পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : বিশ্বের সব নামকরা হাসপাতালের সাথে দেশের হাসপাতালগুলোকে যুক্ত করে চিকিৎসাব্যবস্থা ‘নতুন ধারায়’ নিয়ে আসার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর সাথে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবক্যামেরা থাকবে। যখন প্রয়োজন হবে, তারা মতামত নেবে, দেখবে। সবকিছু ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে। আমরা চিকিৎসা আরও উন্নত করতে চাই। তিনি আরো বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন সব স্থাপনা ভেঙে অত্যাধুনিক ও বিশ্বমানের মেডিকেল কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে। পুরনো ভবনগুলো ভেঙে সম্পূর্ণ নতুনভাবে যুগোপযোগী প্রযুক্তিসম্পন্ন হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ নির্মাণ করা হবে।
গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন সচিবালয় রোডে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী তার নামে প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে এটাই দেশের প্রথম ইনস্টিটিউট। এটি দেশের মানুষের চিকিৎসাসেবায় বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সময় অগ্নিদগ্ধ মানুষের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের ডাক্তার ও নার্সদের দিন-রাত কর্মরত থাকার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তারা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। তাদের এই অমানুষিক পরিশ্রম কত মানুষের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। আর অনেককে তো বাঁচানো যায়নি। আমি তাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।
দেশের প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বার্ন ইউনিট এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট চালুর কথাও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে আরও দুটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করব। সেটা শুধু পোস্ট গ্র্যাজুয়েটদের জন্য। সেখানে নার্সিং ইনস্টিটিউটও থাকবে। সেখানে শুধু উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণা হবে। কারণ, নিত্যনতুন রোগ দেখা দিচ্ছে। চিকিৎসাপদ্ধতি পরিবর্তন হচ্ছে। এর চিকিৎসা করতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা বড়লোক, তারা বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাবেন। তাতে আমার আপত্তি নেই। কিন্তু দেশে সমমানের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হবে না, এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমাদের ডাক্তাররা যথেষ্ট মেধাবী। তাদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে, উন্নত ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন চিকিৎসা সেবাটা ঠিকমতো পান, সেই ব্যবস্থাও আমাদের করতে হবে। সেই লক্ষ্য নিয়েও কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অগ্নিকা- যেকোন সময় ঘটতে পারে। দুর্ঘটনা কবলিত মানুষ যাতে চিকিৎসা সেবা ভালভাবে পেতে পারে তার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন লোকবল বৃদ্ধি করা। উপযুক্ত জনবল তৈরীর জন্য আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাই, এ প্রকল্পটি খুব দ্রুত প্রণয়ন করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আমরা জায়গা দিয়েছি, অর্থ দিয়েছি এবং সেনাবাহিনীর হাতে আমরা প্রকল্পটা দ্রুত সম্পন্ন করার দায়িত্ব দিয়েছি। এখানে সেনাপ্রধান উপস্থিত আছেন, তিনি আমাকে কথা দিয়েছেন অতি দ্রুত তিনি আমাকে এটা সম্পন্ন করে দেবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি একটা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট হচ্ছে। ফ্লাইওভার বা ফুটওভার ব্রীজ করে এর সাথে বার্ণ ইউনিটের একটা সংযোগ করে দিতে হবে যাতে রোগীরা সহজে এখানে আসা যাওয়া করতে পারে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুরাতন ভবনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এই যে পুরানা বিল্ডিং। আপনারা হেরিটেজ হেরিটেজ করেন। এইগুলো না জানি কবে মানুষের মাথায় ভেঙে পড়ে! হ্যাঁ, যেটুকু হেরিটেজ দরকার, সেটুকু রাখা যেতে পারে। এখন টেকনোলজি অনেক উন্নত। সেটা সামনে রাখা যেতে পারে। এর বাইরে সবগুলো ভেঙে অত্যন্ত আধুনিক, উন্নত এবং যুগোপযোগী হাসপাতাল করতে হবে। আমি জানি, একটা কিছু করতে গেলেই একদল লাফ দিয়ে বলবে হেরিটেজ। জীবন বড়, না হেরিটেজ বড়? জীবনটা আগে বড়। চিকিৎসা বড়, না হেরিটেজ বড়? ভবন ধসে কেউ যদি মারা যায়, তাহলে তো হেরিটেজওয়ালার দোষ হবে না। দোষ হবে সরকারের। এটা হলো বাস্তবতা। এই যে আমি বললাম, দেখবেন- ‘টক শো’ শুরু হয়ে যাবে। পত্রিকায় লেখালেখি হবে। মানুষের জন্য যেটা কল্যাণকর, সেটা আমি করবই। ওই লেখালেখি করে বেশি কিছু করা যাবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, পিছিয়ে নেই। সব থেকে সুখবর আমাদের যে টার্গেট প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগের ওপরে নিয়ে যাব, সেটায় সফল হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, তারপরেও মুদ্রাস্ফীতি কম। অর্থনীতির ভিত্তি এখন মজবুত। মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে, শিশুমৃত্যুর হার কমেছে। সবাই ভাবছে, আমরা বৃদ্ধই হই না। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন অনুষ্ঠানে জানান, দেশে প্রতিবছর গড়ে ছয় লাখ মানুষ বিভিন্নভাবে দগ্ধ হয়। তাদের চিকিৎসার জন্য কমপক্ষে দেড় হাজার ডিগ্রিধারী বিশেষজ্ঞ সার্জন প্রয়োজন হলেও বর্তমানে মাত্র ৫২ জন সেই সেবা দিচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বর্তমানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং মহাখালীর বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস এন্ড সার্জনস (বিসিপিএস) এফসিপিএস ডিগ্রি দিলেও সেই উচ্চশিক্ষার সুযোগ খুবই সীমিত। নতুন এই ইনস্টিটিউটের যাত্রা শুরু হলে প্রতিবছর গড়ে ১০ থেকে ১২ জন চিকিৎসক এ বিষয়ে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক।
বিশ্বমানের এই ইনস্টিটিউটের সঙ্গে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসার জন্য থাকবে ৫০০ শয্যার হাসপাতাল। চাঁনখারপুলে ১ দশমিক ৭৬ একর জমিতে এই ইনস্টিটিউট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৩৪ কোটি টাকা। ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পাওয়া এ প্রকল্পের কাজ ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা যাবে বলে আশা করছে সরকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।