Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্যসেবা : আরো মনোযোগ দিতে হবে

প্রকাশের সময় : ৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব চৌধুরী
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির আধুনিকীকরণ হয়নি। বরং জনসংখ্যার নিরিখে যে ব্যবস্থাটুকু আছে তা যেমন অপ্রতুল, তেমন শোচনীয়। অসাধারণ মানুষের কথা বলছি না, তারা ভাগ্যবানÑ অর্থ ও পদের জোরে স্বদেশ এবং বিদেশ এবং আধুনিক চিকিৎসার সবটুকুই গ্রহণ করতে পারেন তারা, অমরত্ব তাদের হাতের মুঠোয়। সাধারণ বাংলাদেশী বলতে যাদের বুঝায়, কি গ্রামে কি শহরে তাদের জন্য আয়োজিত চিকিৎসা ব্যবস্থা বিভিন্ন রকম। এ সম্বন্ধে কোন যোগ্যতা ও পারদর্শিতার মাপকাঠি নেইÑ ধর্ম, অর্থ থেকে শুরু করে রাজনীতি পর্যন্ত বিচার বিধান থাকলেও গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্য সম্বন্ধে আমাদের ভাবনাচিন্তা খুবই সীমাবদ্ধ। সুস্বাস্থ্য বলতে শিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত, ধনী থেকে দরিদ্র এবং সচেতন থেকে নির্লিপ্ত মানুষ প্রায় সকলেই রোগ বা অসুখ হলে উপযুক্ত বা সাধ্যমত চিকিৎসার কথা ভাবেন।
রোগ প্রতিষেধক বা রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি সরকারি ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার অভিযান বা আলোচনা সভাতেই অধিকাংশ সময়ে সীমাবদ্ধ থাকে। সরকারি অর্থ ও বলে বলীয়ান কিছু প-িতের জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য দেশ থেকে ম্যালেরিয়া, বসন্ত, এইডস বা শিশু মৃত্যুর হার কতটা কমিয়েছে তার হদিস বা হিসাব মেলা কঠিন। মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্তের জটিল ব্যাধির সমস্যা একমাত্র কপাল নির্ভর!
অশিক্ষিত সাধারণ নিম্নবিত্ত, অর্ধশিক্ষিত বা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত এমনকি উচ্চবিত্তের মানুষও রোগভোগ বা রোগ-যন্ত্রণা থেকে মুক্ত থাকার এক স্বাভাবিক পরিস্থিতি বলে মনে করেন না। অসুখ দেহের বা মনের হতেই পারে, যাতে না হয় তার জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যবিধি পালন করা দরকার। অসুখ হলে চিকিৎসার প্রয়োজন। আর তার জন্যও কমবেশি খরচ আছে একথা আমরা কি মনে রাখি? আমরা ধনী-দরিদ্র সকলেই সংসার নির্বাহের জন্য বাজেট করি কিন্তু তার মধ্যে সরকারি বাজেটের মত চিকিৎসা সংক্রান্ত খরচ প্রায় থাকেই না। তাই টিভি থেকে শুরু করে ছেলেমেয়ের লেখাপড়া বা খাওয়া-পরা, ফুর্তি-আহ্লাদের জন্য ব্যয় বরাদ্দ থাকলেও হঠাৎ অসুখ-বিসুখের খরচ সামলানো কষ্টকর হয়ে ওঠে। আবার দেখা যায়, নিজের পাশে অবস্থিত সরকারি হাসপাতালে পাঁচ-দশ টাকা দিয়ে টিকেট করতে হলে বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা অথবা ওষুধ কিনতে হলে আমরা রেগে যাই, সরকারের সমালোচনায় মুখর হই। কিন্তু অন্য দেশে চিকিৎসা করাতে অকৃপন হাতে খরচ করি। প্রতিবেশী দেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেককেই অসুবিধায় পড়তে হয়েছে, ওখানে চিকিৎসা ও কর্মীদের ব্যবহার সব সময় যে রসে মাখা নয় সে অভিজ্ঞতা অনেকেরই আছে- তবে সে নিয়ে বিতর্কে গিয়ে লাভ নেই। নিম্নবিত্ত দরিদ্র মানুষের অধিকাংশ চিকিৎসককেই তাদের ভরসা বলেই মনে করেন। তাদের চাহিদা বিনে পয়সায় বা কম খরচে চিকিৎসা। আপনারা গরিবকে না দেখলে কে দেখবে- এ ধরনের নির্ভেজাল মনোভাব নিয়েই তারা চিকিৎসকের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু এরাই অন্য কোন অসুবিধা বা বিপদের সময় উকিল সাহেব থেকে শুরু করে পলিটিশিয়ানদের এ সহজ-সরল সত্যটুকু বোঝতে পারে না। এ কথা ঠিক বেশ ক’বছর আগেও অনেক প্রথিতযশা চিকিৎসক বিনা পারিশ্রমিক বা অল্প টাকার বিনিময়ে দুস্থ মানুষের চিকিৎসা করতেন। সত্যি বলতে কি ‘ভোগবাদ’ বা ‘পণ্য মানসিকতা’ তখন সমাজকে তেমন একটা গ্রাস করেনি। আজকের দিনে চাহিদার শেষ নেই- চিকিৎসকরা অন্য কোন গ্রহের মানুষ নন, তারাও রক্ত-মাংসের জীব-আমাদের সমাজেরই অংশবিশেষ। তাই তাদেরও চাহিদা, আশা-আকাক্সক্ষা বেড়েছে। আর এখান থেকেই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব। আগেকার দিনে অনেক চিকিৎসক যারা ‘সাধারণ চিকিৎসক’ বা ‘পারিবারিক চিকিৎসক’ হিসেবে পসার লাভ করেছেন, তাদের বাবা-মায়েরা বলেছেন, ‘বাবা গরিব-দুঃখীর বন্ধু হয়ে থেকে তাদের সেবা করবে’। তারা অনেকেই প্রাণপাত পরিশ্রম করে, নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ভুলে হাটে-বাজারের চিকিৎসক হিসেবে নিজের গ্রাম বা শহরতলীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ‘প্রাণ’ ছিলেন। কিন্তু আজকের দিনে চিকিৎসা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ ও নতুনত্বের যুগে চিকিৎসা-পরিকাঠামো সম্পূর্ণভাবে বদলে গেছে। আজকাল ‘সাধারণ চিকিৎসক’, ‘গৃহ বা পারিবারিক চিকিৎসক’দের ওপর ভরসা উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্ত মানুষেরা করে না। ‘ডিগ্রী ডিপ্লোমা’ বা ‘স্পেশালইজেশন’নির্ভর মানসিকতা ‘সাধারণ চিকিৎসকদের’ হীনবল বা অনেক সময় ‘দায়সারা’ বিশেষজ্ঞনির্ভর করে থাকে। একজন চিকিৎসককে অনেকেই ‘পারিবারিক বন্ধু বা ‘শুভানুধ্যায়ী’ হিসেবে পেতে চায়। কিন্তু আজকাল এ ধরনের পারিবারিক চিকিৎসকদের বড়ই অভাব। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি ‘পরিবারের’ সংজ্ঞা এখন বদলে গেছে। বাবা-মায়ের কোলজুড়ে ‘দুধেভাতে’ বড় হওয়া শিশু- সেখানে পারিবারিক চিকিৎসা কি করবেন?
এ বিষয়ে সতর্ক হবার সময় এসেছে। প্রশংসা, প্রতিপত্তি ও আর্থিক সচ্ছলতা অনেকের মাথা ঘুরিয়ে দেয়, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্তদের হঠাৎ করে অর্থবান হওয়া বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে। ধরাকে সরাজ্ঞান করে তারা বিপদের সৃষ্টি করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে যেমন শরীরবিদ্যা, ভেষজবিদ্যা প্রভৃতি শিখতে হয় তেমনি রোগী ও রোগীর আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে আচার-ব্যবহারও শিখে নেয়া অপরিহার্য। অনেক চিকিৎসকের ব্যবহার ও আন্তরিকতা এমনকি উপস্থিতিতেও রোগ-যন্ত্রণার সাময়িক উপশম হয়, চিকিৎসকদের স্পর্শে যন্ত্রণা কমে যায়। একে বলা হয় ‘হিলিং টাচ’। যারা কৃতী ও সুচিকিৎসক তাদের এ গুণ থাকে। আগেকার দিনে স্বনামধন্য চিকিৎসকেরা শিক্ষক হিসেবে ছাত্রদের শুধু রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি শিখাতেন না, তারা সত্যিকারের ‘পেশাগত চিকিৎসক’ তৈরি করতেন। চিকিৎসা শাস্ত্রকে বিজ্ঞান বলা হলেও বিজ্ঞানের সব ধর্ম বা গুণাগুণ চিকিৎসা শাস্ত্রে থাকে না। একই ওষুধ যার গুণগত মান পরীক্ষিত তা সকলের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য বা একই কাজ করে না। এর জন্য অতি বড় চিকিৎসককে ভাগ্যনির্ভর বা নিয়তির ওপর ভরসা করে চিকিৎসা করতে হয়। অধিকাংশ রোগী কিন্তু একথা বোঝেন বা জানেন। কিছুসংখ্যক অবুঝ রোগী বা আত্মীয়, বন্ধুবান্ধব এ ব্যাপারে চিকিৎসককে দায়ী করে থাকেন। একে পেশাগত অসুবিধা বলে মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। প্রতিটি পেশাতে কিছু অসুবিধা থাকে। চিকিৎসা মানে মানুষের মূল্যবান জীবন নিয়ে কাজ সুতরাং সবসময় সতর্ক থাকতে হয়। চিকিৎসা পেশায় প্রবেশের আগে এ বিষয়ে কাউন্সিলিং খুবই প্রয়োজন। চিকিৎসক হতে হলে ছাত্র অবস্থা থেকে মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন। খুব সহজে এবং খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি, গাড়ি, প্রচার বাড়ানোর ঝোক এ প্রজন্মের কিছু নবীন চিকিৎসককে বিভ্রান্ত করছে। তাদের দোষ দিয়ে সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ আদর্শ কোথায়? সরকারি নিয়মে শিক্ষক চিকিৎসকেরা প্র্যাকটিস করবেন না, ছাত্ররা ছাত্রাবস্থায় প্র্যাকটিস করার যে আর্ট তা শিখবে কার কাছে? যার জন্য অনেক সময় ভাল পসার জমাতে কষ্ট হয়, রোগীর সঙ্গে আচার-ব্যবহারে বৈষম্য দেখা যায়। সহজ বা কঠিন যে রোগ হোক না কেন রোগীর ও আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসক ও চিকিৎসার প্রতি বিশ্বাসের ক্ষেত্রে অনেক জায়গায় চিড় ধরেছে। চিকিৎসক ও রোগীর মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস, সহানুভূতি, সেবা ও সামাজিক সম্বন্ধ আইনের চোখ রাঙ্গানি বা কোর্টের নির্দেশ কিংবা মেডিকেল কাউন্সিলের বিধিনিষেধ নিয়ন্ত্রিত হতে পারে না। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চিকিৎসাসেবা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য শোনা যায়।
মানুষের সুচিকিৎসাও রোগ নিরাময়ের প্রত্যাশা স্বাভাবিক নিয়মে বেড়েছে। অনেক অসুখ আগে আল্লাহর বিধান বলে মেনে নেয়া হত, কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির জন্য দৈব বা ভাগ্যের দোহাই দিয়ে রোগভোগের অবসান বা শেষকে মৃত্যু বলে মেনে নিতে মন চায় না। এর জন্য অসুখ বা দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক সময় চিকিৎসককে দোষারোপ করা হয়। চিকিৎসায় অবহেলা বা ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনের ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার এখন প্রতিষ্ঠিত। এসব ক্ষেত্রে মেডিকেল কাউন্সিল চিকিৎসকের চিকিৎসা করার আইনি ছাড়পত্র বাতিল করতে পারেন। এ বিষয়ে দ্বিধা বা মতবিরোধ থাকলেও কিছু করার নেই। তবে সাধারণ ও প্রভাবশালী সব মানুষকে এ বিষয়ে গভীর ভাবনা-চিন্তা করে তবে মতামত প্রদান বা মন্তব্য করতে হবে। যে কোন চিকিৎসকই তা সে ডিগ্রীধারী অথবা হাতুড়ে যেই হোক না কেন রোগীর রোগ মুক্তির চেষ্টা করেন। রোগীকে মেরে ফেলার বা হত্যা করার কোন অভিপ্রায় কোন ডাক্তারের থাকে না। কারণ রোগীকে ভাল করতে পারলে পসার বাড়বে, অর্থ উপার্জন হবে। তবে অজ্ঞতা বা ভুল চিকিৎসার জন্য রোগীর শারীরিক বা মানসিক ক্ষতি এমনকি মৃত্যুও ঘটতে পারে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের অবহেলা প্রমাণ হলে শাস্তি কি এড়ানো যাবে? চিকিৎসকেরা তো আর আইনের ঊর্ধ্বে নন। অবশ্য যে কোন মৃত্যু হলেই চিকিৎসককে হয়রানি বা ভয় দেখালে সংকট বাড়বে, পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। যারা অর্থবান ও ক্ষমতাবান তারা এদেশের সর্বোত্তম চিকিৎসা, প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে নেবেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? অনেকের আশংকা মেডিকেল কাউন্সিল বা কোর্টের ভয়ে চিকিৎসকেরা ঝুঁকি নেবেন না। কথায় কথায় ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা বলবেন হয়ত কিন্তু সর্বাধুনিক চিকিৎসা আশা করলে কিছু পরীক্ষা, এক্স-রে, সনোগ্রাফি তো করতেই হবে। রোগী ও তার আত্মীয়স্বজনদেরও বুঝতে হবে প্রথমে রোগ নির্ণয় ও পরে চিকিৎসা নাকি রোগীর রোগ লক্ষণের উপশম, কোনটা জরুরি। অনেক রোগে প্রাথমিক লক্ষণ দেখে রোগ নির্ণয় করা যায়। আবার কিছু অসুখে বেশ কিছুদিন পর প্রকৃত রোগ ধরা পড়ে। সুতরাং চিকিৎসকদের ‘ক্লিনিক্যালি আই’ ও ভাবনা-চিন্তার উপর নির্ভর করতে গেলে রোগ নির্ণয়ের জন্য কয়েকদিন অপেক্ষা করতেই হবে। আগেই বলা হয়েছে, অর্থ ব্যয় হবে না অথচ সর্বাধুনিক চিকিৎসা হবে- তা হয় না। চিকিৎসককেও এ ব্যাপারটা রোগী ও তার সঙ্গের লোককে বুঝিয়ে বলে দিতে হবে। এ জন্য কিছুটা সময় দিতে হবে। এ কথা ঠিক, যেসব চিকিৎসক রোগের সব কথা খুলে বলেন, শল্য চিকিৎসার ভাল-মন্দ দিক বুঝিয়ে অনেক সময় রোগী ও তার সঙ্গীরা তাতে অজ্ঞতা ও ভয়ে অন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে চলে যান। তাতে সাময়িক আর্থিক ক্ষতি হয়ত হয়, কিন্তু নিজের কাছে পরিষ্কার থাকা যায়।
চিকিৎসকের মানসিক দৃঢ়তা ও সততা এবং রোগীর প্রতি দায়বদ্ধতা অনেক বড়। এখানে লোভের রাস টেনে ধরা প্রয়োজন। চিকিৎসা এমন একটি পেশা যেখানে চিকিৎসক ও তার সহকারী, সঙ্গী-সাথীদের প্রভাবিত করার ঝোক অনেকের মধ্যে দেখা যায়। অনেক প্রতিভাবান চিকিৎসককে এক শ্রেণীর মানুষ প্রভাবিত করে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। ব্যবসায়িক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য ভেবে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার কর্মচারী থেকে শুরু করে ল্যাবরেটরি ইত্যাদির কর্মী, এলাকার রাজনৈতিক নেতা বা সরকারি আমলা সকলেই এ সুযোগ নিয়ে থাকে। অর্থ ও প্রতিপত্তির লোভ দেখিয়ে তারা চিকিৎসকদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করে থাকেন। সহজে উঠতি বা প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকেরা এদের হাতের মুঠোয় চলে যান। এক চিকিৎসকের কাছে অপর চিকিৎসকের পেশাগত ও ব্যক্তিগত জীবনের কুৎসা রটনা করা খুবই গর্বিত কাজ। পরচর্চা ও পরনিন্দা রোগে অনেক চিকিৎসকের এ ভাবনা ও ধারণা পাল্টাবার সময় এসেছে। সৎভাবে, ভালভাবে পেশাদার চিকিৎসক হিসাবে কাজ করার কিছু অসুবিধা আছে কিন্তু তার জন্য গা ভাসিয়ে দিলে হবে না। দুর্বলতার সুযোগ অনেকেই নেবে, এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত নিজের পদ ও প্রমোশন বজায় রাখার জন্য অনেক সরকারি চিকিৎসক, মন্ত্রী-আমলাদের হাতের ক্রীড়নক হয়ে যান। এমনকি ‘নন প্র্যাকটিসিং ভাতা’ নিয়ে প্র্যাকটিসও করেন। এদের কাছে সরকারি উচ্চাধিকারীরা পর্যন্ত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে থাকেন। সাদা কাগজে ব্যবস্থাপত্র লেখার প্রবণতা, অতিরিক্ত ক্ষমতা ও অর্থের লোভ কিছু চিকিৎসককে স্বার্থান্বেষী ক্ষমতাবান মানুষের হাতের মুঠোয় বন্দি করে ফেলেছে। তাদের অবস্থা সত্যিই করুণ। অবশ্য প্রতিটি পেশাতে ব্যক্তি বিশেষের নিজের মানসিকতা, ইচ্ছা-অনিচ্ছার দাম আছে। সে ক্ষেত্রে একজন চিকিৎসক কিভাবে নিজের জীবনধারণ করবেন তা তার সম্পূর্ণ নিজের এখতিয়ার তবে প্রফেশনালিজম ও কমার্শিয়ালিজমের পার্থক্য মনে রাখা উচিত। চিকিৎসকদের প্রতি সাধারণ মানুষের যেমন শ্রদ্ধা, ভালবাসা আছে তেমনি কৌতূহলও থাকে। তাদের অর্থ উপার্জন, জীবনযাত্রা বা ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে উৎসাহ কখনো এতে বেশি হয় যে অপপ্রচার ও অবিশ্বাস, দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব আর যাই হোক চিকিৎসাসেবাকে উন্নত করতে পারে না। এতে হিংসা-বিদ্বেষও তৈরি হয়। নিছক হিংসা বা আক্রোশের জন্য অনেকে একজন সুনামী চিকিৎসককে অপদস্থ ও লোক সম্মুখে হেনস্থা করে থাকেন এমন নজিরও আমাদের সমাজে আছে।
এসব কিছুকে সহ্য করে পেশাগত ন্যায়পরায়ণতা ও সততা বজায় রেখে চিকিৎসকদের দায়িত্ব পালন করতে হবে। অন্যের ভুল বা সমালোচনা থেকে নিজেকে সঠিক রাখার দিকে নজর দিলে উপকার হবে। বর্তমানে চিকিৎসা ও চিকিৎসকদের এ সাময়িক সমালোচনা ও বিরূপ মন্তব্যে বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। দেশ, সমাজ ও কালের পরিবর্তন হচ্ছে। ভোগবাদী ও পণ্যনির্ভর জীবনযাত্রা এবং মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা ও উৎকণ্ঠাময় জটিল জীবনধারা অনেক কিছুর সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা পাল্টে দিচ্ছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ও চিকিৎসকদের কাছে স্বাভাবিক কারণে মানুষের প্রত্যাশা, আশা-আকাক্সক্ষা পরিবর্তিত হয়েছে। চিকিৎসক তার সাময়িক ভুলের জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন, প্রয়োজনে জেল-জরিমানা দুই-ই তার প্রাপ্য। একথা ভাবতে বা মেনে নিতে মন চায় না কিন্তু চিকিৎসার এ অসুখে মনকে এ নির্মম সত্য মেনে নিতে হবে। এ পথ ও মত ঠিক না ভুল, আগামী দিনই তা বুঝিয়ে দিবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: স্বাস্থ্যসেবা : আরো মনোযোগ দিতে হবে
আরও পড়ুন