Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঁশখালী সংঘাতের নেপথ্যে ভূমি দালাল চক্র

প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৩৬ পিএম, ৫ এপ্রিল, ২০১৬

শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : চট্টগ্রামের সবচেয়ে দুর্গম উপজেলা বাঁশখালী। আর বাঁশখালীর প্রত্যন্ত দুর্গম ও সুবিধাবঞ্চিত সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা গ-ামারা। সেখানে ২০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পোদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে চীনের দুটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ৬শ’ একর বিস্তীর্ণ জমির প্রায় পুরোটাই কেনা হচ্ছে গ-ামারা এলাকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই। এসব জমির বেশিরভাগই ওই অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র শ্রেণির প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লবণ মাঠ আর ধানি জমি। তবে সবচেয়ে লক্ষণীয় দিকটি হচ্ছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রের জমি কেনার জন্য উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে কেউ সরাসরি জমির মালিকদের কাছে যাচ্ছে না। আবার জমির মালিক তথা এলাকাবাসীও সরাসরি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তাদের কাছে ভিড়তেও পারছে না। কেননা এ কাজে শুরু থেকেই জড়িয়ে পড়েছে সুবিধাভোগী স্থানীয় একটি ভূমি দালাল চক্র। অত্যন্ত কুটিল ও ধূর্ত এবং সংঘবদ্ধ ভূমি দালাল চক্রের সদস্যরা নানা ছলচাতুরীর মাধ্যমে সেখানকার সাধারণ মানুষকে ভূমির ন্যায্য বা উপযুক্ত দাম পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে, এমনকি অনেককেই সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসাচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে গোড়া থেকেই। এ যেন ‘নেপৈ মারে দই’! গ-ামারার খেটে খাওয়া মানুষ তাদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়ি, ধানি জমি, লবণের মাঠ বেচতে গিয়ে ন্যায্য দাম থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে। অনেকেই হচ্ছে প্রতারণার নির্মম শিকার। কারও জমির মূল্য যদি ৫ লাখ টাকা হয় দালালচক্র পকেটে ভরছে ৩-৪ লাখ টাকা। অবশিষ্ট ক্ষুদ্র অংশমাত্র জুটছে নিরীহ জমি বিক্রেতার হাতে। জমির দলিল কিংবা ওয়ারিশ সূত্রে মালিকানা নিয়ে বিরোধ ও জটিলতার অজুহাত তুলে ধূর্ত দালাল চক্র অনেকের পাওনা পরিশোধে গড়িমসি করছে। এভাবে অনেককে পথে বসানো হচ্ছে। সোমবারের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর সেই ভূমি দালালরা গা-ঢাকা দিয়েছে।
সুবিধা হাতানো স্থানীয় দালাল চক্রের লোকজনরা দিনে দিনে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। জমির প্রান্তিক মালিকদের বঞ্চিত করা ছাড়াও দালালদের কেউ কেউ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের কাছ থেকেও নানা অপকৌশলে অঘোষিত বখরা বা চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে। দালাল ও টাউট শ্রেণির কর্মকা- নিয়ে স্থানীয় জনমনে ক্ষোভ, অসন্তোষ চলে আসছে গত বেশকিছুদিন ধরেই। সেখানে গত সপ্তাহেও সর্বস্তরের এলাকাবাসী রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভে সামিল হয়। সাধারণ মানুষের নিদারুণ একের পর এক বঞ্চনার ফলে সৃষ্ট পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটে সোমবার। এতদিন শান্ত এলাকায় বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠা গ-ামারার হাজারো মানুষ প্রতিবাদ জানাতে গেলে উপজেলা প্রশাসন আচমকা ১৪৪ ধারা জারি করে। এ অবস্থায় এলাকাবাসী বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে গেলে পুলিশি হামলার শিকার হয়। নির্বিচারে পুলিশের গুলিতে ২ ভাইসহ ৪ জন মানুষ প্রাণ হারায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছে আরও অন্তত ৩০ জন। বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির ব্যানারে গ-ামারা হাজীপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবাদ সভার বিপরীতে দালালচক্রের ইন্ধনে পাল্টা সভা ডাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা। এ অবস্থায় গত কিছুদিন ধরে গ-ামারা এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বা এরজন্য জমি বেচাকেনা নিয়ে পক্ষে ও বিপক্ষে দু’ভাগে অবস্থান নেয় এলাকাবাসী।
আর এই ঘটনাকে পুঁজি করে স্থানীয় প্রশাসন হঠাৎ করে সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। ভিটেবাড়ি হারানোর আশঙ্কায় বঞ্চিত হাজারো গ্রামবাসী ১৪৪ ধারা ভেঙে সেখানে বিক্ষোভ করেন। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, পুলিশ নিরস্ত্র জনতার উপর নির্বিচারে গুলি করেছে। গুলিতে নিহত হয়েছে ৪ জন। অসংখ্য মানুষ গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে। চমেক হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত চিকিৎসাধীন দু’জনের অবস্থা চিকিৎসকদের মতে সংকটজনক। এর মধ্যে একজনের গলার একপাশ দিয়ে গুলি ঢুকে আর একপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এদিকে গত সোমবার বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়ে পিছু হটে পুলিশ। গ-ামারা এলাকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ নিয়ে নেয় বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। এলাকার মোড়ে মোড়ে পাহারা বসিয়ে গ্রামবাসী ভূমি দালালচক্রের সদস্যদের খুঁজতে থাকে। লাশ নিয়ে সোমবার রাতে এলাকায় মিছিল করে স্থানীয়রা। পুরো গ-ামারা এখনও থমথমে, অগ্নিগর্ভ। গ্রামের সাধারণ মানুষ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র ঠেকাতে ঐক্যবদ্ধ।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাদের কোন ক্ষোভ নেই। এ ধরনের একটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অবহেলিত গ-ামারার উন্নয়ন হবে একথা বিশ্বাস করেন এলাকার প্রায় সবাই। এজন্য তারা তাদের বাপ-দাদার ভিটেবাড়িও দিতে রাজি। কিন্তু তারা জমি বিক্রি করতে গিয়ে দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে। উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরাসরি জমির মালিকদের কাছ থেকে জমি না কেনায় সাধারণ লোকজনও বিপাকে পড়ে। তারা বাধ্য হয়ে দালালচক্রের কাছে জমি বিক্রি করতে যায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, জমি বিক্রিকে কেন্দ্র করে এলাকায় এলাকায় দালাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠে। এসব সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-ক্যাডাররা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এরা কৌশলে আগে দলিল ও খতিয়ান নিয়ে নেয়। এরপর নিজেরা যাচাই-বাছাই করার কথা বলে ওই দলিল আটকে রাখে। কয়েকজন জমির মালিক অভিযোগ করেছেন, দালালচক্রের সদস্যরা এস আলমের কাছে চড়াদামে জমি বিক্রি করে সাধারণ লোকজনকে তার চেয়ে অনেক কম টাকা পরিশোধ করেছে। অনেক জমির মালিকের কাছ থেকে যে পরিমাণ জমি নেয়ার কথা তারচেয়ে বেশি জমি দলিল করে নেয় দালালচক্র। সুবিধাবঞ্চিত চাষীরা নানাভাবে বঞ্চণার শিকার হয়। সাধারণ মানুষ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করে ন্যায্য দাম পায়নি। অন্যদিকে দালাল চক্র দুই হাতে টাকা কামিয়েছে। তাদের অনেকে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। বঞ্চনা থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ পুঞ্জীভূত হতে থাকে। এ অবস্থায় সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির তোড়জোড় শুরু হলে মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। বসতবাড়ি রক্ষা কমিটির নামে প্রতিবাদী গ্রামবাসী একটি সংগঠন গড়ে তোলে ঐক্যবদ্ধ হয়।
বেশকিছুদিন ধরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল, সমাবেশ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছিল। পরিবেশ বিপর্যয় ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় বিপুলসংখ্যক মানুষ বাপ-দাদার ভিটেমাটি হারাবে এমন আশঙ্কা থেকে স্থানীয় একটি পক্ষ শুরু থেকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতা করে আসছে। এলাকায় এ নিয়ে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি দেখা দিলে গত ২৩ মার্চ পুলিশের উদ্যোগে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, ইউএনও শামসুজ্জামান ও ওসি স্বপন কুমার মজুমদারের উপস্থিতিতে গ-ামারা ইউনিয়নের সকাল বাজারে এক শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে ৩০ হাজারেরও বেশী মানুষ অংশগ্রহণ করেন। ওই সমাবেশ থেকে স্থানীয় জনগণ বাঁশখালীর লোকালয়ে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প না করতে প্রশাসনের কাছে দাবি জানায়। পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনমত উপেক্ষা করে এখানে কয়লা প্রকল্প না করতে সরকারের উর্ধ্বতন মহলকে জানানো হবে বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেন। এরপর এলাকার পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ হয়ে এলেও গত শনিবার বিকেলে ব্যবসায়ী শহিদের নেতৃত্বে কয়লা প্রকল্পের লোকজন এলাকা পরিদর্শনে গেলে স্থানীয় লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে তাদের বহনকারী দু’টি অটোরিক্সা ও ৩টি মোটরসাইকেল। এ নিয়ে মামলা হলে পুলিশ সোমবার ভোরে অভিযান চালিয়ে গ-ামারা থেকে আসত আলী, হুমায়ুন কবির, শাহ আলম, বখতেয়ার ও লোকমানসহ ৭ জনকে আটক করে। তাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে বিকাল ৩টায় সমাবেশের ডাক দেয় বসতভিটা রক্ষা কমিটি। সেখানে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারায় ৪ জন।
একই পরিবারের নিহত তিনজন হলেন গ-ামারা ইউনিয়নের চরপাড়ার আশরাফ আলী বাড়ির মরতুজা আলী (৩৫) ও মো. আনোয়ারুল ইসলাম (৪৪), তাদের বোনের স্বামী জাকের হোসেন (৩০)। জাকেরকে সোমবার রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরা তিনজনই লবণের মাঠে কাজ করতেন। মরতুজার চার মেয়ে, দুই ছেলে, আনোয়ারের তিন মেয়ে, এক ছেলে এবং জাকেরের চার ছেলে রয়েছে। নিহত অপরজন হলেন একই ইউনিয়নের রহমানিয়া সিনিয়র মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা জাকের আহমদ।
৬ হাজার গ্রামবাসীর বিরুদ্ধে মামলা
গ-ামারায় গ্রামবাসীর সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত তিনজনের পরিবার দুটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আর সরকারি কাজে বাধা ও হামলার অভিযোগে অন্য মামলাটি দায়ের করেছে পুলিশ। বাঁশখালী থানার ওসি স্বপন কান্তি মজুমদার বলেন, পুলিশের মামলাটির বাদী থানার এসআই বাহার মিয়া। ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে এ মামলার এজাহারে অজ্ঞাতপরিচয় তিন হাজার দুইশজনকে আসামি করা হয়েছে। সংঘর্ষে মরতুজা আলী ও আংকুর মিয়া নিহতের ঘটনায় অংকুরের বড়ভাই মৌলভী বশির একটি হত্যা মামলা করেছেন। এতে ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। অন্য হত্যা মামলাটি করেছেন নিহত জাকির আহমেদের (৫৫) স্ত্রী মনোয়ারা বেগম। তার মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। নিহত মো. জাকেরের (৩২) পরিবার কোনো মামলা করেনি বলে জানান ওসি। সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে চার পুলিশসহ ১১ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তদন্ত কমিটি
বাঁশখালীর এ ঘটনা তদন্তে এক সদস্যের একটি কমিটি করেছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মমিনুর রশিদ জানান, তাকে এই তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। বাঁশখালীর গ-ামারা ইউনিয়নের গ-ামারা গ্রামে এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে-বিপক্ষে দুই গ্রুপের উত্তেজনাকে ঘিরে পুলিশ-আনসার ও গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে চারজন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. মমিনুর রশিদকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। সোমবার রাতে এ কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এ প্রসঙ্গে মমিনুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, এ ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কমিটি কাজ শুরু করবে।
গুলিবর্ষণ এড়ানো যেত?
বাঁশখালীর গ-ামারার মতো একটি প্রত্যন্ত অজপাড়াগাঁয়ে পুলিশের গুলিবর্ষণের মতো এমন কী পরিস্থিতি ছিল? এ প্রশ্নটি ছিল গতকাল সর্বস্তরের চট্টগ্রামের মানুষের মুখে মুখে। ভিটেবাড়ি হারানোর আশঙ্কা থেকে গ্রামের সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ সমাবেশ করছিল। এ অবস্থায় পুলিশ সেখানে কেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলো সে প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে। পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি জানতে চেয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছে। সরকারের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। তবে প্রশাসনের স্থানীয় কর্মকর্তারা বলছেন, তারা বাধ্য হয়ে গুলি করেছে। জনতা এতটাই বিক্ষুব্ধ ছিল তারা পুলিশ ও আনসার সদস্যদের ঘেরাও করে ফেলে। থানার ওসি দাবি করেন, পুলিশ সদস্যদের জীবন বাঁচাতেই তারা অ্যাকশানে গেছে। একই কথা বললেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুজ্জামানও। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল যে, আমরা কেউ সেখান থেকে জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারব এ আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। স্থানীয়রা জানায়, পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় স্থানীয়রা আরও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
আজ বাঁশখালীতে হরতাল
বাঁশখালীর গ-ামারায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত গ্রামবাসীর ওপর নির্বিচারে গুলি ও হতাহতের ঘটনার প্রতিবাদে আজ (বুধবার) বাঁশখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ছাত্র ঐক্য ফোরাম। গতকাল চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে হরতালের ডাক দেন ফোরামের আহ্বায়ক শাহনেওয়াজ চৌধুরী। মানববন্ধনে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাঁশখালী ছাত্র ঐক্য ফোরাম, বাঁশখালী স্বপ্নতরী সংঘ, গণসংহতি সমিতি চট্টগ্রামসহ বেশ কিছু সংগঠনের নেতা-কর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুনসহ অংশ নেন। শাহনেওয়াজ চৌধুরী বলেন, সভ্য সমাজে এ ধরনের জঘন্য ঘটনা মেনে নেয়া যায় না। এস আলম গ্রুপের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালানো হয়েছে। চারজন নিহত হয়েছে। অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। ঘরে ঘরে কান্নার রোল পড়েছে। এ অবস্থায় ছাত্রসমাজ বসে থাকতে পারে না। তাই আমরা বুধবার বাঁশখালীতে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছি। এর মধ্যে যদি নিহতদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় খরচ দেয়া না হয়, অজ্ঞাতনামা আসামির নামে মামলা দিয়ে হয়রানির যে চক্রান্ত তা যদি বন্ধ করা না হয় তবে আরও বড় কর্মসূচি দেয়া হবে। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেতা শাহ আলম, মৃণাল চৌধুরী, গণমুক্তি ইউনিয়নের নাসির উদ্দিন আহমদ, বাসদের মহিনউদ্দিন, রাজা মিয়া, মাওলানা ভাসানী ফাউন্ডেশনের সিদ্দিকুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমি, চৌধুরী জসিম উদ্দিন প্রমুখ।



 

Show all comments
  • Saiful Islam ৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:৪২ পিএম says : 0
    জনগনের অর্থ দিয়ে পুলিশের অস্ত্র কেনা হয়,,সেই অস্ত্র দিয়ে জনগনকে মারে,,,হারে দেশ,,
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঁশখালী সংঘাতের নেপথ্যে ভূমি দালাল চক্র
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ