পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তালুকদার হারুন : প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভার বৈঠকে। প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে গতকাল সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ‘আইন প্রণেতারা অজ্ঞ’ এবং ‘প্রচলিত আইনে তনু হত্যার তদন্ত সম্ভব নয়’ প্রধান বিচারপতির এই বক্তব্য দুটি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে তুমুল বিতর্ক হয়। একাধিক মন্ত্রী প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেন। তারা বলেন, কয়েকটি ধাপে পর্যালোচনার পর সংসদে আইন প্রণয়ন হয়। অথচ প্রধান বিচারপতি সংসদ নিয়ে ঢালাও বক্তব্য রেখেছেন। আইন প্রণেতাদের নিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করতে পারেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও প্রধান বিচারপতির বক্তবের কঠোর সমালোচনা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু প্রমুখ।
প্রধান বিচারপতির সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সংসদে কীভাবে আইন প্রণয়ন হয় উনি (প্রধান বিচারপতি) জানেন কি না জানি না। কোনো আইন তৈরির উদ্যোগ মন্ত্রণালয় নেয়ার পর তা মন্ত্রিসভা, আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং, সচিব কমিটির পর্যবেক্ষণ, মন্ত্রিসভার অনুমোদন ছাড়াও সংসদে এ নিয়ে বিতর্ক, যাচাই-বাছাই, সংশোধনী, দফাওয়ারী সংশোধনী, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বিবেচনাসহ কয়েক ধাপে পর্যালোচনা হয়ে থাকে। প্রধান বিচারপতি যে উচ্চমানের আইনি বিতর্কের কথা বলছেন তা হতে অন্তত ২০ বছর সময় লাগবে। তিনি আরো বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ হিসেবে নির্বাহী, বিচার বিভাগ ও সংসদ কার কী দায়িত্ব তা সংবিধানে নির্ধারিত করা আছে। একটির ওপর আরেকটির প্রাধান্য বিস্তার না করে যার যার দায়িত্ব পালন করলে রাষ্ট্র সঠিকভাবে চলবে।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত ২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে আইন প্রণেতাদের অজ্ঞতায় আইন দুর্বল হচ্ছে Ñ এমন অভিযোগ তুলে বলেছেন, ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচার সম্ভব নয়। তনু হত্যার ঘটনা একটি আধুনিক অপরাধ। পুরনো মানসিকতায় তদন্ত করে এর সুষ্ঠু বিচার সম্ভব নয়। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে প্রচলিত ফৌজদারি আইনের মিল নেই। একে ঢেলে সাজাতে হবে। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি আইন দিয়ে তনু হত্যার বিচার করা যাবে না। তনু হত্যার বিচার নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, কুমিল্লায় এটা অপরাধ হয়েছে। এটা আপনি ১৮৯৮ সালের ক্রিমিনাল প্রসিডিওর কোর্ট দিয়ে তদন্ত করতে পারবেন না। নতুন ডিজিটালাইজড ওয়েতে নতুন পন্থায় এটার ইনভেস্টিগেশন করতে হবে। আমরা যতই মিটিং-মিছিল করি, আমাদের পুলিশ অফিসারদের যে মানসিকতা সেসব দিয়ে এটা ডিটেক্ট করা যাবে না। সাংবাদিক দম্পতি নিয়ে (সাগর-রুনি) যেমন ডিটেক্ট করা যায়নি তেমনই যাবে না। প্রধান বিচারপতি সংসদ সদস্যদের অজ্ঞতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, জাতীয় সংসদে আইন প্রণয়নের বিষয়ে ভালো আলোচনা হয় না, তাই ভালো আইন হয় না। ভালো আইন না পাওয়ার বিষয়ে আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আইনগুলো যেসব প্রণয়ন করা হয়, যে উদ্দেশ্যে হয়, সেটা পূরণ হয় না। আমরা যখন পার্লামেন্টারি ডিবেট নিয়ে আসি আইনের উদ্দেশ্য অনুধাবন করার জন্য, আমরা কিছুই পাই না। আইনপ্রণেতাদের অজ্ঞতা থাকলে আইন প্রণয়নের সময় লেখাপড়া করে হলেও একটু বোঝার চেষ্টা করতে হবে। আজকে আমাদের আইন বিষয়ে সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো আইন সম্পর্কে অজ্ঞতা।
প্রচলিত আইনে তনু হত্যার বিচার নিয়ে প্রধান বিচারপতির সংশয়ের জবাবে বিপরীত বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, তনু হত্যার বিচার প্রচলিত আইনেই করা হবে। বৈঠকসূত্র জানা যায়, মন্ত্রিসভা বৈঠকে তনু হত্যার বিচার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের একপর্যায়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, তনু হত্যার বিচারের জন্য নতুন কোনো আইনের প্রয়োজন নেই। আমাদের দ্রুত বিচার আইন আছে, নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইন আছে। নারী ও শিশু নির্যাতন আইন অনেক ‘আপডেট’ করা হয়েছে। ভারতেও এ ধরনের আইন করা হয়েছে অনেক পরে। এছাড়া দেশে ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। অতএব বিদ্যমান আইনেই তনু হত্যার বিচার করা সম্ভব।
প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধান বিচারপতি সংসদ সদস্যদের অজ্ঞ বলে যে মন্তব্য করেছেন তা সঠিক নয়। সংসদে আইন পাস হওয়ার আগে তা কয়েক ধাপে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, ত্রুটি-বিচ্যুতি লক্ষ করে সংশোধনী আনা হয়, বিতর্ক চলে এবং মন্ত্রণালয়, সচিব কমিটি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটিসহ বেশ কয়েক দফা কোনো আইন যাচাই-বাছাই করে দেখা হয়। তাই সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রধান বিচারপতির ঢালাওভাবে বক্তব্য দেয়া ঠিক নয়। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ ও জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি হচ্ছে সংসদ সদস্য। তাদের (সংসদ সদস্য) অজ্ঞ হিসেবে অবিহিত করে প্রধান বিচারপতির বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপস্থিতিতে তিনি একটি অনুষ্ঠানে এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূতও সরকারের নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে একই অনুষ্ঠানে সমালোচনা করেছেন। আইনসভা বা সংসদ নিয়ে প্রধান বিচারপতি এভাবে মন্তব্য করতে পারেন না।
বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনে গ্রাহকদের আঙুলের ছাপ দেওয়ার ইস্যু নিয়েও মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয়। সিম পুনর্নিবন্ধন বিষয়ে আলোচনায় গ্রাহকরা কোনো ঝুঁকিতে পড়বে না বলে আশ্বস্ত করে মন্ত্রিসভা। সূত্র জানায়, সিম পুনর্নিবন্ধন নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি ও যেসব আশঙ্কা-সমালোচনা হচ্ছে, তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। তখন ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, মোবাইল অপারেটরদের কাছে কোনো তথ্য জমা থাকছে না। মোবাইল অপারেটরদের বায়োমেট্রিক সিম নিবন্ধন যন্ত্রে আঙুলের ছাপ সংরক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। এটা কোনোভাবে অন্য কোথাও ব্যবহার করা যায় না। অপারেটররা শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভা-ারের সঙ্গে গ্রাহকদের তথ্য মিলিয়ে নিচ্ছে। আইন অনুসারে কোনো কোম্পানি এসব তথ্য বাইরে ব্যবহার করতে বা কাউকে দিতে পারেন না। টেলিযোগাযোগ আইন অনুযায়ী অপারেটররা কোনো আইন ভঙ্গ করলে তাদের ৩শ কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
মন্ত্রিসভা বৈঠকের পর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. সফিউল আলম বলেন, সভায় নগরের আবাসিক এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ অননুমোদিত এবং অনুমোদিত সব ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ৬ মাসের মধ্যে সরানোর কথা বলা হয়েছে। সেইসঙ্গে বন্ধ হচ্ছে গেস্ট হাউজ ও বারও। তিনি জানান, নগর এলাকার রাস্তার পাশে আবাসিক প্লটে ও ভবনে রেস্টুরেন্ট, বারসহ নানাবিধ বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনাজনিত সমস্যা নিরূপণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পর্কে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এর প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে সচিব বলেন, আমাদের দেশের নগর এলাকার আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম চালানোয় অনেক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদ কিছুদিন আগে স্বরাষ্ট্র, পূর্ত, এলজিআরডিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সমস্যা নিরসনে সুপারিশ বা প্রস্তাব দিতে বলা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা আজ এই প্রস্তাবনা দিয়েছে। প্রস্তাবনাগুলোতে একমত হয়েছেন মন্ত্রিসভাও। প্রস্তাবগুলো হলোÑআবাসিক এলাকার ভবনের বেসমেন্টে শুধু গাড়ি পার্কিং স্থান থাকবে, বার লাইসেন্স বাতিল করতে হবে, কোনো গেস্ট হাউজ থাকতে পারবে না, আর কোনো ধরনের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থাকবে না। তিনি আরো জানান, রাস্তার পাশের অননুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিগগিরই সরাতে হবে। আর অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আলোচনা করে সময় দেয়া হবে। তবে একসময় আবাসিক এলাকা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানমুক্ত হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।