Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মূল্যায়ণ পদ্ধতি গণিত ও ইংরেজিতেই খারাপ ফল

ফলাফল বিশ্লেষণ

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় ৯ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। পাসের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। ফলাফলকে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ইতিবাচক হিসেবে বললেও এর কারণ খুঁজছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রী নিজেও ফলাফল মূল্যায়ণ পদ্ধতির পরিবর্তনকে পাসের হার কমে যাওয়ার একটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, আমরা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এনেছি। মূল্যায়নে সমতা আনার জন্য এই পরিবর্তন। খাতা মূল্যায়ণে কড়াকড়ি করা হয়েছে।
আগের মতো আর নম্বর দেয়া হচ্ছে। শিক্ষকরা যাতে ভালো করে খাতা দেখেন, ভালো করে না দেখেই যেন নম্বর না দেন। সেদিক থেকে ভালো করে খাতা দেখার ফলে পাসের হার কমেছে। তবে শিক্ষার মান এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া বোর্ড সংশ্লিষ্টরা খারাপ ফলে জন্য গণিতে ব্যাপক বিপর্যয়, ইংরেজিতে খারাপ করাসহ বেশ কিছু কারণ চিহ্নিত করেছেন। গতকাল (রোববার) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষিত চলতি বছরের এসএসসি, দাখিল ও সমমানের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায় গত বছরের তুলনায় এবার গণিত ও ইংরেজিতে খারাপ ফল করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিভাগভিত্তিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে ভাল ফল করেছে। এই বিভাগে পাসের হার ৯৩ দশমিক ০৭ শতাংশ।
যদিও গতবারের তুলনায় এই বিভাগেও পাসের হার সামান্য কমেছে। ব্যাবসায় শিক্ষা বিভাগেও ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে শিক্ষার্থীরা। এই বিভাগে পাসের হার বেড়ে শূণ্য দশমিক ৭০ শতাংশ। এই বিভাগে পাসের হার ৮০ দশমিক ৯১ শতাংশ। তবে মানবিকে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের চেয়ে খারাপ ফল করেছে। সাধারণ ৮টি বোর্ডের গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে বিপর্যয় ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে। এছাড়া মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের ফলও অন্যান্য বছরের চেয়ে খারাপ হয়েছে। এর প্রভাব সার্বিক ফলাফলে প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। তবে চলতি বছর শুধু কুমিল্লা বোর্ড ব্যতিত সব বোর্ডের গণিতের ফল খারাপ হয়েছে। এজন্য প্রশ্ন কঠিন হওয়ারকে দায়ী করছেন বোর্ডের কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, ইংরেজি প্রথমপত্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তুলনামূলকভাবে কঠিন হয়েছে। তবে দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় ভাল হওয়ায় বেশিরভাগ শিক্ষার্থীরা কাভার করলেও এর একটা প্রভাব এখানে পড়েছে। আর গণিতের প্রশ্ন তুলনামূলক একটু কঠিন হয়েছে। এবার অভিন্ন প্রশ্নে পরীক্ষা হওয়ায় সব বোর্ডের এর প্রভাব পড়েছে। বোর্ড চেয়ারম্যানরা বলছেন, গত দুই বছরের তুলনায় এবার বাম্পার ফলাফল করেছে কুমিল্লা বোর্ড। গত বছর এ বোর্ডের পাসের হার ছিল ৫৯ দশমিক ৩ শতাংশ। এবার ২০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে দাড়িঁয়েছে ৮০ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ বোর্ডের পাসের হার ফলাফলকে একটা ব্যালেন্সে দাঁড় করিয়েছে। গত বছরের মত এবারও কুমিল্লা বোর্ড খারাপ করলে সব বোর্ডের পাসের হার আরও ৫-৬ শতাংশ কমে যেত। বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা জানান, এবার পাসের হার কমার আরেকটি অন্যতম কারণ কারিগরি ও মাদরাসা উভয় শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার কমা। তবে উভয় বোর্ডেই জিপিএ ৫ এর সংখ্যা বেড়েছে। কারিগরি বোর্ডে এ বছর জিপিএ-৫ এর সংখ্যা ৪ হাজার ৪১৩, গতবার ছিল ৪ হাজার ১৭৮। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ২২৬ জন। একইভাবে মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫এর সংখ্যাও বেড়েছে। এ বছর মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৩৭১ জন শিক্ষার্থী, গত বছর পেয়েছিল ২ হাজার ৬১০ জন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ এর সংখ্যা বেড়েছে ৭৬১টি। চলতি বছর এ বোর্ডের ফল খারাপ হওয়ার পিছনে গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞান এ দুই বিষয়ে ফল খারাপ হওয়ার বোর্ডের সার্বিক ফলে ফলাফল খারাপ হয়েছে। মাদরাসা বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ২০১৭ সালে গণিতের পাসের হার ছিল ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ। এবার সেই পাসের হার ৮০ দশমিক ২৯ শতাংশ। এবার গণিতের পাসের হার কমেছে ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ। একই অবস্থা কম্পিউটার বিজ্ঞানে। এ বিষয়ে গত বছর পাসের হার ছিল ৮০ দশমিক ৯২ শতাংশ। এবার ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ কমে সেই পাসের হার দাড়িঁয়েছে ৬৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। এ ব্যাপারে মাদরাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর এ কে এম সাইফুল্লাহ বলেন, গণিতের প্রশ্নটা একট কঠিন হওয়ায় এবার এ বিষয়ে ফল খারাপ হয়েছে। তবে অন্যান্য বিষয়ে ফলাফলের ধারাবাহিকতা রয়েছে।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ ফল করেছে সিলেট। ইংরেজি ও গণিত পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়ায় সিলেট বোর্ড পিছিয়ে গেছে বলে মনে করছেন বোর্ড সংশ্লিষ্টরা। এবার সিলেট বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার ৯০ দশমিক ৪৫ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। গণিত এ বোর্ডের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬১ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ১৯ শতাংশ। অন্যদিকে, গত বছর ৪র্থ অবস্থান থেকে ৮ম অবস্থানে নেমে গেছে দিনাজপুর বোর্ড। পিছিয়ে পড়ার কারণ গণিত ও ইংরেজি বিষয়ের ফলাফল বিপর্যয়। এবার এ বোর্ডে গণিতে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯১ দশমিক ২০ শতাংশ। ইংরেজিতে পাসের হার ৯১ দশমিক ০৫ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৯১ দশমিক ১৮ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ, গণিতে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ, গতবছর ছিল ৯০ দশমিক ৪০ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৯৭ দশমিক ৩০, গত বছর ছিল ৯৯ দশমিক ১ শতাংশ। গণিতে ৯১ দশমিক ৫৮ শতাংশ, গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছর কুমিল্লা বোর্ড অষ্টম অবস্থানে থাকলেও এবার ফলে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। এ বোর্ডে এবার ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার ৯১ দশমিক ৫৭, গত বছর ছিল ৮৬ শতাংশ। গণিতে পাসের হার ৯০ দশমিক ১৬, গত বছর যা ছিল ৮১ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে ৯০ দশমিক ৩৭, গতবছর ছিল ৯৬ দশমিক ০৪, গণিতে ৮৫ দশমিক ৮০, গত বছর ছিল ৮৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ। চট্টগ্রাম বোর্ডে ইংরেজিতে ৯২ দশমিক ২৯, গত বছর ছিল ৯৪ দশমিক ৬১, গণিতে ৮৫ দশমিক ৬৪, গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। বরিশাল বোর্ডে ইংরেজিতে ৯২ দশমিক ১৫, গত বছর ছিল ৯৫ দশমিক ৯৯, গণিতে এ বোর্ডের পাসের হার ৮৫ দশমিক ১১, যা গত বছর ছিল ৮২ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এছাড়াও কারিগরি বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৩, গত বছর ছিল ৯৬ দশমিক ১৬ এবং গণিতে ৮৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৯৩ দশমিক ১৬ শতাংশ।
ইংরেজি ও গণিত বিষয়ে ফল খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, সব জেলায় ভালো মানের শিক্ষক পাওয়া যায় না। তার প্রভাব পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্টে পড়ে। আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি। এ সংক্রান্ত নতুন প্রকল্প তৈরির করারও চিন্তা-ভাবনা চলছে। যে ত্রæটিগুলো ছিল, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা নেওয়ার ফলে একটা মান আমরা অর্জন করেছি। তবে আরও উন্নত করতে হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফল

২৮ জানুয়ারি, ২০২৩
২৬ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ