পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও মাঠের বিরোধী দল বিএনপির মধ্যে চলছে ‘কথার যুদ্ধ’। এক পক্ষ চিকিৎসা নিয়ে কোনো কথা বললে সঙ্গে সঙ্গে অন্য পক্ষ পাল্টা বক্তব্য দিচ্ছেন। বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে এই পাল্টাপাল্টি মিডিয়াগুলো নিজেদের মতো করে প্রচার করছে।
প্রশ্ন হচ্ছে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে ‘দুই দলের নেতাদের কথার যুদ্ধ’ কেন? কেন এই ধু¤্রজাল? তাঁর সুচিকিৎসা হবে দেশবাসীর সেটাই কাম্য। কোনো কারাবন্দী অসুস্থ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া কারা কর্তৃপক্ষ্যের দায়িত্ব। বেগম খালেদা জিয়া সাধারণ কোনো কারাবন্দী নন। তিনি তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী এবং বর্তমানে দেশের দুই শীর্ষ নেত্রীর একজন। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নিত্যদিন যার খোঁজ-খবর রাখছেন; সেই ব্যাক্তির চিকিৎসা সেবায় হেলাফেলা কি কাম্য? বেগম জিয়ার চিকিৎসা ইস্যুতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা যতই তর্ক যুদ্ধ করুক; একে অপরের বিরুদ্ধে কথার মিশাইল-ক্ষেপনাস্ত্র-এ্যাটমবোমা ছুঁড়–ক না কেন; দেশের মানুষ চিন্তিত। বেগম জিয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দৃশ্যমান দেখতে চায়। বেগম জিয়ার অসুস্থতার খবর শুনে তাঁর রোগমুক্তির দাবিতে সারাদেশে মিলাদ মাহফিল ও দোয়া-মুনাজাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মসজিদের মসজিদের দোয়া এবং অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা হচ্ছে তার রোগমুক্তির জন্য। বেগম জিয়ার অসুস্থতার খবর মিডিয়ায় পড়ে মানুষ মানুষ উদ্বিগ্ন-উৎকষ্ঠিত। অথচ ---।
বেগম খালেদা জিয়া ৮ ফেব্রæয়ারী বেশ সুস্থ অবস্থায় আদালতে যান। মগবাজারে হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিছিল করতে দেখে গাড়ী থেকে নেমে কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে আবার গাড়িতে ওঠেন। কারাগারে নেয়ার কয়েকদিন পর বিএনপির পক্ষ্য থেকে অভিযোগ করা হয় বেগম জিয়া অসুস্থ। কারাগারে সূর্যের আলো ছাড়া স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে রাখায় তাঁর আকস্মিক অসুস্থতা। বিএনপির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয় তিনি নতুন করে ঘাড়, মেরুদÐ ও স্নায়ুবিক সমস্যায় ভুগছেন। বহুদিন থেকে হাটুর চিকিৎসা করছেন। চিকিৎসকদের পরিভাষায় বয়সগত কারণেই বেগম জিয়া একজন বিশেষ পরিচর্যা সাপেক্ষ রোগী। বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তাঁর ইচ্ছা মতো দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করানোর সুযোগ দেয়ার দাবি জানানো হয়। প্রথমে সরকারের পক্ষ থেকে বেগম জিয়ার সর্দিজ্বর হয়েছে বলা হয়। কুমিল্লার একটি নাশকতার মামলায় ২৮ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজির করার কথা ছিল। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাকে হাজির না করে জানায় অসুস্থতার জন্য আদালতে নেয়া হয়নি। পরের দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের কারাগারে গিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। অসুস্থতার কারণে সেটা সাক্ষাত হয়নি। এমনকি এক পর্যায়ে আইনজীবীদের বন্দী নেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে দেয়া হয়নি। পরিবারের সদস্যরা কারাগারে গিয়ে দেখা করার পর জানান বেগম জিয়া অসুস্থ। বন্দী বেগম জিয়া তাঁর নাতনিকে উদ্দেশ্য করে (আরাফাতের কন্যা) বলেছেন ‘তুমি চলে যাও, যদি বেঁচে থাকি তাহলে আবার দেখা হবে’। এই খবর পাওয়ার পর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য তার মুক্তি দাবি করা হয়। এর মধ্যে সরকার তাঁর চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করে। তারা কারাগারে গিয়ে বেগম জিয়ার পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন। হঠাৎ করে ৮ এপ্রিল স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেয়া হয়। এ সময় গাড়ী থেকে নেমে বেগম জিয়া পায়ে হেটেই লিফট পর্যন্ত যান। তাঁর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডাক্তার শামসুজ্জামান ওইদিন জানান, খালেদা জিয়া এখন কিছু রোগে ভুগছেন এবং ঔষধও খাচ্ছেন। তাঁর নতুন করে বাম হাতে ব্যথা, ঝিনঝিন করা, ডান পায়ে ব্যথা এবং কোমরে ব্যথার মতো কিছু রোগ দেখা দিয়েছে। তবে বিদেশে নেয়ার প্রয়োজন নেই। বেগম জিয়ার রোগের বিষয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে মেডিকেল বোর্ড রিপোর্টও দিয়েছে। কিন্তু বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে কারাগারে বেগম জিয়ার সুচিকিৎসা হচ্ছে না। তাঁকে মানসিক ভাবে দুর্বল করতেই কৌশলে অসুস্থ করে রাখা হচ্ছে। বিএনপি থেকে বেগম জিয়াকে ব্যাক্তিগত চিকিৎসক এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার দাবিও জানানো হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতারা বেগম জিয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন। এমন অবস্থায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন চিকিৎসকরা প্রেসক্রাইব করলে প্রয়োজনে বিদেশে নিয়ে গিয়ে বেগম জিয়ার চিকিৎসা করা হবে। বিএনপির নেতারা নিত্যদিন বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন এবং তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। বিএনপি নেতাদের এই দাবির মুখে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হঠাৎ করে শুক্রবার মন্তব্য করেন ‘হায়াত ময়ুত আল্লাহর হাতে’। এর প্রতিবাদ করেন বিএনপির নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেন, বেগম জিয়াকে নিয়ে আমরা উৎকষ্ঠিত। বন্দী রেখে তাঁকে তিলে তিলে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল স্পষ্টভাবে বলেছেন, বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে সরকার নোংরা রাজনীতি করছে। ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়েছেন বেগম জিয়ার বিশেষ ধরণের এমআরআই (স্পাইনাল) করা জরুরী। তাঁর রক্তের সব ধরণের পরীক্ষা এবং হোল এবডুমিনের আল্টাসোনোগ্রাফী করা প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ফিজিক্যাল মেডিসিন, নিউরো মেডিসিন এবং ইন্টারন্যাল মেডিসিনের জন্য পছন্দের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য সুপারিশ করেছেন।
নিত্যদিন সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে বন্দী বেগম জিয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে না। তাকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখতে এবং তাঁর মনোবল দুর্বল করতে কৌশলে রোগে-শোকে দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা দাবী করছেন বেগম জিয়ার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা হচ্ছে। দুই দলের এই পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে বেগম জিয়ার রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে দেশবাসী রয়েছে অন্ধকারে। বেগম জিয়ার অসুস্থতার প্রকৃত চিত্র বুঝতে এবং তাঁর চিকিৎসা সম্পর্কে মানুষ জানতে পারছে না। কথা হলো বেগম জিয়ার অনেক বয়স। তাঁর যে রোগই হোক সেটার সর্বচ্চো চিকিৎসা প্রয়োজন। তাঁর মতো জনপ্রিয় ও শীর্ষ নেত্রীর চিকিৎসা নিয়ে হেলাফেলা উচিত নয়। বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের কথার শ্রোতে কারাকর্তৃপক্ষ্যের গা ভাসানো উচিত নয়। কারণ যে কোনো বন্দীর চিকিৎসা করা তাদের দায়িত্ব। তাছাড়া বেগম খালেদা জিয়া আর দশজন বন্দীর মতো নন। বেগম জিয়া দেশের দুইটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটির প্রধান। তিনি তিন বারের নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দুই বার নির্বাচিত জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধী দলীয় নেতা। সারাদেশে রয়েছে তাঁর কোটি কোটি অনুরাগী-অনুসারী। জাতিসংঘের মহাসচিব, বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ, জোট, সংস্থা এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশসহ আন্তর্জাতিক মহল বেগম জিয়ার খোঁজ-খবর রাখছেন। অনেকেই প্রতিনিধি ঢাকায় পাঠিয়ে তাঁর শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিচ্ছেন। সারাদেশের কোটি কোটি মানুষ এবং বিশ্ব সম্প্রদায় যার খোঁজখবর রাখছেন; তাঁকে আর দশজন কারাবন্দীর মতো ভাবা এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারাবিধির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। তাঁর চিকিৎসায় হেলাফেলা করা উচিত নয়। বেগম জিয়া যে রোগেই আক্রান্ত হোক না কেন তাঁর সুচিকিৎসার জন্য সব ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এ দায়িত্ব যেমন সরকারের তেমনি কারাকর্তৃপক্ষ্যের। ক্ষমতাসীন দল ও মাঠের বিরোধী দলের নেতারা যতই কথার যুদ্ধে লিপ্ত হোক; সুচিকিৎসার অভাবে বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবণতি ঘটলে সে দায় কারাকর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবেন না। কাজেই বেগম জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে যতই কাঁদা ছোঁড়াছুঁড়ি হোক কারা কর্তৃপক্ষের উচিত তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। একই সঙ্গে তাঁর স্বাস্থ্যগত অবস্থা দেশবাসীকে অবহিত করা আবশ্যক। বেগম জিয়ার অসুস্থতা এবং চিকিৎসা নিয়ে ধূ¤্রজাল দেশবাসীর কাম্য নয়। ##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।