তার জামিন প্রয়োজন নেই। তিনি বলেন, তার সেবার জন্য কারাবিধি লংঘন করে একজন সেবিকা দেওয়া হয়েছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, হাইকোর্ট ৪ মাসের মধ্যে খালেদা জিয়ার আপিলের পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই পেপারবুক তৈরি হয়েছে। এখন জামিনের পরিবর্তে তার আপিলের শুনানির নির্দেশ দেওয়া হোক। আগে আপিল নিষ্পত্তি হোক। সেখানে তিনি খালাস পেলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার অপরাধ সাধারণ একজন মানুষের অপরাধের মতো নয়। সারাবিশ্বে রাষ্ট্র প্রধানের অপরাধকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। এসময় তিনি ভারতের লালু প্রসাদ জাদব, জয়ললিতা, দক্ষিন কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট উদাহরণ দিয়ে বলেন, এদের কাউকে ছাড় দেওয়া হয়নি। ভারতে দুর্নীতিবাজদের জামিন দেয়নি। শুনানির এক পর্যায়ে তিনি বলেন, এই মামলার মতো স্বচ্ছ বিচার সারা দুনিয়ার মধ্যে হয়নি।
এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন আবারো প্রতিবাদ করে বলেন, জামিনের আবেদনে এসব কি বলছেন? এসময় আইনজীবীরা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন। এ সময় আদালতে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। পেছন থেকে আইনজীবীরা শেইম, শেইম’ বলা শুরু করেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আগে তাকে (অ্যাটর্নি জেনারেল) বলতে দিন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল নি¤œ আদালতের বিচার কার্যক্রম, মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে খালেদা জিয়ার আরেক আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন দাঁড়িয়ে বলেন, এটা জামিন আবেদনের শুনানি। এখানে মামলার বিষয়বস্তু আসতে পারে না। সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা সমস্বরে চিৎকার করে ওঠেন।
বর্তমান অ্যাটর্নি ও সাবেক অ্যাটর্নির মধ্যে উতপ্ত বাক্য বিনিময়:
বেলা একটায় খালেদা জিয়ার পক্ষে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এজে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তার এই মামলায় শুনানির এখতিয়ার নেই। আইন অনুযায়ী দুদকের মামলা শুনানির জন্য নিজস্ব আইনজীবী টিম থাকবে। এই টিম নিয়োগ না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ভিত্তিতে আইনজীবী নিয়োগ দিতে হবে। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল আইনো তোয়াক্কা না করে রাজনৈতিক উদ্দেশে শুনানি করছেন। অ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, অবশ্যই আছে। এসময় হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। তারা দুইজন পরস্পরের দিকে আঙ্গুল উচিয়ে কথা বলেন।
এসময় প্রধান বিচারপতি খালেদা জিয়ার আইনজীবীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আক্রমন করে কথা বলবেন না। আদালতকে বিভ্রান্ত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য দিয়েছেন। খালেদা জিয়া যাতে নির্বাচন করতে না পারেন সেজন্য আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, দুদক জামিন বাতিলের জন্য ১৯৯৪ সালের একটি মামলা উদাহরণ হিসেবে দেখিয়েছে। কিন্তু আমি এই বছরের একটি উদাহরণ দিচ্ছি যেখানে দুদকের মামলায় ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে হাইকোর্ট জামিন দিয়েছেন। আর আপনারা ফুলকোর্ট সে জামিন বহাল রেখেছেন। এসময় আদালত ওই মামলাটি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঝিনাইদহের সাবেক এমপি মশিউর রহমান। তিনি আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের আদেশের কপি দাখিল করেন। তিনি ভারতের আদালতের আদেশের বিষয়ে অ্যঅটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের জবাবে বলেন, ভারতের হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছে, সেই দেশের সুপ্রিম কোর্ট সেই আদেশ বহাল রেখেছে। তিনি বলেন, মামলায় কিছু থাকুক আর নাই থাকুক যেনতেনভাবে খালেদা জিয়াকে সাজা দিতে হবে এটাই মূল উদ্দেশ্য। খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার জন্যই এটা করা হচ্ছে। আর অ্যাটর্নি জেনারেল বিচার বিলম্বের বিষয়ে যে বক্ব্য দিয়েছেন তা সত্য নয়। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা দেখছি নি¤œ আদালতে বিচার মেষ হতে ৮/৯ বছর লেগেছে। জবাবে খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, এরমধ্যে ৭ বছরই হাইকোর্টে মামলা স্থগিত ছিল। এ পর্যায়ে আদালতে শুনানি মূলতবি করা হয়।



 

Show all comments
  • Mohammed Kowaj Ali khan ৯ মে, ২০১৮, ১:০১ এএম says : 0
    যা্হাই বলোনা কেন? আপনার লাগিয়া। সময় আসিতেছে। ইনশাআল্লাহ। ************
    Total Reply(0) Reply
  • Faruk Hossain ৯ মে, ২০১৮, ৪:১১ পিএম says : 0
    Ata kono manusher basha hote pariena
    Total Reply(0) Reply
  • Sofiuddin Sabuj ৯ মে, ২০১৮, ৪:২২ পিএম says : 0
    ডঃ কামাল উনাকে কি বলে যেনো তিরোস্কার করেছিল
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ