পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কূটনৈতিক সংবাদদাতা : মত প্রকাশের স্বাধীনতা, দেশের বিরাজমান রাজনৈতিক অবস্থা, গণতন্ত্র, সুশাসন, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়ে আলোচনার জন্য ঢাকা সফর করছে উচ্চ পর্যায়ের ইউ প্রতিনিধিদল। সফরের প্রথম দিনেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে ইউরোপ থেকে অবৈধ ৮০ হাজার বাংলাদেশী অভিবাসী ফিরিয়ে নিতে সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইউ)।
গতকাল সকালে তিন দিনের সফরে ইউ প্রতিনিধিদলটি ঢাকা পৌঁছে। দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের গ্লোবাল ইস্যু বিষয়ক ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিস্টিয়ান লেফার। প্রতিনিধিদলটি সফরকালে বিভিন্ন পর্যায়ে সিরিজ বৈঠকও করবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইইউ’র দলটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্রসচিব এম শহীদুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবং প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এছাড়া ঢাকা সফরকালে ইইউ’র প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
সেইসাথে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ইউ প্রতিনিধিদলটি সরকারের শীর্ষ পর্যায়সহ বিভিন্ন পর্যায়ে নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন, মানবাধিকার পরিস্থিতিসহ সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে নতুন নির্বাচন ইস্যু, পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা এবং শ্রমশক্তি নিয়েও আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতিসহ সার্বিক প্রেক্ষাপটে ইইউ’র প্রতিনিধিদলের এই সফরকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদলও ঢাকা সফর করে যায়। তারাও বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করেছিল। এছাড়া গত বছরের নভেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবনা গ্রহণ করা হয়েছিল। তাতে বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা, বিদেশী সাহায্যকর্মী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং ধর্মনিরপেক্ষ লেখক ও ব্লগারদের ওপর চরমপন্থী জঙ্গিদের হামলা বৃদ্ধির বিষয়ে নিন্দা জানানো হয়।
গতকাল সচিবালয়ে ইইউ’র ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান লেফলার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ইইউ প্রতিনিধিদল জানিয়েছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোতে আড়াই লাখ বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের মধ্যে আনুমানিক ৮০ হাজার অবৈধ হয়ে গেছেন। ভিসার মেয়াদ না থাকা, ছাত্রত্ব শেষ হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে তারা এখন অবৈধ। তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চায় দেশগুলো। বৈঠকে আলোচনা হয়েছে কীভাবে তাদের ফেরত আনা যায়, সে বিষয়ে।
তিনি জানান, অবৈধ হওয়া ৮০ হাজার বাংলাদেশির পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। তারা এই বাংলাদেশিদের পরিচয়সহ তালিকা দিতে চেয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের তালিকা দিতে বলেছি, তারা বাংলাদেশি কিনা তা নিশ্চিত হতে চাই। তারা ওই দেশের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে অবদান রেখেছেন। তাই তাদের ওই দেশে রাখার বিষয়েও সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
তাঁদের কাছে কোনো অনুরোধ রেখেছেন কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, আমি তাদের বলেছি যে, আমাদের দেশেও প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা এবং দুই লাখ পাকিস্তানী বসবাস করছে। আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তোমরা সহযোগিতা করলে আমরাও তাদের ফেরত পাঠাতে চাই। জবাবে তারা আমাকে বলেছে যে, তাদের (ইইউ) প্রতিনিধিদল মিয়ানমারে গেলে তাদেরকে এ বিষয়টি নিয়ে ওই দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনার করার জন্য তারা বলবেন।
এদিকে বিবিসি’র খবরে জানা গেছে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তুরস্কের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো শুরু হয়েছে। একটি জাহাজ গ্রিসের লেসবস থেকে তুরস্কের দিকিলি পৌঁছেছে। জাহাজটিতে ১৩০ জনের মতো অভিবাসী রয়েছে। তবে জাহাজের অভিবাসীদের মধ্যে অনেক বাংলাদেশিও রয়েছে বলে জানাচ্ছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
লেসবস থেকে সংস্থাটির কর্মী ইভা কসে জানিয়েছেন, ইউরোপীয় সংবাদ সংস্থা ফ্রনটেক্সের তথ্য মতে ওই জাহাজে যারা রয়েছেন তারা মূলত বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও মরক্কোর নাগরিক। আর যাদের ঘিরে এই চুক্তি হয়েছিল সেই সিরীয় নাগরিক রয়েছে মোটে দুজন। সিরিয়ান ছাড়া অন্য সবাইকে এখন একটি ক্যাম্পে রাখা হবে এবং পরে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর মধ্যে বাংলাদেশিরাও থাকবে।
উল্লেখ্য, এবার বাংলাদেশের সভাপতিত্বে গ্লোবাল ফোরাম অন মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (জিএফএমডি) বছরব্যাপী বিভিন্ন কার্যক্রম চলছে। বছরের সমাপনীতে ঢাকায় জিএফএমডি’র শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ইইউ টিমের সঙ্গে আলোচনায় জিএফএমডি’র বিষয়টি স্থান পাবে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ইইউ বার্ষিক সংলাপের আলোচনার ধারাবাহিকতায় অভিবাসন ব্যবস্থাপনা এবং উন্নয়ন বিষয়ক ওই প্রতিনিধিদলটি চলতি সফরকালে স্বাভাবিকভাবেই অভিবাসনের অর্থনৈতিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষিত নিয়ে ঢাকার সঙ্গে আলোচনা করবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।