Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জীবনসঙ্গীর মৃত্যু অপরজনের জীবনের ঝুঁকি ডেকে আনে

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : জীবন সঙ্গীর একজনের অপ্রত্যাশিত মৃত্যু আরেকজনের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। প্রিয় জীবন সঙ্গী হারানোর ফলে যে গভীর শোক ও মানসিক হতাশা দেখা দেয় তা আরেকজনকে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো ঝুঁকির দিকে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে ৬০ বছরের নিচে এবং সুখী দম্পতিদের ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রা বেশী। ডেনমার্কে পরিচালিত এক নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে জীবন সঙ্গীর মৃত্যু অপর সঙ্গীর জন্য অনিয়মিত হার্টবিটের বিপদ ডেকে আনতে পারে, যা তার জীবনের সম্ভাব্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। প্রিয়জন হারানোর ফলে মানুষের মন ভেঙ্গে যায় আর ভাঙ্গা হৃদয় মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় গতকাল প্রকাশিত এই নতুন গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রায় দশ লাখ ডেনিস নাগরিকের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য উপাত্ত নিয়ে চালানো এই গবেষণায় দেখা যায় যে জীবন সঙ্গী হারানোর এক বছরের মধ্যে আরেকজনের হৃদযন্ত্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে। ৬০ বছরের নিচে যাদের বয়স তাদের জীবন সঙ্গীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যু অপর সঙ্গীর জীবনকে সবচেয়ে বেশী ঝুঁকির মধ্যে ঢেলে দেয়।
গবেষণায় দেখা যায় জীবন সঙ্গীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর পর ৮ থেকে ১৪ দিনের সময়টি সবচেয়ে বেশী ঝুঁকিপূর্ণ। এরপর ঝুঁকির মাত্রা ক্রমান্বয়ে কমলেও ঝুঁকি থেকেই যায়। অনলাইন জার্নাল ‘ওপেন হার্টে’ প্রকাশিত সমীক্ষার ফলাফলে জানানো হয়, ভালোবাসা বঞ্চিত শোকসন্তপ্ত মানুষদের মধ্যে প্রিয় জীবন সঙ্গী হারানোর এক বছর পরও ঝুঁকি একই রকম থাকে।
বেশীরভাগ পর্যবেক্ষণেই দেখা যায় যে জীবন সঙ্গীর মৃত্যুর কিছুদিনের মধ্যেই অপর সঙ্গীর মৃত্যু হয়। বেশ কিছু তথ্য উপাত্তে দেখানো হয় জীবন সঙ্গীর মৃত্যুর গভীর মর্মবেদনা অপর সঙ্গীর মৃত্যুর ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে দেয়। তবে কেন এমনটি হয় তার মেকানিজম এখনো পরিষ্কার নয়। সর্বশেষ এই গবেষণায় বিশেষ করে জীবন সঙ্গী হারানো ব্যক্তিদের হার্টবিট অনিয়মিত হয়ে পড়া সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। অনিয়মিত হার্টবিট স্ট্রোক ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার একটি রিস্ক ফ্যাক্টর। গবেষকরা হৃদরোগের একটি প্যাটার্ন জানার জন্য ১৯৯৫ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংগৃহিত ডেনিস নাগরিকদের স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রাপ্ত ডাটাসমূহ বিশ্লেষণ করেন। এতে দেখা যায় নতুন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৮৮ হাজার ৬১২ জনের মধ্যে অনিয়মিত হার্টবিটের লক্ষণ পাওয়া গেছে এবং ৮ লাখ ৮৬ হাজার ১২০ জনের মধ্যে এই লক্ষণ নেই। তারা স্বাস্থ্যবান।
গবেষণায় দেখা যায় যাদের জীবন সঙ্গীর মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে প্রথমবারের মতো হার্টবিটে অনিয়ম ধরা পড়েছে। যাদের জীবন সঙ্গী মারা যাওয়ার অভিজ্ঞতা নেই তাদের হার্টবিট স্বাভাবিক।
তুলনামূলক কম বয়সী যাদের বয়স ৬০’র নিচে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা দ্বিগুণেরও বেশী। যাদের জীবন সঙ্গীর মৃত্যুর একমাস আগেও স্বাস্থ্য তুলনামূলক ভালো ছিলো যার কারণে তাদের মৃত্যুর বিষয়টি চিন্তার মধ্যেও আসেনি তাদের আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে অপর সঙ্গী একেবারেই ভেঙ্গে পড়েন এবং তাদের ঝুঁকি ৫৭ শতাংশেরও বেশী।
গবেষক দল সতর্ক করে দেন যে এর সঠিক কারণ ও প্রভাব সম্পর্কে কোন উপসংহার এখনই টানা যাবে না। তাদের মতে এটা একটি পর্যবেক্ষণ মাত্র যা লোকজনের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রাপ্ত তথ্য ও উপাত্তের মধ্যে হার্টবিটের অনিয়মে একটি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। তাদের মতে, শোকসন্তপ্ত গ্রুপের ডায়েট, ব্যায়ামের ধরণ বা শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা যা হার্টবিট অনিয়মিত করার দিকে ঠেলে দেয় সেসব বেশকিছু ফ্যাক্টর নিষ্পত্তির আগে এ ব্যাপারে এখনই চূড়ান্ত মন্তব্য করা যায় না। এসব নিয়ে আরো বিস্তারিত গবেষণার দরকার রয়েছে বলেও তারা মনে করেন।
তবে এটা চরম সত্য যে জীবন সঙ্গীর একজনের মৃত্যু আরেকজনের জীবনের সবচেয়ে বড় মানসিক চাপ ও ক্ষতি। এটা আরেকজনকে বিষণœতার মতো মানসিক অসুস্থতার উপসর্গের দিকে ঠেলে দিতে পারে। এরফলে মানুষের ঘুম ও ক্ষুধা হ্রাস পায়। অনেকে অতিরিক্ত মদ্যপানের দিকে ঝুঁকে পড়ে ও ব্যায়াম করা বন্ধ করে দেয়Ñ এর সবকিছুই স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করে যা আমরা সবাই জানি। সূত্র : এএফপি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জীবনসঙ্গীর মৃত্যু অপরজনের জীবনের ঝুঁকি ডেকে আনে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ