পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রুমু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : লালদীঘি ময়দানে ঐতিহ্যবাহী আবদুল জব্বারের বলীখেলায় এবার শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ও শিরোপা লড়াইয়ে বিজয়ী হয়েছেন কক্সবাজার জেলার চকরিয়ার জীবন বলী। গতকাল (বুধবার) ১০৯তম আসরে ১৭ মিনিটের শ্বাসরুদ্ধকর চূড়ান্ত লড়াইয়ে কুমিল্লার শাহজালাল বলীকে ধরাশায়ী করে চ্যাম্পিয়ন হন জীবন বলী। জমজমাট এ বলীর লড়াইকে ঘিরে লালদীঘি ময়দানে হাজারও মানুষের ভিড় জমে। জনতার উল্লাস আর করতালির মধ্যে এ দুই বলী লড়াই করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার টেকনিক্যাল সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে শাহজালাল বলী। শাহজালাল বারবার প্রতিপক্ষের মাথা এবং পা ধরে ফেলে। এটি বলীখেলার নিয়মের বাইরে। মূল রেফারি সাবেক ফুটবলার ও এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এম এ মালেক এ নিয়ে শাহজালাল বলীকে তিনবার সতর্ক করেন। কিন্তু চতুর্থবারও লড়াই করতে গিয়ে ফের একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটালে মূল রেফারি জীবন বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেন। এ নিয়ে পরাজিত শাহজালাল বলী প্রতিবাদ করলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে রেফারি বলেন, বলীখেলার কিছু নিয়ম-কানুন আছে। উভয়ই শক্তি ও কৌশলের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। কেউ কারো চেয়ে কম ছিল না। কিন্তু শাহজালাল বলী কিছুটা নিয়ম-কানুন না মানায় তাকে তিনবার মৌখিকভাবে সতর্ক করেছিলাম। কিন্তু চতুর্থবার একই পথ অবলম্বন করায় জীবন বলীকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করেছি।
গত এক যুগের বেশি সময় ধরে জব্বারের বলীখেলায় সেরা মুকুট পরা মুখটি ছিল একেবারেই পরিচিত। হয় দিদার বলী না হয় মর্ম সিং ত্রিপুরা। কিন্তু গত আসরে নিজের শেষ খেলাটি খেলেছেন দিদার বলী। সেই আসরেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন তিনি। তার আগে এ বলীখেলায় মর্ম সিং ত্রিপুরা বিদায় নিয়েছিলেন। তাই এবারের শতবর্ষের ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলায় নতুন কে চ্যাম্পিয়ন হবে তা নিয়ে দর্শকদের ছিল নানা হিসাব-নিকাশ। আর সেই চ্যাম্পিয়নকে বরণ করতে আয়োজক কমিটি সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছিলেন। বিপুল সংখ্যক দর্শক গতকাল জব্বারের বলীখেলায় নতুন চ্যাম্পিয়নকে দেখতে আনন্দ-উল্লাস নিয়ে হাজির হয়েছিলেন লালদীঘি মাঠে। প্রখর রৌদ্র আর তীব্র গরম উপেক্ষা করে চূড়ান্ত লড়াই উপভোগ করতে ভিড় জমিয়েছিল হাজার হাজার মানুষ। ফাইনালে চকরিয়া ও কুমিল্লার লড়াইয়ের নৈপুণ্য আর কলাকৌশল দেখে বাধভাঙ্গা উচ্ছাসে ফেটে পড়ে দর্শকরা।
খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধান অতিথি সিটি মেয়র ও সিজেকেএস-এর সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। চ্যাম্পিয়নকে ২০ হাজার টাকা ও ট্রফি এবং রানার্স আপকে ১৫ হাজার টাকা ও ট্রফি তুলে দেন প্রধান অতিথি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলালিংক ডিজিটাল কমিউনিকেশনস লিমিটেডের রিজিওনাল ডিরেক্টর সৌমেন মিত্র। এর আগে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মাসুদ উল হাসান এ বলীখেলার উদ্বোধন করেন। গত কয়েক বছরের ন্যায় এবারও স্পন্সর করেছে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংক। মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন খেলার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী এ বলীখেলা উপভোগ করেন।
এবারের বলীখেলায় ভোলা, আনোয়ারা, চকরিয়া, উত্তর পতেঙ্গা, মহেশখালী, বাঁশখালী, কক্সবাজার, চকবাজার, রাউজান, ফেনী, হাটহাজারী, ফিরিঙ্গীবাজার, কুমিল্লা, বাকলিয়া, ফটিকছড়ি, টাঙ্গাইলসহ চট্টগ্রাম এবং দেশের বিভিন্ন জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা নবীন ও প্রবীণ মিলে ১০২ জন বলী অংশ নেয়। ২০ ফুট বাই ২০ ফুট এবং ৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট লালদীঘি মাঠে তৈরী করা হয় বলীর মঞ্চ। প্রাথমিক রাউন্ডে ৩৮ জন বলীর বিজয়ের মধ্যদিয়ে দুই সেমিফাইনালে চকরিয়ার জীবন, উখিয়ার জয়নালকে এবং কুমিল্লার শাহজালাল, মহেশখালীর হোসেন বলীকে হারিয়ে ফাইনালে উঠে।
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামে যুব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও শারীরিকভাবে সক্ষম করে তুলতে নগরীর বদরপাতি এলাকার আবদুল জব্বার সওদাগর ১৯০৯ সালে বলীখেলার সূচনা করেন। তারপর থেকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ঐতিহাসিক জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা উপমহাদেশে বাঙালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাংস্কৃতিক ও অহংকারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আবদুল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা এখনও ধরে আছে তার কীর্তিময় ইতিহাস। তাই বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় লোকজ উৎসব হিসেবে এটাকে চিহ্নিত করা যায়। আবদুল জব্বারের বলীখেলাকে ঘিরে গত মঙ্গলবার থেকে তিনদিনব্যাপী বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। মেলায় লোকসমাগমও বাড়ছে।
আন্দরকিল্লা, বোস ব্রাদার্স, রাইফেল ক্লাব, কোতোয়ালী মোড়, জেল রোড ও লালদীঘির পাড়ে দোকানিদের অনেকেই পছন্দের জায়গা নিয়ে বসে গেছেন পসরা নিয়ে। বরাবরের মতো হাত পাখা, ফুলের ঝাড়ু আর গৃহস্থালির সামগ্রী এসেছে এবারও। হাত বাড়ালেই মেলায় পাওয়া যাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় গৃহস্থালির পণ্য দা, বটি, ছুরি, পিঠা তৈরির পিঁড়ি, বেলচা, মাটির তৈরির কারুকার্যখচিত আকর্ষণীয় মাটির ব্যাংক, ফুলের টব, ফুলদানী, শোপিচ, শীতল পাটি, গাছের চারা, বাঁশ ও বেতের তৈরি মোড়া, বাচ্চাদের খেলনা, বাঁশি, মুড়ি-মুড়কি, ফলমূল আর গহনা। আরো আছে চুড়ি-ফিতা, রঙিন সুতা, হাতের কাঁকন, নাকের নোলক, ঢোল, কাঠের তৈরি পুতুল, নকশী কাঁথা, খাঁচার পাখি ও মাটির কলস। সারাবছর মহানগরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনে এই মেলার জন্য। তারা বছরের গৃহস্থালি সামগ্রী এই মেলা থেকে সংগ্রহ করেন। আজ বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শেষ হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।