পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিনা মূল্যে আইনি সেবা প্রতিদিন বেড়েই চলছে। এতে লাভবান হচ্ছেন রাষ্ট্রের নি:স্ব, দরিদ্র, অসহায় ও মামলার খরচ পরিচালনা করতে সঙ্গম নয় এমন বিচারপ্রার্থীরা। বিনা মূল্যে (সরকারি খরচে) আইনি সেবা পেতে লিগ্যল এইডের দ্বারস্থ হচ্ছেন তৃর্ণমূল পর্যায়ের নিরক্ষর, অসচেতন, অবহেলিত, সহায়-সম্বলহীন ও সুবিধা বঞ্চিত মানুষ। আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৯ বছরে ৩ লাখ ৫ শত ৯৮জনকে আইনি সহায়তা নিয়েছে। এসবের মধ্যে (ট্রোল ফ্রি) হেল্পলাইনে আইনি সহায়তা নেয় ২৫ হাজার ৮৮৮জন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, চৌকি ও শ্রম আদালতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহ, নারী নির্যাতন ও জমি-জমা সংক্রান্ত সমস্যার নিয়ে চেয়ে বেশি আইনি সেবা নিয়েছেন।
আজ ২৮ এপ্রিল (শনিবার) জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। নানা কর্মসূচি উদযাপন করছে সরকার। দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। প্রসিডেন্ট তার বাণীতে আইনে শাসন প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহবান জানিয়েছেন। সুশাসন প্রতিষ্ঠার সবার কার্যকরী ভূমিকার প্রত্যাশা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সকাল ১০ টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন আইনমন্ত্রী।
জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদান কল্পে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ প্রণীত হয়। সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে প্রতি জেলার আদালত ভবনে, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ চৌকি আদালত ও শ্রম আদালতে কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালে প্রধান মন্ত্রী ১৬৪৩০ (টোল ফ্রি) জাতীয় হেল্পলাইন চালু করেন। এরপর থেকে দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ যে কোনো ফোনের মাধ্যমে বিনা মূল্যে কল করে আইনি পরামর্শ পেতে পারেন। সকাল ৯ টায় থেকে বিকাল ৫ টায় পর্যন্ত ২ জন কাউন্সিলর ফোনের মাধ্যমে বিনা মূল্য আইনি সহায়তা দেন। ২০১৩ সালে ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ঘোষণা করে। এরপর প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হচেছ।
এক পরিসংখ্যানে দেয়া যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ৩ লাখ ৫ শত ৯৮জনকে সরকারি আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ২ লক্ষ ১ হাজার ১২৫ জনকে সরকারি খরচে মামলা দায়ের করতে আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে ১ লক্ষ ৩ হাজার ১৪৭ জন নারী, ৯৭ হাজার ৪৪২ জন পুরুষ ও ৫১৯ জন শিশু ও রয়েছেন। পারিবারিক, দেওয়ানী, ফৌজদারীসহ বিভিন্ন আইনগত বিষয়ে ৩০ হাজার পরার্মশ নেয়।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত তিন বছরের ৭ হাজার বিরোধ নিস্পত্তি করা হয়। এতে ৮ কোটি ৩৫ লক্ষ বেশি অর্থ আদায় করা হয়। আর ১৬৪৩০ হেল্পলাইনে মাধ্যমে গত এক বছরে ২৫ হাজার ৮৮৮ জন সেবা নেয়। এর মধ্যে পুরুষ ১৮ হাজার ৩ জন, নারী ৭ হাজার ৮৮৫জন সেবা নিয়েছেন। এছাড়াও ঢাকা ও চট্রগ্রামের শ্রমিক সেলে ১০ হাজার ৪২৭ জন। প্রতি বছরের নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। ২০১২-২০১৭ পর্যন্ত ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৯ জনকে মামলায় আর্থিক সহায়তা, কারাগারে আটককৃত ৪০ হাজার ৭১৫ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। ২০০৯ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫২৪, ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৫০৬। ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৬৭৪। ২০১৫ সালে ১২ হাজার ৪১৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরে ১৪ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে ৬৪ হাজার ৫৪৬টি মামলা নিষ্পিত্তি হয়। এসবের মধ্যে দেওয়ানী ২২ হাজার ৪৬টি, আর ফৌজদারি ৪২ হাজার ৩৭৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত কারাগারে আটক ব্যক্তিরা ৪০ হাজার ৭১৫ জনকে আইনিগত সহায়তা দেয়া হয়।
সুপ্রিমকোর্ট কমিটি: ২০১৫ সালে সুপ্রিম কোর্টে লিগ্যাল এইড কার্যালয় উদ্বোধনের পর থেকে সরকারি সহায়তা আইনি সেবা প্রদান করে আসছেন। পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এ সেবা দেয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা আনুষ্ঠানিকভাবে উচ্চ আদালতে সরকারি সেবার কার্যক্রম উদ্ধোধন করেন। এ পর্যন্ত ৩ হাজার ১৯ জনকে আইনি পরামর্শ দেন। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির সমন্বয়ক রিপন পৌল স্কু ইনকিলাবকে বলেন, আমাদের কাছে আসা অসহায় দরিদ্র বিচারপ্রার্থীদের অভিযোগগুলো শুনে সরকারি সেবা দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেস্টা করি। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কম বেশি প্রতিদিনই সরকারি সেবা নেওয়ার জন্য আসছেন।
কর্মসূচি: দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে সরকার। মামলা ছাড়াই বিরোধ নিস্পত্তি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারী ড্রামা উদ্ধোধন ও প্রদর্শন করা হবে। প্রতি বছরের মতো এবারো সারা দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে। এছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য সারা দেশে র্যালী, মেলা, পথ নাটিকা, টক-শো, গোল টেবিল বৈঠক, সভা- সেমিনার। উন্নয়ন আর আইনে শাসনে এগিয়ে চলছে দেশ, লিগাল এইডের সুফল পাচ্ছে সারা বাংলাদেশ এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৭ম বারের মত দিবসটি পালিত হচ্ছে। সকাল ১০ টায় ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন আইনমন্ত্রী। আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো: দুলাল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মামলা ছাড়াও বিরোধ নিস্পত্তি নিয়ে সাফল্যের চিত্র (ডকুমেন্টারী ড্রামা) উদ্ধোধন ও প্রদর্শন করা হবে। গত বৃহস্পতিবার আইন মন্ত্রণালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সরকারি খরচে সর্বস্তরের মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা আশা প্রকাশ করে বলেছেন আগামীতে সরকারি আইনি সেবা কার্যক্রম আরও কার্যকর, গতিশীল ও শক্তিশালী হবে। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার উপরিচালক আবিদা সুলতানা ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি বছর বিনা মূল্যে আইনি সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রে এর মাধ্যমে হত-দরিদ্ররা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন। এতে করে মামলা চালানো অঙ্গম ব্যক্তিরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করছেন। তিনি আরো বলেন, এখন আমরা ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপক হারে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কাজ করছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।