Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুরের উল্টো সুর

প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৭ পিএম, ৫ এপ্রিল, ২০১৬

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি ঘটনার পর থেকে ব্যাংক থেকে বলা হচ্ছে সময় একটু বেশি লাগলেও সব টাকাই ফেরত পাবে বাংলাদেশ। অথচ দীর্ঘদিন চুপ থাকার পর অবশেষে চুরি হওয়া অর্থের পুরোটা ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী। এ যেন সুরের উল্টো সুর। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকে চাউর রয়েছে, এসকে সুর চৌধুরীই সদ্য পদত্যাগকারী গভর্নর আতিউর রহমানকে রিজার্ভ চুরির বিষয়টি চেপে যেতে বলেছিলেন। একই সঙ্গে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ড. আতিউরকে ভারতে
একটি সম্মেলনে পাঠিয়েছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর মিরপুরে বাংলাদেশ ব্যাংক ট্রেনিং একাডেমিতে রিজার্ভের চুরি অর্থ ফেরত পাওয়া সাংবাদিকদের কাছে সন্দেহ প্রকাশ করেন। এদিকে, নতুন গভর্নর যোগদানের পর প্রথম পরিচালনা পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আজ। সভায় রিজার্ভ চুরির তদন্তের বিষয়ে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে গত কয়েক বছরে সকল চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের নিয়ে আলোচনা হতে পারে। অনেক কর্মকর্তার চুক্তি বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
এসকে সুর চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে যে টাকা চুরি হয়েছে, তার কিছু অংশ ফেরত পাওয়া যাবে। তবে সব টাকা ফেরত পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এ সময় তিনি ব্যাংকের আর্থিক খাতের নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেন।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে ভুয়া নির্দেশনা পাঠিয়ে যুক্তরাত্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার শ্রীলঙ্কা ও ফিলিপাইনে স্থানান্তর করে দুর্বৃত্তরা। এর প্রায় এক মাস পরে ফিলিপাইনের ইনকোয়ারার পত্রিকায় অর্থপাচার সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর রিজার্ভ চুরির বিষয়টি ফাঁস হয়। এ ঘটনার জের ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়ান আতিউর রহমান। একই সঙ্গে ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। শ্রীলঙ্কায় স্থানান্তরিত হওয়া ২০ মিলিয়ন ডলারের পুরোটা এবং ফিলিপাইনে স্থানান্তরিত ৮১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ৮ লাখ ডলার ফেরত পাওয়া গেছে। আরও অর্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
এদিকে, আজ অনুষ্ঠিত পরিচালনা পরিষদের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকে এ যাবৎ যেসব চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা বাতিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। সদ্য পদত্যাগ করা গভর্নর ড. আতিউর রহমান তার সময়কালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য নিজস্ব কর্মকর্তাদের পদোন্নতি না দিয়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে বাইরে থেকে যেমন দেওয়া হয়েছে, তেমনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও দেওয়া হয়েছে। ফলে নিয়মিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে যাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়। সম্প্রতি সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি রাকেশ আস্তানা। রিজার্ভ চুরির ঘটনা উদ্ঘাটনে এ ভারতীয় ব্যবসায়ীকে আইটি গভর্ন্যান্স কনসালট্যান্ট নিয়োগ দেন ড. আতিউর রহমান। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়ার পর বাংলাদেশে নিজের আইটি ব্যবসা ভালোই জমিয়ে বসেছেন রাকেশ। তিনি ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্স সাইবার সিকিউরিটিজ কোম্পানির প্রধান নির্বাহী।
এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চুক্তিভিত্তিক মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট অর্গানোগ্রামের বাইরে গিয়ে কিছু নতুন পদ তৈরি করে বাইরের লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নির্বাহী পরিচালক বা তার চেয়ে বড় পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে বাংলাদেশ ব্যাংকে কাজ করছেন আরও সাত জন। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে গভর্নর হিসেবে ড. আতিউর রহমান যোগদান করেন ২০০৯ সালের ১ মে। তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নিজস্ব বলয় তৈরির জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে পছন্দের লোকজনকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া শুরু করেন।
অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগদান করে নতুন গভর্নর ফজলে কবির বলেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। কেন্দ্রীয় বাংকের নিচ্ছিদ্র্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে গঠিত কমিটি যেভাবে সুপারিশ করবে সেভাবেই কাজ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সুরের উল্টো সুর

৬ এপ্রিল, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ