পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জামিন প্রশ্নের আপিল শুনানিতে আসামী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র বাগবিতণ্ডা। এসময় আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিবেশ সৃষ্টি। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করলে আদালতের পরিবেশ কিছু সময় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে প্রধান বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে পরিবেশ শান্ত হয়। এরপর আসামী পক্ষের শুনানি চলে। আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে এ মামলার শুনানি চলে। এরপর আগামীকাল পর্যন্ত মুলতুবি যান আদালত। বুধবার ফের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে দুদকের আইনজীবী শুনানি শুরু করেন। এ সময় আইনজীবী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক, বিএনপির সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতিতে আদালত কক্ষ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে শুনানি উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল। দুদকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। এছাড়া, রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত আছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ মামলায় সকাল থেকেই শুনানি শুরু করেন দুদক আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম খালেদা জিয়াকে দেয়া হাইকোর্টের জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আপিল শুনানি করেন।
শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, মাই লর্ড, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাই তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। তাহলে উনার বাইরে হাঁটার দরকার কী? উনার রেস্ট প্রয়োজন। উনি কারাগারে তো রেস্টেই আছেন! বরং আমরা আপিল শুনানি শেষ করি। মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চে শুনানিকালে মাহবুবে আলম এসব কথা বলেন।
দুপুর পৌনে ১২টার সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি শুরু করেন। শুরুতে তিনি এ মামলার বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার নথিগুলো আদালতে উপস্থাপন করেন। এরপর তিনি বলেন, বিচারিক আদালতের দেয়া সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের পেপারবুক এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। আমরা চাইলে এ মামলার আপিলের শুনানি শুরু করতে পারি। মূল আসামি যেহেতু খালাস পাননি। এ মুহূর্তে তাঁকে জামিন দেয়া যায় না। তাই আপিল নিষ্পত্তি রা হোক। এ সময় তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হায়কে ২৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাকে ১২ সাজা দেয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, তাঁদেরও জামিন দেয়া হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মাই লর্ড, মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার পায়ের হাটুঁতে ব্যথা। তিনি হাঁটতে পারেন না। উনার ঘাড়ে ব্যথা। উনার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এত কষ্ট করে হাঁটার দরকার কী? উনি তো কারাগারে রেস্টেই আছেন।
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলে ওঠেন, উনার এসব কথা বলার দরকার কী? উনি রাষ্ট্রের একজন প্রধান আইন কর্মকর্তা। উনি কি এসব বলতে পারেন?’ এ সময় আদালতে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। পেছন থেকে আইনজীবীরা শেইম, শেইম’ বলা শুরু করেন। এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, উনাকে বলতে দিন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আবার বলা শুরু করেন। এ সময় তিনি এ মামলার সাজার বিভিন্ন নথি পড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে বলেন, কারাগারের ডাক্তার উনাকে চেকআপ করলেন। পরে নাপা ওষুধ সেবনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু উনার ব্যক্তিগত ডাক্তররা দেখা করলেন, আবার বাইরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এটা কীভাবে সম্ভব। তারা তো ডাক্তার, ট্রিটমেন্ট করবে। সংবাদ সম্মেলন করতে পারে না। উনারা পরামর্শ দিলেন ইউনাইটেড হাসাপাতালে ভর্তির জন্য। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ উনাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন। তাই কারাগারে উনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেননা, উনার সঙ্গে একজন সেবিকাও দেয়া হয়েছে।’
এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তিনি এগুলো বলতে পারেন না। এমন একটি মামলায় তিনি দাঁড়াতে পারেন না। তখন আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন ইয়েস! ইয়েস!’
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, তাঁকে সাবমিট রাখতে দিন। এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আবার মামলার নথি পড়া শুরু করেন। এ সময় খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, এখন তো জামিনের শুনানি চলছে। আপিলের না। এ সময় আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করলে বিচারকক্ষের পরিবেশ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, হোক না। শেষ হয়ে গেছে! শেষ করতে দিন। আমরা এভাবে শুনতে পারব না। একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলায় আপিলের নথি প্রস্তুত। আমরা চাইলে আগামীকাল থেকে শুনানি শুরু করতে পারি। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আদালতের সামরে দাঁড়িয়ে পাশের বসা অ্যাটর্নীকে লক্ষ করে বলেন, আপনার এ মামলার শুনানি করার কোন এখতিয়ার নেই। আপনি এখানে শুনানি করতে পারেন না। আপনি কি রাষ্ট্রের নাকি দুদকের আইনজীবী?’ আপনি পারেন না। এরপর অ্যার্টনিও বলতে থাকেন আমি পারি। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং এ জে মোহাম্মদ আলীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু।হয়। উচ্চস্বরে সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মো. আলী বলেন, পারে না...........। তার কথার সমর্থন দিয়ে বিএনপি আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন সরকারের দালাল। এপর্যায়ে আদালত উভয়পক্ষকে শান্ত করেন। এরপর খালেদা জিযার আইনজীবী এ জে মো. আলী শুনানি শুরু করেন। তিনি এ সময় অ্যাটর্নিকে উদ্দেশ করে বলেন, দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাঁদের আইনজীবী রয়েছে।
প্রধান বিচারপতি বলেন, পারসনাল আক্রমণ করে বক্তব্য দিবেন না। এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী জামিনে পক্ষে বিভিন্ন রেফারেন্স তুলে ধরেন।
গত ১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করে।
গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আপিল করে। পরে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ জামিনের স্থগিতাদেশ দেন। পরদিন ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদন্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং আসামিদের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারকে বিশেষ কারাগার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়াকে সেখানে রাখা হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।