Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ মাসেই চালু হচ্ছে সাধারণ জরুরি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাসান সোহেল : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে এ মাসেই চালু হতে যাচ্ছে সাধারণ জরুরি বিভাগ। প্রথমাবস্থায় ৩০ শয্যা নিয়ে কার্যক্রম শুরু হবে। ১৫শ’ শয্যার দেশের অন্যতম বৃহৎ এই হাসপাতালে কোনো সাধারণ জরুরি বিভাগ নেই। এই সেবা চালু হলে যে কোনো জরুরি রোগীকে আর ফিরে যেতে হবে না বিনা চিকিৎসায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ডা. কামরুল হাসান খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এই হাসপাতালের অবস্থান। মাঝে মাঝে দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন জরুরি রোগী রাত ১২টায় হাসপাতালে আসে। কিন্তু জরুরি বিভাগ না থাকায় তাদের অন্যত্র যেতে হয়। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে কয়েকটি বিভাগের অধীনে জরুরি বিভাগ চালু থাকলেও সাধারণ কোনো জরুরি বিভাগ নেই। তাই সকল রোগীদের সুবিধার্থে অবিলম্বে এই বিভাগ চালু করতে যাচ্ছি। এছাড়া রোগী ভর্তির অন্যান্য বিষয়গুলো আগের মতোই থাকবে। এদিকে সেবার ক্ষেত্রে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। ভিসি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর সফলভাবে পরিচালন উপলক্ষে একান্ত আলাপকালে ইনকিলাবকে এসব কথা বলেন তিনি।
এছাড়া আরো দুটি স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন বলেও জানান ডা. কামরুল হাসান। এই স্বপ্ন দুটি হলো, এখানে রোগী ভর্তি করে স্বজনরা যেন বাড়িতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা এবং ২৪ ঘণ্টা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা। তিনি বলেন, বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রের বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীরা চিকিৎসার জন্য ভর্তি হন। তারপর থেকে রোগীর সকল দায়িত্ব হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই পালন করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে সেই ধারণাই এখনো গড়ে ওঠেনি। এখানে এখনো রোগী ভর্তির পর তার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র আনা, বিভিন্ন পরীক্ষা করাতে নিয়ে যাওয়া, ওষুধ-পথ্য খাওয়ানো ইত্যাদি কাজ রোগীর স্বজনদেরই করতে হয়। এমনকি কোনো প্রফেসর যখন রোগীকে দেখতে যান তখন হাসপাতালে অবস্থানরত রোগীর স্বজনদের ভিড়ে রোগীকে ভালোভাবে পরীক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতি উত্তরণে হাসপাতালের পরিবেশ আমূল পরিবর্তন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব গ্রহণর পর এটি বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি। কিন্তু এটি অনেক বড় কাজ। বাস্তবায়নে আরো অনেক সময়ের প্রয়োজন। এটি বাস্তবায়নে চিকিৎসক, নার্স এমনকি ওয়ার্ডবয়, ক্লিনারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে করে তারাই রোগীর স্বজন হয়ে, আপনজন হয়ে হাসিমুখে সেবা করে। তবে ইতোমধ্যে হাসপাতালে রোগীপ্রতি একজন স্বজন থাকার নিয়ম বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাই আন্তঃবিভাগে আগের মতো ভিড় নেই বলেও জানান তিনি।
২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা প্রদান প্রসঙ্গে প্রফেসর ডা. কামরুল হাসান বলেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সব হাসপাতালেই ২৪ ঘণ্টা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। কিন্তু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। এটি বাস্তবায়নেও কাজ চলছে। তিনি বলেন, এটি বাস্তবায়নে এখানকার চিকিৎসক, প্রফেসররাও আগ্রহী। কিন্তু প্রধান সমস্যা টাকা। কারণ সার্বক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নিশ্চিত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অনেক বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু বর্তমান বাজেটে এই সুবিধা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বিষয়টি অর্থ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আমরা তাদের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অপেক্ষায় আছি।
প্রফেসর ডা. কামরুল জানান, সম্প্রতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম আরো এক ধাপ এগিয়ে গেছে। সেন্টার বেইসড সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রকল্প একনেকে অনুমোদন করা হয়েছে। গত ২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত একনেক সভায় এই প্রকল্প পাস হয়। এর ফলে বাংলাদেশে প্রথম এক হাজার বেডের সেন্টার বেইসড সুপার স্পেশালাইজড সেবা প্রদান শুরু হতে যাচ্ছে। দক্ষিণ কোরীয় সরকারের ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। ইতোমধ্যে দুই দেশের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিগত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু উন্নয়মূলক কর্মকা- বিশেষভাবে উল্লেখ্য। এর মধ্যে নন কমিউনিকেবল ডিজিজ বিষয়ে সহায়তায় (চিকিৎসা, গবেষণা) জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। নবজাতকদের চিকিৎসা সেবা সহায়তায় ইউনিসেফের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর। উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষায় এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে আরো নতুন ৪টি বিভাগ চালু করা হয়েছে। এগুলো হলো প্যাডিয়াট্রিক কার্ডিওলজি, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন, চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডলসেন্ট মেন্টাল হেলথ এবং প্যাডিয়াট্রিক নিউরোলজি অ্যান্ড নিউরো ডেভেলপমেন্ট। এসব বিষয়ে এমডি রেসিডেন্সিসহ এমএস, এমপিএইচ এবং এফফিল কোর্স চালু রয়েছে। একই সঙ্গে চলছে অ্যানাটমি ও ফিজিওলজি বিষয়ে পিএইচডি কার্যক্রম এবং এমএসসি ইন নাসিং কোর্স।
এছাড়া বর্তমান ভিসি দায়িত্ব গ্রহণের পর চিকিৎসা সেবার উন্নয়নে জেরিয়াট্রিক মেডিসিন উইং চালু, বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের ল্যাব ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখার ব্যবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের সুচিকিৎসায় মুক্তিযোদ্ধা সেল গঠন, ১৮ শয্যাবিশিষ্ট রিহ্যাবিলিটেশন মেডিসিন ওয়ার্ড চালু, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে ক্যান্সার রোগীদের সুবিধার্থে এফেরোসিস সার্ভিস চালু, ট্রান্সপ্লান্ট রোগীদের জন্য প্যানেল রিঅ্যাকটিভ অ্যান্টিবডি সুবিধা সম্বলিত এইচএলএ টিস্যু টাইপিং ল্যাবরেটরি চালু করা হয়েছে। এছাড়া বহির্বিভাগ রোগীদের সুবিধার্থে ডে-কেয়ার ওটি এবং রিউমাটোলজি স্পেশালাইজড ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়েছে। অচিরেই ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় স্বয়ংসম্পূর্ণ বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন বিভাগ চালু করা হবে বলেও জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমকে গতিশীল ও পরিপূর্ণ করতে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র চালু করেছেন এবং অত্যাধুনিক টিচার্স লাউঞ্জ চালু করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বের সকল সেবা ও সুযোগ-সুবিধা অপরিবর্তিত রয়েছে। চিকিৎসা ও শিক্ষার পাশপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামূলক কার্যক্রমে বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে অ্যাডভান্স রিসার্চ প্রোগ্রামের আওতায় ২৭ জন শিক্ষককে গবেষণা মঞ্জুরি প্রদান, বিভিন্ন অনুষদের থিসিস পার্টে অধ্যয়নরত ১১৭ জন শিক্ষার্থীর মাঝে থিসিস গ্রান্ট বিতরণসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে।
ভিসি ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, ইতোমধ্যে সান্ধ্যকালীন রাউন্ড চালু করা হয়েছে। প্রফেসররা প্রতিদিন সন্ধ্যায় নিয়মিত রাউন্ড দিচ্ছেন। নার্সরা রোগীদের হাসিমুখে সেবা প্রদান করছেন। চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য হাসপাতাল প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত রাউন্ড দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত ১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে চেইন অব কমান্ড ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ আমার দেয়া নাম অনুযায়ীই হয়েছিল তাই এই প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাদা আত্মীয়ের সম্পর্ক আছে। জাতির জনকের নামে প্রতিষ্ঠিত দেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালকে বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাধ্যমতো চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন তিনি। উল্লেখ্য, গত বছরের ২৪ মার্চ সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপালের স্থলাভিষিক্ত হন ডা. কামরুল হাসান খান। সম্প্রতি দায়িত্বের এক বছর পার করেছেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এ মাসেই চালু হচ্ছে সাধারণ জরুরি বিভাগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ