Inqilab Logo

বুধবার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, ২১ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রাণ ফিরবে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে ঘুরবে চাকা, বাড়বে বিনিয়োগ

জ্বালানি চাহিদা মেটাবে এলএনজি

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশে এই মূহুর্তে সরকারের কাছে দুই হাজারের ওপর শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস দেওয়ার আবেদন রয়েছে। গ্যাসের অভাবে বন্ধ গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। চাহিদা মাফিক গ্যাস না পাওয়ার শঙ্কাও ছিল বিনিয়োগে। তবে এ সংকট আর থাকছে না। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির প্রথম ধাপেই দেশে প্রতিদিন অন্তত ৩০ লাখ ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বাড়ছে। যদিও এলএনজি টার্মিনালটি প্রতিদিন ৫০ লাখ ঘনফুট এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করতে পারে। চালু হবে বন্ধ থাকা গ্যাসভিত্তিক সব বিদ্যুৎকেন্দ্র। আবেদনকারী সব শিল্পপ্রতিষ্ঠানও পাবে গ্যাস সংযোগ। ফলে ঘুরবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের চাকা। একই সঙ্গে বাড়বে বিনিয়োগ। এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধিসহ মধ্যম আয়ের দেশে যেতে আরও একধাপ অগ্রগতি বয়ে নিয়ে আসবে এলএনজি।
এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের বিশেষায়িত ভেসেল ‘এক্সেলেন্স’ এক লাখ ৩৩ হাজার ঘনমিটার এলএনজি নিয়ে গত ২৪ এপ্রিল কক্সবাজারের মহেশখালীতে এসে নোঙর করে। ২৭৭ মিটার দৈর্ঘ্য, ৪৪ মিটার প্রস্থ এবং সাড়ে ১২ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) এই জাহাজকে বলা হয় ফ্লোটিং স্টোরেজ রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট-এফএসআরই। এই ইউনিট একইসঙ্গে গ্যাস মজুদের জন্য ভাসমান টার্মিনাল হিসেবে কাজ করে এবং তরলীকৃত গ্যাসকে পুনরায় গ্যসীয় অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে ভূমিতে সরবরাহের ব্যবস্থা করতে পারে।
জ্বালানি বিভাগ জানায়, শুরুতে প্রতিদিন ৩০ লাখ ঘনফুট এলএনজি গ্যাসে রূপান্তর করে সরবরাহ করা হলে চট্টগ্রাম গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ করতে হবে না। পর্যায়ক্রমে রূপান্তরের পরিমাণ ৫০ লাখ করা হলে বর্ধিত গ্যাস চট্টগ্রামের বাইরেও সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এই গ্যাসের পুরোটা দেশের অন্য জায়গার সংকট মেটাতে কাজে লাগবে। সরকার গ্যাস ব্যবহারের বিষয়ে বন্ধ বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর পাশাপাশি শিল্প ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের সংযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য আবেদন করা সব শিল্প প্রতিষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে গ্যাস সংযোগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে দুই হাজারের ওপর শিল্প প্রতিষ্ঠানে গ্যাস দেওয়ার আবেদন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেছেন, আবেদনকারী সব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে সরকার। তিনি বলেন, এফএসআরইউ কাজ শুরু করলে আমদানি করা গ্যাস মহেশখালী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে প্রথমে যাবে চট্টগ্রামের আনোয়ারায়। পরে তা জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে পাঠানো হবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, এখন ৩০ লাখ সরবরাহ করা হলেও পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে ৫০ লাখ মিলিয়ন ঘনফুট করা হবে। এলএনজি আমদানি করা হলেও আগামী কয়েক বছরের মধ্যে প্রায় দুই হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা করেছে সরকার। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ বলেন, এতে দেশের গ্যাস ঘাটতি কিছুটা হলেও কমবে। বিশেষ করে শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে এর প্রভাব পড়বে সরাসরি। যেহেতু এই গ্যাস চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহ শুরু করা হবে। ফলে ওই অঞ্চলের শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে এই প্রভাব পড়বে।
তিনি জানান, গ্যাসের অভাবে চট্টগ্রামের অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্রও বন্ধ রয়েছে। গ্যাস পেলে ওইসব প্রতিষ্ঠানে আবার প্রাণ ফিরে আসবে বলে আশাবাদী তিনি।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এক্সিলারেটের পর বাংলাদেশে পর্যায়ক্রমে এলএনজি আনবে আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো-সামিট, রিলায়েন্স ও হংকং সাংহাই মানজালা। প্রত্যেকেই বাংলাদেশে ৫০ লাখ ঘনফুট করে গ্যাস আনবে।
২০১৭ সালের ২০ এপ্রিল সামিটের সঙ্গে চুক্তি করে পেট্রোবাংলা। তাদেরও এ বছরের অক্টোবরে এলএনজি আনার কথা রয়েছে। এছাড়া রিলায়েন্স ও হংকং সাংহাই মানজালার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তিস্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে রিলায়েন্স ২০১৯ সালের জুনে ও মানজালার ২০২০ সালের জুনে এলএনজি আমদানির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে।
কক্সবাজারের মহেশখালীতে দেশের প্রথম এলএনজি টার্মিনালের ধারণক্ষমতা প্রায় এক লাখ ৩৮ হাজার ঘন মিটার। ওই টার্মিনালের রিগ্যাসিফিকেশন বা তরল থেকে গ্যাসে রূপান্তরের ক্ষমতা রয়েছে দিনে ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এক্সিলারেট এনার্জির সঙ্গে করা চুক্তি অনুযায়ী, টার্মিনাল নির্মাণ ও অন্যান্য খরচ হিসেবে প্রতি হাজার ঘনফুট গ্যাসের জন্য তাদের ৪৯ সেন্ট করে দিতে হবে। অন্যান্য খরচ যোগ হওয়ার পর তা ৫৯ সেন্টের মত হবে। ১৫ বছর পর মহেশখালীর টার্মিনাল ও এফএসআরইউ কোনো বিনিময়মূল্য ছাড়া পেট্রোবাংলার কাছে হস্তান্তর করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শিল্পপ্রতিষ্ঠানে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ