Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মায়াময় প্রকৃতি ও শেকড়ের টানে

| প্রকাশের সময় : ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বিশেষ সংবাদদাতা ও রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রেজাউল করিম রাজু : মায়াময় প্রকৃতি আর শেকড়ের টানে লাখো মানুষের এ এক বিরল আনন্দযাত্রা। ৯ দিনের লম্বা ছুটির সুবাদে ছুটছে মানুষ। শহর-নগর ফিরছে যেন গ্রামে গ্রামে। ঈদের আগেই যেন অন্যরকম ঈদ। এমনটি দীর্ঘ ছুটি দুই ঈদ ছাড়া সচরাচর মেলেনা। বছরের শুরুতেই ক্যালেন্ডারের পাতা দেখে অনেকে নিয়ে রাখেন ছুটি কাটানোর প্রস্তুতি। আর সেই ছুটির ঘণ্টা বাজার সাথেই ছুটছে মানুষ মাটির টানে, নাড়ির টানে, কেউ বলে শেকড়ের কাছে গ্রামে। বৃহস্পতিবার বাস টার্মিনাল রেল স্টেশনে ছিল প্রচÐ ভিড়। হাজার হাজার মানুষ শহর ছাড়ছে। আবার ফিরছেও। বিভাগীয় শিক্ষা নগরী রাজশাহীতে নগরীর বাইরে থেকে লেখাপড়া করতে আসে লাখ দেড়েক ছাত্র-ছাত্রী। তারা এবার বাড়ি ফেরার সময় কেনাকাটা সেরে গ্রামে থাকা স্বজনদের মাঝে ফিরেছে। এতে নগরী এখন বেশ ফাঁকা। শহুরে দমবন্ধ ও ব্যস্ততা পেছনে ফেলে সেই সবুজ গ্রামের প্রান্তরে অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের সান্নিধ্য পেতে মন আকুলি বিকুলি করে। লম্বা ছুটির সুযোগটি হাতছাড়া করেনি। নিজ নিজ গ্রামে ছুটে যাওয়া অগণিত মানুষ মুক্তবিহঙ্গের মতো কাঁচা-পাকা বোরো ক্ষেতের আল ধরে হেঁটে, পটল লাউ শসা করোল্লার মাচার নিচ দিয়ে ছুটতে গিয়ে শিহরিত হওয়া, এসব স্মৃতি ধরে রাখতে মোবাইলে ছবি-সেলফি-ভিডিও তোলা, গাঁও-গ্রামের মুক্ত বাতাসে বুক ভরে শ্বাস নেয়া, ধুলোবালির আস্তরণ পড়া ফুসফুসটাকে চার্জ দিয়ে সতেজ করার ব্যস্ততা এখন সবখানে।
বিশেষ সংবাদদাতা ও বরিশাল ব্যুরো প্রধান নাছিম উল আলম জানান, ৯ দিনের ছুটিতে দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনে নানামুখী প্রভাব পড়ছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজ বাড়িঘরে ফিরছে নাড়ির টানে। আবার অনেকেই শহুরে একঘেয়েমী থেকে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও অবকাশে যাবেন সাগর সৈকত কুয়াকাটায়। তবে কালবৈশাখীর মৌসুমে বৈরী আবহাওয়ার সাথে প্রচÐ গরমে এ সময়ে পর্যটন কেন্দ্রটিতে খুব বেশী লোক সমাগম হবেনা বলে মনে করছেন কুয়াকাটা হোটেল-মোটেলের সাথে সম্পৃক্তরা। লম্বা ছুটির কারণে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সাথে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের কোন যানবাহনেই আসন খালি নেই। এমনিতেই বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার ঢাকা-বরিশাল-ঢাকা রুটের নৌযানগুলোতে থাকে উপচেপড়া ভিড়। এবার এক শুক্রবার থেকে পরের সপ্তাহের শনিবার পর্যন্ত ছুটি থাকায় সরকারি-বেসরকারি কোন নৌযানেই প্রথম শ্রেণী থেকে ভিআইপি শ্রেণীর আসন খালি নেই। রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বরিশাল বিমানবন্দরে বিমান ও ইউএস-বাংলার যে ৬টি ফ্লাইট চলছে তাতে আগামী ৬ মে পর্যন্ত কোন আসন খালি নেই। এমনকি ইউএস-বাংলা বরিশাল-ঢাকা ৭ হাজার টাকায়ও টিকেট বিক্রি করেছে। দীর্ঘ সময় ছুটিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকসমুহ বন্ধ থাকছে। এ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যথেষ্ট দুঃশ্চিন্তায়।
বিশেষ সংবাদদাতা ও কক্সবাজার ব্যুরো প্রধান শামসুল হক শারেক জানান, ভ্রমণ পিয়াসুদের পদচারণায় মুখর পর্যটন শহর কক্সবাজারের বিভিন্ন বিনোদন স্পট। সাধারণত মার্চে পর্যটন মৌসুম শেষ হয়। সর্বশেষ ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি শেষে কক্সবাজারে পর্যটক আগমন কমে যায়। তবে এবার এপ্রিলের শেষ দিক থেকে টানা ৯ দিনের ফুরসতে কক্সবাজারের বিনোদন স্পটগুলো আবারো যেন ভরা পর্যটন মৌসুমের মতোই জমজমাট। পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মতে, লক্ষাধিক পর্যটকের পদভারে মুখরিত হচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকত কক্সবাজার। সরগরম রূপ পাচ্ছে অপূর্ব সুন্দর স্বপ্নীল দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ সড়ক। ফের চাঙ্গা হচ্ছে কক্সবাজারের ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি। এতে টার্নওভার হবে শত কোটি টাকা। প্রচÐ এই গরমের দিনে অতিষ্ঠ রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরকেন্দ্রিক জীবন-যাপনকারী মানুষ। লম্বা ছুটিতে কক্সবাজারই অবকাশ যাপনে প্রথম পছন্দ। ইতোমধ্যে গাড়ির টিকেট ও হোটেল বুকিং দিয়েছেন অনেকেই। কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনে খবর নিয়ে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে প্রতিদিনই হয় হোটেল বুকিং। কেউ কেউ মাসাধিক আগেই হোটেল বুক্ড করেন। কোন কোন হোটেলে ৯/১০ দিন, কোথাও ৫/৭ দিনের জন্য বুকিং হয়েছে। পর্যটকভার সামাল দিতে সতর্ক ট্যুরিস্ট পুলিশসহ কক্সবাজারের প্রশাসন। আর বিভিন্নভাবে সেবায় প্রস্তুত পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের এডিশনাল এসপি রায়হান কাজেমী বলেন, কক্সবাজারের হোটেল মোটেলগুলোতে কোথাও জায়গা নেই। এই ছুটিতে লাখ দুয়েক পর্যটক আসতে পারে। কক্সবাজার সৈকত, দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতসহ সেন্টমার্টিনেও পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সতর্ক বলে তিনি জানান। চকরিয়া ডুলাহাজারায় বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্ক ও মহেশখালীতে পর্যটক পদচারণা বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তারাকা হোটেল সী-গালের সিইও শেখ ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী রুমী জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলে তারাকা হোটেলগুলোতে পর্যটক থাকেন। অপর তারাকা হোটেল দি কক্স টুডের সিইও সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই ছুটিতে কক্সবাজারে অবকাশে আসছেন অনেক ভিআইপিও। লম্বা ছুটির সুবাদে পর্যটক-নির্ভর কক্সবাজারের ঝিমিয়ে পড়া ব্যবসা-বাণিজ্য ফের চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। হরেক রকমের পণ্যসামগ্রীর পসরা সাজিয়ে পর্যটক-ক্রেতাদের জন্য প্রস্তুত প্রতিটি মার্কেট, দোকান-পাট। সব মিলিয়ে আগামী দশ দিনে র্টানওভার হতে পারে শত কোটি টাকারও বেশী।
খুলনা ব্যুরো প্রধান আবু হেনা মুক্তি জানান, কর্মব্যস্ত মানুষ একটু লম্বা ছুটি পেলেই আনন্দ বিনোদন ও মনকে প্রফুল্ল করার জন্য ছুটে যায় প্রকৃতির কাছে। দেশে পর্যটনের অন্যতম আকর্ষণ বিশ্বখ্যাত ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। প্রতিবছর দেশ-বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটকের পিপাসা মিটায় সুন্দরবন। আর সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটনে বছরে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে পরিচিত সুন্দরবন প্রকৃতির অপার দান। লম্বা ছুটির সুবাদে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক ছুটছেন স্বচক্ষে এর রূপ-নিসর্গ উপভোগ করতে। পর্যটকদের যাতে সমস্যা পোহাতে না হয় তার প্রস্তুতি নিয়েছে বন বিভাগসহ সংশ্লিষ্টরা। সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ মাহামুদুল হাসান বলেন, এবার লম্বা ছুটিতে সুন্দরবনে ভ্রমনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে কয়েকটি ট্যুরিস্ট প্রতিষ্ঠান। ভ্রমন স্থানের সৌন্দর্য বর্ধনসহ সুন্দরবনের ভিতরে হাঁটা-চলায় পর্যটকদের যাতে দুর্ভোগ না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখা হবে। সুন্দরবন এলাকার বোট চালক মোঃ রবিউল ইসলাম জানান, এ অঞ্চলে কর্মসংস্থানের তেমন ব্যবস্থা নেই। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পর্যটকদের বোটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। এসব বোট চালিয়ে শত শত পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। মংলার পশুর হোটেল ম্যানেজার জানান, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা সুন্দরবনের প্রাকৃতিক রূপ উপভোগ করতে ছুটে আসে। শতাধিক আবাসিক হোটেলে এবার পর্যটকের চাপ পড়ছে। খুলনা অঞ্চলে অর্থনীতির চাকা সচলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে সুন্দরবন। সুন্দরবনের নদ-নদীতে মাছ শিকার, মধু ও গোলপাতা আহরণের দৃশ্যের পাশাপাশি চপল হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তু, পাখ-পাখালীর বিচরণ দেখে বিমোহিত হন পর্যটকগণ। অনেকেই ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে সুন্দরবনের খাঁটি মধু যা প্রকৃত ওয়াইল্ড হানি কিনে নিয়ে যান।
সিলেট ব্যুরো প্রধান ফয়সাল আমীন জানান, অজানাকে জানা অচেনাকে চেনার বাসনায়, উদার দৃষ্টি অনুসন্ধানী মন নিয়ে প্রকৃতির মাঝে স্বস্তি খোঁজে মানুষ। সেই বাস্তবতায় অন্যতম দর্শনীয় তথা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট। আধ্যত্মিক রাজধানী, পর্যটন নগরী, প্রবাসী নগরী, ইতিহাস ঐতিহ্যে, হ্ওার-বাওরের দেশ যে নামেই বলা হোক সিলেট শীর্ষে। প্রকৃতির অফুরান নান্দনিক সৌন্দর্য্যর রাণী সিলেটে এবার ৯ দিনের ছুটি কাটাতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ছুটে আসছেন অবিরত। এ অঞ্চলের তারকা হোটেলসহ অধিকাংশ হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস অগ্রিম বুকড হয়ে আছে। সিলেটে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অন্যতম লীলাভূমি জাফলং, রাতারগুল জলাভূমির বন, জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, দেশে-বিদেশে সিলেটিদের অবস্থান ও অর্জিত অভিজ্ঞতার মিশেলে তৈরী করা হয়েছে আধুনিক ধাঁচের ঘরবাড়ি, মসজিদ। এমনকি দেশের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মিত হয়েছে এখানে। চোখ জুড়ানো জাফলংয়ে রয়েছে জিরো পয়েন্ট, সারি নদী, চা বাগান, খাসীয়া পল্লী। আধ্যাত্বিক রাজধানী সিলেটভূমি ৩৬০ পীর-আউলিয়ার পদস্পর্শে পবিত্র। হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহ পরাণ (রহ.) ছিলেন উপমহাদেশখ্যাত দরবেশ ও পীর। তাদের মাধ্যমেই ইসলামের প্রসার ঘটে এই অঞ্চলে। কথিত আছে, প্রাচ্য দেশে আসার পূর্বে শাহজালাল (রহ:)-এর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ কবীর (রহ.) তাকে এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেন, ‘স্বাদে বর্ণে গন্ধে এই মাটির মতো মাটি যেখানে খুঁজে পাবে সেখানে বসতি স্থাপন করে ইসলাম প্রচার করবে।’ বিশেষ করে দেশ-বিদেশের পর্যটকগণ এই দুই পীর-আউলিয়ার মাজার জিয়ারতের জন্য সিলেটে একবার হলেও আসার চেষ্টা করেন। পর্যটনের আকর্ষণ সিলেটে আছে জৈন্তাপূর (পুরানো রাজবাড়ী), মাধবকুÐ ও পরীকুÐ জলপ্রপাত, শ্রীমঙ্গল (সবচেয়ে বেশি সংখ্যক চা বাগান, লাউয়াছরা ঘন বন, মাধবপুর লেক), লালাখাল, তামাবিল, হাকালুকি হাওড়, কীনব্রিজ, হাছন রাজা জাদুঘর, দেশের প্রথম চা বাগান সিলেট শহরের মালনীছড়া টি এস্টেট (১৮৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত)। এছাড়া ড্রিমল্যান্ড পার্ক, আলী আমজাদের ঘড়ি, জিতু মিয়ার বাড়ি, মুনিপুরী রাজবাড়ি, মুনিপুরী মিউজিয়াম, শাহী ঈদগাহ, ওসমানী শিশুপার্ক, হামহাম জলপ্রপাত, সাতছড়ি অভয়ারণ্য, রেমা উদ্যান, এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং, বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের বাড়ি, ইস্পাহানী মির্জাপুর চা বাগান, বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট, নীলকন্ঠ (৭ রঙের চা) আরও কত কী।
দিনাজপুর আঞ্চলিক অফিস প্রধান মাহফুজুল হক আনার জানান, আজ শুরু হওয়া টানা ৯ দিনের ছুটিকে কাজে লাগাতে মানুষ যেমন নীড়ে ফিরছে তেমনি দিনাজপুর-রংপুর অঞ্চল ছাড়ছে। ভ্রমন পিপাসুদের আগমনে অফ সিজন হয়ে উঠেছে পর্যটনের পিক সিজন। পর্যটকরা চিত্ত বিনোদনে ঘুরছেন বিভিন্নস্থানে। ব্রিটিশ শাসনামলের জেলা দিনাজপুর-রংপুরে অনেকগুলো ঐতিহাসিক নিদর্শন ছাড়াও হালে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। টেরাকোটার নিদর্শন দিনাজপুরের কান্তজি মন্দির, নয়াবাদ মসজিদ, সুরা মসজিদ, রামসাগরের পাশাপাশি আধুনিককালের বিনোদন স্পট স্বপ্নপুরীতে হাজার হাজার পরিবার, বন্ধুগোষ্ঠির সময় কাটানোর অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। কাঞ্চন জঙ্ঘার অপরূপ দৃশ্য অবলোকনের জন্য পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় বেড়াতে আসার ইচ্ছা থাকে অনেকেরই। উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে তেঁতুলিয়া আসা সহজ। তেঁতুলিয়া উপজেলার মধ্যে বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর অতিক্রম করলেই ভারতের শিলিগুড়ি। এবার ছুটির ফাঁকেও এখানে ভ্রমন পিপাসুদের আগমন বেড়েছে। গুটিকয়েক বাংলো ১৫দিন আগেই বুকড হয়ে গেছে। এ অঞ্চল থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত নানা পেশার মানুষ ফিরছে নাড়ির টানে নিজ নিজ জেলায়। একইভাবে গরমকাল হওয়ায় সময় বেশী অনুকূলে না থাকলেও ছুটি অনুকুল হওয়ায় অনেকেই কক্সবাজার, রাঙ্গামাটিসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে পাড়ি জমিয়েছেন।
পার্বত্য বান্দরবান জেলা স্টাফ রির্পোটার মোঃ সাদাত উল্লাহ জানান, দেশ টানা ৯ দিনের ছুটিতে পড়লেও বান্দরবানে পর্যটকের আনাগোনায় তেমন প্রভাব পড়েনি। সাধারণত এ ধরনের ছুটিতে প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে। বান্দরবান জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন ইনকিলাবকে জানান, সাধারণ পর্যটক না আসলেও এবারের ছুটিতে প্রচুর সরকারি ব্যক্তিবর্গ আসছেন। পুলিশ সুপার জাকির হোসেন মজুমদার বলেন, পর্যটকদের ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এনডিসি আলী নুর খাঁন জানান, সার্কিট হাউজসহ সরকারি কটেজগুলো বুকড হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এ ছুটিতে বান্দরবানে প্রচুর পর্যটক সমাগম ঘটবে। মেঘলা পর্যটন মোটেলের ম্যানেজার রতন বক্সি বলেন, ঈদ ও শীতকালীন ছুটিতে যেভাবে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড় থাকে সেভাবে হোটেল মোটেলগুলোতে প্রভাব পড়েনি। এখনো কোন সিট বুকিং হয়নি। হোটেল গ্রীনহিলের ম্যানেজার আশীষ কুমার ধর বলেন, উত্তরবঙ্গে ধান কাটার মৌসুমসহ টানা ছুটির বিষয়টি অনেকই অবগত না হওয়ার কারণে এখনো হোটেল মোটেলগুলো বুকিং হয়নি। জাতিগত বৈচিত্র্য আর প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের লীলানিকেতন বান্দরবান পার্বত্য জেলা। এখানকার ১৩টি সম্প্রদায়ের বর্ণময় কৃষ্টি-সংস্কৃতি, তাদের জীবনাচার এবং পাহাড়ি-বাঙ্গালির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের আকৃষ্ট করে। বিস্তৃত পর্বতরাজির কোল ঘেঁষে এঁকেবেঁকে বয়ে চলা চঞ্চলা নদী সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে সবুজের মেলা, বয়ে চলা পাহাড়ি ঝরনা। নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের কারণে বান্দরবান দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে। এবার ছুটিতে যারা আসছেন তারা দেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং, দ্বিতীয় পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং, বাংলার দার্জিলিংখ্যাত সেনাবাহিনী পরিচালিত পর্যটনকেন্দ্র নীলগিরি, চিম্বুক, জিয়া পুকুর, কিংবদন্তীর বগা লেক, জেলা প্রশাসন পরিচালিত মেঘলা, প্রান্তিক লেক, নীলাচল, পাহাড়ি ঝরনাধারা শৈলপ্রপাত, রিজুক, রূপমুহুরী, বন প্রপাত, শুভ্রনীলা, নৈসর্গিক শোভামন্ডিত মিরিঞ্জাসহ অসংখ্য পর্যটন স্পট ভ্রমণ বিলাসী পর্যটকদের মুগ্ধতায় ভরে দেয়।
পার্বত্য রাঙামাটি জেলা সংবাদদাতা সৈয়দ মাহাবুব আহামদ জানান, এবার পবিত্র রমজানের পূর্বে এপ্রিলের শেষ দিকে ও মে মাসের শুরুতে অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা, কল-কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সরকারি ছুটির সুবাদে নিরন্তর কর্মব্যস্ত মানুষজন তাদের পছন্দের পর্যটন স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এর হাওয়া এসে পড়েছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা রাঙ্গামাটিতেও। শহরের হোটেল মোটেল সরকারি গেস্ট ও রেস্ট হাউজগুলো আগাম বুকিং হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে পর্যটক আগমন বেড়েছে। সপ্তাহকালে রাঙ্গামাটিতে কমপক্ষে ২০ হাজার পর্যটক আগমনের সম্ভাবনা রয়েছে। রাঙ্গামাটি পর্যটকদের জন্য বেশ এক উপভোগ্য স্থান। পাহাড় বন-জঙ্গল ও বৃহৎ হ্রদের মিলন চোখ জুড়ায়। সুবলংয়ে বেড়াতে গেলে অপূর্ব সৃষ্ট হ্রদের দুই ধারে বিশাল আকারের মাথা উচু করা স্তরে স্তরে পাথর বসানো ও গুছানো পাহাড়রাজি যেন পর্যটকদের অভ্যর্থনা জানায়। দু’পাশে চোখে পড়বে বেশ কিছু পাহাড়ি ঝরনা। অন্যতম আকর্ষণ ভেদভেদি হ্রদের কোলে সেনাবাহিনী পরিচালিত মোটেল আরন্যক ও এর পাশাপাশি হ্যাপী আইল্যান্ড, শহরের অদূরে কাপ্তাই পথে বালুখালি পাহাড়ের ধার ঘেঁষে খাবার ঘর ও বিশ্রামাগার চাংপাং, পেদা টিং টিং, টুক টুক ইকো ভেলেজ, বড়গাং, বেড়ান্যা। তবলছড়ি বাজার পেরিয়ে ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত ব্রিজ অনায়াসে পর্যটকদের মন কেড়ে নেয়। রাঙ্গামাটি বেড়াতে এসে পর্যটকগণ ঐতিহ্যবাহী উপজাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প-সামগ্রী কিনে নিয়ে যান ভ্রমণকে স্মরণীয় করে রাখতে।



 

Show all comments
  • সাদমান আরিফ মাহমুদ ২৭ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:৪১ এএম says : 0
    'বিউটিফুল বাংলাদেশ' কে তুলে ধরার জন্য দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ। ৯ দিনের অবকাশ সকলের জন্য হোক নিরাপদ, সুন্দর ও আনন্দদায়ক।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মায়াময়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ