পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সম্প্রতি মুন্সিগঞ্জের এক মাদরাসায় খতমে বুখারী অনুষ্ঠানে শত বছরের নিয়ম ভেঙ্গে ওলামা মাশায়েখের মঞ্চে উপবিষ্ট হন দুই সরকার দলীয় এমপি। মৃনাল কান্তি দে ও সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি। বিষয়টি অভিনব হওয়ায় কওমী মহলে আলোচনার ঝড় উঠে। ফেইসবুকেও বিষয়টি আলোচনার তুঙ্গে উঠে পড়ে। এ নিয়ে এই প্রতিনিধির কথা হয় বিশিষ্ট কওমী আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ মুফতি আবু খায়ের কাসেমীর সাথে। তিনি বলেন, কওমী মাদরাসা গুলোর শিক্ষাবর্ষ শুরু হয় আরবী শাওয়াল মাসে। শেষ হয় রমজানের আগে। তখন দেখা যায়, পাঠ শেষ হওয়ার কিছু অনুষ্ঠান। কেউ কোরআন খতম করে, কেউ হেফজ করে। বিশেষ করে শেষ উচ্চ শ্রেণী তাকমিল বা দাওয়ায়ে হাদীসের ছাত্ররা শিক্ষা জীবন শেষ করে । কওমীদের সমাবর্তনের নাম দস্তারবন্দী। শব্দটি ফার্সি। বাংলা অর্থ পাগড়ী প্রদান অনুষ্ঠান। এর পাশাপাশি হাদীসের সিহাহ সিত্তা বা বিশুদ্ধতম ষষ্ঠ হাদীসগ্রন্থ সমূহের সমাপ্তি। যার সেরা কিতাবটির নাম বুখারী শরিফ। বুখারী রীতিমত পাঠ শেষ করে দোয়া করলে তা কবুল হয় বলে ১২০০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে। এমনিতে ঐতিহ্য হলো, সারা বছর অন্তত বুখারীর পাঠে কোনো ছাত্র বা শিক্ষক অজু ছাড়া থাকেন না। দেশের সেরা মুহাদ্দিসরাই বুখারী পড়ান, তাদের বলা হয় শাইখুল হাদীস। সব মাদরাসায় দেখা যায়, যারা হাদীস পড়ান তাদের চেয়ে বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ ও বুযুর্গ শাইখুল হাদীসদের দ্বারা বুখারীর শেষ পাঠটি দেওয়া হয়। যার নাম খতমে বুখারী। এসময় বিদায়ী ছাত্ররা তাদের অভিভাবকদের দাওয়াত করেন। তাবাররুক রান্না হয়। কওমী মাদরাসায় এটি অতি পবিত্র ও আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান। এবছর দেশের হাজার হাজার মাদরাসায় খতমে বুখারী অনুষ্ঠান হয়েছে। দেওবন্দ থেকে আগত বুযুর্গগণ ছাড়াও দেশের সেরা শাইখুল হাদীসগণ এসব খতম করান। গত ক’দিন আগে এমনই এক খতমে বুখারী অনুষ্ঠানে দেখা গেছে একটু অন্যরকম চিত্র। অনুষ্ঠানের মঞ্চে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড এর কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মুফতি আবু ইউসুফ, বেফাকুল মাদারিসিদ দ্বীনিয়া এর চেয়ারম্যান ও শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দীন মাসউদ, সরকার দলীয় এমপি মৃণাল কান্তি দে ও সরকার দলীয় মহিলা এমপি সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বসা আছেন। অনেকে মনে করছেন, কওমী সনদের স্বীকৃতি কাছাকাছি চলে আসায় কওমী অঙ্গনে এমন দৃশ্যের অবতারণা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে ইনকিলাবকে নিজের অনুভূতি জানিয়ে ফোন করেছেন অনেকেই। চট্টগ্রামের দারুল কোরআন মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা ইলিয়াস আহমাদ বলেন, উদারতার নামে কেউ কেউ ইসলামের অবমাননা করছেন। হাদীস কোরআনের ও দ্বীনি প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা হানী করছেন। ইসলাম সবধর্মের সহাবস্থান কামনা করে। কিন্তু সবধর্মের জগাখিচুড়ি পাকিয়ে অধর্ম সৃষ্টি করা কোনো মুসলমান সমর্থন করতে পারে না। বাদশাহ আকবর যেমন দ্বীনে এলাহি করেছিল ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য। দেব-দেবী ও মূর্তি পূজার আবরণে ইসলামের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার জন্য। যার বিরুদ্ধে ঈমানদার মানুষ রুখে দাঁড়িয়ে ছিলেন। জীবনের বিনিময়ে যুগে যুগে তারা ইসলামের সঠিক রূপটি রক্ষা করেছেন। উদার সহনশীল তারাও ছিলেন। বর্তমানে আমরাও আছি। এর অর্থ এই নয় যে, সর্বধর্মের নামে আল্লাহ ও রাসুল সা. কে অপমান করা। পটিয়ায় রাস্তায় রাস্তায় কে বা কারা পোস্টার লাগিয়েছে সর্বধর্মের সহাবস্থানের নামে। এতে দেখা গেছে, মূর্তির পায়ের কাছে আরবীতে ‘আল্লাহু’ লেখা। হনুমানের পায়ের কাছে ‘আল্লাহু’ নামের ছাপ। এসব জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিতে পারে। শুনেছি নতুন আইনে এধরনের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগার বিষয়ে কিছু বলা, লেখা ও অনলাইনে প্রকাশ করা খুব বড় অপরাধ। জানতে পেরেছি, এ নিয়ে মামলা হলে বিনা জামিনে ১৪ বছর জেল। জানিনা এসব আইনের খেলাপ হচ্ছে কি না। কিন্তু আমি ৭৩ বছর বয়সে দেব-দেবী ও হনুমানের পায়ের নিচে ‘আল্লাহু’ ছাপা পোস্টার সহ্য করতে পারছি না। সরকার, প্রধানমন্ত্রী, র্যাব, পুলিশ ও সাংবাদিকগণ সবাই আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। খতমে বুখারী অনুষ্ঠানের মতো দোয়া কবুলের স্থানে বেপর্দা মহিলা ও অমুসলিম অতিথি নিয়ে কিছু আলেম যেভাবে অনুষ্ঠান করছেন, সেটিও আমার ঈমান ও অনুভূতিতে আঘাত দিচ্ছে। সাধারণ মুসলমানরাও মনে কষ্ট পাচ্ছেন। বেফাক ও অন্যান্য বোর্ডকে অনুরোধ করি শরীয়তের বাইরে কোনো হেকমত নাই। অতীত মুরব্বীদের রীতি-নীতি ভাঙ্গার মধ্যে কোনো কামিয়াবী নাই। আমাদের মতো যারা বৃদ্ধ হাফেজ আলেম তাদের দিলের ব্যথা সকলেই শুনবেন এই আশা রাখি। হাইয়াতুল উলইয়া প্রধান হিসাবে সকলের মুরব্বী আল্লামা শাহ আহমাদ শফী দা. বা. এবং তার নিকটতম সহকারী আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর কাছেও দাবী রাখি তারা যেন আল্লাহর নাম, বুখারী শরিফ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের শান ও মান বজায় রাখার জন্য উলামায়ে কেরামকে দিক নির্দেশনা দেন। হেফাজতে ইসলামের লক্ষ্য উদ্দেশ্য এটাও ছিল। জানিনা এখন সবকিছু কেন খাপছাড়া মনে হচ্ছে। এই দুই মুরব্বীর পাশাপাশি আমার শ্রদ্ধাভাজন সারাদেশের মুরব্বী আলেমগণের প্রতিও একই অনুরোধ রইল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।